গল্পটা আমি আগেও করেছি। একবার নয়, বেশ কয়েকবার। আজ আবারও এ নিয়ে ত্যানা পেঁচাতে ইচ্ছে করছে, কারণ সোভিয়েত দেশে মনে রাখার মত যে কটা ঘটনা ঘটেছিল এটা ছিল তার অন্যতম।
ক্ষমতার মসনদে তখন গর্বাচেভ। সমাজতান্ত্রিক বাতাসে তখন গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকার তেজস্ক্রিয়তা। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে একই রব...গর্বাচেভ, গ্লাসনস্ত, পেরেস্ত্রইকা। সোভিয়েত প্রচার যন্ত্র চোখ, কান, নাক, মুখ, সোগা সহ শরীরের সবকটা ছিদ্র দিয়ে মগজ পর্যন্ত পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছে গর্বাচেভের নয়া তন্ত্র মন্ত্র।
মসনদে আরোহণের পর মস্কো হতে প্রথম বের হয়ে আমাদের ইউনিভার্সিটিতে এসেছিলেন রোবট টেকনোলজির একটা ফ্যাকাল্টি উদ্বোধন করতে। এত বড় একজন নেতাকে কাছ হতে দেখবো উত্তেজনায় ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। ইউনির কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপাত্র একধাপ এগিয়ে এমনও নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন চাইলে মিখাইল সের্গেইভিচের শরীরও স্পর্শ করা যাবে।
এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। দিনটা ছিল মঙ্গলবার। ৭০টা দেশের হাজার দুয়েক বিদেশী ছাত্রদের রসায়ন ফ্যাকাল্টিতে জড়ো হতে নির্দেশ দেয়া হল। ভাবলাম হয়ত বিদেশী ছাত্রদের নিয়ে আলাদাভাবে বসতে যাচ্ছেন সোভিয়েত পরাশক্তির এই অধুনা ভগবান,
বিদেশীদের সবাই জড়ো হল এক জায়গায়। এবং তখনই ঘটল অলৌকিক এক ঘটনা। রসায়ন ফ্যাকাল্টির মূল ফটকে ঝুলিয়ে দিল ১০০ কেজির এক তালা। যুব কম্যুনিস্ট পার্টির সভাপতি এসে শাসিয়ে গেল কেউ বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলে বীচি আলাদা করে ফেলা হবে (এ ভাষায়ই রুশরা সব লেভেলে কথা বলতে অভ্যস্ত)।
কি আর করা, এক নাগাড়ে ৫ ঘণ্টা নির্বাসনে থাকার পর প্যান্টের তলায় বীচির অস্তিত্ব নিশ্চিত করে ফিরে গেলাম ডর্মে।
পেরেস্ত্রইয়কা, মানে পূর্ণগঠন আর গ্লাসনস্ত হচ্ছে ওপেননেস অথবা স্বচ্ছতা। গর্বাচেভ অনেকটা চীনের দেং শিয়াওপিং কায়দায় সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন। শতাব্দীর খাঁচা-বদ্ধ একটা জাতিকে স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন। দেশটার জনগণ সোভিয়েত লৌহ শাসনের যাঁতাকলে অনেক আগেই স্বাধীন চিন্তাশক্তি ও কথা বলার মগজ হারিয়ে ফেলেছিল। তাই গর্বাচেভের দেয়া স্বাধীনতার অনুবাদ করতে তাদের অসুবিধা হচ্ছিল।
বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদের ক্লাস। সপ্তাহের একদিন এ ক্লাসে হাজির থাকা অনেকটা বাধ্যতামূলক। কারণ এই একটা মাত্র বিষয়ের উপর রাষ্ট্রীয় স্পন্সরে পরীক্ষা হয়। ফেল করলে ডিগ্রী অসমাপ্ত রেখে দেশে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। অন্য কোন বিষয়ে ফেল করলে অনেক ঝামেলা হয়, কিন্তু অসন্মানের সাথে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা।
