গ্যাটের পয়সা খরচ করে সার্কাস দেখা যাদের পক্ষে সম্ভব হয়না তাদের জন্য সূবর্ণ সুযোগ। নিউ ইয়র্ক, প্রতিবেশী নিউ জার্সি, কানেটিকাট এবং পেনসিলভানিয়ায় বাসরত প্রবাসি বাংলাদেশিরা চাইলে নিতে পারেন এ সুযোগ। সন্তান সন্ততি সহ এখুনি বেরিয়ে পড়ুন। কষ্ট করে চলে আসুন জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কাছাকাছি গ্রান্ড হায়াত হোটেলে। ভেতরের গ্রান্ড শো'তে ঢোকার সুযোগ না পেলেও অসুবিধা নেই, ৪২নং ষ্ট্রীট ধরে ড্রাইভ করে গেলেই দেখতে পাবেন স্বদেশ হতে আসা ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট যাত্রা দলের পারফরমেন্স। তাও কিয়দংশ। ভগবান শ্রী রজনীশ কায়দায় আশ্রম খোলা হয়েছে হোটেলের ভেতরে। শিষ্যদের মোরাকাবার অপেক্ষায় চিল্লায় বসেছেন দলের হেড পারফরমার। এনওয়াইপিডি অথবা ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের চৌকস সদস্যরা কোন সমস্য নয়। ভক্তদের হটানোর কাজে গুলি চালানোর অনুমতি নেই এসব বাহিনীর কাছে। চাইলে আপনি নিজেও যোগ দিতে পারেন সদস্য হিসাবে। অবশ্য ইতিমধ্যে এ সংখ্যা কয়েক হাজার পেরিয়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কাজে সহযোগীতা ও পরামর্শের জন্য জ্যাকসন হাইটসের বিভিন্ন গলিতে খোলা হয়েছে জরুরি উপদেষ্টা কেন্দ্র। ভগবানের দেখা পেতে আপনাকে অবশ্যই যে কোন একটা কেন্দ্রের মাধ্যমে আসতে হবে। মাঝে মধ্যে পুলিশ ধাওয়া করবে, তাতে ভয় পাবেন না। যুদ্ধ জয়ের কৌশল হিসাবে পিছু হটতে হয়, আপনাকেও ৪২নং ষ্ট্রীটের উপর নিউ ইয়র্ক পুলিশের সাথে ইঁদুর-বেড়াল খেলতে হবে। তাও সাময়িক। বাস, ট্যাক্সি, ইয়লো ক্যাব, লিমুজিন অথবা শহর পরিবহনের অন্তহীন ট্রাফিক মাঝে মধ্যে থমকে যাবে। শত শত উৎসুক চোখ চিড়িয়াখানার হনুমান ভেবে আপনার দিকে তাকাবে। শিশুরা আপনাকে দেখে আনন্দে, কৌতূহলে হাততালি দেবে। বিশেষ অপমানিত বোধ করবেন না। ওদের কাজ ওরা করবে, তাতে ভড়কে যাওয়ার কিছু নেই। পাশাপাশি আপনিও চালিয়ে যান আপনার কাজ। ভগবান দর্শনের এমন সুযোগ দ্বিতীয়বার নাও আসতে পারে। গ্রান্ড হায়াতের গ্রান্ড শো’র বিরতিতে সার্কাস দলের বাকি সদস্যদের সাথে কথা বলতে চাইলে গাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়ুন। সংখ্যায় ওরা অসংখ্য। তাই দেখা পাওয়া সমস্যা নয়। শৌচাগার হতে শুরু করে স্থানীয় গ্রোসারি স্টোর, পিপ শো বুথ, হোটেল, রেঁস্তোরা, শুঁড়িখানা , শাড়ির দোকান, জুয়েলারি স্টোর, সব জায়গায় কেঁচোর মত কিলবিল করছে ওরা। গায়ে হাত দিয়ে পরখ করতে ভুলে যাবেন না। ঈশ্বর প্রদত্ত মনুষ্য সংজ্ঞার সবকিছু বিদ্যমান কিনা তা জেনে নেয়াটা একান্তই জরুরি। কারণ আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন গল্প করবেন বাংলাদেশি সার্কাসের। এ গল্প আপনার সন্তান, তার সন্তান এবং তারও সন্তান হয়ে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবে একজন প্রবাসির হৃদয়ে। হেমন্তের কোন এক সুন্দর সন্ধ্যায় ৪২নং ষ্ট্রীটের ঝলমলে থিয়েটারে ঢুকতে যাওয়ার আগে চোখ বুলিয়ে নেবেন চারদিকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রোমন্থন করবেন ভগবান রজনীশ এবং উনার ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট যাত্রাদলের স্মৃতি।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ম্যানহাটনের উপর সন্ত্রাসী হামলা নতুন কোন ঘটনা নয়। মরহুম ওসামা বিন লাদেন যে কাজ শুরু করে গেছেন তার পথ ধরে অনেকেই এ কাজে অমর হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। তবে পার্থক্যটা হচ্ছে স্থানীয় পুলিশ এবং অন্যন্য গোপন বাহিনী এখন অনেক সজাগ এবং তৎপর। আজ হঠাৎ করেই প্রায় গোটা ম্যানহাটন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় ব্লুমবার্গ বাহিনী। গোপন সূত্রে খবর পাওয়া যায় ৪২নং ষ্ট্রীটের কোন এক মোড়ে কে বা কারা বোমা হামলা করতে যাচ্ছে। বস্তা ভর্তি বোমা পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলছে এখন এবং এ উপলক্ষে বিভিন্ন দেশ হতে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান গন জমায়েত হয়েছেন পৃথিবীর এ অংশে। স্বভাবতই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কাজ করছে শহরে। নিশ্চিদ্র বেষ্টনী গলে কাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে বোমা পুঁততে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় প্রশাসনে। আকাশে বোমারু বিমান, মাটিতে স্নিফিং ডগ এবং বোমা নিষ্ক্রিয় করার রোবট সহ যৌথ অভিযানে নামতে বাধ্য হয় শক্তিশালী মার্কিন বাহিনী। পৃথিবীর সবচাইতে ব্যস্ত নগরী ও বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন ক্ষণিকের জন্য পরিনত হয় আতংকের লোকালয়ে। কড়া নিরাপত্তায় চালানো হয় বোমা নিষ্ক্রিয় অভিযান। বস্তা ভর্তি বোমা সফল উদ্ধারের পর স্বস্তি নেমে আসে প্রশাসনে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বস্তা খোলার পর ছানাবড়া হয়ে যায় বিশেষ বাহিনীর চোখ। বোমা কোথায়! এ যে হিজিবিজি ভাষায় লেখা চটি বইয়ের বিশাল এক ভান্ডার। জরুরি ভিত্তিতে তলব করা হয় মালটি পারপাস অনুবাদকদের। তাদের কেউ একজন উদ্ধার করতে সক্ষম হয় বোমা রহস্য। এ আসলে খাঁটি বাংলায় লেখা ভগবান রজনীশের জাতিসংঘ ভাষণ। মুরিদানের দল ভক্তিতে মাথা নীচু করে ফেলে। তাদের কাছে এ কেবল ভাষন নয়, পৃথিবী বদলে দেয়ার নতুন দিক নির্দেশনা, যা নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দাবি রাখে।
www.prothom-alo.com/bangladesh/article/51055/