প্রস্তাবটা আগেও একবার দিয়েছিলাম। হালে পানি পায়নি, বাজারেও বিকায়নি। ইতিমধ্যে দশ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু প্রস্তাবের গুরুত্ব আমার বিবেচনায় এতটুকু কমেনি, বরং বেড়ে আকাশমুখী হয়েছে কেবল। সমাধানের অন্বেষায় ছুটছে বাংলাদেশ। ১৬ কোটি জনগণের সাথে যোগ দিয়েছে বাকি বিশ্ব। চারদিক হতে ছুটে আসছে লোকজন। হরেক রকম প্রস্তাব রাখছে টেবিলে। শাটল সফর চলছে দুই নেত্রীর দরবারে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। অবুঝ রাজপুত্রকে রক্ষায় রাক্ষস যেমন চোখ কান বন্ধ করে তরবারি হাতে দাঁড়িয়ে যায় আমাদের প্রধানমন্ত্রীও তেমনি গণতন্ত্র রক্ষার দৈত্য সেজেছেন। স্বঘোষিত এই রক্ষক গোটা বিশ্বকে বুঝাচ্ছেন তিনি না থাকলে বাংলাদেশ থাকবেনা। থাকলেও তা হবে তালেবানি রাষ্ট্র এবং গিজ গিজ করবে মৌলবাদের প্রেতাত্মা। এ যেন সেই ডি এল রায়ের নন্দলাল কবিতার মতঃ
নন্দের ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা!
সকলে বলিল, ’যাওনা নন্দ করো না ভাইয়ের সেবা’
নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার ভেবে দেখি চারিদিক!
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকাটা অতীব জরুরি। ১৬ কোটির ৮০ ভাগ জনগণ যা বুঝতে অক্ষম তা তিনি বুঝে গেছেন সবার আগে। তাই প্রধান বিচারপতিকে দিয়ে দেশকে রক্ষা করেছেন তত্ত্বাবধায়ক নামক ভয়াবহ ’কলেরা’ হতে। এহেন মৌলিক কৃতকর্মের জন্য আগামীতে নোবেল শান্তি পুরস্কারের দাবি উঠলেও অবাক হওয়ার থাকবেনা। উন্মাদ প্রায় এই মহিলা যে সব কথাবার্তা বলছেন তার তাৎক্ষণিক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে রাজপথে। প্রতিদিন মানুষ মরছে। মরছে আগুনে, মরছে পুলিশের গুলিতে, মরছে যত্রতত্র। কিন্তু মহিয়সী এই নারীর বিচারে গণতন্ত্র শাসনতন্ত্র এমনসব আসমানী কিতাব যার দিকে তাকানোও অপরাধ। সে অপরাধ হতে জাতিকে রক্ষা করার একক পাহারাদার সেজেছেন তিনি। সাথে নিয়েছেন একদল গোলাম হোসেনের দল। পাশাপাশি প্রতিপক্ষ দলেরও এক কথা, তত্ত্বাবধায়ক নামের ’কলেরা’ই আমাদের একমাত্র সাধনা। তাতে দেশ গোল্লায় যাক কিছু আসে যায়না। দেশের বাকি জনগণও দুই নারীর চুলাচুলিতে সমপৃক্ত হয়ে ভুলতে বসেছে নিজেদের ভালমন্দ বিচার করার মনুষ্য গুন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ক্ষমতা নামের সোনার হরিন শিকারে দুই পরিবারের রক্তাক্ত লড়াই স্থায়ী আসন করে নেবে আমাদের রাজনৈতিক, আর্থিক ও সামাজিক জীবনে। ইতিমধ্যে সমাধানের অনেক প্রস্তাব এসেছে। তাতে দুই নারীর সিংহ হৃদয় সামান্যতম বিচলিত হয়েছে এমন স্বাক্ষী খোদ সৃষ্টিকর্তাও দিতে যাবেন না। তাহলে উপায়? উপায় একটা আছে। দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বালুর ব্যবসা ফেঁদেছেন তাদের কোমলমতি হৃদয় সংবরণ করার আনুরোধ করবো। কারণ প্রস্তাবটা ব্যবসা হৃদয়ের ব্যবচ্ছেদ ঘটাতে পারে।
