খুবই চমকপ্রদ ও অভিনব খবর। আপনাদের অনেকেরই হয়ত মনে আছে অবৈধ বিদেশি কল আদান-প্রদান (ভিওআইপি) বন্ধে সরকারের জেহাদ ঘোষণার কথা। এ ব্যবসায় জড়িত অনেক রাঘব বোয়ালদের নেটওয়ার্ক গুড়িয়ে দিয়ে সাফল্যের বাহবা নিতেও ভুল করেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও তার মন্ত্রী। তবে বাস্তবতা হল, চাঁদের অন্য পিঠের মত অন্য একটা পীঠ থাকে দেশীয় খবরে, যা ঘন্টা বাজিয়ে উন্মোচন করা হয়না ভিন্ন কারণে। এতদ্সংক্রান্ত তেমনি একটা খবর প্রকাশ করেছে দৈনিক প্রথম আলো। পত্রিকাটি লিখছে অবৈধভাবে বিদেশি কল আদান-প্রদানের (ভিওআইপি) ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারি মালিকানাধীন টেলিটকের সংযোগ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে গত ৩৯ দিনে ২২ হাজার ১৬৭ বার টেলিটক সংযোগ দিয়ে অবৈধ ভিওআইপি করা হয়েছে। এ হিসাবে ভিওআইপির অবৈধ ব্যবহারের মোট সংযোগের ৫৯ শতাংশই টেলিটকের। বিটিআরসির হিসাবে, ৩৯ দিনে টেলিটকের তিন হাজার ৬২টি সংযোগে কথা বলা হয়েছে ২২ হাজার ১৬৭ বার। অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে সরকারী জেহাদের পাশাপাশি বেসরকারী ৪টি মোবাইল কোম্পানী শুরু করেছে তাদের নিজস্ব জেহাদ। নিজেদের গা হতে অবৈধতার কালিমা দূর করার জন্যে বসিয়েছে অবৈধ কল ডিটেক্ট মেশিন। ৩৯ দিনে করা এ তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলালিংক। চার হাজার ৮২৭ সংযোগ দিয়ে সাত হাজার ৪৫৯ বার বিদেশি কল করা হয়েছে। রবি রয়েছে তৃতীয় স্থানে। দুই হাজার ৬৮১ সংযোগ নিয়ে। ওয়ারিদের ৯৪৩টি সংযোগ, গ্রামীণফোনের ৩৩টি এবং সিটিসেলের ২৬টি সংযোগ ব্যবহার করা হয়েছে। আর সরকারি ল্যান্ডফোন বিটিসিএলের ১৭৬টি সংযোগ দিয়ে অবৈধ বিদেশি কল আদান-প্রদান করা হয়েছে । তবে টেলিটকের সংযোগ দিয়ে ভিওআইপির অবৈধ ব্যবহারের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে টেলিটক কর্তৃপক্ষ (চোর স্বীকার করবে চুরির অপরাধ!)। টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, শনাক্ত করার মেশিন বসিয়েছে বেসরকারি অপারেটররা। তাই এ হিসাবের পেছনে তাদের কারসাজি থাকতে পারে। ওই মেশিন নিয়ন্ত্রণ করে বেসরকারি অপারেটররাই। নিজেদের সংযোগ কম শনাক্তকরণের জন্য তাদের উন্নতমানের কোনো সফটওয়্যার থাকতে পারে। চমৎকার যুক্তি। চুরি চামারিতে দক্ষ যে কোন রাজনীতিবিদদের ভাষাকেও হার মানাবে!
খবরের এখানেই শেষ নয়! এতদ্সংক্রান্ত আরও একটা খবর বেরিয়েছে একই পত্রিকায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থেই নাকি ইন্টারন্যাশনাল লং ডিসটেন্স কমিউনিকেশন সার্ভিসেস (আইএলডিটিএস) নীতিমালা পরিবর্তনের জন্য টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১ সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। আগের নীতিমালা অনুযায়ী টেলিযোগাযোগ-সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেওয়া, নবায়ন, স্থগিত ও বাতিল, লাইসেন্স ফি ও ট্যারিফ নির্ধারণ, জরিমানা, শাস্তি—এসবের জন্য নীতিমালা তৈরির ক্ষমতা ছিল বিটিআরসির হাতে। সংশোধিত আইনে এসব ক্ষমতা সরকার তথা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের হাতে আনা হচ্ছে।
রাজনৈতিক দল চালাতে পয়সা লাগে। জায়গা-জমি বাড়ি-ঘর বিক্রি করে এ পয়সা যোগাতে হলে বাংলাদেশে কয়টা রাজনৈতিক দল টিকে থাকতো তা বলাই বাহুল্য। এরশাদ আমলের একজন জাঁদরেল মন্ত্রী মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি বিশালকায় শিল্পকারখানা বানাচ্ছিলেন অতিশয় গোপনে। এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ফাঁক করলেন গোমরটা। এরশাদ নিজেই নাকি উৎসাহ দিচ্ছেন সময় থাকতে আখের গুছিয়ে নিতে। কারণ ক্ষমতা হতে বিদায় নিয়ে রাজপথে চলে গেলে দল চালানোর পয়সা যোগান দেবে এসব বিনিয়োগ। এক কথায়, ক্ষমতার ইন্স্যুরেন্স।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্ক্রু টাইট দিয়ে একে ঠুঁটো জগন্নাথ বানানো হয়েছে সন্মানিত রাজনীতিবিদদের
মুয়া ফুয়া চক্রের হয়রানি হতে বাঁচানোর জন্যে। পাশাপাশি খৎনা পড়ানো হল বিটিআরসির। এ যেন দুইয়ে দুইয়ে চারের হিসাব।