দুই সিপাহশালারের দুই রকম বক্তব্য! ঠিক কার কথা বিশ্বাস করবো এবং কেন করবো এর কোন আগা মাথা খুঁজে পাচ্ছি না। পাঠক, আপনারা যারা সময় নষ্ট করে লেখাটা পড়বেন তাদের কারও কাছে এই বৈপরিত্যের সমাধান থাকলে দয়া করে শেয়ার করার অনুরোধ করবো। খয়ের খাঁ পত্রিকাওয়ালাদের খবর বিশ্বাস করে বহুবার ঠকেছি, নতুন করে প্রতারিত হওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে না! লেখক-পাঠক যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে ব্লগ দুনিয়া, সুযোগটা নেয়ার জন্যেই এ লেখার অবতারণা। পানি ফার্দার ঘোলা হওয়ার আগে আসুন ভাল করে জেনে নেই পুরো ঘটনাটা।
বিতর্কের সূত্রপাত প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক একটা মন্তব্য নিয়ে। শেখ হাসিনা দু’দিন আগে কোন এক পাবলিক গেদারিং’এ অভিযোগ করেছেন ভাংগা সুটকেস আর ছেড়া গেঞ্জির পরিবার কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে আবারও প্রমান করেছে তাদের আসল চরিত্র। বাংলাদেশের মালিক এই দুই পরিবারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠলে সাধারণত যা হয় তাই হল এ যাত্রায়। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের কেউ মুখ খোলার আগেই গর্জে উঠল উজির নাজির কোতয়ালের মুখ। তবে এ যাত্রায় শুরুটা সিপাহশালারদের দিয়ে। রাজনীতির পশ্চিম দিগন্তে অস্তমান হারিকেন, মানিকগঞ্জের হাবলু-ডাবলুর পিতা দেলোয়ার হোসেন গর্জে উঠে প্রতিবাদ জানালেন প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের। উনি যা বলেছেন তা উনার নিজের মুখ হতেই শোনা যাকঃ "সরকার নিজেদের পর্বত সমান ব্যর্থতা ঢাকতে সব দোষ এখন বিরোধী দলের উপর চাপাচ্ছে। খালেদা জিয়া কালো টাকা সাদা করেননি। খালেদা জিয়াকে খাটো করার জন্যই শেখ হাসিনা মিথ্যাচার করছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার কাছ থেকে এ কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য জাতি আশা করে না।" পদ ধরে রাখতে পদলেহনকারী কুকুরের দল মনিবের হয়ে ঘেউ ঘেউ করবে তাতে নতুনত্ব কিছু ছিলনা। কিন্তু এ যাত্রায় নতুনত্ব একটা ছিল এবং তার জন্ম দিয়েছেন রাজনীতির পূব দিগন্তে উদীয়মান সূর্য বিএনপির নতুন সিপাহশালার মির্জা ফখরুল ইসলাম ’বৈরাগী’। দেশের মালিকানার চতুর্থ ওয়ারিশ সর্বজনাব তরিক জিয়ার একান্ত গৃহপালিত সেনাপতি এ সম্পর্কে যা বলেছেন আসুন উনার নিজ মুখ দিয়েই শোনা যাকঃ "নিয়মতান্ত্রিকভাবে আইন অনুযায়ী কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। আইন সবার জন্য সমান। একে ভিন্ন চোখে দেখার অবকাশ নেই।"। একজন বললেন উনি মোটেও কালো টাকা সাদা করেন্নি, দ্বিতীয়জন বললেন যা হয়েছে তা নিয়মের ভেতর দিয়েই হয়েছে। দেলোয়ার না বৈরাগী? কোনটা বিশ্বাস করবে আমার মত ম্যাংগো জনতা? ম্যাংগোর সিজনে এ কোন জটিল ম্যাংগো উপহার দিল আলী বাবা ৪০ চোরের দল!
মুয়া-ফুয়ার তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি আরব্য উপন্যাসের বিস্মৃত সময়ের কোন কাহিনী? ২০০৬-২০০৮’এর কথা কি হাজার হাজার বছর আগের কথা? তাই যদি না হয়, আমাদের মনে করতে খুব কি কষ্ট হবে আপোষহীনা নেত্রীর কালো টাকা সাদা করার আপোষকামীতার উপাখ্যান? দুদকের ধরপাকড়ে রাজনীতিবিদ্দের তখত-তাউস খান খান হওয়ার সময় তখন। সিসিম ফাঁকের মত ফাঁক হচ্ছে উনাদের গুপ্তধনের ভান্ডার। তেমনি এক সময় ততা সরকার সূযোগ দিল চুরির টাকা অচুরির বানাবার। অনেকেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করলো যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন কথিত আপোষহীনা দেশনেত্রী এবং উনার খাজাঞ্চীখানার বিশ্বস্ত পাহারাদার জনাব সাইফুর রহমান। এই সেই সাইফুর রহমান যিনি জাতিকে বার বার অভিযুক্ত করেছিলেন ট্যাক্স না দেয়ার জাতি হিসাবে। আপোষহীনার সঠিক অংকটা মনে না থাকলেও (কোটি টাকার কাছাকাছি একটা সংখ্যা) এমন একটা লন্ড্রিং অধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল এ ব্যাপারে দলীয় কোন ম্যাংগোগীরি কাজ দেবে বলে মনে হয়না।
একটা দেশের নেতা-নেত্রী কতটা নির্লজ্জ, ভাওতাতাবাজ আর বেহায়া হলে চুরির টাকা প্রকাশ্যে ধোলাই করার পরও রাজনীতিতে সগৌরবে বিচরন করতে পারে তার কলঙ্কজনক প্রমান বাংলাদেশের খালেদা জিয়া! অবাক হই কেন বাংলাদেশকে বিশ্ব বেহায়া দেশের চ্যাম্পিয়ন দেশ হিসাবে ঘোসনা করা হচ্ছে না। শুধু চুরি-চামারিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আমাদের জন্যে যথেষ্ট হতে পারে না।
শেখ হাসিনা তার ’কুত্তালীগের’ যন্ত্রণায় এমনিতেই কোণঠাসা, তার উপর দেশনেত্রী হুমকি দিচ্ছেন ’দুনিয়া কাপানো’ আন্দোলনের। সরকারের ব্যর্থতাকে পুঁজি করে বিরোধী দল আন্দোলনে নামবে, গণতান্ত্রিক রাজনীতির এটা ফান্ডামেন্টাল রাইট। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাংলাদেশের সদ্য ক্ষমতাহারা বিরোধী দলের কালো ইতিহাস কি আমাদের এত সহজে ভুলে যেতে হবে? এই কি সেই বিএনপি নয় যাদের নখের থাবায় দেশের প্রতিটা প্রতিষ্ঠান ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল? বিএনপি কি সেই বিএনপি নয় যাদের ছত্রছায়ায় ছাত্রদল নামের আরেক ’কুত্তার দল’ বাংলাদেশের প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ যাবতীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির নামে ধর্ষণ করেছিল?
