ঘুরে এলাম ইসরায়েল/প্যালেস্টাইন - পর্ব ৬

Submitted by WatchDog on Sunday, May 2, 2021

আমিফ্লাইটের ঝামেলা শেষকরে আকাশে উঠতে উঠতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ততক্ষণে নিকষ কালো অন্ধকার গ্রাস করে নিয়েছে বাইরের আকাশ। ইউনাইটেডের সুপরিসর বিমান রানওয়ে ছেড়ে আকাশে ডানা মেলতে কোন ঝামেলা হয়নি। উড্ডয়নের মুহূর্তটা যেকোন আকাশ জার্নির উৎকণ্ঠার সময়। ফ্লাইট ইতিহাসে যত দুর্ঘটনা তার অধিকাংশই ঘটে হয় উঠা অথবা ল্যান্ড করার সময়। তাই আশংকা উৎকণ্ঠা ক্ষণিকের জন্যে হলেও মগজ চেপে ধরে। অতিরিক্ত ধাক্কা ধাক্কি ভয় ধরিয়ে দেয়। এ সময় কেবিন ক্রূরাও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সব সংশয় সব ভয় নিমিষে উবে যায় যখন বিমান তার প্রয়োজনীয় উচ্চতায় পৌঁছে সোজা হয়ে চলতে শুরু করে। এ যাত্রায়ও কোন ব্যতিক্রম হলনা।

চারদিকে যাত্রীদের কোলাহল। হিব্রু ও আরবী ভাষায় নীচু স্বরে কথা বলছে সবাই। খুব কাছে বাচ্চাদের কেউ বিরামহীনভাবে কাঁদছে। মা চেষ্টা করছে সন্তানকে স্বান্তনা দিতে। কথা বলছে আরবি ভাষায়। ভাষা বুঝা না গেলেও মা ও সন্তানের ভাষা বুঝতে অসুবিধা হলনা। কারণ এ ভাষা চীরন্তন। প্রচন্ড খিদায় পেট চো চো করছিল।

এয়ারপোর্ট লাউঞ্চে খাওয়া ম্যাকডোনাল্ডের বিগ ম্যাক ততক্ষণে হজম হয়ে গেছে। লম্বা জার্নি, তাই খাবার যাই হোক খেতেই হবে। অরুচি এখানে অপশন না। পরের খাবার কখন আসবে তারও কোন ঠিক নেই। কারণ বাইরে এখন রাত হলেও দূরত্ব অতিক্রম করার সাথে সময় বদলে যাবে। জীবন হতে হয়ত নীরবেই খসে যাবে একটা রাত অথবা দিন।

এক কাপ কফি দিয়ে শেষ হলো ডিনার। প্রয়োজনের চাইতে একটু বেশিই খেলাম। সহযাত্রী সারাহ'র আহারে আছে অনেক রকম বিধিনিষেধ। তাই তার মেনুর বেশকিছু আইটেম জোর করে ধরিয়ে দিল আমার হাতে। ঘণ্টা দুয়েকের ভেতর গোটা কেবিন জুড়ে নেমে এলো পিনপতন নীরবতা। ফ্লাইটের মূল বাতি ততক্ষণে নিভে গেছে। কান্নারত শিশুর শেষ চীৎকারও মিহি হয়ে এসেছে। এবার ঘুমের পালা। পার্সোনালাইড মনিটরে মুভি দেখার আয়োজন শেষকরে আমিও কম্বলের নীচে মুখ লুকালাম।

এত সহজে ঘুম আসবেনা আমার। তাছাড়া এভাবে বসে ঘুমানোর সাথে আমার বৈরিতা অনেকদিনের। হরেক রকম ভাষায় শতাধিক মুভি সেভ করা আছে ফ্লাইট নেটওয়ার্কে। রাতের জন্যে সংক্ষিপ্ত একটা তালিকা তৈরি করে নিলাম। এক চ্যানেলে ফ্লাইটের মতিগতি মনিটর করার ব্যবস্থা আছে। কানাডার নিউ ফাউন্ডল্যান্ড হয়ে নর্থ আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে পশ্চিম ইউরোপের স্পেনের উপর দিয়ে উড়ে যাবে আমাদের ফ্লাইট। ঘণ্টার হিসাবে প্রায় ১৬ ঘণ্টা বসে থাকতে হবে এখানটায়।

চলবে

ভালো লাগলে শেয়ার করুন