পরিচয়টা নিয়ে আমি গর্বিত নই। তবু প্রকাশ করছি কারণ অতীতে এ নিয়ে অনেকে অনেক রকম সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। আমি ধার্মিক নই। পরজগত নিয়ে বিশেষ চিন্তিত নই বিধায় সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভে যা করণীয় তার কোনোটাই পালন করি না। এর দায় দায়িত্ব সবাটাই আমার। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মানুষ হয়েও কেন সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য শতভাগ মেনে নেইনি কারণ হিসাবে ধরা যেতে পারে সমাজতান্ত্রিক দেশের প্রভাব। সরকারীভাবে ধর্মকে অস্বীকার করা হয় এমন একটা দেশে প্রায় একযুগ বাস করেছি। হতে পারে অনেকগুলো কারণের এটাও একটা কারণ। কাঁচা হাতের লেখালেখিতে ধর্ম ও এর সাথে জড়িত রাজনৈতিকদলগুলোকে টেনে আনার চেষ্টা করি না বলে দলীয় ঘরণার অনেকেই আমাকে মৌলবাদীদের একজন বলে ভুল করে থাকেন। মনে করার স্বাধীনতাকে সন্মান জানিয়েই বলছি, মৌলবাদী রাজনীতির মূল স্তম্ভ সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য। এই এক কারণে আমার সাথে দলগুলোর তাত্ত্বিক কনফ্লিক্ট হতে বাধ্য। তবে সভ্যতার ক্রমবিকাশে ধর্মের অবদান ও সমসাময়িক ক্ষয়িষ্ণু সমাজে এর প্রয়োজনীয়তাকে সন্মান জানাতে কখনোই কার্পণ্য করিনি। ধর্মীয় রাজনীতি মানেই ৭১’এর খুনি রাজাকার এমন তত্ত্বের সাথেও দ্বিমত করতে বিবেকের সাথে বোঝাপড়ার দরকার হয়না। দেশ হতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি উৎখাত করার সরকারের বর্তমান প্রচেষ্টাকে দেশে প্রচলিত আন্তঃদলীয় রাজনৈতিক বৈরিতার অংশ হিসাবেই মনে করি। আমার মতে এমনটা করার আগে দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে কাজ-কর্মে প্রমান করতে হবে মৌলবাদীদের চাইতে তারা সবদিক হতে শ্রেষ্ঠ। যাই হোক, আমার এ লেখা আত্ম প্রচারণামূলক লেখা নেয়, ফেরা যাক মূল প্রসঙ্গে।
দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরটা হয়ত অনেকেই পড়ে থাকবেন। রেফারেন্স হিসাবে সারমর্মটা তুলে ধরছি যাতে পাঠকদের সুবিধা হয় কি নিয়ে আমার এ লেখা।
কোরবানির উদ্দেশ্যে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রিয় ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-কে নয়, তাঁর আরেক ছেলে হজরত ইসহাক (আ.)-কে শুইয়েছিলেন দাবি করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে আরো দাবি করা হয়, এ নিয়ে বই-পুস্তকে যা পড়ানো হয়, তা মিথ্যা। বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের বেঞ্চে এই রিটের ওপর শুনানি চলছে। বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্ট দেবনারায়ণ মহেশ্বর এ দাবি করেই গতকাল রবিবার রিট করেছেন। আগামী বৃহস্পতিবার এই রিটের ওপর পরবর্তী শুনানি হবে। বিশ্ব শান্তি পরিষদ নামে এই সংগঠনটির কার্যালয় রাজধানীর ধলপুরের সিটি পল্লীর তেলেগু কলোনি মন্দিরে। এই সংগঠনের সভাপতি দেবনারায়ণ মহেশ্বরের বাড়ি বরিশাল সদরে।
