ঘটনার যেন শেষ হতেই চায়না। একটার পর একটা লেগেই থাকে নেতাকে নিয়ে মাতামাতির দিবস। আজ জন্মদিন তো কাল ভাষন দিবস, পরশু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস তো তরশু ঘোষনা দিবস। নেতাকে ঘিরে বছরজুড়েই চলতে থাকে একটার পর একটা আয়োজন। শেখ মুজিবকে মাটির কবর হতে উঠিয়ে ঐশ্বরিক সৃষ্টিতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী দেশ শাসনের মূল এজেন্ডা। সহস্রাব্দের সেরা বাঙালী বানিয়ে দলটির গৃহপালিত বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে এই নেতার একক প্রচেষ্টার ফসল হিসাবে আখ্যায়িত করতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেন না। নেতা আমাদের স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন, সুতরাং এর মূল্য পরিশোধ করতে হবে হবে যুগ যুগ ধরে শেখ হাসিনা, শেখ জয় আর শেখ রেহানাদের মত অযোগ্য, অপদার্থ, জাতীয় চাঁদাবাজ আর রাজনীতির সুবিধাভোগী বেজন্মাদের পূজা করে। মুজিব নামের মাহফিল আর কান্নার সমুদ্রে ডুবিয়ে জাতিকে প্রকারান্তে নেশাগ্রস্ত বানানো হচ্ছে যাতে করে শেখ পরিবারের রাষ্ট্রীয় লুটপাট ধামাচাপা দেয়া যায়। একজন মানুষকে কতটা উপরে উঠালে দেশের ১৫ কোটি মানুষ ২৪/৭ ঘন্টা দেখতে পাবে? এর উত্তর শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারও জানা আছে বলে মনে হয়না। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, রাস্তা-ঘাট, স্টেডিয়াম, হাসপাতাল, মিলনায়তন হতে শুরু করে শৌচাগার পর্যন্ত নাম করণ করা হয়েছে এই নেতার নামে। প্রশ্ন জাগে, আমাদের আর কতদূর যেতে হবে এই নেতার মূল্য শোধ করতে?
ঢাকা কলেজে সহ বাংলাদেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুজিব সেনাদের তান্ডবে শুধু শিক্ষা ব্যবস্থাই বিপর্যস্ত নয়, বরং জাতির মেরুদন্ড স্থায়ীভাবে পংগু হওয়ার আশংঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে শেখ পরিবারের উচ্চবাচ্য নেই, নেই সভা-সেমিনারের আয়োজন। পাশাপশি আলৌকিক মন্ত্রবলে বোবা হয়ে গেছে এ পরিবারের উচ্ছিষ্টখোর তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর দল। বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর সহ তাবৎ জনপদ আওয়ামী হিংস্র থাবায় আজ ছিন্ন ভিন্ন। ক্ষুধার্ত হায়েনা আর শকুনের মত জল, স্থল আর অন্তরীক্ষ হতে আওয়ামী চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ধর্ষনবাজ আর লুটেরার দল টানা হেঁচড়া করছে রাষ্ট্রযন্ত্রের সবকটা প্রতিষ্ঠানকে। কিশোরী/যুবতী কন্যাকে ঘর হতে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মুজিব নামের পূজারির দল, একই সেনাদের ভয়ে সন্তানকে স্কুল-কলেজে পাঠিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাতে হচ্ছে অভিভাবকদের। জায়গা-জমি, কল-কারখানা, ব্যবসা-বানিজ্য মাছের ঘের, এমনকি শৌচাগার পর্যন্ত দখল হচ্ছে শেখ মুজিবের নামে। একদিকে মুজিব বন্দনা পাশাপাশি মুজিব সেনাদের পদভারে ভূলুণ্ঠিত আমাদের দৈনন্দিন জীবন। বাংলায় একটা কথা আছে, ‘অতি ভক্তি চোরের লক্ষন’। মুজিব নামে বাংলাদেশের আকাশ বাতাসকে যারা প্রকম্পিত করছেন তাদের নেংটা করলে ভেতরটায় খুব একটা আলোকিত কিছু পাওয়া যাবে বলে মনে হয়না। রাজনীতিবিদ মানেই প্রফেশনাল চোর, বাংলাদেশে এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য।। মুজিব বন্দনার সমুদ্রে অবগাহন করে আওয়ামী রাজনীতিবিদগন নিজেদের পাপ কতটা মোচন করতে পেরেছেন সোময় এলেই তার প্রমান পাওয়া যাবে।
শেখ মুজিব একজন মানুষ, একজন বড় মাপের নেতা। দেশের অধিকাংশ মানুষ এ নেতাকে স্থান দিয়েছে সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে। ক্ষমতা নামের পাগলা ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে শেখ মুজিবকে আকাশের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা যদি বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে তার জন্যে দায়ী থাকবে শেখ পরিবার নিজে। যে দেশে নৈমিত্তিক জীবন বিপর্যস্ত থাকে বিদ্যুৎ, গ্যাস আর পানির মত নিত্যপ্রয়োজীনয় জিনিসের অভাবে, যেখানে আইনের শাসন দলিত মথিত দলীয় শাসনের যাঁতাকলে, শিক্ষা ব্যবস্থায় যেখানে তৈরী হয় বিকলাঙ্গ শিক্ষিত সমাজ, সেখানে এক ব্যক্তির স্তুতি বন্দনা দেশের আর্থ-সামজিক উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব ফেলতে বাধ্য। রাজনীতিবিদদের একটা সত্য মনে রাখলে ভাল হয়, যে কোন স্বাধীনতার শেষ ঠিকানা অর্থনৈতিক মুক্তি। দরিদ্রের পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত রেখে জাতিকে মুজিব বন্দনার মূর্ছনায় বেশী দিন নেশাগ্রস্ত রাখা যাবে বলে মনে হয়না।