সেই ক্লাসে একদিন শিক্ষক অদ্ভুত একটা প্রস্তাব দিলেন। একটা বিষয়ে আমাদের বিতর্ক করতে হবে। বিষটা হবে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত সমাজে জাতীয়তাবাদ, তার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। সহজ বাংলায় বললে, ১০০টা ভাষা-বাসীর দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নে জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত কোন সমস্যা আছে কিনা।
সোভিয়েত ছাত্রদের জন্যে এহেন প্রস্তাব ছিল অশ্রুত, অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়। ওরা এতদিন শুনে এসেছে কোন বিষয়ের উপর বিতর্ক বুর্জুয়া সমাজের কালো দিক। সমাজতান্ত্রিক সমাজে মানুষ এতটাই সুখের সাগরে ভাসে যে এখানে বিতর্কের প্রয়োজন হয়না।
শিক্ষকের আপ্রাণ চেষ্টায় বুঝানো গেল এ সমাজেও বিতর্ক করা যায়। অন্তত গর্বাচেভের রাজত্বে।
২১ জনের গ্রুপে আমরা ৭ জন বিদেশী। বাকি সবাই বিভিন্ন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধি।
একে একে ১৪ জন সোভিয়েত ছাত্র নাম লেখাল ‘এই দেশে জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত কোন সমস্যা নেই’দের কাতারে। সাথে যোগ দিল ৫ বিদেশী। বাকি ছিলাম আমি ও আমার সার্বক্ষণিক ইরাকি বন্ধু খালেদ ইসমাইল।
পুরা বিতর্কটা সোভিয়েত কম্যুনিস্ট পার্টির রবোটিক সম্মেলনে রূপ নিতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আমি হাত তুললাম। এবং নাম লেখালাম উলটো শিবিরে।
বজ্রপাত হল ক্লাসে। রুশদের অনেকে তো বটেই আমার সহপাঠী দুজন বাংলাদেশিও হায় হায় করে উঠল। এই দেশের ফ্রি খেয়ে, পরে এদেশের বিরুদ্ধে কথা বলা নাকি আমার মত তৃতীয় বিশ্বের কাউকে মানায় না।
শিক্ষক অভয় দিলেন। এবং শুরু হল বিতর্ক।
গৎবাঁধা বস্তা পচা চটুল স্তুতিতে হাল্কা হয়ে উঠল পরিবেশ। ভারী হয়ে গেল যখন আমি শুরু করি। সহপাঠী আর্মেনিয়ান সার্কিসকে দিয়েই ধোলাই পর্ব উদ্বোধন করি। লিথুনিয়ার ওলগাকেও ছেড়ে দিইনি। ওরা আলাদাভাবে যখন কথা বলে তখন সোভিয়েত সমাজ ব্যবস্থার চৌদ্দ-গুষ্টি নিয়ে খিস্তি খেউর করে। এই ওরাই আবার কৃতজ্ঞতার ক্রীতদাস হয়ে একই সমাজের স্তুতি বন্দনার জলসা বসায়।
বিতর্ক এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠল শিক্ষক এসে থামাতে বাধ্য হলেন।
উপসংহার টানতে গিয়ে জানতে চাইলেন যদি সমস্যাই থাকে তাহলে আমার দৃষ্টিতে এর সমাধান কি।
দশ সেকেন্ড অপেক্ষা করার পর অনেকটা রাগের মাথায় বলে ফেললাম, সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙ্গে ১৫ টুকরা করে ফেলা!
