নাঈম ভাই আমাকে বলতে দিন হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী মেনেছিলেন খালেদা
পীর হাবিবুর রহমান, বিশেষ সংবাদদাতা, দৈনিক যুগানত্দর: চষবধংব নাঈম ভাই, আমাকে বলতে দিন। আমার হাত বাঁধা নেই, চোখ খোলা। বিবেক বোবা অন্ধ নয়। দুই নেত্রী, দুই পরিবারের ব্যর্থতার করুণ ইতিহাস লিখতে দিন। দুই নেত্রীকে তাদের লাখো কর্মীরা ভালোবেসে গণতন্ত্রের মানসকন্যা ও দেশনেত্রী বলে আকাশ কাঁপিয়ে স্লোগান তুলতেন। গণতন্ত্রের মানসকন্যা দলে তার ইচ্ছাকেই গণতন্ত্র বলে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশবাসীকে প্রকৃত গণতন্ত্র দেননি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলীয় গণতন্ত্র কী তা যেমন জানেন না তেমনি রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করা দূরে থাক শেষ শাসনামলে যে দেশপ্রেমের নমুনা দেখিয়েছেন ইতিহাস তাকে নতুন নামেই ভবিষ্যতে পরিচিত করাবে। তার দলে অনেক যোগ্য লোক থাকলেও তাদের অকর্মণ্য করে রাখা হয়েছিল।
'৮২ সালে এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে বিএনপি নামের দলটি দুর্বল হয়ে যায়। ডাকসাইটে নেতারা চলে যান জাতীয় পার্টিতে। '৯০ সালে এরশাদের পতনের পর '৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি চমক সৃষ্টি করে বিজয়ী হয়। দুই দলের দুই নেত্রী দেশকে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে এনে সংবিধান সংশোধন করলেও জনগণ গণতন্ত্রের স্বাদ নির্বাচনে ভোটদান ছাড়া আর কিছু পায়নি। '৯১ থেকে '৯৬ সালের শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উদারগণতন্ত্রী মনোভাবের কারণে সফল হন। তবে রাজনীতির দাবার চালে তিনি হেরে যান। মাগুরার উপ-নির্বাচনে ভোটডাকাতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নেয়া তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। হানিফের জনতার মঞ্চের গণঅভু্যত্থানের মুখে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড মেরিলের মধ্যস্থতা ফমর্ুলায় ১৫ ফেব্রুয়ারির একদলীয় নির্বাচনে ১৫ দিনের সংসদে রাতারাতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করে। ওই শাসনামলে এরশাদ ও জাপার ওপর প্রতিহিংসার অগি্নরোষ ছাড়া তেমন অপশাসন হয়নি। খালেদা জিয়া সহকর্মীদের যেমন সম্মান করতেন তেমনি তাদের কথা শুনতেন। তবে সংসদে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে তিনি আগ্রহী কখনো ছিলেন না। জামায়াত নিয়ে শেষ শাসনামলটি ছিল এই উপমহাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। পুত্রদের শাসন করতে না পারার ব্যর্থতা খালেদার ৫ বছরকে অন্ধকার যুগে পরিণত করে। হাওয়া ভবনের প্যারালাল সরকার ঘিরে সারাদেশে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির মহোৎসব শুরু হয়। দলের একটি অংশ ছাড়া, দু-চারজন মন্ত্রী ছাড়া সবাই হাওয়া ভবনের উৎসাহে দুর্নীতিতে গা ভাসিয়ে দেয়। জনগণ অমন অন্ধকার যুগ আর দেখতে চায় না বলেই ওয়ান-ইলেভেনকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছিল। দুই নেত্রী ও তাদের দুই দল আওয়ামী লীগ বিএনপির প্রতিহিংসার রাজনীতি ও অপশাসন ছাড়া তারা জনগণকে কিছু দিতে পারেনি। এটা সত্য হাসিনার শাসনের সঙ্গে খালেদার শাসনের তুলনা চলে না। কিন' হাসিনার