পাঠক, আগ বাড়িয়ে নিশ্চিত করে দিচ্ছি, উপরের ছবি দুটো মেসার্স ওয়াচডগ ফটোশপ করপোরেশনের (দেউলিয়া ঘোষিত) নতুন কোন প্রডাক্ট নয়। যারা কার্টুন শিল্পের টেকনিক্যাল দিকগুলোর সাথে পরিচিত নন তাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি, এ কাজ পুরানো ঢাকার র্যংকিন ষ্ট্রীটের রডিনের কাজও নয়। এ আমাদের সাংবাদিক ভাইদের সৃষ্ট কনটেমপোরারি আর্ট। সৃষ্টির এ এপিসোডে মডেল হয়ে আমাদের ধন্য করেছেন রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার বঙ্গবন্ধু সৈনিক, স্বনামধন্য যুবলীগের ভাই সকল। পৌরসভার ১০টা উন্নয়নমূলক কাজের টেন্ডার হয় নিকোর মাধ্যমে। না না, আমি কারও নিকাহ ফিকাহ নিয়ে ঝুট ঝামেলা পাকাচ্ছি না; নিকো, মানে সমঝোতা! জিনিসটা কাজ করে এ ভাবে; একদল ঠিকাদার (ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ ও ওলামা লীগ) বুঝাপড়ার মাধ্যমে টেন্ডারবাজিতে অংশ নেয়। বিশ্বস্ততার প্রমান হিসাবে সিকিউরিটি নিকো জমা করতে হয় একজনের কাছে। দেন-দরবার শেষে ৫ লীগের কোন এক লীগ কাজ পায় (যার বাহুতে বল বেশী) এবং বাকিরা সেক্রিফাইসের উপঢৌকন হিসাবে ভাগাভাগি করে নেয় নিকোর অংক। এ যাত্রায় নিকোর রেট ছিল ৫%। এই অংকের ৪ লাখ টাকা নিয়ে শুরু হয় মার্শাল আর্ট। আর্টে অংশ নেয় ব্রুস লীর উত্তরসূরি ইকবাল গ্রুপ ও নাজমুল গ্রুপ। এক কথায় সেই পুরানো পেচ্যাল, টাকা যার হাতে সে আর ফেরত দিতে চাইছে না, বাকিরা তা মানছে না, ইত্যাদি, ইত্যাদি!
মার্শাল আর্ট পর্ব শেষ হওয়ার পর শুরু হয় কনটেমপোরারি আর্ট পর্ব। ইকবাল গ্রুপের ব্ল্যাক বেল্টধারী টেন্ডারবাজেরা স্থানীয় যুবদল অফিস হতে বের করে আনে রামদা-চাপাতি নামের তুলি ও ক্যানভাস। ’মারো ঠেলা হেইও’ মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে বিপুল বিক্রমে ঝাপিয়ে পরে প্রতিপক্ষ নাজমুল গ্রুপের উপর। লাল রং’এর ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়ে শিল্পীরা এমন এক কালজয়ী প্রডাক্ট সৃষ্টি করে, যা দেখে ১২ বছরের মানসিক ভারসাম্যহীন শরফুদ্দিন পর্যন্ত আঁতকে উঠে। প্রতিবন্ধী এই কিশোর ধমকের সুরে আবেদন জানায় লালের প্রধান্য বন্ধ করতে। বুমেরাং হয়ে ফিরে আসা এই আবেদন। চাপাতির ব্যবহারে বুক হতে পেট পর্যন্ত কুপিয়ে ফানা ফানা করা হয় পাগলকে। বেরিয়ে আসে পাগলের পেটের ভুঁড়ি। ঘটনার তৃতীয় পক্ষ, থানার ভারপ্রাপ্ত চোর, থুক্কু! কর্মকর্তা, জনাব ফোরকান শিকদার সদম্ভে ঘোষনা দেন, ’যে হালাই অন্যায় করুক, কাউরে ছারুম না’। পাঠক, ওসির এই বক্তব্যে এমন কিছু শব্দ আছে যা অনুবাদের দাবি রাখে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এম্পি, নেতা, পাতি নেতা, ছটাক নেতা, তোলা নেতা সহ সরকারী কর্মচারীরা যখন সগৌরবে ঘোষনা দেন, ’কাউরে ছারুম না’ আপনাদের পড়তে হবে, ’কারুর পকেটরেই ছারুম না’।
নিজের ইজ্জত সমুন্নত রাখার লালসায় ফেইসবুক বন্ধ করে আমাদের সরকার প্রধান প্রমাণ করতে চেয়েছেন, বাংলাদেশে অন্যায়ের কোন স্থান নেই, হোক তা সাইবার। হ্যালো সন্মানওয়ালী প্রধানমন্ত্রী, আপনার ঔরসে জন্ম নেয়া উপরের বেজন্মা কুকুরগুলোর পৈশাচিক তাণ্ডব বন্ধ করতে এ যাত্রায় আপনি কি বন্ধ করতে যাচ্ছেন? ফেইসবুক বন্ধের মত পারবেন কি এই সব কুত্তালীগ বন্ধ করতে? আপনাকে নিয়ে কার্টুন আঁকলে ইজ্জতের চাকা পাংঞ্চার হয়, জেনে রাখা ভাল, আমাদের চাকা পাংঙ্কচার হয় আপনার আদরের সন্তানাদির এসব বেশ্যামি দেখলে।
পাঠক, আপনাদের যদি ইচ্ছে হয় আর্টে অংশে নেয়া মৃত্যু পথযাত্রী মডেলদের কাউকে দেখতে, কষ্ট করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে আসবেন। ও হ্যাঁ, আরও একটা অনুরোধ; এখন আমের সিজন, ম্যাংগো পিপলদের হয়ে এক টুকরি ল্যাংড়া নিয়ে যাবেন তাদের জন্যে। আফটার অল এরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ। ব্যক্তিগতভাবে এ সব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না আমি। আমার মগজে একটাই শুধু প্রশ্ন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম কেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রাখা হচ্ছে না! গোমর টা কোথায়? আজ থাক, এ নিয়ে অন্য একদিন লেখা যাবে।