খালেদা জিয়ার পথকে মসৃন করছে শেখ হাসিনার ’কুত্তালীগ’ এবং অবাক হবনা যদি সামনের নির্বাচনে এই আওয়ামী লীগকে জনগণ পশ্চাদ্দেশে লাথি মেরে ক্ষমতা হতে বিদায় করে। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ, নেতা-নেত্রীরা এই বাস্তবতাটা হয়ত অনেক সময় ইচ্ছে করেই ভুলে যান। খালেদা জিয়াও হয়ত ভুলে থাকবেন। তবে ম্যাংগো পিপলদের হয়ে কিছু অমিমাংসিত ইস্যুর মিমাংশা দিলে আমরাও যোগ দেব ’কুত্তালীগের’ মরণ মিছিলে। প্রশ্নগুলো বাতাসে ঘুরে বেড়ায় এবং উত্তর চাইবার বুকের পাটাও অনেকটা সংকুচিত উজির নাজিরদের রক্তচক্ষুর কারণে।
ইস্যু সমূহঃ
১) জনাবা খালেদা জিয়া, আপনার স্বামীর মৃত্যুর পরপর জাতিকে ঘটা করে গেলানো হয়েছে পুঁজি বলতে প্রয়াত জেনারেল আপনাদের জন্যে কিছুই রেখে যায়নি (পরচুলা পরিহিত টিভি উপস্থাপক ফজলে লোহানী দ্রষ্টব্য)। জাতির আবেগকে পুঁজি করে জেনারেল এরশাদ আপনাদের উপহার দিয়েছিল শত কোটি টাকার সম্পদ। জাতি হাসি মুখে মেনে নিল এই সম্প্রদান। কি এমন আলাউদ্দিনের প্রদীপ পেলেন যা দিয়ে আপনি এবং আপনার গুণধর ছেলেরা রাতারাতি কোটিপতি বনে গেলেন?
২) আপনি নিজকে স্ব শিক্ষিতা বলে দাবি করতে ভালবাসেন। দয়া করে বলবেন কি, একজন জেনারেলের গৃহবধূ হয়ে কি এমন স্বশিক্ষা পেয়েছিলেন যার কারণে নিজকে সমস্যা সংকুল একটা দেশের সরকার প্রধান হওয়ার যোগ্য মনে করেন?
৩) আপনি জন্মদিন নিয়ে মিথ্যাচার করছেন কোন সমীকরণের উপর ভিত্তি করে?
৪) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহন করার অল্প কদিনের ভেতর যৌথ বাহিনী মোসাদ্দেক হোসেন ফালুর বাসায় অভিযান চালিয়ে এমন একটা কাবিননামা আবিষ্কারের কথা প্রকাশ করে যাতে আপনারও নাম ছিল বলে জানা যায়। দয়া করে পরিষ্কার করবেন কি এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান? কারও ব্যাক্তিগত জীবন বিতর্কের বিষয় হওয়ার কথা নয়। আপনি ব্যক্তি নন, একটা প্রতিষ্ঠান, তাই ঘুরে ফিরে এ প্রশ্ন আসতে বাধ্য। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা থাকা গণতন্ত্রেরই অংশ। এ প্রশ্নের উত্তর হতে পিছলানো হবে এক ধরনের প্রতারণা।
প্রশ্নগুলোর সঠিক জবাব দিয়ে খালেদা জিয়া আন্দালনের ডাক দিলে কে জানে হয়ত এই ওয়াচডগও যোগ দিতে আগ্রহী হবে। কিন্তু এর আগে নেত্রীর মুখে দেশকে অচল করে দেয়ার হুমকি একজন ক্রিমিনালের হুমকির মতই শোনাবে।
দুই পরিবারের দুই নেত্রীর গ্যাঁড়াকলে আমাদের ভাগ্য দলিত মথিত হতে থাকবে, আর আমরা কেরামত উল্লার হজমি দাওয়াই সেবন করে তা হজম করে যাব অনন্তকাল ধরে, তা কিন্তু ঐশ্বরিক কোন সিদ্ধান্ত নয়। সময়ই তার যোগ্য জবাব দেবে। আশাকরি নেত্রীদ্বয় তৈরী থাকবেন ইতিমধ্যে।