দল হিসাবে বিএনপির ভবিষ্যৎ কি তা মূল্যায়ন করার সময় বোধহয় এখনো আসেনি। তবে আওয়ামী শাসন তার তৃতীয় বার্ষিকীতে পদার্পণ করলেই বুঝা যাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে দলটাকে কোন সমীকরণে সমাধা করতে চাইছে ক্ষমতাসীন দল। নেত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে কোন লুকোচুরি খেলতে রাজী নন, কথা ও কাজে খোলামেলাভাবেই প্রকাশ করছেন রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ হিসাবে শুধু জামাত নয় বিএনপিকেও মেনে নিতে তিনি রাজী নন। আওয়ামী লীগকে বাদ দিলেও সাংগঠনিক ক্ষমতা নিয়ে দল হিসাবে বিএনপির চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে অপেক্ষাকৃত তরুণ অংশের ক্ষমতার চরম অপব্যবহারের কারণেই রাজনীতিতে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। হাওয়া ভবন কেন্দ্রিক এ ধরণের সমান্তরাল সরকার বাংলাদেশের রাজনীতিতে দ্বিতীয়বার স্থান পেলে আমাদের ধরে নিতে হবে জাতি হিসাবে আমরা আসলেই বোধহয় বেহায়া। পাশাপাশি বিএনপির বয়োবৃদ্ধ নেতাদের দলের প্রতি কমিটমেন্ট এখন কোন লেভেলে তার কিছুটা হলেও নমুনা পাওয়া গেছে গেল হরতালে। নেতাদের প্রায় সবাই বয়সের ভারে নূয্য। বাংলাদেশের ট্র্যাডিশনাল সরকার বিরোধী আন্দোলন চালাতে এসব নেতাদের অনেকেরই শারীরিক যোগ্যতা নেই। ক্ষমতার রাজনীতিতে অভ্যস্ত এসব রাজনীতিবিদদের প্রায় সবাই জীবনের শেষপ্রান্তে আয়েশি জীবন কাটাতে ব্যস্ত। আর্থিক চাহিদা বলতে যা বুঝায় তার প্রায় সবটাই মিটিয়ে নিয়েছেন ক্ষমতার বিভিন্ন টার্মে। নেত্রীর মনোরঞ্জন আর দলে অবস্থান ধরে রাখতে অনিচ্ছায় রাস্তায় বের হলেও আন্দোলনে এদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। ঘরে বাইরে বিরোধী দলে ঠেকাতে সরকার এখন চরম হার্ডলাইনে। শহীদ উদ্দিন এনি, শমশের মবিন চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান ও মির্জা আব্বাসকে যে কায়দায় শিক্ষা দেয়া হয়েছে একই শিক্ষা বিএনপির বয়স্ক ও অলস নেতারা জেনেশুনে ’উপভোগ’ করতে চাইবেন বলে মনে হয়না। সংগত কারণেই প্রশ্ন জাগবে রাজনীতিতে দলটার ভবিষ্যৎ কি?
বয়স আড়াল করার যতই চেষ্টা করুক না কেন, বাস্তবতা হল ঘাত সংঘাতের রাজনীতিতে দলকে নেত্রীত্ব দিয়ে ক্ষমতা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার বয়স লোপ পাচ্ছে দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার। পারিবারিক উত্তরাধিকারকে নেত্রী কতটা প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তার কিছুটা হলেও প্রমান পাওয়া যায় তত্ববাধায়ক গ্যাঁড়াকলে আটকে জেলে যাওয়ার আগে আপন ভাইকে দলীয় সহ-সভাপতি পদে নিয়োগ দেয়া। স্বভাবতই আমরা ধরে নিতে পারি বয়সের কাছে পরাজিত হলে খালেদা জিয়া দলীয় প্রধানের দায়িত্ব দেবেন দুই সন্তানদের একজনকে। সমস্যা হল দুই সন্তানের উভয়েই এখন এক কথায় পলাতক। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের যে অনন্য উদাহরণ এই দুই জিয়া প্রতিষ্ঠা করেছেন তাকে জেনারেল জিয়া, ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী আবেগ দিয়ে পবিত্র করা যাবে কি-না সময়ই তা প্রমান করবে। সন্দেহ নেই একদল নিবেদিত ভৃত্য এর পক্ষে সাফাই গাইবেন এবং ওকালতি করবেন।
