বিচারপতি, তোমার বিচার করবে কারা?

Submitted by WatchDog on Sunday, April 11, 2010

Bangladeshi

খবরের ভেতরও খবর থাকে যা আমার মত ম্যাংগোপিপলদের জানার দরকার হয়না। এই যেমন ধরুন আজকের একটা খবর। সরকার হাইকোর্টে আরও ১৭ জন অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। আমার মত ভেটকি মাছের ভর্তা আর হলের পাতলা পায়খানা মার্কা ডাল খোরদের জন্যে খবরটা একেবারেই আদার বেপারিদের জাহাজের খবর নেয়ার মত খবর। এমন খবরের হেডলাইনই আমার জন্যে যথেষ্ট, বিস্তারিত পড়ার দরকার হয়না। তবে বলতে দ্বিধা নেই, সময় একটু অন্যরকম এখন, বিচারের আওয়াজ আকাশে বাতাসে, আদালতে গিজগিজ করছে বাংলাদেশ, তাই এ সংক্রান্ত যে কোন খবরই গোগ্রাসে গেলার চেষ্টা করি। এর পেছনে আরও একটা কারণ আছে হয়ত, সরকার ইতিহাস 'বিকৃত' অথবা অস্বীকার করার বিরুদ্বে হার্ডলাইনে চলে গেছে, কথায় কথায় মামলা ঠুকছে। মাঝে মধ্যে কাচা হাতের লেখা দিয়ে ইতিহাসের সোল এজেন্ট এই সরকারকে বিরক্ত করি, ভয়ে থাকি ইন্টারপোল দিয়ে সরকার না আবার বিদেশ হতে উঠিয়ে নেন আমায়। বিচারের মুখোমুখি হওয়ার মত সাহস এবং আর্থিক সংগতি কোনটাই আমার নেই, তাই শেষ ভরসা পরিচিত বিচারকের দয়া অথবা কম অংকের দফারফা। যে হারে বিচারক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে আশায় আছি হয়ত দাদাবাড়ির মহুরী সইফুল উকিলকেও একদিন দেখতে পাব হাইকোর্টের বিচারকের চেয়ারে। আফটার অল আমাদের সইফুল কাকুও আওয়ামী লীগ করেন, তাও প্রায় হাজার বছর ধরে। ব্যাপক আশা নিয়ে আজকে প্রকাশিত তালিকাটাও গোগ্রাসে গিলছিলাম। তালিকায় সইফুল উকিলের নাম না হোক এমন একটা নাম চোখে পড়ল, কলম না ধরে থাকতে পারলাম না।

রুহুল কুদ্দুস বাবু। একজন প্রাক্তন ছাত্রনেতা। জাসদ ছাত্রলীগ হয়ে আওয়ামীগের ছাত্রলীগে পাড়ি জমানো নেতা। একই দলের টিকেট নিয়ে রাকসুর জিএস পর্যন্ত বিশাল পথ পাড়ি দিয়েছিলেন এক সময়। ১৯৮৮ সালের ১৭ই নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল লতিফ হল দখল নিয়ে রুহুল কুদ্দুস বাবুর গ্রুপের সাথে প্রতিপক্ষ গ্রুপের যুদ্ধ হয় অনেকটা বাঁচলে গাজী মরলে শহীদ কায়দায়। ঐ যুদ্ধে সবাই গাজী হলেও একজনকে কিন্তু শহীদের ভাগ্য বরন করতে হয়, তার নাম আসলাম। স্থানীয় থানায় ৩০ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয় ১৮ই নভেম্বর। উল্লেখ থাকে, মামলার ১নং আসামী ছিলেন হাইকোর্টের হবু বিচারক সর্ব জনাব রুহুল কুদ্দুস বাবু। কথিত আছে কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে ঠান্ডা মাথায় আসলামকে খুন করেছিলেন রুহুল কুদ্দুস সাহেব। আসলাম খুনের অভিযোগে রুহুল কুদ্দুস বাবু-র বিরুদ্ধে মামলাটি আজও রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ কোর্টে বিচারাধীন আছ, মামলা নং-২৫৯/২০০২। এই মামলার ১নং আসামী রুহুল কুদ্দুস বাবু, ভিক্টিমকে কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে মারার দায়ে অভিযুক্ত।

