ব্লগীয় দামামা...প্রসঙ্গ পাকিস্তান ও রাজাকার।

Submitted by WatchDog on Thursday, May 27, 2010

Rajakar

বনখেকো ওসমান গনির দোসর, এককালের বনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড, সাজেদা চৌধুরী অনেকদিন ধরে জমে থাকা একটা সংবেদনশীল সমস্যার সমাধান করে দিলেন। ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার শ্রীঅংগনের একটা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপ প্রসংগে তিনি বলেন, ’রাজাকারের ছেলের সাথে নয়, প্রধানমন্ত্রী তার কন্যা পুতুলকে বিয়ে দিয়েছেন রাজাকারের নাতির সাথে। নূরু মিয়া রাজাকার হলেও তার ছেলে মোশারফ রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী ছিল না। তার ছেলের সাথে কন্যা বিয়ে দিয়ে নেত্রী কোন অপরাধ করেন নি।‘

সাজেদা চৌধুরী কাউকে রাজাকার আর কাউকে নিরপরাধ সার্টিফিকেট দেয়ার আইনগত অধিকার রাখলে এ প্রসংগে ইতিপূর্বে আমি যে পোষ্ট দিয়েছিলাম তার বৈধতাও নড়বড়ে হয়ে যায়। উইথড্র করছি আমার অভিযোগ। মোশারফ হোসেন নিজে নন, রাজাকার ছিলেন উনার স্বনামধন্য পিতা নূরু মিয়া। ফরিদপুরের অনেক রাস্তাঘাটের নাম পরিবর্তন করে এই নূরু মিয়ার নামে নামকরণ করা হচ্ছে, এমন অভিযোগের জবাবে জনাবা চৌধুরী বলেন, ’জনগণই এর বিচার করবে।’ আসুন একটা কাজ করি, সাজেদা চৌধুরীর বক্তব্য হতে দুটি উপসংহার টানি; প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন শুধু ইঞ্জিনীয়ারই ছিলেন (আছেন), রাজাকার নন। দ্বিতীয়ত, বাপ রাজাকার হলেও ছেলেকে একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা বৈধ নয়, এবং তার সাথে আত্মীয়তা করাও অপরাধের পর্যায়ে পরে না। Fair enough?

উপরের উপসংহার দুটিকে আমলে নিলে স্বভাবতই কিছু প্রশ্ন জাগে, যার জবাব চাওয়ার ভেতরও সীমা লংঘন অথবা অনৈতিকতার কিছু দেখি না। সমসাময়িক বিশ্বে যোগাযোগের নতুন মাধ্যম ব্লগে এবং বাংলাদেশের যুব সমাজের শিরায় উপশিরায় শিবির নামক একটা রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন খতম করার যে বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে তার ভিত্তি কোথায়? শিবিরের তাবৎ সদস্যরা কি ’৭১ সালে রাজাকারীত্বের সাথে জড়িত ছিল? বেঁচে থাকা রাজাকারদের গড় পরতা বয়স হওয়ার কথা ৫৫ হতে ৭০। আমাদের অভিশাপ এবং জাতীয় জীবনের কলংক ছাত্ররাজনীতির সাথে ৫৫ বছরের কেউ জড়িত থাকলে তা হবে চরম হাস্যস্কর। আশাকরি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির ৫৫ বছর বয়সী ’ছাত্রদের’ ছাত্রসংগঠন নয়। অনেকেরই অভিযোগ, শিবির মূলত রাজাকারদের গর্ভে জন্ম নেয়া নতুন প্রজন্মের দেশদ্রোহী নব্য রাজাকার। শিবিরের এজেন্ডায় কোথাও কি বাংলাদেশের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার কথা লিপিবদ্ধ আছে? তা হলে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে এই রগ কাটা সংগঠনকে কেন ইতিপূর্বে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি তার জবাব চাওয়ার অধিকার কি আমাদের নেই? রাজাকারের ঔরসে জন্ম নিলেই যে রাজাকার হওয়ার বাধ্য বাধকতা নেই তার প্রমাণ কি প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই (জাতিয় বেয়াই!) নন? নাকি রাজাকারের সন্তান প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই হলে তার রাজাকারীত্ব দেশপ্রেমের ডায়ালাইসিসে পরিষ্কার হয়ে যায়?

রাজাকার আর পাকিস্তান। শব্দ দুটো একে অপরের পরিপূরক। পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর ঋতুস্রাবে জন্ম নিয়েছিল রাজাকার নামের সহযোগী সংগঠন, যাদের কাজ ছিল পাকি অপরাধের রসদ যোগানো। এই রসদ যোগানোতে যারা জড়িত ছিল তাদের অনেকেই ছিল ’দিন আনে দিন খায়’ গোত্রীয় সাধারণ জনগণ, যাদের মগজে রাজনৈতিক মতাদর্শনের রসদ থাকার কথা ছিল না। এদের দিয়ে অপরাধ করানো হয়েছে, যার মূল বেনিফিশিয়ারিজ ছিল স্বয়ং পাকিরা। অপরাধের ঘাঁ না শুকাতেই অপরাধী পাকিদের স্ব-সম্মানে দেশে ফেরৎ পাঠানো হল, অথচ ৩৯ বছর পর তাদের কামলাদের বিচারের জন্যে বাংলাদেশের আকাশ বাতাস প্রকম্পিত শুরু হয়ে গেল, কারণটা কি?

