৫০ জোড়া ইলিশ সাথে তোরণ ও মঞ্চ বানিয়ে বর্ষবরণের জন্যে তৈরী হচ্ছিল আদাবরের ওয়াহিদুজ্জামান রুমিজ। সে প্রস্তুতি আলোর মুখ দেখলো না ঘাতকদের বুলেটের কারণে। বেলা আড়াইটায় রাজধানীর আদাবর থানার পেছনে ঘটে প্রকাশ্য খুনের ঘটনা। অল্প বয়সী তিন অস্ত্রধারী রুমিজের মাথা ও পিঠে গুলি চালিয়ে পায়ে হেঁটে বীরের মত ত্যাগ করে ঘটনাস্থল। বাংলাদেশের যে কোন লাশের আসল পরিচয় তার রাজনৈতিক পরিচিতি, রুমিজের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম ছিলনা। রুমিজ ছিল ঢাকার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ৫৪ হাজার বর্গমাইলের দেশ বাংলাদেশে যে কোন ছাত্রলীগের মত ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডেও এই লীগ ব্যস্ত চাঁদাবাজি ও স্থানীয় ব্যবসা বানিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। রুমিজের মৃত্যুর পেছনে পুলিশ যে কটা কারণ নির্ণয় করেছে তার মধ্যে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও সাংগঠনিক কোন্দল অন্যতম। জানা গেছে আদাবর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রায় ৩০টি গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত প্রতিপক্ষ নবী গ্রুপের লোকজন। রুমিজ পাঁচ-ছয়টি গার্মেন্টের ঝুট ব্যবসা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল পেশিশক্তির বদৌলতে। এখানেই রোপিত হয় রুমিজের মৃত্যু বীজ। পুলিশ আরও বলছে রুমিজ আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হতে চেয়েছিল, এ কারণে প্রতিপক্ষের সাথে বিরোধ তৈরি হতে পারে। কারণ যাই হয়ে থাকুক না কেন সত্যি হল রুমিজ ছিল ছাত্রলীগের নেতা এবং ব্যস্ত ছিল ক্ষমতার ছত্রছায়ায় লুটপাট বাণিজ্যে। এক রুমিজের উত্থান ও পতনের কাহিনিতে হাত দিলেই বেরিয়ে আসবে আজকের ছাত্ররাজনীতির আসল চেহারা।
সমসাময়িককালে একজন ছাত্র রাজনীতিতে জড়ায় বিভিন্ন কারণে, তার মধ্যে অন্যতম পেশী ও অস্ত্রের মুখে সমাজকে জিম্মি করে নিজের ভাগ্য ফেরানো। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল অনেকদিন ক্ষমতাহীন থাকার কারণে এর প্রথম সারীর নেতা-নেত্রীদের পাশাপাশি রুট লেভেলের নেতা কর্মীদের ক্ষুধাও শুকিয়ে রুপান্তরিত হয় সাহারা মরুভূমিতে। এত লম্বা উপোস এনারেক্সিয়া/বুলিমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই দিগন্ত রেখায় ধরা দেয় ক্ষমতা নামের তৈলাক্ত সোনার হাঁস। এই হাঁসের উপর পৈশাচিক শক্তিতে ঝাপিয়ে পরে একদিকে মেইনষ্ট্রীম আওয়ামী লীগ, সাথে যোগ দেয় ছাত্রলীগের মত অপরিহার্য অংগ প্রত্যঙ্গ। সংগত কারণেই বাংলাদেশ এ মুহূর্তে আওয়ামী ক্ষুধা নিবারণের উর্বর চারণভূমি। 'সার্ভাইভাল অব দ্যা ফিটেস্ট', রুমিজের মৃত্যুকে এভাবে বর্ণনা করলেই বোধহয় সত্যের খুব কাছাকাছি যাওয়া যাবে। আওয়ামী লীগ কি চিরুনি অভিযানে নামবে এই ছাত্র নেতার অকাল মৃত্যুর জন্যে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের হাতে সোপার্দ করতে (যেমনটা করেছিল শিবিরীয় জল্লাদদের বেলায়)? মনে হয়না এ জনমে তারা তা করতে যাবে। নিজেদের বর্জ্য পদার্থ ঘাঁটাঘাঁটি করতে গেলে এমন সব 'সুগন্ধ' বেরিয়ে আসতে পারে যার তলায় সমাহিত হতে পারে মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধী বিচারের মত ভাল ভাল কথা।
ও হ্যা, আরও একটা তথ্য আছে। নিহত রুমিজের বোন রুবিনাও স্থানীয় যুব মহিলা লীগের নেত্রী। এই নেত্রী কোন পথে নিজের ভাগ্য গড়ছেন তা জানতে হলে আমাদের হয়ত অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও একটা লাশের।
পাঠক, ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন রুটি হালুয়া নিয়ে একদল কুকু্রের কামড়া কামড়ির করুণ পরিণতি 'উপভোগ' করতে।