পাটে অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলল

পাটের জন্মরহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ফলে পাটশিল্পে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার সংসদ অধিবেশনের শুরুতেই এই সুখবরটি দেন। এ সময় সংসদে উপস্থিত সাংসদেরা টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শোক-দুঃখের পাশাপাশি আমাদের আনন্দেরও অনেক খবর থাকে। আজ সংসদে আমি সে ধরনের এমনই একটি আনন্দ সংবাদ দেব। আমি মনে করি, সংসদই হলো সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা এ ধরনের সংবাদ দেওয়ার জন্য। কারণ সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই দেশ পরিচালনা করছেন।’

সংসদ নেতা বলেন, পাটের জন্মরহস্য উদ্ভাবন একটি বিশাল সাফল্য। বঙ্গসন্তানেরাই এই অসাধারণ সাফল্য অর্জন করতে পেরেছেন। ড. মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই অসামান্য গৌরবময় কাজটি করেছেন। এ গবেষণার আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব অধিকার বাংলাদেশকে সংরক্ষণ করতে হবে। তিনি বলেন, এ কাজের জন্য বাংলাদেশের নাম বিশ্বের গুটিকয়েক দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। তিনি এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাটের হারিয়ে যাওয়া গৌরব পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে। সোনালি আঁশ আবার তার হারানো দিন ফিরে পাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে গ্রামীণ উন্নয়ন এবং ১৬ অনুচ্ছেদে কৃষি বিপ্লবের কথা বলা আছে। তার সঙ্গে সংগতি রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাট আমাদের দেশে বরাবরই অর্থকরী ফসল ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের কীভাবে পাটকে ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। কারণ অতীতের সরকারগুলো এ নিয়ে কোনো কাজ করেনি, যেন পাটের সঙ্গে তাদের শত্রুতা রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুগান্তকারী এই আবিষ্কার রোগবালাই দমন করে বৈরী আবহাওয়ায় পাটকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবে। একই সঙ্গে অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। লাখ লাখ কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবে। পাট সত্যিকার অর্থে আবারও সোনালি আঁশে পরিণত হবে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, গবেষণার এই অসামান্য কাজটি করেছেন ড. মাকসুদুল আলম। তিনি আমেরিকায় পেঁপে এবং মালয়েশিয়ায় রাবারের জন্মরহস্য আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাটের জন্মরহস্য আবিষ্কারে মাকসুদুল আলমকে সহযোগিতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণরসায়ন ও অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ। এর কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছে মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও মন্ত্রণালয়কে এ কাজে সমর্থন জোগানোর জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘোষণাটি দেওয়ার আগে আমরা বেশ গোপনীয়তা রক্ষা করেছি। এই আবিষ্কারের মেধাস্বত্ব অধিকার আমাদেরই রাখতে হবে। সে বিষয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে অন্য কেউ এটা নিয়ে নিতে না পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাটের গুরুত্ব কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পুরো পাটশিল্পই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। এই আবিষ্কার আবার আমাদের সোনালি দিনের স্বপ্ন দেখাল।

সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: ১৭-০৬-২০১০
http://prothom-alo.com/detail/date/2010-06-17/news/71627