শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘কয়েক দিন ধরে দেশের সংবাদমাধ্যমের একটি উল্লেখযোগ্য অংশে যা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে অত্যন্ত দুঃখ পেয়েছি।’
তাঁর মতো দেশের বহু মানুষ এতে কষ্ট পেয়েছেন বলেও ড. ইউনূস জানান। অথচ ওই সব সংবাদে যে বিষয়টি এসেছে, তার নিষ্পত্তি হয়ে গেছে ১৯৯৮ সালেই। তিনি বলেন, সরকার কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা হয়েছিল। আর প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হিসেবে ব্যয় কমানো তাঁর দায়িত্ব। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সবই করা হয়েছে দরিদ্র বা গরিব মানুষের জন্য। আর দাতাদের মধ্যে কেবল নোরাড আপত্তি জানালেও সেটি ছিল সৎ মতানৈক্য, যার কোনো কিছুই অনিষ্পন্ন নেই।
গতকাল রোববার গ্রামীণ ব্যাংক কার্যালয়ের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুহাম্মদ ইউনূস এ মন্তব্য করেন। নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক প্রামাণ্যচিত্রের ভিত্তিতে তাঁকে নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সে ব্যাপারে শুরুতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি। এরপর তিনি বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের ৪২টি প্রশ্নের উত্তর দেন। সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মহাব্যবস্থাপক এ এম শাহাজাহান উপস্থিত ছিলেন।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দেশে অনেক সমস্যা আছে। লড়াই করে সময় নষ্ট না করে আসুন, ঐকবদ্ধ হয়ে সমস্যার সমাধান করি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই।’ তিনি জানান, দীর্ঘ সময় পর এ ঘটনা প্রকাশ করার পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে বলেও তিনি মনে করেন না।
লিখিত বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, নরওয়েজিয়ান টেলিভিশনে প্রচারিত ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্রের একটি অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে সাজিয়ে তাঁর অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি বলে সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। নরওয়েজিয়ান প্রামাণ্যচিত্রে বলা হয়েছিল, এক প্রতিষ্ঠান থেকে আরেক প্রতিষ্ঠানে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক অনুদানের শর্ত লঙ্ঘন করেছে। এতে কোথাও আত্মসাৎ বা দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না। মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘নোরাডের সঙ্গে মতদ্বৈধতা ছিল একটা সৎ মতানৈক্য। প্রক্রিয়া নিয়ে দুই পক্ষের দুই মত ছিল। অন্য দাতা সংস্থা প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। পরে সেটার নিষ্পত্তি করেছি, যাতে আমাদের মধ্যে সুসম্পর্ক নষ্ট না হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদের অভিমত দিয়ে বলেছিল, যেহেতু নোরাডের টাকাটা ফেরত দিয়েছেন, সিডার টাকাটাও একইভাবে ফেরত দিয়ে দিন। আমরা সিডাসহ অবশিষ্ট সব দাতা সংস্থার টাকা ফেরত নিয়ে এসেছি। এতে আর বিতর্কের কোনো অবকাশ থাকে না।’
লিখিত বক্তব্যে মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, নরওয়ে সরকার নতুনভাবে নিজস্ব অনুসন্ধান-প্রক্রিয়া শেষ করে প্রতিবেদন ও বৈদেশিক সাহায্যমন্ত্রীর বক্তব্যসহ সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে, ১২ বছর আগে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে বিষয়টি সুন্দরভাবে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এখানে কোনো দুর্নীতি বা আত্মসাতের বিষয় ছিল না। তিনি বলেন, দেশের সংবাদমাধ্যমের একটি অংশ যত গুরুত্ব দিয়ে কল্পিত অভিযোগগুলো পাঠক ও দর্শকদের কাছে তুলে ধরেছিল, পরবর্তী সময়ে অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পর সে খবর প্রচার করাকে আর গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। এমনকি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে প্রচারিত ভুয়া খবর সম্পর্কে ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিবাদলিপিও অনেকে প্রকাশ করেনি। মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক একটি সৎ প্রতিষ্ঠান। এখানে যাতে কোনো দুর্নীতি ঢুকতে না পারে, এ জন্য সব সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখি। এ প্রতিষ্ঠান জাতির জন্য একটা গৌরবের প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।’
