Calling all Bangladeshis...

শীতের আমেজ শেষে প্রকৃতিতে আসে বসন্তের পালা, তারপর গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত, হেমন্ত এবং ঘুরে ফিরে আবারও সেই শীত। কালের এ চক্রের যেন বিশ্রাম নেই, বিরতি নেই, ঘড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে পাগলা ঘোড়ার মত ছুটছে দিন, মাস এবং বছরগুলো। দেখতে দেখতে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টারও বয়স এক বছর হয়ে গেল। মাতৃভূমির প্রবাহমান ঘটনার সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে অনেকের মত আমরাও ক্লান্ত, বিপর্য্যস্থ এবং আশাহত। গত এক বছরে পদ্মা-মেঘনার পানি অনেকদূর গড়িয়েছে, বয়স ১৮মাস হতেই বিদায় নিয়েছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ফিরে পেয়েছে হারানো ক্ষমতা, সচল হয়েছে গণতন্ত্রের চাকা। আশা ছিল মাতৃভূমির পূবাকাশে নতুন সূর্য্যের উদয় হবে, দোয়েল-কোয়েল পাখির গানে আবার মুখরিত হয়ে উঠবে গ্রামবাংলা। পাঠক, আজন্ম লালিত স্বপ্ন হতে বাংলাদেশ কত ক্রোশ দূরে মুখ থুবড়ে পরে আছে তা বিচারের ভার আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম।

একটা সূস্থ জাতির প্রতিদিনের জীবনে রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গলা ফাটাতে হয়না, রাজনীতি মিশে থাকে কথা এবং কাজে। এর অস্তিত্ত্ব অজান্তেই মিশে যায় আমাদের শিরা-উপশিরায়। রাজনীতিকে হাত দিয়ে ছুতে হয়না, একে উপলদ্বি করতে হয়। কিন্তূ কেন জানি এমনটা হতে পারছেনা আমাদের জীবনে, না চাইলেও রাজনীতি হানা দিচ্ছে আমাদের অন্দর মহলে। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক সহ সমাজের সবাইকে রাজনীতির কাছে আত্মসমর্পন করতে হচ্ছে অসহায়ের মত। জ্বলছে শিক্ষাংগন, পুড়ছে জনসম্পদ, বন্ধ হচ্ছে শিল্প-কারখানা, জ্যামিতিক হারে বাড়ছে জনসংখা, বাড়ছে বেকারত্ব। শৃখলতার লৌহবলয়ে বেড়ে উঠা রাইফেল বাহিনীর পৈচাশিকতায় লন্ডভন্ড হচ্ছে মানবতার নূন্যতম মূল্যবোধ। পাশাপাশি নেতা-নেত্রী এবং দলীয় পূজার মন্ডপে হুমড়ি খাচ্ছে তথাকথিত দেশ সেবকের কাফেলা। তাহলে জাতি হিসাবে আমরা কি পূরোপূরিই দেউলিয়া হয়ে গেছি? ধাবমান কালের চক্রই বলে দেবে আমরা এখন কোথায় এবং চলছি কোন কক্ষপথে।

পাঠক, আপনি যদি প্রবাসী হয়ে থাকেন কষ্ট করে পর্দা সড়িয়ে জানালাটা খুলে দিন, বাইরের আকাশটার দিকে তাকিয়ে বুকভরে নিশ্বাষ নিন এবং দু’চোখ মেলে উপভোগ করুন জানালার বাইরের বয়ে চলা জীবন। যতদূর চোখ যায় কোথাও কি দেখছেন উন্মত্ত ছাত্রদের পৈচাশিক তান্ডব? রাস্তা আটকিয়ে কেউ কি সভা করছে নেত্রী পূজার বন্দনার? পুলিশ কি আপনাকে ধাওয়া করছে কিছু অর্থের আশায়? আমি নিশ্চিত এ ধরনের দুঃসহ অভিজ্ঞতার কোনটাই আপনাকে স্বাগত জানাবেনা। এবার চোখ বুজে চলে যান প্রিয় মাতৃভুমির কোন এক অজানা শহরে। প্রতি পদে আপনাকে অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষা করবে মনুষ্য সৃষ্টি কদর্য্যতার নগ্ন বাস্তবতা।

কেন এমনটা হবে? পাকিস্থানী শোষকদের নাগপাশ হতে মুক্তি পেতে রক্তের যে সমুদ্র বয়ে গিয়েছিল তার শেষ ঠিকানা কি তবে ছিল এই নর্দমা? নিশ্চয় না, আসুন আমরা কথা বলতে শিখি, প্রতিবাদের ভাষা রপ্ত করতে শুরু করি। দেখতে দেখতে অনেক বেলা হয়ে গেছে, অপেক্ষা এবং ধৈর্য্যের ঠেলা গাড়িতে চড়তে গিয়ে আমাদের বিকলাংগ অবস্থা প্রায়। চলমান বিশ্বে নিজদের অবস্থান নির্ধারণ করার এটাই সময়, তার জন্যে চাই নতুন ভাষা, একবিংশ শতাব্দির ভাষা, নেত্রী অথবা দল পূজার ভাষা নয়।
ছোট হলেও আমাদের প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাব, কথা বলে যাব নষ্ট রাজনীতির নষ্টামীর বিরুদ্বে। আমাদের সাফল্য এবং ব্যর্থতার বিচার করার সময় যেদিন আসবে আমরা আপনাদের দুয়ারে কড়া নাড়ব। ততদিন আপনাদের পাশে পাওয়ার আশা করব।

যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন, সূস্থ থাকুন।

Ami Bangladeshi