শাসনামলে বাজার মূল্য ও বন্যা প্রতিরোধ সফল হলেও সংসদে দাঁড়িয়ে দলীয় গডফাদারদের পক্ষে সাফাই গাওয়া ও কিচেন কেবিনেটের প্রভাব সবকিছু ধুয়ে-মুছে দেয়। এমনকি সংসদে দাঁড়িয়ে এক নেত্রী আরেক নেত্রীকে হোটেলে রাত কাটানোর অশ্লীল ইঙ্গিত করে বক্তব্য দিতেও ছাড়েননি। তাছাড়া দলকানারাও বলবেন না ওই সরকারের আমলে দুর্নীতি হয়নি। মাঝখানে নিশ্চিত হলো না জবাবদিহিতা, বন্ধ হলো না সংসদ বর্জন, দলীয়করণ। স্বাধীনতা পেল না বিচার বিভাগ। দুই নেত্রী সামরিক শাসক এরশাদের চেয়ে ভালো দেশ চালিয়েছেন এমন কথা বলার মতো কোনো নজির স্থাপন করতে পারেননি।
১১ মে আমাদের সময়ে যে লেখাটি প্রকাশিত হয় তা ছিল একানত্দ ব্যক্তিগত মতামত। তবে অনুমাননির্ভর নয়। দেখা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে আমি সেটি লিখি। এটা পক্ষপাতদুষ্ট ছিল না, সত্যকে সামনে টেনে আনার প্রয়াস ছিল। সত্য বড় কঠিন, অপ্রিয় ও নির্মম। ওই লেখায় যেমন ড. কামাল হোসেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় সাহাবুদ্দিন আহমদ, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ দলের নেতাদের অসম্মান করার প্রবণতা শেখ হাসিনার মাঝে দেখা গেছে তা বলেছি। আঙুল দিয়ে তার কিছু ভুল দেখিয়েছি। বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ২৭ বছর ও খালেদা জিয়া ২৪ বছর রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এখন ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে তাদের অবসরে যাওয়া উচিত। অনেকে বলেন, তাদের ঐক্যের প্রতীক করে রাজনীতিতে আনা হয়েছিল। এটা সত্য। কিন' তার চেয়েও বড় নির্মম ও অপ্রিয় সত্য হচ্ছে এই দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে গিয়ে তারা ব্যর্থতার ইতিহাস রচনা করেছেন। দেশকে পিছনের দিকে ঠেলেছেন। রাজনীতি থেকে তাদের অবসর নেয়া এখন সময়ের দাবি। অন্ধ জনতার আবেগ এখনো দুই নেত্রীর প্রতি থাকলেও সবাইকে ভাবতে হবে_ ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। দেশের স্বার্থ সামনে দাঁড়ালে জনগণকে অন্ধ আবেগ থেকে মুক্ত হতে হবে। দুই নেত্রী যোগ্যতা প্রমাণের যথেষ্ট সময় পেয়েছেন। দুই নেত্রী তাদের পুত্রদের জাতির কাঁধে চাপিয়ে দিলে দেশের ভবিষ্যৎ আরো করুণ হবে। তাদের কিচেন কেবিনেটের দাপটে এমনিতেই শেষ সম্ভাবনার আলো নিভতে বসেছে।
আমার লেখার প্রতিক্রিয়ায় 'ড. কামাল হোসেন কি ধোয়া তুলসি পাতা?' শিরোনামে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছেন ড. আবুল হাসনাত মিল্টন। ১১/১২ তারিখ দুইদিন আমি দেশ-বিদেশের শতাধিক টেলিফোন পেয়েছি। অনেকে বলেছেন এমন লেখা আমার জীবনের সেরা লেখা, সাহসী লেখা। কেউবা বলেছেন, কর্মীর মনের সব কথা এসেছে লেখায়। কেউ বলেছেন, নিজেকে গানপয়েন্টে দাঁড় করিয়ে সাহস দেখানো অর্থহীন। ওরা ফিরে এলে শেষ রক্ষা হবে না। দু-একজন বলেছেন, নেত্রীর এই দুঃসময়ে না লিখলেও পারতেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিল্টন পঞ্চগড়ের বিখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম এডভোকেট সিরাজুল ইসলামের জামাতা ছিলেন। তার সেই শ্বশুর সব দেখেশুনে বুঝেই জীবনের শেষ সময়েও ড. কামাল হোসেনের পাশে থেকে দলীয় গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। আপস করেননি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যারা ভূমিকা রাখেন সিরাজুল ইসলাম তাদের অন্যতম। মিল্টনের লেখাটি চমৎকার। মার্জিত রুচির। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রতি অবিচার করেছি। এটা তার ব্যক্তিগত ভাবনা। আমি আগে যা বলেছি তা এখনো বলছি আমার বিশ্বাসের কথা। আমার শৈশব-কৈশোর থেকে উপমহাদেশের রাজনীতিতে যে রাজনীতিবিদ মনের মধ্যে প্রভাব বিসত্দার করেছিলেন তার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমার বিশ্বাস এই জাতির জীবনে সবচেয়ে মধুর ও রক্তে নাচন ধরানো স্লোগান 'জয় বাংলা'। আর কৈশোরে যে মহিলার ভাবমূর্তি আমাকে মুগ্ধ করেছিল তিনি শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়েছেন। আজীবন সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য লড়লেও চিনত্দায় সমাজতন্ত্র ঠাঁই পাওয়ায় তার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নির্ধারণ ছিল না। ঘরে-বাইরের অস্থিরতার মুখে রাষ্ট্রপরিচালনায় সফল হতে না পারলেও কৃতজ্ঞ জাতি গভীর শ্রদ্ধায় তাকে জাতির জনক বলেই স্মরণ করে। মিল্টন জানাতে চেয়েছেন কারা সেদিন গৃহবধূ শেখ হাসিনাকে দলে এনেছিলেন? তিনি ইঙ্গিত করেছেন ড. কামাল হোসেনের প্রসত্দাব নিয়ে সিরাজুল ইসলাম দিলি্লতে হাসিনার কাছে যান। তিনি যা বলেছেন সে ইতিহাস অন্যরকম। আর আমি ড. কামাল হোসেনকে ফেরেশতা বলিনি। বলেছি বঙ্গবন্ধু যেখানে সম্মান করতেন সেখানে তার কন্যা একে একে গুণীজনকে ও দলীয় নেতাদের কেন অসম্মান করেন? দেশের প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তিরা হারিয়ে গেছেন। দলীয় সংকীর্ণতার ঊধের্্ব ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিকুল হক, ড. জহিরের মতো আইনজীবীরা এখনো সংবিধান, গণতন্ত্র, মানবতা রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করেন। তাই ড. কামালের এই চরিত্রটি তুলে ধরেছি। শেখ হাসিনার কাছে যদি কারো বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ থাকে তা তিনি বলতেই পারেন। কিন' কাউকে অসম্মান করার জন্য বেফাস মনত্দব্য করা মানায় না।
ফজলুর রহমান প্রসঙ্গে মিল্টন বলেছেন, হাসিনাকে নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে তিনি যে বক্তৃতা করতেন তা এখনো তার কানে বাজে। আওয়ামী লীগের বক্তাদের মধ্যে হানিফের পরে সতর্ক ছিলেন ফজলুর রহমান। তিনি কখনোই অশালীন মনত্দব্য করতে পারেন না। তবে মিল্টন যে অভিযোগ করেছেন ১৯৮৬ সালে সংসদে জাতীয় পার্টির একজন সাংসদ এই অভিযোগ করেছিলেন। সেদিন সংসদে শেখ হাসিনা ছিলেন। ডেপুটি স্পিকার কোরবান আলী সংসদ পরিচালনা করছিলেন। ফজলুর রহমান এর সত্যতা প্রমাণের পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার পর সরকারি দল ক্ষমা চায়। '৭৫-এর পর গ্রেফতার হয়ে আমু, তোফায়েল, রাজ্জাকরা কঠিন নির্যাতনের মুখেও আপস করেননি। মৃতু্যর মুখোমুখি হয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি তাদের নেতার আত্দার সঙ্গে। জিয়া-এরশাদ-খালেদা যার সঙ্গেই তারা যেতেন মওদুদের মতো বারবার মন্ত্রী হতে পারতেন। তারা রাজনীতি করেছেন আদর্শকে সামনে রেখে। হাসিনা তাদের দূরে ঠেলে দিয়ে আজ নিজের ও দলের জন্য কী বিপর্যয় ডেকে এনেছেন কারাগারে একা একা বসে চিনত্দা করছেন কিনা আমার জানতে খুব ইচ্ছা করছে।
'৭৫ সালের পর আওয়ামী লীগের মধ্যমণি আব্দুর রাজ্জাক। দলের ১৪ আনা নেতাকর্মী তার প্রতি অবিচল। ওই সময়ে দলের সভাপতি পদে আগ্রহী ড. কামাল হোসেন, আব্দুস সামাদ আজাদ, আব্দুল মালেক উকিল প্রমুখ। শেখ হাসিনাকে আব্দুর রাজ্জাক দলের সদস্য বা সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার প্রসত্দাব আগেই দিয়েছেন। এদিকে শেখ হাসিনাকে দলের সভানেত্রী করে দেশে ফিরিয়ে আনার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন আমির হোসেন আমু, মরহুম ইলিয়াস আহমদ চৌধুরী, সাজেদা চৌধুরীর স্বামী আকবর আলী চৌধুরী ও মরহুম মোহাম্মদ হানিফ। এ ছাড়াও এই প্রক্রিয়া জোরদার করতে ভূমিকা রাখেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোসত্দফা মহসীন মন্টু, চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন চৌধুরী। জানা যায়, দলের প্রাণ আব্দুর রাজ্জাককে আমুরা এই বলে রাজি করান যে, শেখ হাসিনা সভানেত্রী হলে রাজ্জাক হবেন ব্রেজনেভ আর হাসিনা হবেন কোসেগিন। রাশিয়ার উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, ক্ষমতা রাজ্জাকের নিরঙ্কুশ থাকবে। শেখ হাসিনা প্রাণের ভয়ে দেশে আসবে না। ওই সময় দলে সহসভাপতি বদলে প্রেসিডিয়াম হয়। একেক সভায় একেকজন সভাপতিত্ব করবেন_ এই হয় যৌথ নেতৃত্বের পরিকল্পনা। জানা যায়, দিলি্লতে আমু-ইলিয়াস শেখ হাসিনার বাড়ির ছাদে বসে বৈঠক করে যখন প্রসত্দাব দেন তখন হাসিনা বলেছিলেন, আল্লাহ ছাড়া কেউ যেন না জানে। আপনারা সামাদ আজাদকে সভাপতি প্রার্থী করেন। ন্যাপের গন্ধ থাকায় দল তাকে মানবে না। শেখ হাসিনাকে দেশে আনার ব্যাপারে মোহাম্মদ নাসিমও ভূমিকা রাখেন। যাক, রাজ্জাক যদিও জানতেন হাসিনা সভানেত্রী হচ্ছেন তবু তিনি সামাদ আজাদকে সায় দেন। '৮১ সালে হোটেল ইডেনে দলের কাউন্সিল ঘিরে ছিল শক্তির মহড়া। পুলিশ প্রহরা ছিল না। দুই গ্রুপই তখন প্রেসিডেন্ট জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এমনি অবস্থায় সাবজেক্ট কমিটি নেতৃত্ব নির্বাচনে বসলে দেখা যায় প্যানেল রয়েছে দুটি। আব্দুস সামাদ আজাদ-আব্দুর রাজ্জাক এবং ড. কামাল হোসেন-সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন। শেষ প্যানেলের নায়ক তোফায়েল। রাজ্জাক তার সঙ্গে জোহরা তাজউদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী করা নিয়ে তোফায়েলকে প্রশ্ন করেন। তোফায়েলের সহজ সরল স্বীকারোক্তি ছিল আপনি যেন কমিটি ভাগাভাগি করতে বসেন এজন্য এটা করা হয়েছে। কিন' সাবজেক্ট কমিটির বৈঠকে অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের পকেট থেকে পিসত্দল পড়ে যাওয়ায় তা বাতিল হয়। সিনিয়র নেতারা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বাসায় গিয়ে বৈঠকে বসেন। ভোরবেলা ড. কামাল হোসেনের প্রসত্দাবে শেখ হাসিনা দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। জানা যায়, ওই রাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বঙ্গভবনে জেগে ছিলেন ওয়াকিটকি নিয়ে। তার আশা ছিল দল ভাঙবে। কিন' যখন শুনলেন শেখ হাসিনা সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তখন বিষণ্ন চেহারায় সামনে বসা মেজর জেনারেল (অব.) সাদেক আহমেদ চৌধুরীকে বললেন, দেশটা বুঝি ইন্ডিয়া হয়ে গেল!
এদিকে শেখ হাসিনা আসার আগেও রাজ্জাক শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠের মতোই সিদ্ধানত্দ নিতেন না, সংখ্যালঘুদের মতামতও গ্রহণ করে সিদ্ধানত্দ নিতেন। কিন' শেখ হাসিনা আসার পর দলের সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতও মানতেন না। জমির সিলিং নির্ধারণ বৈঠকে ১৪ জন ৫০ বিঘা, ৯ জন ১০০ বিঘা ও ৬ জন ছিলেন ৩৬ বিঘার পক্ষে। ৫০ বিঘার সিদ্ধানত্দ চূড়ানত্দ হবে। হাসিনা বললেন, এর বিরোধী তো বেশি। এমনকি রেগে গিয়ে তিনি রাজ্জাককে এই মর্মে সতর্ক করেন যে, কেউ আমার সিদ্ধানত্দের বিরোধিতা করলে আমি মনে করবো সে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত। সেদিনই রাজ্জাক বুঝে যান, দলে থাকা তার আর হচ্ছে না। '৭৫-উত্তর সারা দেশের ছাত্রলীগ পুনর্জন্মকালে জিয়ার মার্শাল ল' গণবাহিনী আর লাল বইয়ের বিপ্লবীদের সামনে দাঁড়ানো ছিল কঠিন কাজ। সে সময় হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গরা ছিলেন ছাত্রলীগের কর্মীদের সাহসের উৎস। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ওবায়দুল কাদেরের কাছ থেকে দূরত্ব রাখলেও সাধারণ সম্পাদক বাহালুল মজনুন চুন্ন- ছিলেন সবার প্রিয়। মিতব্যয়ী মধুর হাসির চুন্ন-র উষ্ণ হাতের ছোঁয়া নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা ধন্য হতো। বাহালুল মজনুন চুন্ন-কে ওয়ার্কিং কমিটিতে রাখা হয়নি। সহসম্পাদক করে অপমান আর অবহেলার চরম নজির সৃষ্টি করা হয়। চট্টগ্রামে আ জ ম নাছিরের শক্তিশালী দুর্গ থাকলেও তাকে দলের মহানগর কাউন্সিলে নেতৃত্বের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ পর্যনত্দ দেয়া হয় না। কত অযোগ্যরা জায়গা পেল! ছাত্রলীগ এক করার শেষ চেষ্টা ব্যর্থ হলে রাজ্জাককে '৯৩ সালে দল ছাড়তে হয় সঙ্গীদের নিয়ে। রাজ্জাক চলে যাওয়ার পর ড. কামাল, তোফায়েলদের প্রভাব থেকে দলকে শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয় এনে দেন আমির হোসেন আমু। ওই সময় শেখ হাসিনা তার ঘনিষ্ঠদের বলতেন, রাজ্জাক-তোফায়েল বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জড়িত। তোমরা আমু ভাইর সঙ্গে থাকো। বঙ্গবন্ধু পুত্রস্নেহে ধন্য তোফায়েল এখনো তার নেতার জন্য শিশুর মতো কাঁদেন। রাজ্জাক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরেননি। সুরঞ্জিতকে দলে এনে অনেক অপমান করেছেন শেখ হাসিনা। আমু সব সময় ছিলেন দলের ও নেত্রীর অতন্দ্র প্রহরী। মোসত্দফা মহসীন মন্টু ও হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গদের দল থেকে বের করে দিয়ে হাসিনার কিচেন কেবিনেটকে সন'ষ্ট করা গেলেও কর্মীদের মনোবল ভেঙে দেয়া হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরদিন মন্ত্রীরা ভয়ে সচিবালয়ে যাননি। কিন' হাসিনা মৃতু্যর দুয়ার থেকে বেঁচে গিয়ে দেখলেন তার ওপর বর্বোচিত হামলার পরেও ঢাকায় আগুন জ্বলা দূরে থাক একটি প্রতিবাদ মিছিল পর্যনত্দ হয়নি। সারাদেশে সংগঠনকে যেভাবে দুর্বল করা হয়েছে তাতে গ্রেফতার হওয়ার ৮ মাসে কোথাও তার মুক্তির দাবিতে একটি মিছিলও হয়নি। জানা যায়, হাসিনা দেশে আসার পর দলের এক নেতা ৪ বছরে তার নেত্রীকে ৫৭টি শাড়ি উপহার দিলেও তিনি একটিও পরেননি। তবে হাত খরচের টাকা যখন যা এনে দিয়েছেন তা গ্রহণ করেছেন।
'৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পরিবারকেন্দ্রিক লুটেরাশ্রেণী গড়ে ওঠে। যেখানে নেতৃত্ব দেন শেখ হেলালসহ চিহ্নিত কটি মুখ। আমির হোসেন আমুকে প্রথমে কেবিনেটে নেয়া হয়নি এই কিচেন কেবিনেটের লুটপাটে বাধা দেবেন বলে। শেখ হাসিনাকে সামনে রেখে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যারা অগ্রণী ভূমিকা রাখেন তারা হলেন শেখ রেহানা, শেখ হেলাল, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ আর নাবালক বালকরা যাদের বলা হয় কচি-কাঁচার আসর। এই টিমের একজনকে থাপ্পর মেরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে নিষিদ্ধ হন জনপ্রিয় সাংসদ হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ। কিচেন কেবিনেটের অর্থ জোগানদাতা হিসেবে ওই সময় শোনা যেত রউফ চৌধুরী, সালমান এফ রহমান, নূর আলী, শাহ আলম, আব্দুল আউয়াল মিন্টুর নাম। সালমানের শেয়ার কেলেংকারির বাধা দেয়ায় অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার প্রতি এই চক্র ক্ষুব্ধ হয়। ওই সময় এক সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যান ম খা আলমগীর, সালমানরা। ঠিক হয় দেশে এসেই কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে মখা আলমগীরকে অর্থমন্ত্রী করা হবে। শেখ হাসিনা ওই সময় তার লোকদের সহযোগিতা না করার জন্য কিবরিয়ার প্রতি অসনত্দোষ প্রকাশ করেন। এতে কিবরিয়া পদত্যাগের সিদ্ধানত্দ নেন। আনত্দর্জাতিক মহল তার সততা, দক্ষতা ও মেধার কারণে তাকেই অর্থমন্ত্রী চাইলেন। তাই কিবরিয়ার পদত্যাগ ঠেকাতে সামাদ আজাদকে দূতিয়ালিতে লাগানো হয়।
সূত্র জানায়, বিশেষ মহলের চাপে সামাদ আজাদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হলেও ভারত ছাড়া কোথাও প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তাকে সফরসঙ্গী করেননি। পড়নত্দ বয়সে সামাদ আজাদের বিয়েকে আড়ম্বরপূর্ণ ও কৌতুকপ্রিয় করে তোলার জন্য শেখ হাসিনা টাকাও খরচ করেন। এর কারণ তাকে বাইরের দুনিয়ায় হাল্কা করা। এদিকে শেষ সময়ে পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে রাজনীতিতে আনতে দল থেকে যেন প্রবীণদের তাড়াতে ব্যসত্দ হন শেখ হাসিনা। বিমানবন্দর থেকে তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা দিয়ে আনা হয় তার নিজস্ব কর্মী দ্বারা। খালেদার প্রথম আমলে সামরিক বাহিনীতে হাসিনার ফুপা জেনারেল (অব.) মোসত্দাফিজুর রহমানসহ প্রশাসনে কোনো কোনো আত্দীয় প্রমোশনও পান। খালেদা বঙ্গবন্ধুর মাজারেও যান। পুতুলের বিয়েতে খালেদা এলে হাসিনা স্বাগত জানান, তবে একজন প্রধানমন্ত্রীকে যে সম্মান দেয়ার কথা তা দেননি। দিয়েছিলেন ড. ওয়াজেদ মিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতারা। তারেকের বিয়েপেত যান শেখ হাসিনা। '৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারেক রহমানকে সস্ত্রীক বিদেশ যেতে না দেয়ায় দুই পরিবারে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলে ওঠে। বিমানবন্দর থেকে পুত্রবধূসহ ছেলের ফিরে আসার অপমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভোলেননি। তারেককে আটকে দেয়ার পিছনে হাসিনার কিচেন কেবিনেটের দুজনের ভূমিকা ছিল বলে শোনা যায়। খালেদা জিয়া তখন বলেছিলেন, কত ধানে কত চাল দেখে নেব।
এই সূত্রে খালেদা লাগাতার সংসদ বর্জন শুরু করেন। সংসদ আবার অকার্যকর হয়। এদিকে তারেক মায়ের কাছ থেকে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নিলে হাওয়া ভবন সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এখান থেকে শুরু হয় বিএনপির পরিবারতন্ত্রের যাত্রা। খালেদা দলের সিনিয়র নেতাদের কাছ থেকে ক্রমশ সরে এসে ছেলের সিদ্ধানত্দকেই গুরুত্ব দিতে থাকেন। ২০০১-এর নির্বাচনে তারেক রহমানের প্রার্থীই হন শতাধিক। আর হাওয়া ভবন নির্লজ্জ মনোনয়ন বাণিজ্যের নজির স্থাপন করে। আবুল হাশেমের মনোনয়নের দাম ৫ কোটি_ এ খবর সবাই জেনে যায়। দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া ২৮ সদস্যের মন্ত্রিসভার তালিকা তৈরি করেন। বঙ্গভবনে শপথ নেয়ার দিন সকালে তারেক খালেদার কাছ থেকে তালিকা টেনে নিয়ে সব মন্ত্রীর সঙ্গে তার পছন্দের প্রতি ও উপমন্ত্রী যোগ করে বহর বিশাল করেন। বরকত উল্লাহ বুলু ওই সময় বঙ্গভবনের শপথ অনুষ্ঠানের দাওয়াত কার্ড সংগ্রহ করতে গিয়ে শপথ নেন মন্ত্রীর।
২০০১ সালের নির্বাচনের আগেই তারেক মামুনকে দিয়ে আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত ব্যবসায়ীদের জড়ো করেন তার পক্ষে। লতিফুর রহমান মাহবুবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে এই ব্যবসায়ী দলের নেতৃত্ব দেন। খালেদা মন্ত্রীদের তালিকা করেছিলেন সাইফুর, মান্নান, ড. মোশাররফকে নিয়ে। তারেক করেন মামুনকে নিয়ে। মোরশেদ খান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে প্রথমে সাড়ে তিন কোটি টাকা দেয়ায় শপথ বিলম্ব হয়। ৫ কোটি পেইড হলে মন্ত্রণালয় পান। মাফিয়া ডন বাবরকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। খালেদা এতটাই অসহায় হন ছেলেদের কাছে যে হাওয়া ভবন সরকারকে গ্রাস করে। ব্যবসা-বাণিজ্য-টেন্ডার কমিশন আদায় সব এখান থেকে হয়। দেশ পরিচালনার শপথনামা ভঙ্গ করে প্রায় গোটা সরকার ও বিএনপি দুর্নীতিতে ডুবে যায়। '৯১ সালে খালেদার প্রিয় সহকর্মী মোসাদ্দেক আলী ফালুর কী ছিল সেটি বড় প্রশ্ন নয়। ক্ষমতার শেষ ৫ বছরে তাকে এমপি বানানো হয়েছে, মিডিয়া মোগল বানানো হয়েছে। অর্থের উৎস কোথায় সেটাই প্রশ্ন। এখানেও লক্ষ্যণীয় মজার বিষয় যে হাসিনার পাশে থাকা আওয়ামী লীগের দু-চারজন নেতার ফালুর সঙ্গে রয়েছে গভীর সখ্য। এমন লুণ্ঠন উপমহাদেশের ইতিহাসে আর হয়নি। খালেদার অসহায়ত্ব এমন পর্যায়ে পেঁৗছে তার জানা মতে, সাবি্বর হত্যা মামলায় তার পুত্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২০ কোটি টাকা ঘুষ নেয়। তাদের দুর্নীতি সন্ত্রাস দমনে র্যাবের সাফল্যের ইতিহাস মুছে যায়। সর্বগ্রাসী দুর্নীতির এই মহোৎসব ও খালেদার কিচেন কেবিনেট নিয়ন্ত্রণ করে। এখানে সাঈদ ইস্কান্দার, তারেক-কোকো-মামুন, ফালু, বাবর, ডিউক ছিলেন। ডান্ডি ডায়িং নিয়ে বিরোধে মামা ছিটকে পড়লেও বোনের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে যায়। হাওয়া ভবনেও লুটেরা অথর্ব একদল রাজকর্মচারীর বাড়াবাড়ি ছিল সীমাহীন। এই ভবনের মুখপাত্র ছিল আশিক ইসলাম। তারেকের সঙ্গীরা তাকে সারাদেশে ভাইয়া থেকে যুবরাজ বলতেই বেশি পছন্দ করতেন। খালেদা নির্বাচনের পর গুরুত্বপূর্ণ এক জায়গায় গিয়ে চা-চক্রের ফাঁকে বলেছিলেন, তারেক হবে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। সবাই হতবাক। ৫ বছর সংসদ উপনেতাও নির্বাচিত করেননি। দলীয় সংকীর্ণতার ঊধের্্ব উঠায় অপমান মাথায় নিয়ে বঙ্গভবন ছাড়েন বি চৌধুরী। বসুন্ধরা শপিং মল যেদিন ঝলমলে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন সেদিন সরকারের একটি মহল বন্যার সময় ওখানে যেতে খালেদাকে মানা করেছিলেন। জবাবে খালেদা এই বলে অনুষ্ঠানে যান, ওটা কোকোর ফার্ম ডেকোরেশন করেছে। আজ যে রিজভী আহমদের মতো সৎ তরুণ নেতা খালেদা পরিবারের জন্য লড়ছেন তিনি উপমন্ত্রীও হননি। মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, শামসুজ্জামান দুদুরা মনোনয়ন পাননি। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কন্যা মহিলা এমপি হতে পারেননি। তবে মজার বিষয় ছিল_ খালেদার কিচেন কেবিনেট হাসিনার কিচেন কেবিনেটের সঙ্গে মাঝে মাঝে রাতে গুলশানে গোপন বৈঠকে বসতো। সেখানে সুচতুর তারেক ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের খুশি করে দিতেন। বিনিময়ে হাসিনা কখন কোথায় কী করতেন তা সুধা সদন থেকে হাওয়া ভবনে জানিয়ে দেয়া হত। আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু ব্যবসা করে দলকে ভালবেসে চাঁদা দিতেন। আর বাধ্য হয়ে বিএনপিকে দিতেন কমিশন। কিচেন কেবিনেটের বাইরে থাকায় টিংকু দলের কাছে অপরাধী আর কিচেন কেবিনেট নির্দোষ। তাই নয়, বিএনপির লুটপাটের সঙ্গে জঙ্গিবাদকে সহযোগিতা ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধ। তারেক সুচতুরভাবে সবকিছু এমনভাবে করতেন যে ২২ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে অর্থের জোরে সব ম্যানেজ করতে চেয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেন না এলে তারেক বিজয়ী হতেন, জনগণ পরাজিত হতেন। এদিকে ওয়ান ইলেভেনের অ্যাকশন দুই পরিবারকে কাছাকাছি করে দেয়। সরলপ্রাণ কর্মীরা অন্ধ বোবা হয়ে বুঝতে চান না। হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র গেলেন বেঁধে দেয়া সময়ে ফিরবেন বলে। এদিকে খালেদার বিদেশ নির্বাসনের সব প্রস'তি সম্পন্ন। তারেক ছাড়া কোকোসহ সবাই সঙ্গে যাবেন। এই সময়ে খালেদার আনত্দর্জাতিক মিত্র শক্তির এজেন্টরা বন্ধু সেজে পাশে দাঁড়ালো হাসিনার! টেলিফোনে কথা বলানো হলো খালেদার সঙ্গে। খালেদা সম্মতি দিলেন হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি বিরোধী দলে থাকবেন। হাসিনা আরো কিসের বিনিময়ে জানি তার চরমশত্রু যার মুখ দেখতে নারাজ ছিলেন সেই 'চাঁদ কাপালির' (হাসিনার ভাষায়) বিদেশ যাত্রার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন। ব্যয়বহুল ছিল আল জাজিরাসহ আনত্দর্জাতিক মিডিয়াকে সংগঠিত করা। আর সরকারের সঙ্গে শর্ত ভঙ্গ করে দেশে ফিরলেন। দেশে ফিরতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি যে ভূমিকা রেখেছিলেন তা মিডিয়ায় ফাঁস করে হাসিনা তাকে বিব্রত করেন। হাসিনার শর্তযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র সফরে ভূমিকা রেখেছিলেন আব্দুল জলিল ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম। হাসিনার কারণে তারাও গ্রেফতার হন। হাসিনা কেন এমনটি করলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে জবাব একটাই আসে_ দুই পরিবারের হাতে দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ থাকবে এটাই চেয়েছেন। প্রিয় মিল্টন, আমাদের আর কতকিছু দেখার বাকি বলতে পারেন? বিজয়ের ৩৭ বছর কেটে গেছে। কেউ কথা রাখেনি! তাই অবিচার নয়, ব্যক্তির প্রতি অন্ধ মোহও নয়, দেশকে ভালবেসে বলি, নিজের ভেতর থেকে আসা শক্তির জোরে বলি। 'নিজের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ' এটা প্রমাণে দুই নেত্রী, দুই দল ব্যর্থ। আমাদের এখন একজন মাহাথির মোহাম্মদের প্রয়োজন। যিনি লক্ষ্য নিয়ে আসবেন। পরিবর্তনের মাধ্যমে জয় করবেন সবার হৃদয়। যার সমালোচনা সইবার ক্ষমতা থাকবে। নিজ এবং তার আত্দীয়-স্বজন, সহকর্মী, সমর্থক সবাইকে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি থেকে দূরে রাখবেন। কোনো তদবিরে কাজ হবে না। প্রশাসন হবে পক্ষপাতমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত। প্রশাসন ও আইনের হবে ব্যাপক সংস্কার। বাড়বে শুধু মানুষের জীবন যাত্রার মান।