১৪ই আগস্ট, ২০০৩ সাল। যা কল্পনাতে আনতে সাহস পাইনি তাই ঘটল নিউ ইয়র্কে। কোন নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে নিভে গেল মেগা সিটির বিদ্যুৎ। প্রথমে ভেবে ছিলাম হয়ত সাময়িক কোন অসুবিধা। শীঘ্র ফিরে আসার সম্ভাবনা বিলীন হয়ে গেল যখন জানতে পারলাম কেবল কুইন্সে আমার বাসার আশেপাশেই নয়, গোটা শহর এখন অন্ধকার।
ধীরে ধীরে উন্মোচিত হল পাওয়ার অউটেজের বিশালতা। কেবল শহরেই নয়, অঙ্গরাজ্যের অনেক শহরে ডুবে আছে অন্ধকারে। প্রতিবেশী কানাডাতেও এর প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
স্থানীয় পাওয়ার কোম্পানি কন এডিসন সবাইকে লম্বা সময়ের জন্যে প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ করেছে।
আগস্ট মাস। সে বছর নিউ ইয়র্কে প্রচণ্ড গরম। নাগরিক জীবন হাসফাস করছে অসহনীয় তাপ-দাহে। প্রথম রাতে ঘুমানোর মত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিলনা ঘরে। ছোট একটা ব্যাক-ইয়ার্ডে বাড়িওয়ালা সহ বাকি ভাড়াটিয়ারাও চেয়ারের শুয়ে-বসে রাতটা কাটিয়ে দিতে বাধ্য হলাম।
পরেরদিন কাজে যাওয়ার পথেই দেখলাম ৭২নং স্ট্রীটের উপর ফুড প্রোগ্রাম চালু করেছে স্থানীয় কাউন্সিল। ব্রেকফাস্ট হতে শুরু করে ডিনার পর্যন্ত বিতরণ করছে। সাথে ঠাণ্ডা পানি। সাতপাঁচ না ভেবে প্রথম দিনই দাঁড়িয়ে গেলাম লাইনে।
তিনদিনের মাথায় শহরের আংশিক এলাকা ফিরে পেলো পাওয়ার। আমার উডসাইডও ছিল তার মধ্যে।
কন এডিসন জরুরি ম্যাসেজ পাঠিয়ে সবাইকে অনুরোধ করল যাতে ফ্রিজের সবকিছু ফেলে দেই। সাথে একটা ফর্ম পাঠাল আউটেজের কারণে ফ্রিজে নষ্ট হওয়া সবকিছুর একটা আনুমানিক মূল্য পাঠাতে।
এক মাসের মাথায় ১৯০ ডলারের একটা চেক খুঁজে পেলাম বাসার ডাকবাক্সে।
কয়েকদিন চলার পর বাংলাদেশে ট্রান্সপোর্ট ধর্মঘট শেষ হয়েছে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে গোটা ব্যপারটাই ছিল সরকার ও ধর্মঘটিদের সম্মিলিত একটা প্রজেক্ট। প্রতারণার নয়া দিগন্ত!