আমি এমনটাই করি। চোখ আটকে যাওয়ার মত খবরগুলোকে কল্পনার ৩-ডাইমেনশনে খুব কাছে নিয়ে আসি। তারপর হাতড়ে দেখার চেষ্টা করি খবরের গভীরতা। এক ধরণের জৈবিক আনন্দে পাই এসব কাল্পনিক সেশন হতে। ছাইপাঁশ যা লিখি তাও এই ডাইমেনশনেরই ফসল। আজও এর ব্যতিক্রম হল না। দুটো ছবি পাশাপাশি ফ্রেমে আটকে অবচেতন মনে কল্পনা করলাম মুহুর্ত দুটো। খুবই বিপরীতমুখী দুটো ঘটনা। কিন্তু আমি গন্ধ পাই অন্য কিছুর এবং তা শুকে শুকে কুকুরের মতই হাজির হই ঘটনাস্থলে। পাঠক, আপনাদের কি সময় আছে হাতে? তাহলে চোখ বন্ধ করে চলুন কিছুক্ষণের জন্যে হলেও ঘুরে আসি বাংলাদেশ (ওটাই যদি আপনার আবাস হয়ে থাকে, চলুন দুটো বিশেষ জায়গায়)।
প্রথম স্থানঃ ঢকার ৭/সি র্যাংকিন স্ট্রীট। স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মাহবুবুল আলম রডিনকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলছে বাংলাদেশের কথিত চৌকশ র্যাব। অভিযোগ খুব পরিষ্কার; সাইবার ক্রাইম। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করেছে এই তরুণ। অভিযোগের তালিকা এখানেই শেষ নয়, রডিনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না তার মা-বাবা। তার একাধিক গার্লফ্রেন্ড, এবং সম্প্রতি কোন এক গার্লফ্রেন্ডকে নায়িকা বানিয়ে পর্ণ সিডি বাজারজাত করেছে এই ভ্রষ্ট তরুণ। কাউকে সাইবার ক্রাইমে অভিযুক্ত করার জন্যে যথেষ্ট উপাদান।
দ্বিতীয় স্থানঃ বৃহত্তর ঢাকার কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর শহর। রাষ্ট্রপতি মো জিল্লুর রহমান নাগরিক সংবর্ধনা নিতে নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় আসছেন। বয়োবৃদ্ধ রাষ্ট্রপতি রোড জার্নির ধকল সইবার মত অবস্থায় নেই তা সবারই জানা। তাই হেলিকপ্টারে চড়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। খবরটা জানা মাত্রই হৈ চে পরে গেল স্থানীয় প্রশাসনে। কুলিয়ারচরে ল্যান্ড করার মত হেলিপ্যাড নেই। ইতিপূর্বে এর প্রয়োজনও পরে নি। এত বড় আলিশান মানুষ ঘরে আসবে, তাই শুরু হল রাজসিক আয়োজন। একটা নয়, দু’ দুটা অস্থায়ী হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হল। তা করতে গিয়ে কেটে ফেলা হল শতাধিক গাছ। এর মধ্যে কুলিয়ারচর ডিগ্রী কলেজের শতাধিক গাছ সম্পূর্ণ ভাবে শুইয়ে দেয়া হল মাটিতে। সাথে আরও অনেকগুলোর ডালপালা ছেটে নেংটা করা হল। ৫০-৬০ নারী পুরুষ মিলে পৈশাচিক উন্মেত্ততায় চালালো এই নিধন যজ্ঞ।
রডিন নতুন প্রজন্মের বখে যাওয়া এমন এক তরুণ যার ক্লোন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। এমন কোন পরিবার নেই যেখানে একজন হলেও রডিন নেই। মা-বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন, রাতের ঘুম হারাম করছেন সন্তানের চিন্তায়। যে সমাজে স্বপ্নের মৃত্যু হয় খুব অল্প বয়সে, ভবিষ্যৎ সমাহিত হয় রাজনীতির পংকিল নদীতে, সে দেশে রডিনের মত তরুণ ইন্টারনেটে আপত্তি মূলক ছবি দেখবে, ছাপাবে, পর্ণ ঘাঁটবে, একাধিক গার্লফ্রেন্ড রাখবে, খুবই কি অস্বাভাবিক? প্রধানমন্ত্রীর প্রবাসী তনয়ের ইতিহাস ঘাঁটলে রডিনের চাইতেও কি খুব একটা ভাল ইতিহাস বেরিয়ে আসবে? এগুলো বয়সের ক্রাইম, যা হতে বিপদগামী তরুণদের বিরত রাখার দায়িত্ব সরকারের, রাষ্ট্রের। একটা সরকার কতটা জনমুখী তার মানদণ্ড হতে পারে সমাজে তরুণদের অবস্থান যাচাইয়ের মাধ্যমে। সে বিচারে আমাদের তরুণরা আজ কেন পথের যাত্রী তা কি প্রধানমন্ত্রীর জানা নেই? উচ্ছিষ্টের লোভ দেখিয়ে, রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে আটকে যুব সমাজকে পঙ্কিলতার সাত পাকে ঘোরানোর যে অপসংস্কৃতি প্রধানমন্ত্রীর কি তাতে হাত নেই? পাবলিক ফাংশনকে প্রফেশন হিসাবে নিলে বহুমুখী আঘাত সইবার ধৈর্য্য, সহ্য ও ক্ষমতা সাথে নিয়েই আসতে হয়। কার্টুনের ভয়ে প্রযুক্তির টুটি চেপে ধরার নাম সমস্যার সমাধান নয়, এ কেবল শুরু। এত ভয় থাকলে বোরকা পরে ঘরে বসে থাকলেই হয়। দৈনিক ৪ ঘন্টা অঙ্গসজ্জা শেষে নিজকে আকর্ষণীয়া বানিয়ে জনসম্মুখে হাজির হলে কেউ যদি তার বাকা অনুবাদ করে খুব কি অন্যায় হবে?
পরিবেশ সংক্রান্ত মহাসন্মেলনে আমাদের সরকার প্রধান হাজির হয়েছিল বস্তা ভর্তি টাকা লাভের আশায়। উন্নত বিশ্বের বিরুদ্ধে আমাদের অনেক অভিযোগ, তারা পরিবেশ কলুষিত করছে। এবং দাবি, এ অপরাধের মূল্য দিতে হবে। হ্যালো মিঃ জিল্লুর রহমান! কুলিয়ারচর কি আপনার বাবার সম্পত্তি ছিল যে এর গাছপালা নিধন করে আপনার হেলিকপ্টার নামাতে হবে?
রডিন আর জিল্লুর, দুই প্রজন্মের দুই অপরাধী। হাতকড়া লাগানো জরুরী হলে এদের দুজনের হাতেই লাগানো উচিৎ ছিল।