হতে পারে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়েছিলেন দেশ বিক্রীর মিশন নিয়ে, হতে পারে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া পুনঃক্রয় করে নেবেন বিক্রীত দেশ। ক্রয় বিক্রয়ের গ্যাড়াকলে বাংলাদেশ নামের একটা দেশ কতবার হাতবদল হয়ছে তার হিসাব স্বয়ং ঈশ্বরও রাখেন কিনা সন্দেহ আছে। তৃতীয় বিশ্বের লুটেরা গণতন্ত্রকে ভালবাসতে চাইলে আমাদের মেনে নিতে হবে বাংলাদেশ নামের একটা দেশ কেনাবেচার লাভজনক পন্য এবং তা পৃথিবীর বিভিন্ন পূঁজিবাজারে বিক্রী হচ্ছে চড়ামূল্যে। দেশ নিয়ে রাজনীতিবিদ্দের এই পুরানো বানিজ্য আমাদের জন্যে নতুন কোন চমক নয়। হতে পারে তাদের জন্যে এ হচ্ছে বেচে থাকার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, কিন্তূ আমার মত বাবুর হাটের পান-তামুক খাওয়া স্বদেশীর কাছে দেশের মালিকানা ব্যাপারটা কেবলই আদার বেপারী হয়ে জাহাজের খবর নেয়ার মত। তবে যে খবরটা জাহাজের খবর নয় তা হল, গতকাল ঘটে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা।
সুলতান সালাউদ্দিন টুকু নামের জনৈক ছাত্র(!) ক’মাস আগে জাতিয়তাবাদী ছাত্রদল নামের চৌকস সেনাদলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন জনৈক মরহুম নেতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের মিশন নিয়ে। এ নির্বাচন সন্তূষ্ট করতে পারেনি সেনাদলের অনেক জেনারেল ও ব্রিগেডিয়ারদের। অভিযোগ, সেনাপতি টুকু নিজে এবং তার পারিবার মৌলবাদী সন্ত্রাসের সাথে জড়িত। তাই মৌলাবাদী সন্ত্রাষকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শান্তিকামী গ্রীন জোনে ঢুকতে না দেয়ার পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে সার্বক্ষনিক পাহাড়ায় দাঁড়িয়ে যায় জাতিয়তাবাদী সন্ত্রাস। আফটার অল জাতিয়তাবাদী সন্ত্রাস যে কোন মানদন্ডে মৌলবাদী সন্ত্রাসের চাইতে অধিকতর বৈধ ও গ্রহনযোগ্য। এমনই এক গ্রহনযোগ্য সন্ত্রাষে আহত হয়ে জাতিয়তাবাদী জেনারেল সুলতানউদ্দিন টুকু ঠাই নিয়েছেন হাসপাতালে।
বাংলাদেশী ইতিহাসের সাথে যাদের পরিচয় নেই তাদের হয়ত বুঝতে অসূবিধা হবে রাজনীতির মাঠে চর দখলের মত বিশ্ববিদ্যালয় দখল কেন এতটা জরুরী। বাংলাদেশটাই এ রকম, এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চর্চা হয় হাতিয়ার তত্ত্ব, গণতন্ত্রের উঠানে অনুষ্ঠিত হয় পরিবারতন্ত্রের ওরস মাহফিল। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ত্ব, গণতন্ত্র, ইতিহাস, ভূগোল, পৌরনীতি, সবকিছুকে আগলে রাখার দায়িত্বে থাকতে হয় ছাত্রদের। উচ্চমাধ্যমিক পাশ, মা-বাবার মাসিক মাসোহারার উপর নির্ভরশীল ১৭/১৮ বছরের একজন যুবককে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেই লাভ করতে হয় গণতন্ত্র, সমাজতত্ত্ব, অর্থনীতি, ধর্ম, মুক্তিযুদ্বের ইতিহাস, রাজাকার তত্ত্ব সহ তাবৎ ভাল-মন্দের নবুয়ত। মরহুম নেতাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রদের নামতে হয় সঠিক ইতিহাস প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে, গণতন্ত্র নিশ্চিত করার যুদ্বে, রাজাকার নিধনের ঐতিহাসিক দায়িত্বে। মাল্টি ফ্রন্টে যুদ্ব চালাতে প্রয়োজন হয় পূঁজির। স্বভাবতই পূঁজির যোগার করতে ছাত্রদের নামতে হয় চাঁদাবাজী, ব্ল্যাকমেইলিং, হত্যা, ধর্ষনের মত ততোধিক পবিত্র কাজে। বাংলাদেশের তাবৎ ব্যবসা বানিজ্য ছাড়াও কমিশনের ধান্ধায় ছাত্রদের ঢু মারতে হয় পতিতালয় পর্য্যন্ত। এমন মহানুভবতার ছাইভস্ম হতেই জন্ম নেয় আমানুল্লাহ আমানের মত নতুন এক মহামানবের, যার উত্থানে বাংলাদেশ আলোকিত হয়, আলোকিত হয় তার শিক্ষা ব্যবস্থা, ধন্য হয় ছাত্রজীবন, ধন্য হয় রাজনীতি।
ছবি: দৈনিক ইত্তেফাক
এই একটা সত্য হজম করতে আমার কেন জানি কষ্ট হয়, বাংলাদেশী শিক্ষাংগনে নেতা/নেত্রীর সন্তানাদির অনুপুস্থিতি। এক নেত্রীর সুপার ট্যালেন্টেড সন্তান সুদূর মার্কিন মুলুকে লেখাপড়া শেষে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক হিসাবে। অন্য নেত্রীর দুই সন্তান আদৌ লেখাপড়া করেছেন কিনা কেউ বলতে পারেনা। শোনা যায় জাতিয়তাবাদের অকুতভয় সৈনিক জেনারেল নাজমুল হুদার দুই কন্যাসন্তান লন্ডনে লেখাপড়া করছেন মাসে ২০ লাখ টাকা খরচ করে। বাবুরহাটীয় রক্ত পানি করা অর্থে সন্তানাদি বিদেশ পাঠানো বাংলাদেশের বাস্তবতায় অকল্পনীয় ও অবাস্তব, যার কারণে একজন কৃষক তার সমস্ত সম্পদ বাজি রেখে সন্তানকে স্থানীয় স্কুল কলেজে পাঠায় নতুন দিনের আশায়। নতুন দিন আসে ঠিকই, তবে সে দিন হয় হতাশার, আশা ভংগের।
ছাত্রদের কাজ লেখাপড়া, পৃথিবীর দেশে দেশে এ প্রতিষ্ঠিত সত্য। পৃথিবীতে দ্বিতীয় এমন দেশ নেই যেখানে জাতীয় রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহ্রত হয়ে বলি হচ্ছে ছাত্রদের শিক্ষা জীবন। নেত্রীরা দেশ বিক্রী করে পারিবারিক পিকনিক করবেন তাতে জাতির বিশেষ কোন আপত্তি আছে বলে মনে হয়না, পথে পথে কাটা বিছিয়ে দেশ বিক্রী কন্টকাকীর্ন করলেও কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে হয়না। কিন্তূ জাতির মেরুদন্ড শিক্ষাকে পংগু করে দিনের পর দিন নেত্রী পূজাঁর বলি বানাতে হবে এমন একটা সত্য মেনে নিতে কোথায় যেন বাধা রয়ে গেছে।