আই'ম কাইন্ড অব লস্ট!

Submitted by WatchDog on Sunday, March 27, 2022

স্বামী স্ত্রীর লড়াই কেবল ঘরে না বাংলাদেশে এ লড়াই ভোটের মাঠেও দেখা যায়। একে অপরের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে মাঠে নামে এবং ভোট চাইতে দুয়ারে দুয়ারে ধর্না দেয়। একটা ব্যপারে এ মুহূর্তে প্রায় সব বাংলাদেশি একহাট্টা। এমনকি আধুনিক সুবিধা নিয়ে যারা উন্নত বিশ্বে বাস করছে তারাও। রুশদের ইউক্রেইন আক্রমণ কেবল ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে না, মুসলমানদের শত্রু ইসরায়েলের সহযোগী একটা দেশের বিরুদ্ধেও।

রুশরা এখানে মুসলমানদের হয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে প্যালেষ্টাইনিদের সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশিদের ঘরে ঘরে একধরণের চাপা উল্লাস। আত্ম-সন্তুষ্টি। একধাপ এগিয়ে অনেকে বলছেন পুতিন খোদ সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত দূত।

১১ বছর রাশিয়া ও ১ বছর ইউক্রেইনে বাস করে যে রাশিয়াকে আমি জেনেছি তার সাথে মুসলমানদের দেবদূত আধুনিক রাশিয়া ও তার অধিপতি পুতিনকে চিনতে যেন একটু কষ্ট হচ্ছে।

আমার চেনা রাশিয়া হচ্ছে এমন দেশ যেখানে ধর্মকর্ম কেবল পালনই না, এ নিয়ে কোন শব্দ করাও ছিল রাষ্ট্রীয় অপরাধ। এ অপরাধের শাস্তি ছিল কোন চিহ্ন পিছু না রেখে বাতাসে মিলিয়ে যাওয়া। রুশ দেশের দীক্ষা গুরুদের মতে ধর্ম হচ্ছে আফিম যার নেশায় মানুষ আচ্ছন্ন থাকে। যার প্রভাবে মানুষের স্বাভাবিক চিন্তা শক্তি লোপ পায়।

বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদের ক্লাসে আমার শিক্ষক এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন ইসলাম ধর্মের আসল আকর্ষণ ও ভিত্তি নাকি তার পরকালে নারী ভোগের লোভ।

বাল্টিক সাগর পারের সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র এস্টোনিয়া ভ্রমণের সময় পর পর দুদিন হাজির হয়েছিলাম খ্রিষ্টানদের গোপন এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। যদিও উদ্দেশ্যে কোন ধর্মীয় ছিলনা। ছিল হৃদয় নিংড়ানো অর্গানের করুন সূরের মূর্ছনায় কিছুক্ষণ ডুবে থাকা। এবং তাতেই সোভিয়েত সুপার পাওয়ারের লৌহ বলয়ে সৃষ্টি হয়েছিল বিশাল এক ক্র্যাক। ঘরে ফিরলে ডীন অফিসে তলব করে আমাকে দেয়া হয় তল্পিতল্পা ছাড়া পরের ফ্লাইটে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি।

আমার দেখা রাশিয়ায় আফ্রিকান কালা চামড়া পরের কথা, আমার মত আধা কালা চামড়ার মানুষদের মানুষ দাবি করারও যোগ্যতা ছিলনা। ছিলনা বিচার চাওয়ার কোন অধিকার। কারণ আমাদের পাছা কালা। এক শহর হতে অন্য শহরে যেতে প্রয়োজন হতো আভ্যন্তরীণ ভিসা। যা পেতে দিনের পর দিন ধর্না দিতে হতো স্থানীয় স্বরাষ্ট্র তথা কেজিবি অফিসে। ভিসা ছাড়া অন্য শহরে হোটেলে খুঁজতে গেলে হোটেল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় মিলিশিয়া কল করে তাদের হাতে তুলে দিতো।

আমার দেখা রাশিয়ায় মস্কো সেন্টপিটার্সবার্গ সহ বড় বড় শহরে ধবধবে সাদা ককেশিয়ান রুশদের ছাড়া অন্যকোন প্রজাতির মানুষ খুঁজতে হাই-পাওয়ার দূরবীনের দরকার হতো।

পুতিন পর্ব উত্থানের সূতিকাগার, রুশ দেশের মোস্ট সিভিলাইজড শহর সেন্ট পিটার্সবার্গের এক ট্রাম্প জার্নিতে আমাকে দেখে মায়ের কোলে বসা এক শিশু প্রশ্ন করেছিল আমার গায়ের রঙ এমন কেন। উত্তরে মা বলেছিল, ওরা নোংরা, বছরের পর বছর গোসল করেনা। তাই ওদের রঙ কালো ও গায়ে অসহনীয় গন্ধ।

এই রাশিয়া কোন এক অলৌকিক মন্ত্রবলে মানবতাবাদী হয়ে মুসলমান নিধনের প্রতিশোধ নিচ্ছে বিশ্বাস করতে কেন যেন কষ্ট হচ্ছে। হতে পারে হাজার হাজার মাইল দুরের দেশ বাংলাদেশে বসে রাশিয়া ও রুশদের ভাল চেনা যায়। আমার দুর্ভাগ্য বারটা বছর কাটিয়েও আমি আসল রাশিয়াকে চিনতে পারিনি। হতে পারে কোটি কোটি রুশদের মত আমিও ডুবে ছিলাম ভদকা ফোয়ারায়!

ইউক্রেইনে রুশদের বর্বরতার কথা তুললেই ১৬ কোটির প্রায় সবাই সমস্বরে ফিলিস্তিনি বর্বরতাকে সামনে আনে। কিয়িভ, খারকিভ, লুবিব সহ ইউক্রেইনের শহরে বন্দরে রুশদের নির্বিচার বোমা বর্ষণ, ধ্বংস প্রাপ্ত হাই-রাইজ বিল্ডিংয়ের নীচে আটকে পরা শিশুদের আহাজারি...সবকিছু মিলিয়ে যায় ধর্মীয় আহাজারির কাছে।

মাঝেমধ্যে মনে হয় রুশদের দীক্ষাগুরুদের কথাই কি তাহলে ঠিক ছিল? ধর্ম কি আসলেই আফিম! আই এম কাইন্ড অব লস্ট!
https://www.facebook.com/watch?v=931684697500340

ভালো লাগলে শেয়ার করুন