ছোট হয়ে আসছে ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরভিচ পুতিনের পৃথিবী। পশ্চিমা দুনিয়া তার গলা চেপে ধরেছে। পা হতে মাথা পর্যন্ত অবরোধ সংকুচিত করে ফেলছে তার নিঃশ্বাসের পরিসর। পৃথিবীর দেশে দেশে রুশ সম্পদ হয় সিন্দুকের ভেতর আটকা পরছে, অথবা দখল নিচ্ছে স্বাগতিকরা। ব্যক্তি পুতিন ও তার পার্টনার ইন ক্রাইম সের্গেই লাবরভ এখন Persona non grata।
রুশ ব্যাংক গুলোর দেহ হতে অক্সিজেন কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাদের ব্যাংকিং সিস্টেম বাজার অর্থনীতির দুনিয়ায় এখন প্রায় অচল।
Society for Worldwide Interbank Financial Telecommunication (SWIFT) সুবিধা হতে রাশিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পৃথিবীর ২০০ দেশের প্রায় ১১ হাজার financial institutions এই সুবিধা ভোগ করে থাকে। SWIFT হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের ব্যাক-বোন যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার হয়ে থাকে। এখন হতে রাশিয়া সেখানে অবাঞ্ছিত।
হয়ত পুতিন বাহিনী কিয়েভ হতে জালেনস্কি সরকারকে সরিয়ে খুব সহজেই ভিক্টর ইয়ানুকেভিচের মত একজন দালালকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে, তবে যুদ্ধ সেখানেই শেষ হবেনা। ইউক্রেইনের মাটি হতে রুশ সৈন্যদের বিদায়ের পর শুরু হবে দীর্ঘস্থায়ী নতুন যুদ্ধ। সে যুদ্ধে ট্যাংক, কামান অথবা দূর পাল্লার মিসাইল থাকবেনা, থাকবে একজন স্বৈরশাসকে ধরাশায়ী করার অর্থনৈতিক কলা-কৌশল।
পুতিনের ইউক্রেইন আক্রমণ ইউরোপের সাথে আটলান্টিকের ওপারের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে নজিরবিহীন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। অবরোধের ক্ষেত্রে ব্রিটেন সহ ইউরোপের অনেক দেশে যুক্তরাষ্ট্রের চাইতেও একধাপ এগিয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
নিউজিল্যান্ডের মত নীরিহ দেশ সেখান হতে রুশ এম্বাসাডারকে বহিষ্কার করতে যাচ্ছে। সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশ গুয়েতেমালা ইতিমধ্যে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সে দেশে অবস্থানরত রুশ রাষ্ট্রদূতকে।
এসব করলেই কি রাশিয়াকে বাকি বিশ্ব হতে আলাদা করা যাবে, প্রশ্নটা অনেকের। মোটেও না, ক্রান্তিকালে রাশিয়াও খুঁজে পেয়েছে কিছু নিখাদ বন্ধু। এই যেমন, কিউবার কাস্ত্রো পরিবার, ভেনিজুয়েলার নিকোলাস মাদুরো, সিরিয়ার বাশির আল আসাদ। কিছু কমন কোর্স একত্র করেছে রুশ বন্ধুদের; এই যেমন, বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল এবং দখল নিয়ে তা আমৃত্যু ধরে রাখা। ইউক্রেইন যুদ্ধ ন্যাটোর মত রুশ ব্লকের দুই বৈরী দেশ চীন ও ভারতকেও এনেছে কাছাকাছি।
ইউক্রেইনের মাটিতে রুশ ফায়ার পাওয়ারের ডমিনেন্স প্রশ্নাতীত। চাইলে খুব সহজে দেশটার দখল নিতে পারবে পুতিন বাহিনী । এবং এ কাজে খোদ ইউক্রেইনের একটা অংশের সমর্থন পাবে। দেশটার জনসংখ্যার ২৯ ভাগ হচ্ছে রুশ অরিজিন। তারা পুতিন বাহিনীকে কিয়েভে স্বাগত জানানোর জন্যে মুখিয়ে আছে। যেমন ছিল ২০১৪ সালে ক্রাইমিইয়া দখলের সময়।
পুতিন গংদের ইউক্রেইন অভিযানের নিন্দা জানাতে জালেনস্কির ইউক্রেইনকে ভালবাসতে হবে এমনটা জরুরি নয়। জরুরি হচ্ছে গণতন্ত্রবিহীন একটা দেশে একজন স্বৈরশাসকের প্রতিবেশী দুর্বল দেশকে গিলে ফেলার নোংরা পরিকল্পনা অনুধাবন করা। আপনি একই কাতারের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সমালোচনা করবেন পাশাপাশি এই অবৈধ দখলদারের তাত্ত্বিক গুরু পুতিনের গুনকীর্তন করবেন, কোথায় যেন কি একটা সমীকরণ মেলাতে আপনার অসুবিধা হচ্ছে।