আগামীকাল (৪ঠা জুলাই) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। লম্বা উইকএন্ড। শনি, রবি সহ সোমবার পর্যন্ত ছুটি। যে যেদিকে পারছে ছুটছে। আমার মত যাত্রার পরিধি যাদের সীমিত তারা হয়ত ইন্টারনেট আর টিভির সামনে বসেই কাটিয়ে দেবে এ কটা দিন। ঠিক এভাবেই শুরু হল শনিবারের সকালটা। টিভির বাটন টিপতেই বাই ডিফল্ট চলে গেল চ্যানেল সেভেনে। ফুটবল! চ্যানেল সেভেন আমেরিকার অন্যতম প্রধান চ্যানেল। শনিবার এ সময়টা এ দেশের অন্যতম আন-পপুলার খেলা সকার দেখাবে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। এক সময় ঢাকা ষ্টেডিয়ামে নিয়মিত খেলা দেখতাম প্রিয় দলের সমর্থক হয়ে। টিভির বদৌলতে বিশ্ব ফুটবলের সাথে পরিচিত হওয়ার পর আমার জন্যে বাংলাদেশের ফুটবলে মা কালির আছর পড়ে, এবং খুব তাড়াতাড়ি বিদায় নেয় প্রিয় তালিকা হতে। আগ্রহটার পুনঃজন্ম হয় ইউরোপে হিজরত করার পর। ডায়নামো কিয়েভের সমর্থক হয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গ হতে সুদূর স্কটল্যান্ডের ডান্ডি পর্যন্ত গেছি গাঁটের পয়সা খরচ করে। সে ফুটবল নীরবে নিভৃতে আবারও বিদায় নেয় দেশে ফেরার পর। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় ফুটবলের কোন আশা ভরসা নেই তাই এ নিয়ে অতিরিক্ত আবেগ প্রকাশ ছেলেমানুষি হিসাবেই মনে করি।
আমার গিন্নী দক্ষিন আমেরিকার। পৃথিবীর ঐ অংশে ফুটবল কতটা জনপ্রিয় তার কিছুটা হলেও নমুনা দেখেছিলাম বলিভিয়ার রাজধানী লা পাস গিয়ে। আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানির খেলা নিয়ে গিন্নির অতিরিক্ত আগ্রহ থাকবে এমনটাই আশা করছিলাম। কিন্তু খেলা শুরু হতে লক্ষ্য করলাম বিপরীতমুখী যাত্রা। প্রতিবেশি দেশ আর্জেন্টিনার জালে জার্মানি গোল দেয় আর গিন্নী চিৎকার করে উঠে। কারণ জিজ্ঞেস করলে মুচকি হাসে। ব্যাপারটা পরিষ্কার করতে দক্ষিন আমেরিকার কটা দেশে বন্ধু বান্ধবদের ফোন করলাম। পেরু, চিলি আর ইকুইডোরের মত দেশগুলোতে অনেকেই না-কি খেলা দেখছে না। প্রথমত নিজেদের দেশ খেলছে না, দ্বিতীয়ত, আর্জেন্টিনাকে নিয়ে দেশগুলোর ফুটবল প্রেমীদের আছে বেশ কিছু রিজারভেশন। পেরুর একজন বলল অ্যারোগেন্ট আর্জেন্টিনাকে সর্মথন করা এক ধরনের অপরাধ। এরা না-কি প্রতিবেশি দেশগুলোর ফুটবলকে ফুটবল হিসাবে গণ্য করতে চায় না। নিজেদেরকে খোদার ঠিক পরের জন ভাবতে পছন্দ করে। খেলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে দেশে ফোন করলাম বাসার অবস্থা জানার জন্যে। ফোন ধরল না কেউ। পরাজয়ের শোকে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে প্রায় সবাই। বাধ্য হয়ে ঢাকায় ফোন করলাম। সেখানেও একই ব্যাপার। শোকে পাথর হয়ে গেছে সমর্থক গুষ্টি। ব্রাজিল সমর্থকদের অনেকে না-কি ঘটা করে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের টিটকারী দিচ্ছে। ঘটনা অনেক ক্ষেত্রে হাতাহাতি পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতা হতে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশের জনজীবন স্তব্দ হয়ে গেছে। শোকের মাতম সুনামীর মত গ্রাস করে নিচ্ছে দেশটার অলি গলি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যেন দক্ষিন আমেরিকার দেশ নয়, খোদ বাংলাদেশই বিদায় নিয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবল হতে।
আর্জেন্টিনার ফুটবল দল ও দেশটার মিলিয়ন সমর্থক গুষ্টি বাংলাদেশী সমর্থকদের মত পরাজয়ে এতটা মুষড়ে পরবে ব্যাপারটা বোধহয় এমন নয়। কটা দিন বিরতি দিয়ে এরা আবারও ফিরে যাবে মাঠে এবং খেলবে মন মাতানো ফুটবল। সাফল্য আর ব্যর্থতার অপর নাম স্পোর্ট। হুজুগে বাংগালীরা এই সত্যটা বুঝতে পারলে হয়ত হাজার মাইল দূরের দেশ আর্জেন্টিনা ব্রাজিল দলের জয় পরাজয়ে এতটা ভাবাবেগ তৈরী হতো না।