৩৯ বছর পর পরিচয় পাওয়া গেল আমার। আমি বাংলাদেশি। সমাজের চোখে কতটা জানিনা তবে ’মহামান্য’ আদালতের চোখে এতদিন আমি ছিলাম পরিচয়হীন, জারজ। দায় মুক্তির চাইতে কলঙ্কমুক্তি আনন্দে আমি এখন দিশেহারা! ধন্যবাদ ’মহামান্য’ আদালতকে। নাগরিক পরিচয় উদ্ধারের পাশাপাশি বিচার ব্যবস্থা আমাদের ইতিহাসের ডিএনএ’তেও হাত দিয়েছে এবং ’পবিত্র’ কলমের খোঁচায় যার যা প্রাপ্য তা ফিরিয়ে দিচ্ছে একে একে। গোপালগঞ্জ আওয়ামি লীগের এককালের মহান নেতা ও উচ্চ আদালতের সিটিং বিচারক সানন্দে ফিরিয়ে দিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মানসম্মান। দুদক নামক নষ্ট সমিতি ফুলের মত পবিত্র প্রধানমন্ত্রীর কপালে চাঁদাবাজি সহ মোট ১৩টা মামলার কলঙ্ক এটে দিয়েছিল ’বিনা অপরাধে’। শুনানির প্রয়োজন হয়নি, এজলাস বসাতে হয়নি, উকিলদেরও তর্কাতর্কি করতে হয়নি, তার আগেই প্রধানমন্ত্রীর গঙ্গাস্নান সেরে নিল দেশের বিচার ব্যবস্থা। ভাগ্যবান বটে! শুধু প্রধানমন্ত্রী কেন, যাদের ডিএনএ’তে আওয়ামী অস্তিত্ব পাওয়া গেছে তাদের সবাই এখন পূণ্য। বঙ্গবন্ধু সৈনিকরা অপরাধ করেনা, জাতীয় পরিচয়ের পাশাপাশি এ পরিচয়টাও আইনী কায়দায় প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে দেশের ’মহামান্য’ আদালত। মান্যের উপর অধিক মান্য, তাতেই বোধহয় মহামান্য। দুদিন আগের দলীয় নেতা ক্ষমতার ঋতুস্রাবে ভেসে ঠাঁই নেয় উচ্চ আদালতের উচ্চ চেয়ারে, এবং সেখানে বসে আবিষ্কার করে আমার মত ম্যাংগো পিপলদের পরিচয়। প্রতিভা বটে! প্রাসঙ্গিকভাবে পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই, আপনার প্রতিবেশি যদু মধু দুই ভাই হলেও ওদের আইনী অধিকার কিন্তু আলাদা। যেহেতু যদু আওয়ামী লীগার তার চরিত্রও দুধের মত পবিত্র। আর মধু যেহেতু ভিন্ন দলের তার গায়ে হাজার গন্ধ। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাই মনে করে। চুরি করল দুই দল, অথচ একদলকে দেয়া হল পবিত্রতার সার্টিফিকেট আর অন্য দলকে বাড়ি ঘর হতে উচ্ছেদ করে দেশান্তরি করার জপমালা পড়িয়ে দেয়া হল জাতির গলায়।
আওয়ামী শাসনের বাইরে অন্য যে কোন শাসন এখন অবৈধ। শাসনতন্ত্রের সংশোধনী বিকেলে ভোরের ফুলের মত ঝরে পরছে টুপটাপ। জিয়া অবৈধ, এরশাদ অবৈধ, সামরিক শাসন অবৈধ, ধর্মীয় রাজনীতি অবৈধ, জামাত খতম, বিএনপি ম্লেচ্ছ, দুদক দন্ত বিহীন, সমীকরণের ফলাফল কি হবে আশাকরি পাঠকদের তা বুঝে নিতে অসুবিধা হবেনা। দেশের মুতখানার নামকরণেও চলছে ডিএনএ’র প্রভাব। দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে সুফিয়া কামাল সেতু, একই কায়দায় পদ্মা সেতুর নাম করণেও উঠে এসেছে বেগম ফজিলেতুন্নেসার নাম। এখন শুনছি সংসদে বিল আসছে দ্বৈত নাগরিকদের সাংসদ ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে। না বললেও আমাদের ধরে নিতে হবে শেখ পরিবারের কেউ হয়ত দ্বৈত নাগরিকত্বের গ্যাঁড়াকলে আটকা আছেন এ মুহূর্তে।
আদালতের রায়ে সামরিক শাসন এখন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মৃত্যুদণ্ডের চিন্তা ভাবনা চলছে। গর্ব হচ্ছে দেশ নিয়ে। তৃতীয় বিশ্বের এমন কটা দেশ আছে যেখানে খুঁজলে এ ধরণের আইন পাওয়া যাবে। ধন্য আমাদের ’মহামান্য’ আদালত, ধন্য আমাদের জনপ্রতিনিধির দল। সমস্যা কিন্তু একটা থেকে যাবে। দেশের মালিকানা নিয়ে দুই বৈরী প্রতিপক্ষ যখন জনজীবন অচল করে দেবে, জিন্দা কাউকে লাশ বানিয়ে তার উপর নৃত্য করবে, চুরি চামারিতে পর পর ৪ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব এনে দেবে, টেন্ডাবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ধর্ষণের মত রাজনৈতিক আচারগুলো সমাজে ঝেঁকে বসবে, কে আসবে আমাদের উদ্ধারে? অষ্ট্রেলিয়ার স্যার নিনিয়ান? প্রতিবেশি দেশের বেনিয়া বন্ধুরা? এক কাপ চা আর একটা আকিজ বিড়ির গনতন্ত্রের মূলা ঝুলিয়ে জাতিকে অনাদিকাল ধরে বিভ্রান্ত করা যাবে এমনটা ভেবে থাকলে ভুল করবেন মান্যের উপর মান্য মহামান্যের দল।
রাবার স্ট্যাম্প মার্কা ’মহামান্য’ আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে পারিবারিক ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার মিশন সাময়িক সফলতার মুখ দেখলেও তা কিন্তু কখনোই চিরস্থায়ী করা যায় না। ইতিহাস তাই বলে। অপরাধের উলটো পিঠেই শাস্তির বাস। সে শাস্তি আইন করে বন্ধ করা যায়না।