রিট আবেদনে দাবি করা হয়েছে, 'কোরবানির উদ্দেশ্যে হজরত ইসমাইল (আ.) কে শোয়ানো হয়েছিল আর আল্লাহতায়ালা খুশি হয়ে ইসমাইলের স্থলে একটি দুম্বা দিয়েছিলেন বলে বই-পুস্তকে যা পড়ানো, হয় তা মিথ্যা।'
আদালতের লম্বা হাত কতটা লম্বা হলে কোটি কোটি ধর্মভীরু মানুষের শত বছরের পুরানো বিশ্বাসকে বিচারের সামনে দাঁড় করাতে সাহস করে দলীয় নমিনেশনে নিয়োগপ্রাপ্ত রাজনীতির সেবাদাস বিচারকবৃন্দ! উপরের রীটকে যেভাবেই অনুবাদ করা হোক না কেন একটা জিনিস সাধারণ জনগণ বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন বলেই এসব সম্ভব হচ্ছে। মুসলমান ধর্মের বিশ্বাসকে অন্য ধর্মের কেউ চ্যালেঞ্জ করলে শতকরা ৬০ ভাগ অশিক্ষিত দেশের ৮০ ভাগ মানুষ নীরবে হজম করবে জানিনা আওয়ামী নেত্রীবৃন্দ এমনটা মনে করেন কি-না। জনগণের দেশপ্রেম নিয়েও প্রতিদিন নতুন নতুন প্রশ্ন তুলছে নেত্রীর পদলেহনকারী নেতারা। বাবু সুরঞ্জিত সেন ঘোষনা দিয়েছেন যারা ৭২’এর সংবিধান মানবে না তারা এ দেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না এবং তাদের উচিৎ পাকিস্তানে ফিরে যাওয়া। বাবু পাকিস্তান আমলে আওয়ামী কর্মসূচী ৬ দফা ও ছাত্রলীগের ১১ দফা নিয়েও একই মন্তব্য করেছেন। দেশের খেটে খাওয়া মানুষদের কজন শাসনতন্ত্র আর ৬ দফা/১১ দফা নিয়ে মাথা ঘামায় তা সুরঞ্জিত বাবুদের জানা আছে কি-না জানিনা। তবে নাগরিক হিসাবে আমাদের জানা আছে এই সেই সুরঞ্জিত বাবু যিনি স্বধর্মীয় গরীব ও নীরিহ চাষীদের বিভিন্নভাবে ঠকিয়ে সিলেটে একরের পর একর হাওর বাওর দখল নিয়েছেন। একজন রাষ্ট্রীয় চোরের মুখে অন্যের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা কতটা বৈধ তা নিয়ে কি আমাদের আদালত মাথা ঘামাবে কি-না সময়ই তা প্রমান করবে। বাবু আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষকে পাকিস্তান যাওয়ার দাওয়াত দিচ্ছেন। ম্যাংগোপিপলদের হয়ে বাবুকেও আমি দাওয়াত দিচ্ছি একটা জায়গায় হিজরত করার, নাজিমুদ্দিন রোডের জেলখানা। জুলুমবাজ চোরদের স্থান জেলখানা, রাজনীতির ময়দান নয়।
আজকের পত্রিকায় দেখলাম আমাদের প্রেসিডেন্টের মুখ হতে বেরিয়ে এসেছে নতুন একটা উপাধি, বঙ্গমাতা। স্থানীয় এক অনুষ্ঠানে এভাবেই সন্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনার পরলোকগত মাতা ফজিলেতুন্নেসাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের কৃত্তিত্ব অনেকটাই না-কি পাওনা এই গৃহবধূর। সন্দেহ নেই এ নিয়ে হৈ চৈ'এর শুরুটা হয়েছে মাত্র। আগামীকাল হয়ত পা চাটা কুকুরদের কেউ একজন ঘোষনা দেবে, যারা বঙ্গমাতা উপাধি মানবে না তার এ দেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
এভাবেই শুরু হয় একনায়ক ও ফ্যাসিবাদের পতন। শেখ হাসিনাও সে পথেই হাঁটছেন, এবং হাঁটছেন খুব দ্রুত। দেশকে পৈত্রিক সম্পত্তি বানিয়ে তা অনন্তকাল ধরে ভোগ করার মোহ হতেই জন্ম নেয় এসব অন্ধত্ব। দূরের ইতিহাস বাদ দিয়ে দেশের ইতিহাস ঘাটলেই প্রমান মেলবে ক্ষমতালোভী অন্ধদের শেষ ঠিকানা কোথায় হয়।