মুহাম্মদ ইউনূস গত ৩৪ বছরে অনেক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির পেছনে থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রত্যেকটি কোম্পানি সৃষ্টি করার পেছনে মূল অনুপ্রেরণা ছিল দেশের কোনো একটি সামাজিক বা অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান করা। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা নেওয়ার কথা মনে কখনো আসেনি, কখনো আর্থিক সুবিধা নিইনি। এমনকি বোর্ডের বৈঠক করার সম্মানীও কখনো গ্রহণ করিনি।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি একমাত্র গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়া আমার সৃষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো রকম আর্থিক সুবিধা, বাড়ি, গাড়ি, ভাতা কিছুই পাই না। গ্রামীণ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাংক থেকে বেতন ও অন্যান্য সুবিধা পাই। গ্রামীণ পরিবারের কোনো প্রতিষ্ঠানে আমার কোনো মালিকানা নেই। গ্রামীণ ব্যাংক বা গ্রামীণ পরিবারের কোনো প্রতিষ্ঠানের একটি শেয়ারের মালিকও আমি নই। গ্রামীণ ব্যাংকে কোনো শেয়ার নেই বলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ডের সদস্য থাকলেও এতে আমার ভোটাধিকার নেই।’
লিখিত বক্তব্যের পর মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। নোরাডের দেওয়া তহবিল স্থানান্তরে আর্থিক শৃঙ্খলা লঙ্ঘিত হয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের কাজটি সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করতে তহবিল স্থানান্তর করা হয়েছিল। এটি গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়েছিল। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকও জানে।
তহবিল স্থানান্তরের ফলে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে কি না, এমন এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘সাহায্যের টাকা কীভাবে সদ্ব্যবহার করা যায়, তা করতে ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আমার কাজ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের লাভের স্বার্থে খরচ কমিয়ে আয় বাড়ানো। সেই সঙ্গে সরকারের কাছ থেকে যে সুবিধা পাওয়ার কথা, তার সদ্ব্যবহারের বিষয়টিও দেখতে হয়। বিষয়টি নিয়ে যখন নোরাড আপত্তি তোলে, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে কোনো রকম বিতর্কে না গিয়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হয়।’
মুহাম্মদ ইউনূস এ সময় বলেন, ব্যাংকের মতো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো সংবাদ প্রচারের আগে একটু চিন্তাভাবনা ও যাচাই-বাছাই করা উচিত। কারণ, এতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ভয়ে লোকজন তাড়াতাড়ি টাকা ওঠাতে শুরু করে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কপাল ভালো, ওই খবরের পর এ ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়নি। যারা ঋণগ্রহীতা, তারা যদি ভাবত, টাকা দিয়ে আর লাভ কী, তাহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতো।’
ওই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র কাজ করেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ষড়যন্ত্রের দিকে যাচ্ছি না। তবে আমার ধারণা, অতি উৎসাহী হয়ে কেউ কাজটি করতে পারে।’
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, দেশের গণমাধ্যমে যেভাবে সংবাদটি এসেছে, তাতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে, যা কারও কাঙ্ক্ষিত ছিল না। এ ব্যাপারে কারও বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন কি না জানতে চাইলে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘আমি তো শুরুতেই (সংবাদ সম্মেলন) বলেছি, আপনাদের সহযোগিতা চাইছি। লড়াই নয়। দেশে কত সমস্যা আছে। লড়াই করে আমরা কত সময় নষ্ট করে ফেলছি। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যা ভুলত্রুটি হয়েছে, তা বাদ দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ এমনকি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতার বিরুদ্ধে কী করা হবে, সেটিও ভেবেচিন্তে করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নরওয়ের টিভির ওই প্রামাণ্যচিত্রের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মন্তব্য করেছেন, তাকে কীভাবে দেখেন প্রশ্নের উত্তরে ইউনূস বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাইছি না। উনি (প্রধানমন্ত্রী) ওনার বিবেচনা থেকে বলেছেন।’ তবে ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত বলে প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তাকে তিনি স্বাগত জানান।
প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাতা ছয় মাস চেষ্টা করেও বক্তব্য পাননি, এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘স্বীকার করছি, গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের কাছে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের ত্রুটি ছিল। আসলে নরওয়ের ওই সাংবাদিককে আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে তিনি কথা বলতে চেয়েছেন, ব্যস্ততার কারণে তাঁকে সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি।’ তিনি জানান, এখন থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা জান্নাত কাউনাইন প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করবেন।
