৩৯ বছর! আমাদের স্বাধীনতা এখন আর শিশু নয় যার মুখে চুষনি এটে পুতু পুতু খেলা করা যাবে। ৩৯ বছর বয়স্ক এ দেশে ইতিমধ্যে খুন করা হয়েছে ২ জন প্রেসিডেন্টকে, হত্যা করে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠকদের, ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে, ৭১’এর চিহি¡ত ঘাতক মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর গাড়িতে উড়ানো হয়েছে মন্ত্রিত্বের পতাকা। পশ্চিম অংশের ২২ পরিবারের শোষণ হতে মুক্তি পাওয়ার জন্যে পাকিস্তানের পূর্ব অংশের মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়েছিল ভৌগোলিক স্বাধীনতার পাশাপাশি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে। এ যাত্রাপথে বিগত ৩৯ বছরে পরিবারের সংখ্যা ২২ হতে সংকুচিত হয়ে ২’এ নেমে এসেছে সত্যি, তবে এই দুই পরিবারের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছে হাজার হাজার পরিবার, যাদের শোষণের বিষদাঁত পাকিস্তানী ২২ পরিবারের চাইতে ২২০০০ গুন বেশী ধারালো। ৩৯ বছর বয়স্ক রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমাদের উপহার দিয়েছে তারেক জিয়ার মত নেতা, বাবর আলীর মত মন্ত্রী আর মাওলানা তাইজ্উদ্দির মত হুজি। স্বাধীন এ দেশে ১৩ মামলার আসামীকে বানানো হয় প্রধানমন্ত্রী, অবৈধ কোটি টাকা বৈধ করার মাফিয়া নেত্রীকে বানানো হয় বিরোধীদলীয় নেত্রী। গণতন্ত্র নামের সোনার হরিণকে সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার নিয়েই শুরু হয়েছিল শিশু বাংলাদেশের যাত্রা। বয়স ৪ বছর না পেরুতেই সে গণতন্ত্র বাক্সবন্দী হয়েছিল বাকশাল নামের একনায়কতন্ত্রে। ভবিষ্যতের দিকে নয় টাইম মেশিনে সওয়ার হয়ে বাংলাদেশের যাত্রা এখন অতীতমুখী। কে ঘোষক, কে পিতা, কে কোন ফ্রন্টে লড়াই করেছে, কোলকাতার কোন রাস্তায় কে বেহালা বাজিয়েছে, এসব নিয়ে উত্তপ্ত অলিগলি রাজপথ হতে শুরু করে গণতন্ত্রের সর্ব্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান সংসদ পর্যন্ত।
স্বাধীনতার ৩৯ বছরের মাথায় আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও ট্রাফিক জ্যামের মত নিত্য সমস্যাগুলোর এ দেশে কোন সমাধান নেই। নিয়তি আমাদের শিখিয়েছে বাংলাদেশে ব্যবসা বাণিজ্যের আসল মালিক রাজনৈতিক ক্ষমতার সূর্য সন্তান ছাত্ররা। এখানে মৃত্যুর থাকতে হয় রাজনৈতিক রঙ। আবু বকরের মৃত্যু এখানে স্বাভাবিক, ফারুকের মৃত্যু জন্ম দেয় চিরুনি অভিযানের। এভাবেই ৭১’এর শিশু ২০১০ এসে মুখ থুবড়ে ১০০ বছরের অচল বৃদ্বতে পরিণত হয়ে গেছে।
কেবল ভৌগোলিক স্বাধীনতাই যদি মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, নিশ্চয় সে স্বাধীনতা আমাদের সার্থক। আমরা স্বাধীন, আমাদের নিজস্ব একটা সীমানা আছে, আছে একটা পতাকা, বিদেশ ভ্রমনে আমাদের হাতে থাকে আলাদা একটা পাসপোর্ট। আমরা পরাধীন আমাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনায়, ক্ষয়িষ্ণু সামাজিক বন্ধনে, বিকলাঙ্গ শিক্ষা ব্যবস্থায়, সাংস্কৃতিক দারিদ্রতায়।
এবারের ভৌগোলিক স্বাধীনতা দিবসই হোক নৈতিক পরাধীনতার শেষ দিবস।