এ যেন পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণ! শিক্ষক সহ বাকিরা থ মেরে গেল! সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙ্গে ফেলার প্রস্তাব খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো জোটেরও কেউ তুলতে সাহস করেনা।
বিতর্ক সেদিনের মত শেষ হলেও তা ছিল সাময়িক। একটা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধে আমাকে আরও অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে এবং শেষপর্যন্ত তওবা করে মুক্তি পেতে হবে নতুন করে বীচি হারানোর ভয় হতে।
সেই মাইটি সোভিয়েত ইউনিয়ন তাসের ঘরের মত খসে পরেছিল ১৯৯১ সালে। তাক করা মিসাইল লঞ্চার হতে ন্যাটোর একটা মিসাইলও নিক্ষিপ্ত হয়নি। সীমান্ত অতিক্রম করে বাইরের কোন সৈন্য দেশটায় প্রবেশ করেনি। দেশ ভেঙ্গেছে আমার সহপাঠী সার্কিস খাদেরিয়ানের মত ভিন্ন ভাষার ভিন্ন সংস্কৃতির বাকি সব জাতিসত্তাদের বেঁকে বসার কারণে।
বন্দুকের নলের মুখে একটা ইউনিয়ন বানিয়ে, মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে, এক দলীয় ও এক ব্যক্তির স্বৈরতন্ত্র কায়েমের নামই ছিল সমাজতন্ত্র। অন্তত আমার বিচারে।
অবশ্য একই সময় আমার মত সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়তে যাওয়া শতকরা ৯৯ ভাগ বাংলাদেশি ছাত্ররা বলবে ভিন্ন কাহিনী। তাদের কাছে মানব সভ্যতার চূড়ান্ত বিকাশের লীলাভূমি ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারও ব্যখ্যা আছে আমার কাছে। এক প্যাকেট চুইংগাম আর একটা প্লাস্টিক শপিং ব্যাগের প্রলোভন দেখিয়ে যেখানে অনিত্য সুন্দরীদের ধারাবাহিকভাবে বিছানায় নেয়া সম্ভব ছিল সেটা স্বর্গ বৈ অন্য কিছুর সাথে তুলনা করার কোন কারণ ছিলনা স্বদেশী নব্য কমরেডদের কাছে।
ভাল থাকবেন।
0 Comments
Edit post
Azim Rahman
স্মৃতির অলিগলি...
গল্পটা আমি আগেও করেছি। একবার নয়, বেশ কয়েকবার। আজ আবারও এ নিয়ে ত্যানা পেঁচাতে ইচ্ছে করছে, কারণ সোভিয়েত দেশে মনে রাখার মত যে কটা ঘটনা ঘটেছিল এটা ছিল তার অন্যতম।
ক্ষমতার মসনদে তখন গর্বাচেভ। সমাজতান্ত্রিক বাতাসে তখন গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকার তেজস্ক্রিয়তা। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে একই রব...গর্বাচেভ, গ্লাসনস্ত, পেরেস্ত্রইকা। সোভিয়েত প্রচার যন্ত্র চোখ, কান, নাক, মুখ, সোগা সহ শরীরের সবকটা ছিদ্র দিয়ে মগজ পর্যন্ত পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছে গর্বাচেভের নয়া তন্ত্র মন্ত্র।
মসনদে আরোহণের পর মস্কো হতে প্রথম বের হয়ে আমাদের ইউনিভার্সিটিতে এসেছিলেন রোবট টেকনোলজির একটা ফ্যাকাল্টি উদ্বোধন করতে। এত বড় একজন নেতাকে কাছ হতে দেখবো উত্তেজনায় ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। ইউনির কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপাত্র একধাপ এগিয়ে এমনও নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন চাইলে মিখাইল সের্গেইভিচের শরীরও স্পর্শ করা যাবে।
এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। দিনটা ছিল মঙ্গলবার। ৭০টা দেশের হাজার দুয়েক বিদেশী ছাত্রদের রসায়ন ফ্যাকাল্টিতে জড়ো হতে নির্দেশ দেয়া হল। ভাবলাম হয়ত বিদেশী ছাত্রদের নিয়ে আলাদাভাবে বসতে যাচ্ছেন সোভিয়েত পরাশক্তির এই অধুনা ভগবান,
বিদেশীদের সবাই জড়ো হল এক জায়গায়। এবং তখনই ঘটল অলৌকিক এক ঘটনা। রসায়ন ফ্যাকাল্টির মূল ফটকে ঝুলিয়ে দিল ১০০ কেজির এক তালা। যুব কম্যুনিস্ট পার্টির সভাপতি এসে শাসিয়ে গেল কেউ বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলে বীচি আলাদা করে ফেলা হবে (এ ভাষায়ই রুশরা সব লেভেলে কথা বলতে অভ্যস্ত)।
কি আর করা, এক নাগাড়ে ৫ ঘণ্টা নির্বাসনে থাকার পর প্যান্টের তলায় বীচির অস্তিত্ব নিশ্চিত করে ফিরে গেলাম ডর্মে।
পেরেস্ত্রইয়কা, মানে পূর্ণগঠন আর গ্লাসনস্ত হচ্ছে ওপেননেস অথবা স্বচ্ছতা। গর্বাচেভ অনেকটা চীনের দেং শিয়াওপিং কায়দায় সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন। শতাব্দীর খাঁচা-বদ্ধ একটা জাতিকে স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন। দেশটার জনগণ সোভিয়েত লৌহ শাসনের যাঁতাকলে অনেক আগেই স্বাধীন চিন্তাশক্তি ও কথা বলার মগজ হারিয়ে ফেলেছিল। তাই গর্বাচেভের দেয়া স্বাধীনতার অনুবাদ করতে তাদের অসুবিধা হচ্ছিল।
বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদের ক্লাস। সপ্তাহের একদিন এ ক্লাসে হাজির থাকা অনেকটা বাধ্যতামূলক। কারণ এই একটা মাত্র বিষয়ের উপর রাষ্ট্রীয় স্পন্সরে পরীক্ষা হয়। ফেল করলে ডিগ্রী অসমাপ্ত রেখে দেশে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। অন্য কোন বিষয়ে ফেল করলে অনেক ঝামেলা হয়, কিন্তু অসন্মানের সাথে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা।
সেই ক্লাসে একদিন শিক্ষক অদ্ভুত একটা প্রস্তাব দিলেন। একটা বিষয়ে আমাদের বিতর্ক করতে হবে। বিষটা হবে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত সমাজে জাতীয়তাবাদ, তার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। সহজ বাংলায় বললে, ১০০টা ভাষা-বাসীর দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নে জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত কোন সমস্যা আছে কিনা।
সোভিয়েত ছাত্রদের জন্যে এহেন প্রস্তাব ছিল অশ্রুত, অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়। ওরা এতদিন শুনে এসেছে কোন বিষয়ের উপর বিতর্ক বুর্জুয়া সমাজের কালো দিক। সমাজতান্ত্রিক সমাজে মানুষ এতটাই সুখের সাগরে ভাসে যে এখানে বিতর্কের প্রয়োজন হয়না।
শিক্ষকের আপ্রাণ চেষ্টায় বুঝানো গেল এ সমাজেও বিতর্ক করা যায়। অন্তত গর্বাচেভের রাজত্বে।
২১ জনের গ্রুপে আমরা ৭ জন বিদেশী। বাকি সবাই বিভিন্ন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধি।
একে একে ১৪ জন সোভিয়েত ছাত্র নাম লেখাল ‘এই দেশে জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত কোন সমস্যা নেই’দের কাতারে। সাথে যোগ দিল ৫ বিদেশী। বাকি ছিলাম আমি ও আমার সার্বক্ষণিক ইরাকি বন্ধু খালেদ ইসমাইল।
