বাংলা ভাষার সীমিত জ্ঞানের পরিধি যদি আমাকে প্রতারিত না করে তাহলে ধরে নেব পবন শব্দটার ডাল-ভাতীয় অর্থ বাতাস। ভুল হলে ক্ষমা চাইলাম এবং ধরে নিলাম পাঠকরাও ক্ষমা করে দিয়েছে আমার এই অনিচ্ছাকৃত ভুল। বাতাস শব্দটাকে ভেজা কাপড়ের মত নিংড়ালে এর ভেতর হতে কাব্যিক রস জাতীয় কিছু বের হয় কিনা তা কবি-সাহিত্যিকরাই ভাল বলতে পারবেন, তবে আমার কাছে বাতাস কেবল বাতাসই। বাতাসের প্রতিশব্দ ’হাওয়া’য় যেমন থাকে পাকি গন্ধ, তেমনি পবন উচ্চারনেও খুঁজে পাই প্রতিবেশী দাদাদের সূড়সূড়ি। তাই বাতাসকে বাতাস বলতেই আমার বেশী পছন্দ। সাহিত্য জ্ঞানে আমার এই দৈন্যতা আমাকে আজীবন ভূগিয়েছে, যতদিন বেঁচে থাকব আরও ভোগাবে সন্দেহ নেই। তবে ক্ষমা বলে বাংলা অভিধানে একটা শব্দ আছে, পশ্চিমা কায়দায় এর ঘন ঘন ব্যবহারই হয়ত নিশ্চিত করবে ব্লগারদের সাথে আমার একটা সন্মানজনক সহাবস্থান।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মহাসচিব খন্দকার দেলাওয়ার হোসেন নিশ্চয় আমার মত বাবুর হাটীয় ম্যাংগো পিপলদের কেউ একজন নন? এমন একটা মেগা পার্টির সাধারণ সম্পাদক্কে আমজনতার কাতারে দাঁড় করিয়ে অবমূল্যায়ন করার মত স্পর্ধা আমার নেই। অবশ্য চাইলেই যে আমি সমর্থ হব তাও নয়, মরণ ভয় নামের ভয়টা আমার ভেতরও বাস করে। এই দেলোয়ার হোসেন সাহেব নিশ্চয় অনেক ভেবে চিন্তে এবং আশায় বুক বেধে ছেলের নাম রেখেছিলেন আকতার হামিদ, ওরফে পবন। ঐশ্বরিক পবনের বিশালতা কেবল সাড়ে তিন হাত বলয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ব থাকেনা, এর ব্যাপ্তি জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে। শিশু পবনকে নিয়ে এরকম একটা স্বপ্নই হয়ত দেখেছিলেন পিতা দেলোয়ার, জ্ঞান গরিমায় বাতাসের মতই বিশ্ব ব্রম্মান্ডের সর্বত্র ছড়িয়ে পরছে পবনের দ্যুতি। একজন আইনজীবির এ ধরনের স্বপ্ন দেখাটা খুব স্বাভাবিক, হোসেন সাহেবই বা বাদ যাবেন কেন? সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশে ম্যাংগো জীবনের সাথে রাজনৈতিক জীবনের সংগম হলেই সবকিছু কেমন লেজে-গোবরে হয়ে যায়। স্বপ্ন এর মধ্যে অন্যতম। এক কালের ’তুখোড়’ বামপন্থী রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ দেলোয়ার হোসেন নিজেই কি জানতেন রাজনীতিতে জড়িয়ে সংসদ ক্যাফেটেরিয়ার মত সরকারী জায়গা হতে চাল, ডাল, তেল, লবনের মত সামান্য গ্রোসারীও চুরি করতে হবে? কিন্তূ তিনি তা করলেন এবং গলাবাজির মাধ্যমে তা স্বীকারও করে নিলেন। পিতার পথ ধরে সন্তান পবনও বেরিয়ে এল নামের খোলাস হতে। পবন নামের সাহিত্যকে নির্বাসনে পাঠিয়ে মিশে গেলেন বাংলাদেশের নষ্ট জগতের নষ্ট বাতাসে। চাঁদাবাজী, কারজ্যাকিং, অপহরন ও সম্পদ দখলের মত হাজারো অবৈধ কাজে জড়িয়ে নিজ নামের প্রতিই শুধু অবিচারই করলেননা, সাথে ভেংগে দিলেন নামের গর্বে গর্বিত পিতার স্বপ্ন। সময়টা চাইকোভস্কির ‘সোয়ান লেক’ সিম্ফোনির মত ক্ষমতার সিম্ফোনী গাওয়ার সময় হোসেন পরিবারের জন্যে। ক্ষমতার ভরা যৌবনে কাউকে জেলে যেতে হয়না, দেশীয় রাজনীতির এমন একটা গৌরবজ্বল ঐতিয্যে ইতি টেনে পবন হোসেন সৃস্টি করেন নতুন ইতিহাস, জেলে গেলেন পিতাকে সংসদ দুনিয়ার মালিক রেখে। পরবর্তীতে ১৪বছরের কারাবাসে পাঠিয়ে পবনের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দেন ১/১১ নামের ক্ষমতার বর্গীরা।