একি দেশপ্রেম? নাকি ইয়াবার মত নব্য ড্রাগ, যার উন্মাদনায় নতুন প্রজন্মকে আচ্ছন্ন করে অতি কৌশলে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ রাজনীতিকে? ব্লগে ব্লগে ২২ হাজার ব্লগার মিনিটে মিনিটে ২০ টনি বোমা ফাটাচ্ছে পাকিদের বিরুদ্ধে। বায়বীয় বোমায় গোটা পাকিস্তানকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার দাবিদারের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। প্রাসঙ্গিক কারণে প্রশ্ন জাগে, এ ধরনের লাগামহীন দাবির মাধ্যমে আমরা কি দেশ হিসাবে আমাদের জন্মকেই বিকৃত করছি না? ১৯৭১ সালে কাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ হয়েছিল, গোটা পাকিস্তান জাতির সাথে, নাকি অগনতান্ত্রিক, ক্ষমতালিপ্সু একদল সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে? পাকিস্তানী জনগণ কি গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট দিয়ে যুদ্ধ করতে পাঠিয়েছিল তাদের সেনাবাহিনীকে? দেশটার পশ্চিমা অংশের একদল জংলী জেনারেলের লাগামহীন শোষণের নিষ্পেষণ হতে মুক্তি পাওয়ার জন্যেই আমরা হাতিয়ার উঠিয়েছিলাম। ঐ শোষণের সাথে দেশটার ২২ পরিবার আর মিলিটারি মেশিনারিজ ছাড়া সাধারণ জনগণ কতটা সম্পৃক্ত ছিল এ নিয়ে কোন মহল হতেই কোন অভিযোগ আজ পর্যন্ত উত্থাপিত হয়নি। তাহলে জাতি হিসাবে পাকিস্তানকে স্থায়ী ঘৃণা ও ধ্বংসের এই বায়বীয় আহাজারী কেন?

আমাদের সবকিছুতেই হুজুগের একটা প্রকোপ আছে। এই যেমন, ২১শে ফেব্রুয়ারী আসলেই দিকে দিকে ভাষা প্রেমের প্লাবন বয়ে যায়। অথচ এই উথলে উঠা প্রেমের ফাঁদেই আটকানো হয় অসহায় মা-বোনদের, ধর্ষণ করা হয় হিংস্র পশুর মত। নববর্ষের দিনে ইলিশ-পান্তার প্রেমে সেজে উঠি খাঁটি বাঙালী। দিনান্তে এই আমরাই গন যৌন নিপীড়নে অংশ নিয়ে নিজেদের এন্টারটেইন করি। এ নিয়ে কোন গণজাগরণ হয়না, শুরু হয়না প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের গণজোয়া্র। রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবি তেমনি এক প্রকোপের বহিঃপ্রকাশ যার মাধ্যমে আমরা আনন্দের খোঁড়াক খুঁজছি মাত্র।

বাংলাদেশের পথ ঘাট রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধীদের চারণভূমি নয়। যারা আসল অপরাধী তাদের বাস আমাদের নাকের ডগায়। তারা প্রতিদিন বাজার করছে, রাতে সুখে নিদ্রা যাচ্ছে, সংসার করছে, সন্তানাদি বড় করছে। গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদী, আমিনী আর সাকা চৌধুরীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে এত কামান গর্জানোর প্রয়োজন হয়না। প্রয়োজন হয় ইচ্ছার, প্রয়োজন হয় বুঝা পরার। একদল ক্ষমতায় গেলে ওরা অপরাধী, অন্য দলের বেলায় তারা মন্ত্রী এবং নিশান উড়িয়ে দাপিয়ে বেড়ায় দেশের অলিগলি রাজপথ। অপরাধী ওরা নয়, অপরাধী আমরা, যাদের কাছে দেশপ্রেমের সংজ্ঞা দুই মেরুর অবস্থানের মত।

পাকিস্তান ধ্বংস আর রাজাকার রাজাকার করে ব্লগীয় দুনিয়া কাঁপানো গেলেও এক চুল কাঁপানো যাবে না আমাদের অসততার সাম্রাজ্য, যার উপর নিজেরা বাস করছি এবং তৈরী করছি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মরণফাঁদ। আর যারা অতি দেশপ্রেমের ইয়াবা সেবনে নেশাগ্রস্ত তাদের অনুরোধ করবো, বুলেট ভর্তি অস্ত্র নিয়ে পিছু নিন নিজামী, আমিনি আর সাকা চৌধুরীদের। মগজ বরাবর ঢুকিয়ে দিন দুটো করে বুলেট। বাংলাদেশের একটা কুকুরও ঘোৎ করে উঠবে না এসব কুলাঙ্গারদের মৃত্যুতে। ব্লগে ব্লগে বায়বীয় বোমা আর অশ্লীল গালাগালি করে নিজেদের হাসির পাত্র করবেন না। অপরাধ ও শাস্তি হাসি আনন্দের রসদ নয়।

গুডলাক।
( http://www.amadershomoy.com/content/2010/05/27/news0215.htm )

ভালো লাগলে শেয়ার করুন