সম্প্রতি আফ্রিকার দেশ উগান্ডা ঘোষণা করেছে তারা ৩১ মিলিয়ন (৩ কোটি ১০ লাখ) টন আকরিক স্বর্ণের মজুত আবিষ্কার করেছে। এই ৩১ মিলিয়ন টন হতে কম করে হলেও ৩ লাখ ২০ হাজার টন স্বর্ণ বেরকরা যাবে। দেশটার প্রেসিডেন্ট মিউসেভেনির মতে এর আনুমানিক মূল্য হবে ১২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইতিমধ্যে উত্তোলন কাজে ব্যবহারের জন্যে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের কাছ হতে সরকার ৭০০ মিলিয়ন ডলার অগ্রিম পেয়েছে।
এ বিষয়ের উপর দেয়া সরকারী ভাষ্যের সবটুকু বিশ্বাস করলে গোটা উগান্ডা এখন স্বর্ণের উপর ভাসছে। দেশটার পূর্বদিকের বুসিয়া ও কারামোজা, সেন্ট্রাল জোনের কামেলেং, কিসিটা ও নগুগো, এবং পশ্চিমের বুশেনেয়ি ও তিরা অঞ্চলে এই মজুত পাওয়া গেছে।
গেল ক'বছর ধরেই উগান্ডার স্বর্ণ রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষকরে দেশটার এন্তেব্বে এলাকায় উঁচুমানের গোল্ড রিফাইনারি প্রতিষ্ঠার ফলে।
২০১৯-২০ সালে উগান্ডা ১.৯ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের স্বর্ণ রফতানি করেছে আরব আমিরাতে, ১.৪ বিলিয়ন দক্ষিণ কোরিয়ায় ও ২৮.৭ মিলিয়ন হংকংয়ে। লক্ষণীয় হচ্ছে, একই সময় এই দেশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের স্বর্ণ আমদানি করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই ইতিমধ্যে উগান্ডার নব্য আবিষ্কৃত গোল্ড ফিল্ডে মার্কিন 'সাম্রাজ্যবাদের' থাবা নিয়ে ট্রল শুরু করা করেছেন। সম্পদের এত-বড় ভাণ্ডার আবিষ্কার হয়েছে অথচ মার্কিন সরকার সেখানে বখরা বসাবে না এ যেন অনেকের কাছে অকল্পনীয়।
এবার আসুন একটু যাচাই করে দেখি এসব কাজে দেশে দেশে মার্কিনীদের কথিত ইয়াংকিবাজী। উগান্ডা দিয়েই শুরু করা যাক।
উগান্ডা তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম গরীব ও দুর্নীতি-গ্রস্ত দেশ। ৪ কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার দেশে মাথাপিছু বাৎসরিক আয় ২,২৬০ ডলার।
যে দেশ স্বর্ণের মজুতে ভাসছে (ইতিমধ্যে কিছু প্রোডাকশনেও আছে) সে দেশের জনগণের দিকে চোখ ফেরালে অর্থনীতির আসল চেহারা ফুটে উঠবে।
অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও প্রযুক্তিগত সামর্থ্য নিয়ে উগান্ডার মত দেশ কি পারবে ৩ কোটি ১০ লাখ টন পাথর হতে ৩ লাখ ২০ হাজার টন স্বর্ণ বের করে আনতে? নিশ্চয় না। তাই যদি পারত তাহলে সে দেশের জনগণের বার্ষিক আয় মাথাপিছু মাত্র ২,২৬০ ডলার হতোনা।
তাহলে উপায়?
উপায় নিশ্চয় আছে। এক, অর্থের জন্যে ধর্না দিতে হবে বিশ্বের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। ওখানেই চাইলে অর্থ পাওয়া যাবে মজুতকে কোল্যাটারেল হিসাবে ব্যবহার করলে।
অর্থ পাওয়া গেলেই যে পাথর হতে সোনা বের করা যাবে এমনটা নয়। তার জন্যে চাই প্রযুক্তি ও এক্সপার্টিজ।
কোথায় পাওয়া যাবে এই দুইয়ের সমন্বয়?
ঘুরেফিরে আমাদের আবারও যেতে হবে সেই ইয়াংকিল্যান্ডে! কেবল মাত্র ঐ দেশেরই আছে আধুনিক প্রযুক্তি। আছে অর্গেনাইজড ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং আছে প্রয়োজনীয় মানব সম্পদ।
ছা আর ছমুছা নয়, ঐ দেশে আছে পৃথিবীর অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ, যেখানে বিশেষজ্ঞ তৈরি করে।
ইয়াংকিল্যান্ডের সরকার সরাসরি কোথাও নির্মাণ কাজে অংশ নেয় না, বরং দেশটার প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর রেয়াতির সুবিধা দিয়ে উন্মুক্ত করে দেয় বিশ্ববাজার।
উগান্ডার মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে চুক্তি করে থাকে এবং সে চুক্তি অনেকসময় দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষার দিকে যায়না। অসম চুক্তি দিয়ে শুরু হয় যাত্রা।
ধরে নিলাম উগান্ডার নতুন গোল্ড ফিল্ডেও কাজ করবে মার্কিন কোন কোম্পানি। তারা পাথর কেটে হায়েনার মত শুকে শুকে স্বর্ণ বের করে আনবে। হয়ত চুক্তি-বলে নিজেরাই এই স্বর্ণের একটা বিরাট অংশ হাতিয়ে নেবে। বাকি অংশের অনেকটা যাবে উগান্ডার দুর্নীতির নেটওয়ার্কে। যার সাথে জড়িয়ে থাকবে দেশটার প্রেসিডেন্ট হতে শুরুকরে আমলারা পর্যন্ত।
একটা সময় যাবে এবং উগান্ডা সরকারের ভাণ্ডার জমা হবে অঢেল অর্থ। ইতিমধ্যে দেশটার সরকারী দুর্নীতির সূতিকাগারে জন্ম নেবে জন-অসন্তোষ যা একসময়ে রূপ নেবে জনরোষে।
হয়ত পতন হবে মিউসেভেনির সরকারের। পতনের পর উগান্ডার স্বর্ণ ভাণ্ডারের ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে। লেখা হবে কি করে সুদূর ইয়াংকিল্যান্ড হতে একদল বর্গী এসে লুটে নিয়েছিল দেশটার মূল্যবান সম্পদ। তা পড়ে আমরা শিউড়ে উঠবো। শরীরের সবকটা শিরা উপশিরায় জন্ম দেবো ঘৃণার নতুন বীজ। এ বীজ হতেই বেরিয়ে আসবে সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রল।
ইয়াঙ্কিদের এই ইয়াংকিপনা হতে বাঁচার উপায়টা কি?
উগান্ডার জন্যে একটা উপায় আছে। পাহাড়ের পরতে পরতে যে সোনা লুকিয়ে আছে তা অক্ষত রাখা। শতবর্ষের নীরবতার মাঝে স্বর্ণ ভাণ্ডারকে সমাহিত করে তার পূজা করা । এ ভাণ্ডার নিয়ে অলৌকিক সব রূপকথার জন্ম দিয়ে জাতিকে ঘুম পারানোর ব্যবস্থা করা। হোক তাতে স্বর্ণ হাতে না পাওয়া, অন্তত ইয়াঙ্কিদের তো ঠেকানো যাবে।