আসুন আমরা বাংলাদেশকে দুই ভাগে ভাগ করে দুই পরিবারের কাছে ইজারা দিয়ে দেই। প্রথম টার্মে এ লিজ হবে নিরানব্বই বছরের জন্য। যেহেতু সম্পত্তি ভাগাভাগির ফয়সালায়ও গোলমালের সম্ভাবনা থেকে যাবে তাই বাংলাদেশের ট্রাডিশনাল ভাগাভাগি হতে বেরিয়ে তাতে দেয়া হবে ডিজিটাল রূপ। শেখ হাসিনা ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ দেশের পূর্বাঞ্চলের শিল্পোন্নত এলাকা নিয়ে মুজিববাংলা স্থাপন করতে চাইলে জিয়া পরিবার উত্তর ও দক্ষিন বাংলার বিরানভূমি নিয়ে জিয়াদেশ মেনে নেবে এমনটা আশা করার কারণ নেই। শেখ পরিবার দাবি করতে পারে দেশটা তাদের। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার জন্ম না হলে দেশ হয়ত এখনো বৃটিশ উপনিবেশবাদের হাতেই ধুকে ধুকে মরত। যেহেতু এই দুইজনের জাদুমন্ত্রে দেশ কেবল পাকিস্তানী হায়েনাদের হাত হতে স্বাধীন হয়নি বরং ব্রিটিশদের জিঞ্জির হতেও মুক্তি পেয়েছে, তাই দেশের উর্বর অংশের প্রতি তাদের দাবি ন্যায্য দাবি হিসাবে বিবেচিত হতে বাধ্য। পাশাপাশি জিয়া পরিবার যদি দাবি করে ফ্রন্টে লড়াই করে তারাই স্বাধীনতা এনেছে এবং খাল কেটে তা উর্বর করেছে, উর্বর অংশের প্রতি তাদের দাবিও অন্যায় কিছু হবেনা! সঙ্গত কারণে শুরু হবে নতুন লড়াই। যার উচ্চতা হয়ত তত্ত্বাবধায়কের উচ্চতাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ অনভিপ্রেত সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য আমাকে খুঁজতে হয়েছে বৈজ্ঞানিক সমাধান। না, এ সমাধান সংজ্ঞায়িত করার কাজে আমাকে বিদেশি কোন বৈজ্ঞানিক অথবা ইটা বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হয়নি। আমার সমাধান জন্ম নিয়েছে আমারই দাসবৃত্তির জরায়ুতে।
এবার প্রবেশ করা যাক ডিজিটাল ভুবনে।
পাঁচ বছর পর পর দেশে নির্বাচন অব্যাহত থাকবে। তাতে গণতন্ত্র নামক ঘরজামাই দুলাভাইয়ের ইজ্জতও রক্ষা পাবে। ছলে হোক আর কৌশলে হোক, নির্বাচনে ফলাফলও একটা আসতে হবে। এবং তাতে থাকতে হবে বিজয়ী ও বিজেতা। নির্বাচনী রায় সিদ্ধান্ত দেবে দুই ভাগে বিভক্ত বাংলাদেশের উর্বর অংশ কোন পরিবারের ইজারায় যাবে। ধরে নিলাম জনগণ হাসিনা, রেহানা, জয়,পুতুল, টিউলিপ, ববিদের দাবির প্রতি রায় দিল। সোজা বাংলায়, শেখ পরিবার জয় লাভ করল। তাতে পরাজিত পরিবার গোস্বা করে হাড়ি পাতিল ভেঙ্গে ফেলার কথা। আমার