আজকের দৈনিক আমাদের সময়ের খবরে প্রকাশ সরকার খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ সন্তান আরাফাত রহমান ককোর ফেয়ারহিল কনসালটিং প্রাইভেট লিমিটেড নামে সিংগাপুর ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে রাখা ৬ কোটি ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ টাকা বাজেয়াপ্ত ও দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে আদালতের সাহায্য চেয়েছে। দেশ হতে অবৈধভাবে পাচার করা অর্থ একই ব্যাংকের হিসাব নং ৩৫২-০১৫-৫৪২-০’এ রক্ষিত আছে বলে জানান হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে যাদের সম্যক ধারণা আছে তাদের কাছে এ তথ্য কোন অবাক করা তথ্য নয়, কারণ একই দোষে দেশের প্রায় ১০০ ভাগ রাজনীতিবিদ দূষিত। খোদ খালেদা জিয়ার নামে ঝুলছে বিদেশ হতে এতিমদের নামে ৬ কোটি টাকার ফান্ড এনে তা স্বীয় দুই সন্তানের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার মামলা। সরকার বিরোধী আন্দোলন চাংগা করার চেষ্টা করলে সরকার জিয়া পরিবারের ঝুলন্ত মামলাগুলো বেগবান করবে এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে উঁচু মহল। প্রশ্ন হচ্ছে তারেক ককো বিহীন জিয়া পরিবারের সঞ্চয়ে কতটা শক্তি অবশিষ্ট আছে যা দিয়ে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে সরকারের এই বহুমুখী আক্রমণ। খবরে প্রকাশ বিএনপি না-কি সহসাই সরকার বিরোধী আন্দোলনে যাচ্ছে না। আন্দোলনের অসংখ্য উপাদান হাতে থাকলেও বিরোধী দল তা ব্যবহার করার সাহস পাচ্ছে না। দল হিসাবে বিএনপির ভীত দিন দিন দুর্বল হচ্ছে এটা কি তারই লক্ষন নয়?
বিএনপির সবই কিছুই ব্লিক এমনটা বোধহয় সত্য নয়। এত কিছুর মাঝেও তাদের জন্যে আশা হয়ে থাকবে সরকারের অংগ সংগঠন ছাত্রলীগ। এই একটা দলই যথেষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতার শীর্ষ হতে টেনে নামাতে। গ্রামে গঞ্জের মারফত আলী আর সুবেদ আলীদের ঘর হতে স্ত্রী কন্যাদের উঠিয়ে নিয়ে ভোগ আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজীর জালে অস্থি-মজ্জা ভেঙ্গে আওয়ামী লীগকে দানবীয় লীগ হিসাবেই সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছে ছাত্রলীগ নামের হায়েনার দল। দিনশেষে ভোটের বাজারে এগুলোই বিকাবে চড়ামূল্যে। যুদ্ধাপরাধী বিচার সহ বিচার রাজনীতির ইমপ্যাক্ট দেশের যুব সম্প্রদায়ের কাছে আবেগ উচ্ছ্বাসের বিষয় হয়ে থাকলেও সাধারণ মানুষের কাছে তা খুব একটা বেশিদিন থাকবে বলে মনে হয়না। আমাদের ভোটাররা দলীয় সাফল্যে যাচাই করে ভোট দেয় না, ভোট দেয় ব্যর্থতাকে না বলতে। এমনটাই চলে আসছে দেশটার জন্মলগ্ন হতে। আওয়ামী লীগ নিজেও ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে একই কারণে। দলীয় সমর্থকদের শুনতে হয়ত খারাপ লাগবে কিন্তু সত্য হল, আওয়ামী লীগের জন্যে এ মুহূর্তে ছাত্রলীগ একটা জায়গান্টিক না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে বিএনপি নিজে যা পারছেনা ছাত্রলীগ সে কাজটা করে দিচ্ছে তাদের হয়ে।
যত শক্তিশালী আর জনসমর্থন থাকুক না কেন, প্রতিপক্ষকে গায়ের জোরে নির্মূল করার চেষ্টা করে অতীতে কোন সরকার অথবা ব্যাক্তি ক্ষমতার দৌড়ে বেশিদিন টিকতে পারেনি। দেখার বিষয় আওয়ামী লীগ এ দৌড়ে কতটা পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হয়।