পুরা বিতর্কটা সোভিয়েত কম্যুনিস্ট পার্টির রবোটিক সম্মেলনে রূপ নিতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আমি হাত তুললাম। এবং নাম লেখালাম উলটো শিবিরে।
বজ্রপাত হল ক্লাসে। রুশদের অনেকে তো বটেই আমার সহপাঠী দুজন বাংলাদেশিও হায় হায় করে উঠল। এই দেশের ফ্রি খেয়ে, পরে এদেশের বিরুদ্ধে কথা বলা নাকি আমার মত তৃতীয় বিশ্বের কাউকে মানায় না।
শিক্ষক অভয় দিলেন। এবং শুরু হল বিতর্ক।
গৎবাঁধা বস্তা পচা চটুল স্তুতিতে হাল্কা হয়ে উঠল পরিবেশ। ভারী হয়ে গেল যখন আমি শুরু করি। সহপাঠী আর্মেনিয়ান সার্কিসকে দিয়েই ধোলাই পর্ব উদ্বোধন করি। লিথুনিয়ার ওলগাকেও ছেড়ে দিইনি। ওরা আলাদাভাবে যখন কথা বলে তখন সোভিয়েত সমাজ ব্যবস্থার চৌদ্দ-গুষ্টি নিয়ে খিস্তি খেউর করে। এই ওরাই আবার কৃতজ্ঞতার ক্রীতদাস হয়ে একই সমাজের স্তুতি বন্দনার জলসা বসায়।
বিতর্ক এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠল শিক্ষক এসে থামাতে বাধ্য হলেন।
উপসংহার টানতে গিয়ে জানতে চাইলেন যদি সমস্যাই থাকে তাহলে আমার দৃষ্টিতে এর সমাধান কি।
দশ সেকেন্ড অপেক্ষা করার পর অনেকটা রাগের মাথায় বলে ফেললাম, সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙ্গে ১৫ টুকরা করে ফেলা!
এ যেন পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণ! শিক্ষক সহ বাকিরা থ মেরে গেল! সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙ্গে ফেলার প্রস্তাব খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো জোটেরও কেউ তুলতে সাহস করেনা।
বিতর্ক সেদিনের মত শেষ হলেও তা ছিল সাময়িক। একটা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধে আমাকে আরও অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে এবং শেষপর্যন্ত তওবা করে মুক্তি পেতে হবে নতুন করে বীচি হারানোর ভয় হতে।
সেই মাইটি সোভিয়েত ইউনিয়ন তাসের ঘরের মত খসে পরেছিল ১৯৯১ সালে। তাক করা মিসাইল লঞ্চার হতে ন্যাটোর একটা মিসাইলও নিক্ষিপ্ত হয়নি। সীমান্ত অতিক্রম করে বাইরের কোন সৈন্য দেশটায় প্রবেশ করেনি। দেশ ভেঙ্গেছে আমার সহপাঠী সার্কিস খাদেরিয়ানের মত ভিন্ন ভাষার ভিন্ন সংস্কৃতির বাকি সব জাতিসত্তাদের বেঁকে বসার কারণে।
বন্দুকের নলের মুখে একটা ইউনিয়ন বানিয়ে, মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে, এক দলীয় ও এক ব্যক্তির স্বৈরতন্ত্র কায়েমের নামই ছিল সমাজতন্ত্র। অন্তত আমার বিচারে।
অবশ্য একই সময় আমার মত সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়তে যাওয়া শতকরা ৯৯ ভাগ বাংলাদেশি ছাত্ররা বলবে ভিন্ন কাহিনী। তাদের কাছে মানব সভ্যতার চূড়ান্ত বিকাশের লীলাভূমি ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারও ব্যখ্যা আছে আমার কাছে। এক প্যাকেট চুইংগাম আর একটা প্লাস্টিক শপিং ব্যাগের প্রলোভন দেখিয়ে যেখানে অনিত্য সুন্দরীদের ধারাবাহিকভাবে বিছানায় নেয়া সম্ভব ছিল সেটা স্বর্গ বৈ অন্য কিছুর সাথে তুলনা করার কোন কারণ ছিলনা স্বদেশী নব্য কমরেডদের কাছে।
ভাল থাকবেন।
This can't be combined with what you've already added to your post.
Your Post is successfully shared withFRIENDS