মনোনীত বিচারকদের তালিকায় আরও একজনের নাম উল্লেখ না করলে নিশ্চয় অন্যায় হবে। সরকারের ডেপুটি এটর্নি জেনারেল খসরুজ্জামান সাহেব। এই জামান সাহেব আদালত আওয়ামী পক্ষে না যাওয়ায় ২০০৬ সালের ৩০শে নভেম্বর প্রধান বিচারপতির এজলাসের কাচ লাথি মেরে খবরের হেডলাইন হয়েছিলেন (উপরের ছবি দেখুন)।

এরশাদ আমলের একজন মন্ত্রীর সাথে আমার সখ্যতা অনেক দিনের। মন্ত্রী হওয়ার আগে বেচারা পুরানা পল্টন লাইনের একটা টিনের ছাপরায় সাপ্তাহিক ট্যাবলয়েড ব্যবসা করতেন। মন্ত্রী থাকাবস্থায় কোনদিন দেখা হয়নি। মন্ত্রিত্ব হারিয়ে পালিয়ে থাকার সময় নতুন করে দেখা। জনরোষ ও আদালতের ভয় দেখাতেই গড় গড় করে বলে গেলেন এমন সব কথা যা মনে করলে আজও আমার মাথা ৩৬০ ডিগ্রী এংগেলে ঘুরতে থাকে। হাইকোর্টের বিচারক প্রসংগে জানালেন, যে কোন সরকার ক্ষমতায় গিয়ে প্রথমেই যে কাজটা করে তা হল আদালতে দলীয় লোক নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যত বিচার-আচারের হাত হতে নিজেদের রক্ষা করা। উনার মতে যখনই সরকারের ভেতর চুরি-চামারি মহামারী আকার ধারণ করে সরকার প্রধান তখন বিশেষ নজড় দেন বিচারক নিয়োগের দিকে।

ধন্যবাদ শেখ হাসিনাকে এসব মনোনয়নের জন্যে। ক্ষমতার মসনদ হারিয়ে যেদিন 'আবার বনবাসে রুপবান' কায়দায় বাংলাদেশের আকাশ বাতাস ভারী করবেন, চুরির দায়ে আবারও ডিজিটাল জেলে যাবেন, প্রয়োজন হবে এইসব খুনী আর সন্ত্রাসী বিচারকদের। সিসিলিয়ান কোচা নষ্ট্রাদের কাহিনি যাদের জানা আছে তাদের বুঝতে অসুবিধা হয়না হাসিনার মত মাফিয়া গংদের রাষ্ট্র ক্ষমতা চালাতে কেন এসব কুখ্যাত বিচারকদের দরকার হয়।যে দেশে ১৪ মামলা মাথায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়, সে দেশে মাত্র এক খুনের অভিযোগ নিয়ে কেন হাইকোর্টের বিচারক হওয়া যাবেনা, চিন্তার বিষয়।

ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাসে একটা ডকুমেন্টারি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। তরুণ এক ইরানী যুদ্ধবন্দীকে ফাঁসি দিচ্ছে ইরাকীরা। বন্দীর দুই হাত ও দুই পা চারটা জিপে আলাদা করে আটকে একটানে ছিড়ে ফেলে এবং পৈশাচিক উন্মাদনায় মেতে উঠে বিশ্ব জয়ের আনন্দের মত।

মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে আমাদের মাফিয়া গংদেরও একই কায়দায় এক্সিকিউট করতে...

ভালো লাগলে শেয়ার করুন