ওরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে মাইগ্রেট করে নিজেদের ইসরাইলি বলে দাবি করে। দেশটার সরকারও তাদের স্বাগত জানায়। কারণ হরেক রকম সচ্ছলতার লোভ দেখিয়ে সরকারই তাদের টেনে আনে কথিত প্রমিস ল্যান্ডে। তারপর শুরু হয় সভ্যতার সব চাইতে নিকৃষ্টতম নোংরামি। পুলিশ ও সেনা প্রটেকশনে এসব অভিবাসীদের চালান দেয় প্যালেষ্টাইনে। দখল নেয় তাদের জায়গা-জমি। এবং সময়ের পরিক্রমায় এসব দখলকৃত জমি নিজেদের বলে দাবি করে। এভাবেই চলে আসছে ৭৫ বছর।
পশ্চিমা শক্তির ছত্রছায়ায় ওদের পেশীতে শক্তির সঞ্চার হয়। পাশাপাশি কয়েক মিলিয়ন ফিলিস্তিনি নিজ ঘরে উদ্বাস্তু হয়ে জীবন কাটায়। অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, মাথার উপর ছাদ সবকিছুর জন্যে নির্ভর করতে হয় দখলদারদের উপর। ৯ মিটার উচ্চতার দেয়াল, কাঁটাতারের বেড়া, পাশাপাশি ট্রেনিং প্রাপ্ত হিংস্র কুকুর সহ সৈনিকেরা বন্দুকের নল উঁচিয়ে অপেক্ষায় থাকে। এসব বাধা কেউ অতিক্রম করতে চাইলে মৃত্যু তাদের অবধারিত।
পশ্চিম তীরের রামাল্লার বাসিন্দা আবু নাসেরের গল্প আমি আগেও করেছি। সে পাঁচটা ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে। তার দিনের শুরু হয় রামাল্লার বাস স্ট্যান্ডে। তীর্থের কাকের মত অপেক্ষায় থাকে আমার মত পর্যটকদের। কিন্তু হায়, ওদিকটায় সহজে কেউ পা রাখে না। অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্যে তাকে নির্ভর করতে হয় স্মাগলারদের উপর। মিশর হতে ক্যান্সারের ঔষুধ আসলেই কেবল চিকিৎসা চলে। কারণ ৯ মিটার উচ্চতার দেয়াল ডিঙ্গিয়ে বাড়ির পাশের জেরুজালেম নগরীতে যাওয়ার অধিকার নেই তার। ইসারায়েলিদের খাতায় সে একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। কারণ ঘরে অভুক্ত সন্তানদের মুখে আহার তুলে দেয়ার জন্যে সে কয়েকবার দেয়াল ডিঙ্গিয়ে জেরুজালেম নগরীতে গিয়ে কাজ করেছি্ল।
আরেক প্রান্তে গাজার অবস্থা আরও ভয়াবহ। শতকরা ৭১ জন মানুষের কোন কাজ নেই। বেঁচে থাকার জন্যে তাদের তাকিয়ে থাকতে হয় বিভিন্ন দেশ হতে আসা সাহায্যের দিকে। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর চাবি দখলদারদের হাতে। ওদের দয়ার উপর নির্ভর করে কয়েক মিলিয়ন মানুষের বেচে থাকা।
লেখাটা যখন লিখছি ইসরায়েলই সরকার ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সাহায্য সংস্থাকে। গাজা হতে তাদের সরে যেতে হবে। নইলে তাদের ভাগ্যে কি ঘটবে তার নিশ্চয়তা দেবেনা তারা।
নিশ্চিতভাবে বলা যায় নির্মমতার চরম পর্যায়ে গিয়ে ইসরায়েলই স্থল বাহিনী গাজার ঘরে ঘরে হামলা করবে। নির্বিচারে হত্যা করবে। এবং দিনশেষে নিজেদের বিজয়ের গুণকীর্তন গাইবে। যে কীর্তনের সাথে সূর মেলাবে পশ্চিমা বিশ্ব। কিন্তু তাতেই কি দূর হবে হামাসের সন্ত্রাসী হামলার আশংকা?
যে শিশুদের সামনে তাদের পিতা-মাতাকে খুন করবে তারাও একদিন বড় হবে। এবং বড় হবে প্রতিশোধের আগুন বুকে চেপে। সুযোগ করে ওরাও একদিন হামলা করবে। নির্বিচারে খুন করবে। রক্তের বদলে রক্ত, এ যদি হয় ইসরায়েলের সমাধান, একই সমাধান প্যালেষ্টাইনিরা করবেনা তার নিশ্চয়তা কোথায়?
এ যাত্রায় ইসরায়েলই সৈন্যরা হয়ত নিজেদের প্রতিশোধের মিশন সফলভাবে সমাধা করে ঘরে ফিরবে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাবে, what about day after?