বিপুল সমারোহে মঞ্চস্থ হয়ে গেল বিএনপি আয়োজিত ও বহুল প্রচারিত হরতাল নাটকের প্রথম অংক। নাটকের ২য় অংক মঞ্চস্থ হচ্ছে মূলত ঢাকা শহরের বিভিন্ন থানায়, জেলে আর হাসপাতালে। আমরা ম্যাংগো পিপলরা বোধহয় ভুলেই গিয়াছিলাম আওয়ামী ঘরণার অতি প্রিয় এই অক্টোপাসটার কথা। নায়ক ও ভিলেন চরিত্রের পালাবদল হলেও নাটকের ক্লাইমেক্সে মৌলিক কোন পরিবর্তন আসেনি এতগুলো বছর পরেও। প্রায় চার বছর পর জাতিকে উপহার দেয়া বিএনপির হরতাল নতুন করে সেটা প্রমান করে গেল। বলতে গেলে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ হাতে কলমে আমাদের শিখিয়েছে সন্ত্রাসের মুখে জাতিকে জিম্মি করে কি করে দাবি আদায় করা যায়। সে আদায় যদি ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার আদায় হয় তাহলে বিএনপিকে এ যাত্রায় লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। লাগাতার হরতালের বিরুদ্ধে মাত্র একদিনের হরতাল কোন মতেই ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার পথ মসৃন করতে সক্ষম হবে না। এর জন্যে চাই ম্যারাথন হরতাল, চাই অচল দেশ, চাই পংগু অর্থনীতি, চাই যাত্রী সহ জ্বলন্ত বাসে আগুন, লগি বৈঠার তাণ্ডব, প্রতিপক্ষের লাশের উপর ব্রাজিলিয়ান সাম্বা সহ আরও অনেক কিছু। পছন্দ করি বা না করি, এ গুলোই আমাদের রাজনীতির আসল চালিকা শক্তি। এ শক্তিই একটা দলকে রাজপথ হতে বঙ্গভবনে নিয়ে যায়, রাজাকারের গাড়িতে পতাকা উড়ায়, মায়ের অবৈধ পয়সায় লালিত সন্তানকে পৃথিবীর সেরা বৈজ্ঞানিক বানায়, কুখ্যাত চোরকে দেশের ভবিষ্যৎ মুক্তিদাতা আখ্যায়িত করে। হরতালের এমনটাই শক্তি।
বিএনপির জন্যে এ হরতালের প্রাপ্তি আর যাই হোক, তাদের আকাশে উদিত হয়েছে নতুন এক সূর্য, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। দলটার সেন্ট্রাল কমান্ড হতেই নাকি পরিকল্পিত ভাবে চৌধুরীকে গ্রীন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে, ’এ্যানি ভাই এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে’। আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিব নিয়ে সংসদে নিকৃষ্টতম খিস্তি করার কারণে এই নেতার মেট্রিক ফেল নেত্রী বেজায় খুশি। পুরস্কার হিসাবে মিডিয়ার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে হিরো বানানোর উদ্দেশ্যে। দৃশ্যটা ছিল চোখে পড়ার মত; দলীয় ডাক্তারদের চিকিৎসা আর কর্মীদের সান্ডার তৈল মর্দন নিয়ে বেশ খোশ মেজাজে সময় কাটাচ্ছিলেন স্থানীয় হাসপাতালে। হঠাৎ করে বদলে গেল পরিস্থিতি। কেউ একজন জানাল, ’ওরা আসছে’। ডাক্তারের পরামর্শে ভবিষ্যৎ সরকারের ভবিষ্যৎ যুবমন্ত্রী জনাব চৌধুরী লুটিয়ে পরলেন বিছানায়। কাৎরাতে শুরু করলেন বিনা নোটিশে। ওরা আসার আগেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়াই শুরু করে দিলেন এই নেতা। ওরা আসলে একদল ফটো সাংবাদিক, দেখতে এসেছে হরতাল নাটকের আহত নায়ককে। সবার সামনে ডাক্তার সার্টিফিকেট দিলেন, ’ সিংগাপুর, না হলে মৃত্যু অবধারিত’। ১/১১’র সময়কালীন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত চিকিৎসকের কথা মনে আছে আপনাদের? আমেরিকায় না গেলে চোখ, কান, মাথা সব কিছুর ইমিডিয়েট ইন্তেকাল হবে, একটার পর একটা ভূয়া সার্টিফিকেট দিয়ে তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আপনজন ও উপদেষ্টা। আপনার আমার মত বিএনপির ডাক্তারদেরও জানা আছে সে ঘটনা। চট্টগ্রাম নির্বাচনের ফলাফল বিএনপি ঘরণার ডাক্তারদের নতুন করে উৎসাহিত করছে তারেক ও ককো জিয়ার মত শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর চিকিৎসা করতে। ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে নেতাকে কে কত দ্রুত সিংগাপুর পাঠাতে পারবে তার উপর নির্ভর করবে ভবিষতের অনেক কিছু। তাই মিডিয়াতেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এই দাবি, এ্যানিকে সিংগাপুর পাঠাতে হবে এবং তা হতে হবে এক্ষুনি। সংসদের অভিভাবক স্পিকার পর্যন্ত এ খবর পৌঁছাতে সময় লাগেনি। স্পিকার সমবেদনা জানালেন এবং খেললেন নিজস্ব রাজনৈতিক খেলা, সংসদে এসে এই দাবি জানালে নাকি আরও ভাল হত!
র্যাব নিয়ে বিএনপি গর্বের শেষ নেই। ইতিহাসের বর্বরতম এই বাহিনী জন্ম তাদের জরায়ুতেই। নিশ্চয় মির্জা আব্বাসও গর্ব করতেন পিতাদের একজন হতে পেরে। জন্ম দেয়া এসব সন্তানের দল জনাব আব্বাসের বাড়িতে এমন এক পৈশাচিক উল্লাস করল যা শুধু পাথর যুগীয় বর্বরতার সাথেই তুলনা করা চলে। বিএনপি নামক লুটেরা মেশিনের অন্যতম মেকানিক আব্বাস ক্ষমতায় ফিরে গিয়ে মনে রাখবেন কি র্যাবের এই বেধড়ক পিটুনি? দাবি করবেন কি মানব সভ্যতার কলংক জল্লাদ বাহিনীর বিলুপ্তির জন্যে? নাকি ইটের বদলে পাটকেল মারতে লেলিয়ে দেবেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে? দেশীয় রাজনীতির যে ধারা তাতে নিশ্চিত করে বলা যায় ক্ষমতার পালাবদলের সাথে জনাব আব্বাসও নামবেন নতুন ভূমিকায়।
হরতাল সফল আর হরতাল ব্যর্থ করার জন্যে মইনুল হোসেন রোডের ৩০০ কোটি টাকার বাড়ি আর ক্ষমতার সুরম্য প্রাসাদ হতে জনগণকে ধন্যবাদ জানানো হয় বিপুল উদ্দীপনায়। আমেরিকার ভার্জিনিয়া, কানাডার টরেন্টো, বিলাতের লন্ডন আর সিঙ্গাপুরে বাসরত স্বদেশী বৈজ্ঞানিক আর বিশিষ্ট চিন্তাবিদদের দুয়ার পর্যন্ত হরতাল নামক মধ্যযুগীয় বর্বরতা পৌঁছানো না গেলে জাতির ঘাড় হতে এই ব্যাধি কোনোদিনই দূর হবে বলে মনে হয় না। আসুন দাবি জানাই হরতালকে আমেরিকা, কানাডা আর ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে।