An unpunished crime by Khaleda Zia's mother

খালেদা জিয়ার মায়ের এনজিও পল্লীশ্রীকে অবৈধভাবে চিরস্খায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়ার ঘটনা ফাঁস

ভিওবিডি, ঢাকা থেকে

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মায়ের এনজিও পল্লীশ্রীকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্পিত সম্পত্তি চিরস্খায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়ার ঘটনা ফাঁস হয়েছে। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে দিনাজপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে বালুবাড়ী মৌজার ৪৮৩ খতিয়ানের ৩৫১ দাগের অর্পিত সম্পত্তি সাড়ে ৩৮ শতাংশ জমিসহ দোতলা বাড়ি খালেদা জিয়ার মা তৈয়বা মজুমদারের এনজিওর নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। অভিযোগে জানা গেছে, এই বরাদ্দ দেয়ার সময় ভূমি মন্ত্রণালয় এবং তৎকালীন দিনাজপুর জেলা প্রশাসন কোনো আইন-নিয়মনীতি তো মানেইনি বরং মাত্র একদিনে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের ৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই বরাদ্দপত্র অনুমোদনে স্বাক্ষর করেন।

তাছাড়া ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি ‘প্রত্যর্পণ আইন’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর এই ধরনের সম্পত্তি আইনগতভাবেই কাউকে চিরস্খায়ী বরাদ্দ দেয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও ক্ষমতার দাপটে এই অবৈধ কাজটি করেছিলেন তারা। এতে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং সরকারের ৫ কোটি টাকা ক্ষতিসাধন করা হয়েছে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, ওই সম্পত্তির মূল মালিক যতীন্দ্র মোহন গং এই দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে গেলে এই সম্পত্তি ‘শক্র সম্পত্তি’ এবং পরে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। পরবর্তীতে সরকারি প্রয়োজনে বাড়িটি হুকুমদখল করে সরকারি দফতর স্খাপন করা হয়। হাল আমলের সংশোধনী জরিপে নালিশি ৩৫১ দাগটি ১৫৭৩ দাগে রূপাìতরিত হয় এবং এই দাগের সব সম্পত্তিই অর্পিত সম্পত্তি হিসাবে সরকারের নামে ১/১ খতিয়ানে চূড়াìতভাবে রেকর্ড প্রকাশিত হয়। ২০০১ সালে প্রত্যর্পণ আইন জারির পর এই সম্পত্তি ‘প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি’ হিসাবে জেলাওয়ারী তালিকার ১৩১১ নম্বর ক্রমিকে তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু সরকারি এই সম্পত্তির দিকে দৃষ্টি যায় খালেদা জিয়ার মা তৈয়বা মজুমদারের। তার প্রতিষ্ঠিত এনজিও ‘পলíীশ্রী’র নামে নালিশি সম্পত্তি বন্দোবþত পাওয়ার জন্য চেষ্টা তদবির শুরু করেন। খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তিনি কিছুটা সফল হন। প্রধানমন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে ১৯৯৩ সালে ভিপি কেইস নং-১/৯২-৯৩ মূলে নালিশি জমির ১০ শতাংশ ‘পল্লীশ্রী’র নামে একসনা বন্দোবস্ত নেয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ১৯৮৪ সালের ৩১ জুলাই ঘোষণা অনুযায়ী নতুন করে অর্পিত সম্পত্তি লিজ কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২৩/১১/১৯৮৪ তারিখের ৫-২৩/৮৩(অংশ-১)/৩৩৮/৬৪ নম্বর স্মারকে নতুন লিজ বন্ধ করা হয়। কিন্তু তারপরও খালেদা জিয়ার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রপতির ঘোষণা এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রকে লঙ্ঘন করে ওই ১০ শতাংশ জমির লিজ হাসিল করা হয়। কিন্তু তৈয়বা মজুমদার কেবলমাত্র ১০ শতাংশ, তাও আবার একসনা, লিজ নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তার উদ্দেশ্য ছিল বাড়িসহ সম্পূর্ণ সম্পত্তি গ্রাস করা।

২০০১ সালের নির্বাচনের পর খালেদা জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হলে তৈয়বা মজুমদার উল্লিখিত দাগের সব সম্পত্তি এবং দোতলা বাড়ি গ্রাসের জন্য আবার চেষ্টা তদবির শুরু করেন। তার প্রতিষ্ঠিত এনজিও পল্লীশ্রীর নামে উল্লিখিত দাগের সব সম্পত্তি চিরস্খায়ীভাবে বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে আবেদন করেন। ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বলবৎ হয় এবং আলোচ্য সম্পত্তি ‘প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি’ হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। প্রত্যর্পণ আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির যাবতীয় হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হয়। এই আইনগত বিধান লঙ্ঘন করে উল্লিখিত সম্পত্তি পল্লীশ্রীর অনুকূলে চিরস্খায়ী বন্দোবþত প্রদানের প্রþতাব করে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ১৩/৫/২০০৪ তারিখের এল.এ/০৯/৭৬-৭৭/০৪/১৪১ নম্বর স্মারকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে।

প্রত্যর্পণ আইন বলবৎ থাকার কারণে ‘স্খায়ী বন্দোবþত সম্ভব নয়’ বলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১৬/৬/০৪ তারিখের ভূ:ম:/শা-৬/অর্পিত/দিনাজপুর/৮৫/২০০৪/৪৮৬ নম্বর স্মারকে জানিয়ে দেয়া হয়। তবে একসনা লিজের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে মর্মে মতামত দেয়া হয়। যদিও প্রত্যর্পণ আইন বলবৎ থাকা অবস্খায় একসনা বন্দোবþত নিষিদ্ধ রয়েছে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৬/৮/০৫ তারিখের এল,এ/এইচ,আর/০৯/৭৬-৭৭/০৫/২২২ নম্বর স্মারকে পল্লীশ্রীর অনুকূলে স্খায়ী বন্দোবþত প্রদানের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রþতাব প্রেরণ করা হয়। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ১০/১১/০৫ তারিখের ভূ:ম:/শা-৬/অর্পিত/দিনাজপুর/৮৫/২০০৪/৮৯১ নম্বর স্মারকে আইনের পরিপন্থী বিধায় স্খায়ী বন্দোবþেতর প্রþতাব অনুমোদনযোগ্য নয় বলে জেলা প্রশাসককে জানিয়ে দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনার পরও ক্ষমতার অপব্যবহার করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ২৯/৩/০৬ তারিখের এইচ,আর/৯/৭৬-৭৭/০৬/৫৫ নম্বর স্মারকে পল্লীশ্রীর অনুকূলে চিরস্খায়ী লিজের প্রþতাব প্রেরণ করা হয়। তৃতীয়বারের মতো প্রþতাব প্রেরণ করেও কোনো কাজ না হওয়ায় নালিশি সম্পত্তি গ্রাস করার উদ্দেশ্যে পল্লীশ্রী ভিন্নপথ অবলম্বন করে। প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্খায় ক্ষমতার দাপটে অবৈধ উপায়ে অধিগ্রহণের মাধ্যমে উল্লিখিত সম্পত্তি গ্রাস করার কৌশল গ্রহণ করে।

২০০১ সালের প্রত্যর্পণ আইন লঙ্ঘন করে জেলা প্রশাসক ‘প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি’ পল্লীশ্রীর অনুকূলে অধিগ্রহণের কার্যক্রম গ্রহণ করে। ১৯৯৭ সালের স্খাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ম্যানুয়ালের ১৭ নং অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে জেলা প্রশাসক অধিগ্রহণ কেইস রুজু করেন। নালিশি সম্পত্তির পুরোটাই সরকারি সম্পত্তি হিসেবে ১/১ নম্বর খতিয়ানে চূড়াìতভাবে রেকর্ডে প্রকাশিত হয়। ম্যানুয়ালের উল্লিখিত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারি সম্পত্তি অধিগ্রহণের পরিবর্তে বন্দোবস্ত প্রদানের বিধান রয়েছে। কিন্তু জোট সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট জেলা প্রশাসক ম্যানুয়াল লঙ্ঘন করে সরকারি সম্পত্তি অধিগ্রহণের জন্য ১৯৮২ সালের অধিগ্রহণ আইনের আওতায় ৪/২০০৬-২০০৭ নম্বর এল.এ কেইস রুজু করে অধিগ্রহণের প্রþতাব ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। জেলা প্রশাসনের ০১/১০/০৬ তারিখের এল.এ/তিন-৩০/২০০৬/১৭৯ নম্বর স্মারকে রুজুকৃত এল.এ কেইস অনুমোদনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সিনিয়র সহকারী সচিব নালিশি সম্পত্তি ‘অধিগ্রহণযোগ্য নয়’ মর্মে প্রþতাব করেন।

কিন্তু তাদের এই আইনগত মতামতকে অগ্রাহ্য করে বেআইনিভাবে সরকারি সম্পত্তি অধিগ্রহণের প্রþতাব অনুমোদন করেন জোট সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট উপ সচিব (উন্নয়ন), যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন), সচিব, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। বিস্ময়কর ব্যাপার যে, তৈয়বা মজুমদারের এনজিও পল্লীশ্রীর অনুকূলে অধিগ্রহণের এই প্রþতাবটি বিদ্যুৎগতিতে অনুমোদিত হয়। মাত্র ১ দিনেই (১১/১০/০৬ তারিখে) ওই ৫ জনের স্বাক্ষরে প্রþতাবটি অনুমোদিত হয়। আরো মজার বিষয় যে, ঐ দাগে সাড়ে ৩৮ শতাংশ সরকারি ভূমি থাকলেও অধিগ্রহণ প্রþতাবে অìতর্ভুক্ত করা হয় মাত্র সাড়ে ২৬ শতাংশ। বাকি ১২ শতাংশ ভূমি ক্ষমতার কারসাজিতে অদৃশ্য কৌশলে বিনা অর্থে পল্লীশ্রীকে স্খায়ীভাবে পাইয়ে দেয়া হয়। এতে করে সরকারের ৫ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। বর্তমানে বহাল তবিয়তে পল্লীশ্রী অফিস পরিচালনা করছে।
Source: http://www.khabor.com/news/bangladesh/may/bangladesh_news_05292009_000011.htm