গ্রামীণফোনের অংশীদারি নিয়ে টেলিনরের সঙ্গে বিরোধ কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনীতিতে যোগদানের কারণে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কেউ এটা করেছে কি না জানতে চাইলে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ওই দুটি কারণের কোনোটিই মনে হয় না।
পত্রিকা বা গণমাধ্যমের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ার পরিকল্পনা তাঁর আছে কি না জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি তো মনে করি, সামাজিক ব্যবসার আওতায় গণমাধ্যম হওয়া উচিত। যদি তা হয়, তাহলে মানুষের বক্তব্য প্রচারের অনেক বেশি সুযোগ থাকবে। তা না হলে মালিকের বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটবে। ভারতের পক্ষ থেকে সামাজিক ব্যবসার আওতায় টেলিভিশন ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রস্তাব রয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় চিত্রনির্মাতা শেখর কাপুরের সঙ্গে টেলিভিশনের ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।’
গ্রামীণফোনে গ্রামীণ ব্যাংকের কত বিনিয়োগ রয়েছে জানতে চাইলে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শুরুতে ১১ মিলিয়ন ডলার (বর্তমান বাজারদরে প্রায় ৭৭ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করা হয়েছিল। পরে যখন মারুবিনি চলে যায়, তখন আরও ৩৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়।
পল্লীফোন উদ্যোগের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এখন প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। এখন তো গ্রামেও মানুষের হাতে হাতে ফোন। সুতরাং এখন নতুন ধরনের সেবা দিতে হবে। দেশের সর্বত্র যদি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ থাকত, তাহলে এ সুযোগ ব্যবহার করা সম্ভব হতো।’
দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণেই সীমিত থাকবেন, নাকি নতুন কিছু করবেন জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি মনে করি, দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ক্ষুদ্রঋণ, বৃহদায়তনের বিনিয়োগ—সবকিছুই দরকার। এ ভাবনা থেকেই সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে বিনিয়োগ থেকে পুনরায় নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া যায়। ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকা কখনো কমবে না। এ ধারণাকে অবজ্ঞা করার কিছু নেই। একে আরও সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে হবে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বিতর্কে সময় নষ্ট না করে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ অনেক সুন্দর। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করি। আমাদের লক্ষ্য হোক ২০৩০ সালে দারিদ্র্য শূন্যে নামিয়ে আনা। তখন দারিদ্র্যকে আমরা জাদুঘরে দেখতে পাব। আমরা সফল যেমন হতে পারি, অসফলও হতে পারি। আমাদের ব্যর্থতা থাকতে পারে। কিন্তু দারিদ্র্য বিমোচনের এ স্বপ্ন থাকবেই।’
কর ছাড়ের সুবিধা নিয়ে সরকারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘কর মওকুফ হলে সুবিধাটা পাবে গরিব মানুষ। আমরা কর দিতে প্রস্তুত। এনজিওগুলোকে কর মওকুফের সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক তো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। অন্যরা যদি করমুক্ত সুবিধা পায়, তাহলে গ্রামীণকেও একই ধরনের সুযোগ দেওয়া উচিত। তখন সরকার বলেছিল, কর মওকুফের সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু এ জন্য যে অর্থ দেওয়া হতো, তা আলাদা রেখে দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যবহার করতে হবে। আর এ সময়ে কোনো লভ্যাংশ দেওয়া যাবে না। এ কারণেই একটা সময় পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি।’
অর্থ নিজের কাজে ব্যবহার করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘এ সন্দেহ থাকলে দুনিয়া তো অচল হয়ে যাবে। আমি তো অসহায় হয়ে পড়ি। আপনাদের হয়তো জানা নেই, অন্য কোনো কাজ করলে আমার অনেক অনেক রোজগার হতো। আমার কাউকে অর্থ দিতে হয় না, বরং অন্যরা আমাকে অর্থ দিতে চায়। আমাকে বিমান ভাড়া দিয়ে নিয়ে যায়। অনেকে এখনো আমার সময় চান, আমি দিতে পারি না।’
রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না প্রশ্ন করা হলে মুহাম্মদ ইউনূস কান ধরার ভঙ্গি করে বলেন, ‘একেবারেই নয়! ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়।’
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: ১২ই ডিসেম্বর, ২০১০