সময়টা ১৯৮০ সালের আগস্ট মাসের কোন একদিন। সোভিয়েত শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ডেপুটি মন্ত্রীর সাথে দেখা করব বলে অপেক্ষা করছি মন্ত্রনালয়ের মস্কো অফিসে। এর আগেও একবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি সভা সমিতি নিয়ে মন্ত্রী ব্যস্ত থাকার কারণে। এ যাত্রায় খুব ভোরে যেতে হল যাতে মিটিং শুরুর আগেই মন্ত্রীকে ধরা যায়। ঠিকমত প্রাতরাশ করা হয়নি, তাই ডান হাতের ব্যাপারটা সমাধার জন্যে মন্ত্রনালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতে ঢুকে পরলাম হাতে বেশকিছুটা সময় আছে বলে। খা খা করছে সকালের ক্যাফেটেরিয়া। হাতে ট্রে নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি কাউন্টারের সামনে। কিন্তু এখানেও কেউ নেই। নিঃশব্দে কেউ একজন ঢুকল এবং হাতে ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল আমার পেছনে। অপেক্ষা করতে গিয়ে দুজনেই বিরক্ত এবং এ নিয়ে প্রথম উষ্মা প্রকাশ করল আমার পেছনে দাঁড়ানো আগন্তুক। কথা বলার পর্বটা এভাবেই শুরু। মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে এসে আমার অন্তহীন অপেক্ষার কথাও ভাগাভাগি করলাম সদ্য পরিচিত মানুষটার সাথে। বেশ কিছু কর্কশ মন্তব্য করলাম মন্ত্রীদের লাগামহীন সভা আর জবাবদিহিতাবিহীন সোভিয়েত সমাজ ব্যবস্থার উপর। ভদ্রলোক মুচকি হেসে জানতে চাইলেন আমার নাম ধাম। পরিচয়টা আরও গভীর হল নাস্তা পর্বে। ভদ্রলোক জর্জিয়ান, বাড়ি রাজধানী তিবিলিসিতে। মন্ত্রনালয়ে কি করা হয় এমন একটা প্রশ্নের জবাব খুব সযত্নে এড়িয়ে গেলেন। নাস্তা শেষে একে অপরকে শুভকামনা জানিয়ে বিদায় নিলাম। আমি ফিরে গেলাম মন্ত্রীর দর্শনার্থীদের জন্যে সংরক্ষিত ওয়েটিংরুমে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সহকারী জানাল দেখা করার জন্যে ভিতরে যেতে পারি। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে নক করে ঢুকে পরলাম মন্ত্রীর কক্ষে। এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। ক্যাফেটেরিয়ার এক টেবিলে বসে যার সাথে মন্ত্রীদের অযোগ্যতা নিয়ে আবোল তাবোল মন্তব্য করেছি তিনি আর কেউ নন সুপার পাওয়ার সোভিয়েত ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ডেপুটি মন্ত্রী স্বয়ং। আমাকে দেখে মন্ত্রী অট্টহাসিতে ফেটে পরলেন। সাক্ষাৎ শেষে খুশী মনে ঘরে ফিরে একটা কথা মনে হতেই মনটা খারাপ লাগল, মন্ত্রীর পুরো নামটাই জানা হলনা।
সময়টা ২০১০ সালের মার্চের কোন একদিন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর মাহবুবুর রহমান তালুকদারের অফিস। মন্ত্রী ফোন করছেন আল আরাফা ব্যাংকের এমডি জনাব এম এ সামাদ শেখকে। একই ব্যাংকের রাজশাহী শাখার আলাউদ্দিন আল আজাদ নামের জনৈক সিনিয়র অফিসারের চাকরী বাঁচাতে এ ফোন। আলাউদ্দিন আল আজাদকে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বদলি ও শোকজ শেষে বরখাস্তের প্রক্রিয়া চলছে। মন্ত্রী-এমডি কথোপথনের বাংলা অনুবাদ করলে যা দাঁড়ায় তা হল, মন্ত্রী ক্ষমতার আধিপত্য জাহির করে ব্যাংকের এমডিকে নির্দেশ দেন আলাউদ্দিন আল আজাদের বহিস্কার আদেশ স্থগিত করার জন্যে। উত্তরে এম ডি জানান মাহবুবুর রহমান নামের কোন মন্ত্রীকে উনি চেনেন না। এম ডির কথায় মন্ত্রীর ইগোতে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ ঘটে যায় এবং ব্যাংকে গানম্যান পাঠিয়ে ম্যাসেজ পাঠান মন্ত্রীদের নাম না জানার পরিণতি কি হতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মন্ত্রী নির্দেশ দেবে এবং এম ডির দল তা আবদুলীয় কায়দায় শুনতে বাধ্য থাকবে, এমনটাই হয়ে আসছে গত ৩৯ বছর ধরে। ১৫ কোটি মানুষের দেশে রাজনীতি করার এটাও একটা অন্যতম কারণ। অবশ্য মন্ত্রী বলছেন অন্য কথা। যেহেতু ব্যাংকের এম ডি মন্ত্রীর নামের সাথে পরিচিত ছিলেননা তাই গানম্যান পাঠিয়েছিলেন নিজকে প্রকাশের জন্যে। যে যাই বলুক ম্যাংগো পিপল্দের অবশ্য বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয়না কে এবং কেন মিথ্যাচার করছে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা একজন মন্ত্রীকে আজরাইলের ঠিক পরের আসনটায় বসিয়ে দেয় এবং এ আসনে বসে নিজেকে হিন্দী সিনেমার ওমরেশ পুরী বানিয়ে রাষ্ট্র যন্ত্রের সবকটা বিভাগকে দলিত মথিত করার অপর নামই বোধহয় মন্ত্রিত্ব। একা মাহবুবুর রহমানকে এমন দোষে দোষী সাব্যস্ত করলে তার প্রতি অবিচারই করা হবে। সরকারের কর্ণধার প্রধানমন্ত্রী হতে শুরু করে গ্রাম গঞ্জের দলীয় মেম্বার চেয়ারম্যান পর্যন্ত মাহবুবুর রহমানের ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত, এমনটাই হয়ে আসছে গত ৩৯ বছর এবং এমনটাই হতে থাকবে সামনের ৭৮ বছর। আজকের খবরেই জানা গেল প্রধানমন্ত্রীর অতি কাছের সংগঠন আওয়ামী যুব লীগের নেতারা ঘোষনা দিয়েছে প্রতিপক্ষ বিএনপির চীফ হুইপ জয়নাল আবেদিন ফারুককে বাংলাদেশের মাটিতে দেখা মাত্র দিগম্বর করা হবে। অভিযোগ? জাতির দৌহিত্র, আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট কম্প্যুউটার ’বিজ্ঞানী’ জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় এই চীফ হুইপ। ক্ষমতার রাজনীতি মানুষকে কতটা পশু বানালে প্রকাশ্য রাজপথে কাউকে নেংটা করার হুমকি দেয়া যায় যুবলীগ নামের প্রধানমন্ত্রীর প্রাইভেট বাহিনী তার নির্লজ্জ প্রমান।
পোষা গানম্যানদের নলের মুখে শুধু এম ডি সামাদ শেখকে কেন, গোটা বাংলাদেশকেই অপহরণের ক্ষমতা রাখে শেখ এবং জিয়া পরিবার। এ নিয়তি মেনেই সামাদ শেখদের এমডিগীরি করতে হবে।
জয় হোক মাহবুবুর রহমান ওমরেশ পুরীর।