পবন নামের রাজনৈতিক বাই-প্রডাক্টের এখানেই মৃত্যু হওয়ার কথা ছিল, অন্তত সভ্য কোন দেশের বেলায়। কিন্তূ সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে এমনটাও হল, ক্ষমতার পালা বদলের সাথে পবনও বেরিয়ে এল স্বসন্মানে এবং ফিরে পেতে চাইল হারানো সাম্রাজ্য। কিন্তূ ততদিনে চাইকোভস্কির সিম্ফোনীর জায়গা করে নিয়েছে বিটহোভেনীয় সিম্ফোনী, পাশাপাশি ক্ষমতার সরোবরে নাইতে নেমে গেছে নতুন পবনের গুষ্টি। এই পবনকেই নতুন করে খুঁজছে বাংলাদেশের পুলিশ। অভিযোগটা খুবই অভিনব। পাঠকদের জন হিংঙ্কলে নামের একজন আমেরিকানের কথা মনে আছে কিনা জানিনা। হ্যাঁ, আমি প্রেসিডেন্ট রোনালড রিগ্যানকে গুলি করা হিংঙ্কলের কথাই বলছি। ’ট্যাক্সি ড্রাইভার’ নামের একটা হলিউডি ফিল্মে উঠতি নায়িকা জডি ফষ্টারকে দেখে প্রেমে মজে যায় এই মার্কিন তরুন। প্রতিদিন চিঠি পাঠায়, ইনিয়ে বিনিয়ে প্রেম নিবেদন করে কল্পনার প্রেমিকাকে। কিন্তূ কোন কিছুতে কাজ হচ্ছেনা দেখে দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যে বেছে নেয় বাঁকা রাস্তা। প্রেসিডেন্ট রিগ্যানকে খুব কাছ হতে গুলি ছুড়ে রাতারাতি তারকা বনে যায় সে, যা না চাইলেও দৃষ্টিতে চলে আসে তরুনী জডি ফষ্টারের। আকতার হামিদ পবনও নাকি উনার গড মাদারের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যে ককটেল ফাটিয়েছিলেন। পার্থক্য হল, মাতা ককটেলের খুব একটা কাছাকাছি ছিলেন্না। এ গল্পে জডি ফষ্টারের মত যৌনাবেদময়ী কোন নায়িকা জড়িত থাকার কথা শোনা যাচ্ছেনা, যা শোনা যাচ্ছে তা হল পবনের খায়েশ। বিএনপির ঢাকা নগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার খায়েশে দৃষ্টি দিচ্ছিলেন্না গড মাদার। তাই ককটেলের আওয়াজে মাতার ঘুম ভাংগানোর চেষ্টা করলেন আকতার হামিদ পবন।
কি ছিল পবনের মনে, আওয়াজ শুনেই কি মাতা বলবেন ’হে সন্তান, এসো, সম্পাদক বনে ধন্য কর আমায়’, এমনটা? নিশ্চয় না। তবে আশাটা বোধহয় এ রমক ধরনের কিছু একটা ছিলঃ ককটেল আওয়াজে গর্জে উঠবে বাংলাদেশ, প্রতিবাদের জোয়ারে ভেসে যাবে নগর বন্দর, শুরু হবে সরকার পতনের ফাইনাল চ্যাপ্টার। আন্দোলনের সফল সমাপ্তিতে মাতা সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরবেন, অভিনন্দন জানাবেন এমন একটা সফল ককটেল আয়োজনকে। বাংলাদেশে এসব পান্তাভাত, পবন যেমন জানেন তেমনি জানেন পবনের ধর্মমাতা। সমস্যাটা দেখা দেয় অন্য জায়গায়। ক্ষমতার রাজনীতিতে ককটেল নাটকের An expert Headmaster শেখ হাসিনারও ভাল করে জানা আছে এসব নাটক। লেজ ধরে টানলে যেমন মাথা চলে আসে, তেমনি গোলাম সাব্বির শোভন আর প্রদীপ কুমার নামের সহযোগীদের টানতেই বেরিয়ে এল পবনের নাম। নাটকের ক্লাইমেক্স হাই লেভেল নিয়ে যেতে পবন নিজে আহতের ভূমিকায় অবস্থান নেন হাসপাতালে। কিন্তূ জট খুলে যাচ্ছে দেখে নিঁখোজ হয়ে যান হাসপাতাল বেড হতে।
অনেকে বলবেন এসব তো ক্ষমতাসীন দলের কথা, আসল কথার প্রমান কই? যারা ফজলি টাইপের ম্যাংগো তারা হয়ত গলা মেলাবেন এমন একটা সন্দেহের সাথে। কিন্তূ আমার মত নেংরা টাইপের ম্যাংগোদের কিছু জিনিষ বুঝতে আজকাল খুব একটা অসূবিধা হয়না। বলতে পারেন অভিজ্ঞতা। যেমন এই অভিজ্ঞতার কারণেই বিশ্বাষ করি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর চেকের মাধ্যমে চাঁদাবাজীর কাহিনী, বিশ্বাষ করি বিরোধী নেত্রীর ইয়াতিম ফান্ডের ৪কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ।
আকতার হামিদ পবনের জন্যে সমবেদনা রইল। আশাকরি পরবর্তীতে এমন একটা নাটক আয়োজনের খুটিনাটি দিকগুলোর ব্যপারে আরও বেশী যত্নশীল হবেন। কয়েক কদম এগিয়ে মাতার শরীরে ককটেলটা ফুটালেই হয়ত জন হিংকলের মত বাজি মাত করতে পারতেন তিনি। তবে হিংঙ্কলে নাটকের শেষ পর্বে প্রমানিত হয়েছিল বেচারা হিংঙ্কলে ছিলেন মানষিকভাবে বিকারগ্রস্থ একজন রুগী, এবং জডি ফষ্টার ছিলেন সমকামী। আশাকরি ককটেল নাটকের উদ্যক্তোরা কাহিনীর এ দিকটার কথাও মনে রাখবেন।
হাজার বছর বেঁচে থাকুক বাংলাদেশের রাজনীতি!
http://ittefaq.com.bd/content/2010/03/01/news0429.htm