সত্য সন্ধানের রাজনীতি...

Submitted by WatchDog on Monday, May 17, 2010

Bangladeshi Politics

ইন্টারনেট শয়নকক্ষে থাকায় বিশ্ব এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। এক ক্লিকে কত দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান করা যায় এ নিয়ে বিভিন্ন প্রোভাইডারদের মধ্যে চলছে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা। আমি নিজেও এক প্রোভাইডারের হয়ে অন্যদের মোকাবেলা করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। নেটের গতি বাড়ছে, সাথে বাড়ছে খবর জন্ম নেয়ার গতি। একজন আরেকজনকে পাল্লা দিচ্ছে রকেটের গতিতে। আমরা যারা সাধারণ পাবলিক তাদের হয়েছে যন্ত্রণা, যে তথ্য সকালে বের হয় বিকেল না পেরুতেই তা বাসি হয়ে ঠাঁই নেয় আস্তাকুঁড়ে। সমসাময়িক বিশ্বের তথ্য প্রবাহের সাথে আপডেটেড থাকতে চাইলে মনে হয় রুটি রোজগারের ধান্ধা ফেলে সারাদিন পরে থাকতে হবে নেটে। এই যেমন ধরুন আজকের দৈনিকগুলোতে বের হওয়া বাংলাদেশের দুটো খবর। নেট না থাকলে তরতাজা এ খবরগুলো হয়ত বাসি হয়ে হাজার পথঘাট ঘুরে আমরা যারা প্রবাসী তাদের দরজায় হাজির হত। ততদিনে এর এফেক্ট কতটা কার্যকর থাকতো এ নিয়েও চলতে পারে বিতর্ক। তাই লেখাটির মূল পর্বে যাওয়ার আগে লম্বা একটা ধন্যবাদ জানাতে চাই নেট প্রযুক্তির বিকাশকে (নিজেকেও ধন্যবাদ)।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য, এমপি ও এক কালের বাঘাই ছাত্রনেতা সর্ব জনাব ওবায়দুল কাদের গতকাল অনুষ্ঠিতব্য (রোববার) এক অনুষ্ঠানে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা আমলে নিলে জাতীয় রাজনীতির আলটিমেট সমীকরণই উলটে যেতে বাধ্য। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস (একমাত্র খোদাই জানেন এমন দিবস পালনের হেতু!) পালন উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু একাডেমি আয়োজিত ‘দেশ ও জাতির কল্যাণে শেখ হাসিনা’ (এতদিন জানতাম মৃত ব্যক্তির স্মরণে এমন সভা আয়োজিত হয়) নামক মহতি সভায় বোমা ফাটানো কিছু বক্তব্য রেখেছেন। আসুন উনার মুখ দিয়েই শুনি বক্তব্যের সারাংশ, তারপর না হয় এ নিয়ে হাঙ্গামা করা যাবে।

- বিরোধী দলে থাকাবস্থায় আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালগুলোর বেশিরভাগই ছিল জনসমর্থনহীন যা কেবল জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়েছিল।

- বর্তমান সরকারের কাছে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংকটের চেয়ে বড় সংকট ছাত্রলীগের কর্মকান্ড। সে জন্য অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচার করতে হবে।

জনাব কাদের আরও বলেন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ৩০শে এপ্রিল যে গণ-আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল তা ছিল দলের ভুল সিদ্ধান্ত। ওই আন্দোলনে জনসমর্থন ছিলনা। এ ব্যাপারে আরও একধাপ এগিয়ে তিনি ঘোষনা দেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে শুধু’৬৯এর গণ-আন্দোলনই ছিল গণ-অভ্যুত্থান, বাকি কোনটাই গণ-অভ্যুত্থান নয়।

সরকার দলীয় একজন এমপি, প্রেসিডিয়ামের প্রভাবশালী সদস্য ও এক কালের জনপ্রিয় ছাত্রনেতার মুখে এ ধরনের কথা শুনলে মনে হবে পরিবর্তন আসছে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে। আওয়ামী লীগের হরতাল ম্যারাথনের বিরুদ্ধে আমার মত যারা চরম অবস্থানে ছিল তাদের মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি আনাবে নেতার বক্তব্য। জনাব কাদের কথাগুলো বলেছেন বিএনপির আন্দোলনে যাওয়াকে কেন্দ্র করে। খবরে প্রকাশ, ক্ষমতাহারা দলটি আন্দোলনে গেলেও হরতালের মত চরম হঠকারী রাস্তায় হাঁটবে না। আসলেই যদি দলটি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে সাধুবাদ জানাতে হবে দলের নেত্রীবৃন্দকে।

দ্বিতীয় খবরের জন্মদাতা অন্য এক আওয়ামী হেভিওয়েট জনাব মহিউদ্দিন খান আলমগীর। অষ্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক মত বিনিময় সভায় তিনি বলেছেনঃ
- বাংলাদেশের শতকরা ৩৫ জন রাজনীতিবিদ্‌দের বিশ্বাস করে, বাকি ৬৫ ভাগ বিশ্বাস করে মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক ও অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ সমাধা করা ততটা সহজ হবেনা।
- ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও কানাডা সফর করে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, প্রবাসে বসবাসরত বেশিরভাগ বাংগালী বিএনপি-জামায়েতের সমর্থক। আমাদের সমর্থকরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত।

জনাব খানের বক্তব্যের সূত্র কি তা উনিই ভাল বলতে পারবেন। তবে একটা জিনিস লক্ষণীয়, খবরের জন্মদাতা দুজনেই কিন্তু বিভিন্ন কারণে ক্ষমতার পূর্ণ স্বাদ গ্রহন হতে বঞ্চিত আছেন। জনাব ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সংস্কারবাদী সাজার। আর জনাব খানের বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগ নয়, বরং মাথায় ঝুলছিল ১৩ বছরে জেল। এই দুই নেতার বক্তব্য বঞ্চিত হওয়ার অন্তর্দাহ হতে উদগীরিত হচ্ছে কিনা সময়ই তা প্রমান করবে। তবে ম্যাংগো পিপল হিসাবে আমাদের মোবারকবাদ জানাতে হবে স্ববিরোধিতার এ রাজনীতিকে। এ ধরণের দু’একটা বক্তব্য হতেই শুরু হতে পারে রাজনীতিতে সত্যের সন্ধান।

http://www.dailynayadiganta.com/fullnews.asp?News_ID=211588&sec=1
http://www.amadershomoy.com/content/2010/05/17/news0754.htm

ভালো লাগলে শেয়ার করুন