ঘুরে ফিরে সেই বিতর্কিতরাই আসছেন ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে
তিন গ্র"পে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সংগঠন
আফজাল বারী : বিএনপির পাশাপাশি পুনর্গঠিত হ"েছ সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। খুব শিগগিরই বিদেশ যাবার আগেই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই সংগঠনের নয়া কমিটি ঘোষণা দিবেন। জানা গেছে, সংগঠনের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, জঙ্গি মদদদাতার ভাই ও কেলেঙ্কারির দায়ে পদ হারানো ছাত্রদল নেতারাই এই কমিটিতে স্থান পেতে জোর লবিং চালা"েছ বিএনপির হাইকমান্ডে। বিএনপির সিনিয়র নেতারাও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্রনেতাদের সামনে আনতে চেয়ারপারসনের কাছে তদ্বির করছেন। রীতিমতো বিভক্তও হয়ে পড়েছেন তারা। তাই ঘুরে ফিরে সেই বিতর্কিতরাই আসছে ছাত্রদলের নয়া কমিটিতে। এ কমিটি পূর্ণাঙ্গ নাকি আহ্বায়ক হিসেবে দেয়া হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এদিকে বিতর্কিত এবং অছাত্রদের হাতে কমিটি না দেয়ার দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। সে লক্ষ্যে ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে আজিজুল বারী হেলাল সভাপতি ও শফিউল বারী বাবু সাধারণ সম্পাদক এবং আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। এ কমিটির সভাপতি হিসেবে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু ও আমির"ল ইসলাম আলীম সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য লবিং করে। কিন্তু হাইকমান্ড সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সিনিয়র সহসভাপতি, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডুকে সহসভাপতি ও আমীর"ল ইসলাম আলীমকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন করেন। এই কমিটি বিলুপ্ত করে শিগগিরই নয়া কমিটি দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
দলীয় সূত্র জানায়, ছাত্রদের নিয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের নিয়ম থাকলেও অনেক ছাত্র নেতাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাজীবন থেকে অবসরে যাওয়া। খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে অন্য ছাত্র নেতারা অভিযোগ করেছেন, কোনো কোনো জেলায় কমিটির মেয়াদ ৭ বছরেরও বেশি হয়েছে। সারা দেশেই ছাত্রদল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। ফলে এবারের নির্বাচনে তর"ণদের ৩০ ভাগ ভোট থেকে বিএনপি বঞ্চিত হয়েছে। বর্তমান কমিটির বির"দ্ধে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, বর্তমান কমিটির দীর্ঘ দিনেও এ কমিটি সারা দেশের জেলা, থানা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন করতে পারেনি। নির্বাচন এবং আন্দোলনেও সংগঠনটি গুর"ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। এসব কিছু বিবেচনা করে খুব শিগগিরই কমিটি দেয়ার প্রক্রিয়া শুর"র নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, কমিটি পেতে ছাত্রদল তিন গ্র"পে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক গ্র"পের নেতৃত্ব দি"েছন সাধারণ সম্পাদক শফিউল বারী বাবু ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল। অপর একটি অংশের নেতৃত্ব দি"েছন সিনিয়র সহসভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সহসভাপতি জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু। এ ছাড়াও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমীর"ল ইসলাম আলীম ও খোকনের নেতৃত্বে আরেকটি গ্র"প সক্রিয় রয়েছে।
ছাত্রদল সূত্র জানায়, হেলাল-বাবু ও টুকু-কুণ্ডু গ্র"পের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। পরস্পরের বির"দ্ধে অভিযোগ তুলেছে বিভক্ত নেতারা। অভিযোগ রয়েছেÑ সাবেক ছাত্রদল নেতা ইলিয়াস আলীর অনুসারী হিসেবে এবং হাওয়া ভবনের প্রভাবশালী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বকুলের বন্ধু হওয়ার সুবাদেই আজিজুল বারী হেলাল সভাপতি। আর দায়িত্ব পেয়ে ক্ষমতার প্রভাবে কোটিপতি বনে গেছেন হেলাল-বাবু ও তার অনুসারীরা। টুকু গ্র"পের অভিযোগÑ হেলাল-বাবু ও তার অনুসারীরা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের চেয়ে লোপাটে ব্যস্ত ছিল। উদাহরণ দিয়ে ওই গ্র"প জানায়, শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিং নির্মাণকালেই হেলাল-বাবু চাঁদা নিয়েছে ৮০ লাখ টাকা এবং সিলেট এয়ারপোর্ট থেকে নিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা। এটা ছাত্রদলে ওপেন সিক্রেট। শফিউল বারী বাবুর ছিল অস্ত্র মামলা। তাদের আরো অভিযোগÑ এ দুই নেতাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে লিয়াজোঁ রাজনীতিতে লিপ্ত ছিলেন বলে ছাত্র আন্দোলন সংগ্রাম সম্ভব হয়নি। ফলে ওই সরকার আমলেই বাবুর অস্ত্র মামলা খালাস পায়। ছাত্রলীগ নেতা পার্থ মজুমদার হত্যা মামলার আসামিও হেলাল-বাবুসহ তার অনুসারীরা। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার আমলসহ দীর্ঘ ৭ বছর হেলাল একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকুরীরত ছিলেন। অবশ্য এবার ছাত্রদলে থাকছেন না আজিজুল বারী হেলাল।
অপরদিকে হেলাল-বাবু গ্র"পও অভিযোগ তুলেছে টুকু গ্র"পের বির"দ্ধে। এদের অভিযোগÑ টুকুর ভাই আব্দুস সালাম পিন্টু প্রথমে শিল্প উপমন্ত্রী ও পরে শিক্ষা উপমন্ত্রী ছিলেন। ভাইয়ের প্রভাবেই কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে টুকু গ্র"প। এছাড়াও টুকুর সহোদর দুই ভাই কারাবন্দী পিন্টু ও পলাতক মাওলানা তাজ উদ্দিন ২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলা মামলার আসামি। তাদের বির"দ্ধে জঙ্গি মদদেরও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে আমীর"ল ইসলাম আলীম টুকু গ্র"পেই ছিল। বনিবনা না হওয়ায় বিভক্ত হয়ে আলাদা গ্র"প করেছে সে। ছাত্রদল নেতাদের চোখে আমীর"ল ইসলাম আলীম চরিত্রহীন। উদাহরণ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক নেতা জানান, ২০০৪ সালে আলীম ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি। ওই সময় জনৈক ছাত্রদল কর্মীর বান্ধবীর শ্লীলতাহানি ঘটায়। এ অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি হলের ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দাবির মুখে সে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। বর্তমানে আলীমের গ্র"পে যারা রয়েছে তাদের অনেকেই বহিস্কৃত এবং জহুর"ল হক হলের ছাত্রদল নেতা খোকন হত্যা মামলার আসামি।
সূত্র: http://www.bhorerkagoj.net/content/2009/06/22/news0006.php