আগস্ট মাসকে রাজনীতিমুক্ত মাস ঘোষনা করলে কেমন হয়? যদিও আমার নিজস্ব ভাবনা তবুও পাঠকদের অনুরোধ করব বিষয়টা নিয়ে ভেবে দেখতে। শোক আর জন্মদিন নিয়ে রাজনীতির মাঠ এমনিতেই গরম থাকে এ মাসে, তার উপর এ বছর যোগ হয়েছে রোজা। অতীতে এ নিয়ে অনেক তর্ক হয়েছে, বিতর্ক হয়েছে, হাতাহাতি হয়েছে, কিন্তু রাজনীতিকে নির্বাসনে পাঠানোর মত তেমন কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছিল বলে মনে করতে পারছি না। রোজার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। সিয়ামের মাস এটা। সত্য বলা, সৎ পথে চলা এবং পারস্পরিক সহনশীলতা এ মাসের অন্যতম দাবি। রাজনীতি করতে গেলে মিথ্যা বলতে হয়, এ শুধু বাংলাদেশের বাস্তবতা নয় বিশ্ব রাজনীতির প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা। তবে দেশীয় রাজনীতির মূল স্তম্ভের অনেকটাই দাঁড়িয়ে থাকে এ অপ্রিয় সত্যটার উপর। রোজা উপলক্ষে অন্তত এক মাসের জন্যে হলেও কি রেহাই দেয়া যায় না রাষ্ট্রীয় পাপাচার হতে? আফটার অল ধর্মপ্রাণ মুসলমান দেশের নাগরিক আমরা।
রোজা-রাজনীতির প্রথম ট্রামকার্ডটা ব্যবহার করেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। প্রতিপক্ষের নেত্রীকে পঞ্চম রোজার ইফতারীর দাওয়াত দিয়ে বল ছুঁড়ে দিয়েছেন কথিত ইসলাম প্রেমী দল বিএনপির কোর্টে। বল ফিরিয়ে দিতে এতটুকু দেরি করেননি বিরোধী দলীয়নেত্রী। পালটা দাওয়াত দিয়ে জানিয়ে দিলেন খেলাধুলায় তিনিও কম যান না। এক কথায় সেয়ানে সেয়ানে লড়াই। যারা বাংলাদেশের দুই পরিবারের দুই কর্ণধারের ব্যাক্তিগত সম্পর্ক সাইড লাইনে বসে দেখতে অভ্যস্ত নন তাদের কাছে এই ইফতার রাজনীতি মহানুভবতার অনন্য উদাহরণ মনে হতে বাধ্য। আসলেই কি তাই?
সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে চমৎকার একটা কারণ দেখিয়ে। রাস্তাঘাটের যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতেই নাকি এই পদক্ষেপ। প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, দেশের ট্রাফিক সমস্যা কি কেবল রমজান মাসের সমস্যা? বিদ্যুৎ নিয়ে ফুঁসছে বাংলাদেশ। দেশের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো মাঝে মধ্যেই ’উপভোগ’ করছে জনতার মার্সিলেস তাণ্ডব। ঢাকার সাংসদরা ভয়ে আছেন শহরের দেড় কোটি বাসিন্দার অনির্ধারিত জনরোষের। তাদের অনুরোধেই নাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। মার্কিনীদের সাহায্যপুষ্ট পল্লী বিদ্যুতায়ন প্রকল্প দেশে চালু হয় ৮০ দশকের প্রথম দিকে। ঐ সময়টায় আমেরিকান বিশেষজ্ঞ কর্তৃক উপস্থাপিত বেশ কিছু ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং উপাত্ত দিয়ে আমাদের বুঝানো হয়েছিল বিদ্যুতহীনতা বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে জনবিস্ফোরণ কতটা ভূমিকা রাখে। সরকার রমজান মাসটা ছাত্রদের ঘরে থাকতে বলছে। এতে যানজট কতটা কমবে জানিনা, তবে রাজনীতির বদৌলতে নষ্ট হওয়া ছাত্র চরিত্রের বিষ্ফোরন কিছুটা হলেও উপভোগ করবে দেশের আম জনতা। বিদ্যুৎ, পানি আর গ্যাস হতে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার মত জায়গা এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই। সরকারের নিশ্চয় তা জানা থাকার কথা।
ইফতার দাওয়াত ধর্মীয় সাংস্কৃতির অংশ এবং তা নিশ্চয় ভাল কিছু। দেশের মালিকানা নিয়ে দুই পরিবারের লড়াইয়ের নাম যদি রাজনীতি হয় তবে এ রাজনীতিতে এ মুহূর্তে ইফতারের বাইরে আরও কিছু দাওয়াত যোগ হওয়া আবশ্যক। আপনারা একে অন্যকে দাওয়াত দিন এবং কথা বলুন দেশ নিয়ে। কথা বলুন কি করে ছাত্রলীগ আর ছাত্রদল নামের হিংস্র হায়েনাদের খাঁচায় বন্দী করা যায়। কথা বলুন বিদ্যুৎ নিয়ে, গ্যাস নিয়ে, পানি নিয়ে। কথা বলুন কি করে ১৫ কোটি মানুষের এ দেশটায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়, গণতন্ত্রের ভীত শক্ত করা যায়। মৃত্যু দিবসের বিপরীতে জন্মদিন পালন করে গৃহপালিত ভৃত্যদের বিভ্রান্ত করা গেলেও ১৫ কোটি মানুষের সবাইকে করা যাবে এমনটা ভেবে থাকলে ভুল করবেন স্বশিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত গৃহবধূ-কাম-নেত্রীর দল।