প্রস্তাবটার মাধুর্য এখানেই, কারও কোন কিছু ভাঙ্গার দরকার হবেনা। যে পরিবার জয় লাভ করবে তাদের ইজারায় যাবে দেশের উর্বর অঞ্চল। বাকি অঞ্চল যাবে পরাজিতদের আওতায়। বিজয়ী পরিবার পাঁচ বছরের চার বছর খাজনা আদায় করবে উর্বর বাংলার। বাকি এক বছরের জন্য সে অধিকার ছেড়ে দিতে হবে বিজেতাদের কাছে। তাতে দুই পক্ষের স্বার্থই রক্ষা পাবে। ওরা মিলেমিশে লুটতে পারবে। এক পরিবার চার বছরে যা লুটবে অন্য পরিবার তা লুটতে পারবে এক বছরেই। তার জন্য প্রয়োজন হবে মেধা, কৌশল ও ইটা বিশেষজ্ঞদের মত বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিকদের। দুই পরিবার যখন মেধা উন্নয়নের দৌড়ে নামতে বাধ্য হবে তার রেশ লাগবে দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাপনায়। রাতারাতি বদলে যাবে ১৬ কোটি ছাগলের ৩নং বাচ্চার চেহারা। কাধে কাঁধ রেখে জননী জন্মভূমি সগর্বে পা ফেলবে বিশ্বায়নের পৃথিবীতে। খুটিনাটি অনেক অপ্রত্যাশিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাতে দুই পরিবারের উদ্বিগ্ন হওয়ার বিশেষ কিছু থাকবেনা। চুরির গুহা উন্মক্ত করার সিসিম ফাঁক মন্ত্র জানা থাকলে বাকি সব তাদের জন্য মৌলিক কোন সমস্যা নয়। এ কাজে এরশাদ চাচা আর ইনু মামাদের ব্যবহার করলে তারাও খুশি থাকবে। সবাই মিলে লুটেপুটে খাওয়ার সংস্কৃতি চালু করা গেলে বাংলাদেশ হতে রাজনৈতিক হাঙ্গামা বিদায় নিতে বাধ্য। দেশ বিভক্তি হবে সে সংস্কৃতি চালু করার প্রথম ও মূল্যবান পদক্ষেপ। নিরানব্বই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর রিভিও করা হবে ইজারার শর্তাবলী। তাতে খুঁত পাওয়া গেলে রিভিও কমিটির সবাইকে বনানী গোরস্তানে যেতে হবে। যেখানটায় গণতন্ত্রের আধুনা ফানুসকন্যা শেখ হাসিনা শুয়ে থাকবেন কান পাতলে সেখান হতে ভেসে আসবে সমাধান বাণী। খয়রুল আর মোজাম্মেল বিচারকদের হয়ত আশেপাশেই পাওয়া যাবে। তারাও কলম নিয়ে তৈরী থাকবেন। এবং ততদিনে ফেঁপে উঠা ৪৮ কোটি জনসংখ্যার একটা জাতির গলায় ঝুলিয়ে দেবেন দাসত্বের নতুন শৃঙ্খল। সময়ই বলে দিবে তা কতদিনের জন্য, নিরানব্বই না একশত নিরানব্বই বছর!
দুই পরিবারের হাগুমুতু খেয়ে যারা জীবন কাটিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর তাদেরকে বিবেচনার অনুরোধ করব আমার এই ডিজিটাল প্রস্তাব। এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা গেলে হরতাল ও হত্যার উপর অলাভজনক আহাজারী থামিয়ে লাভজনক লুটপাটের দিকে মন ফেরাতে সুবিধা হবে। শুভ কামনা।
পদটীকাঃ দেশের উর্বর অংশ - লুটপাটের আমুদরিয়া, মহাদরিয়া। অনুর্বর অংশ - লুটপাটের নদী-নালা, খাল-বিল