আধুনা বিশ্বে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ডিজিটাল শব্দটার উৎপত্তি মূলত ইংরেজী ডিজিট ও লাতিন ডিজিটাস (আংগুল) শব্দ হতে। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের তাবৎ তথ্যকে বাইনারী সংখ্যায় (০ ও ১) কনভার্টের মাধ্যমে তথ্য প্রবাহে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হয়েছে তার সুবিধা ভোগ করছে গোটা দুনিয়া। বাতাসকে যেমন নির্দিষ্ট বলয়ে আটকে রাখা কঠিন, তেমনি প্রযুক্তির উন্নয়নও দেশ আর মহাদেশের মানচিত্র দিয়ে আটকে রাখা সম্ভব হয়না। স্বভাবতই পশ্চিমা দুনিয়ার ডিজিটাল ঢেউ বঙ্গোপসাগরের দেশ বাংলাদেশে আঘাত হানতে খুব বেশী সোময় নেয়নি। অধিকন্তু বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ডিজিটাল শব্দটা অর্ন্তভুক্ত করায় এমন একটা বাস্তবতার সৃষ্টি হয়েছে যার ফলে আগামী ৪ বছর দেশজুড়ে এ শব্দের জোয়ার বইবে তাতে সন্দেহ করার কোন কারণ নেই।
নীচের খবরগুলো স্থানীয় একটা দৈনিকের প্রথম পাতা হতে নেয়াঃ
১) চাঁদা না পেয়ে পুরান ঢাকায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যাঃ বিপ্লব বিশ্বাস: রাজধানীর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক (ভিক্টোরিয়া পার্ক) পানির ট্যাঙ্কের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রেম কৃষ্ণ রায় (৩৫) নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে। প্রেম কৃষ্ণ রায়ের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, দেড় মাস আগে শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত শহীদ পরিচয় দিয়ে ৪০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল সন্ত্রাসীরা।
২) দেশের অর্ধেক মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নেই, মন্ত্রীর অকপট স্বীকারোক্তিঃ খাদ্য ও দুর্যোগ মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বিভিন্ন কারণে দেশের ৫২ ভাগ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
৩) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা নভোথিয়েটার দুর্নীতির তিনটি মামলাই খারিজঃ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নভোথিয়েটার নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা তিনটি আলাদা মামলা খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
শতকরা ৬০ জন অশিক্ষিতের দেশ বাংলাদেশ। ইংরেজী দূরে থাক, মাতৃভাষা বাংলা পড়তে লিখতে পারেন না এমন সংখ্যা কয়েক কোটি। এমন একটা দেশে ডিজিটাল বিপ্লবের নামে সরকার যে সব উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের কথা বলছেন শুনে মনে হতে পারে দেশটা তার এনালগ যুগ হতে বেরিয়ে এল বলে। আসলেই কি তাই? উপরের সংবাদগুলো কি এমনটাই প্রমান করে? খবরে প্রকাশ দুদিন আগে মালিবাগের আবুজর গিফরী কলেজের সরকার দলীয় ছাত্ররা কলেজের দুটা রুম দখল করে নিজেদের চাঁদাবাজির অফিস বানিয়েছে। প্রসঙ্গটা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের একজন বলেছেন সভ্যতা সংকট চলছে ওখানে। এমন একটা সংকটে গোটা বাংলাদেশের অস্তিত্বই আজ সংকটাপন্ন, তথ্যটা কি ডিজিটাল প্রধানমন্ত্রীর খাস কামড়া পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে?
ইন্টারনেটের জাল বিছিয়ে গোটা বাংলাদেশকে উন্নতির চরম শিখরে তুলে আনার মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রীর তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়। সপ্তাহখানেক আগে একই ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ দেয়া হয়েছে রংপুরে। এ নিয়ে আনন্দ উল্লাসের হিল্লোর বয়ে যাচ্ছে আওয়ামী ঘরানায়। দুর্মুখেরা বলছেন প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল তত্ত্বের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজ ছেলের জন্যে পলিটিক্যাল গ্রাউন্ড তৈরী করা। শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল উপদেষ্টা সার্ভিসের জন্যে সজীব ওয়াজেদ জয়কে মাসে ১৫,০০০ ডলার করে বেতন দেয়া হচ্ছে। ঢাকায় বিরাট এক সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী জাতিকে ইংরেজী স্বপ্ন দেখিয়ে জানান দিলেন নিজের উপস্থিতি।
দেশে বিদ্যুত নেই, গ্যাস নেই, পানি নেই, নেই খাদ্য নিরাপত্তা। সাথে যোগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল সেনাদের মধ্যযুগীয় বর্বরতা। যে দেশে আইনের শাসন নেই, নেই বাচা মরার নূন্যতম নিশ্চয়তা, সে দেশে ডিজিটাল শব্দে জাতির গলায় পরানো হচ্ছে পারিবারিক গোলামীর নয়া জিঞ্জির, জয়। শেখ মুজিবকে জাতি সন্মান ও শ্রদ্ধার সর্বোচ্চ আসনে বসিয়েছে সত্য, কিন্তু তার মানে এই নয় তার লম্পট দৌহিত্রকেও ক্ষমতায় বসিয়ে এর মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
অতীতে ডিজিটাল তত্ত্বের মত এমন অনেক হাতী ঘোড়া তত্ত্ব জাতির ঘাড়ে চেপেছে এবং শেষ পর্যন্ত ঠাঁই নিয়েছে নর্দমায়। ক্ষমতার পালা বদলের সাথে শেখ পরিবারের বর্তমান ডিজিটাল তত্ত্বও ঠাঁই নেবে এনালগ আস্তাকুঁড়ে, প্রধানমন্ত্রীরও তা ভাল করে জানা আছে। সমস্যা হচ্ছে, এসব হাতী ঘোড়া তত্ত্বেরও একটা প্রাইস ট্যাগ আছে, যার মূল্য গুনতে হয় জাতির পকেট হতে।