বাংলাদেশের সাংসদের আপনারা কোন চোখে দেখেন জানিনা, তবে আমার চোখে ওরা নেহাতই চোর। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটে শামিল হওয়ার প্রতিদ্বন্ধিতা কে আমরা বলি সাধারণ নির্বাচন। সাধারণ চোরদের সাথে সাংসদদের পার্থক্যটা বোধহয় এখানেই। ওরা ম্যান্ডেট প্রাপ্ত চোর, লাইসেন্স প্রাপ্ত লুটেরা। আমরা ভোট দিয়ে ওদের হাতে তুলে দেই সরকারী খাজাঞ্জীখানা হরিলুটের জিয়নকাঠি। এই জিয়নকাঠির শক্তি এতটাই মোহনীয় যার কাছে বশ মানতে বাধ্য হয় তামাম জাহানের আসমান হতে মাটি, পাহাড় হতে নদী, বিচারক হতে মহুরী। আপনারা বলবেন এটা কি করে সম্ভব, সবাই চোর? আমার মন্তব্য ভুল প্রমান করতে চাইলে আপনাকে এমন একজন সাংসদের নাম সামনে আনতে হবে যার উত্থান চুরি দিয়ে শুরু হয়নি অথবা যার সাংসদ তকমা এনে দেয়নি তিন প্রজন্মের ১০০ বছর রাজকীয় হালে বেচে থাকার নিশ্চয়তা। এমন কাউকে পাওয়া গেলে আগ বাড়িয়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ভাল মানুষটার কাছে। আমার মতে সংসদে নয় এমন সাংসদের জায়গা হওয়া উচিৎ জাতীয় জাদুঘরে। বড্ড দেখতে ইচ্ছে করবে এমন একজন এলিয়নকে। আসলেই কি আছে এমন জন?
আমাদের অনেকের কাছে চোরদের অবস্থান শুধু স্পিকারের ডানে। অনেকের চোখ আবার বামে গিয়ে আটকে যায়। ডান বামের এই ক্রসফায়ার পীর-আউলিয়া মুরীদদের টার্গেট করতে পারলেও আমি বোধহয় এসব হতে মুক্ত। আমার কাছে ওরা সবাই এক। ডানে হোক আর বামে হোক, মৌলিক কোন তারতম্য দেখি না চরিত্রে। ওরা ইনস্ইনস্টিটিউশনাল চোর। শক্ত ফাউন্ডেশনের উপর প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় হতে রক্ষনাবেক্ষণ করা হয় বহুমুখী কারণে। হীরক রাজাকেও রাজত্ব করতে গেলে উজির-নাজির-কোতওয়াল-ডাজ্ঞা লালন করতে হয় বৈধতার কারণে। রাজত্বের পরিপূর্ণতার জন্যে রাজার পাশাপাশি এদের প্রয়োজনীয়তাও অপরিহার্য। এক রাজ্যে শুধু এক রাজা! সমীকরণ মেলানো খুব সহজ হবেনা। আমাদের সাংসদরাও অনেকটা হীরক রাজ্যের উজির নাজিরদের মত। এরা আছেন বলেই ওনারা আছেন। আপনারা রাগ করতে পারেন, কিন্তু আমার মনে হয় এনারা আছেন বলেই আমাদের রাজপুত্র ত্রয় বনবাসে সুখে আছেন। জাতি হিসাবে এ নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। নতুন একটা সমালোচনা শুরু হয়েছে এসব ’মহামান্য’ আদমদের নিয়ে। শুল্কমুক্ত গাড়ি। নিন্দুকেরা বলছে পাঁচ কোটি টাকার গাড়ি ৫০ লাখ টাকায় আমদানি করে রাষ্ট্রের ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতি করবে গণতন্ত্রের ’মহান’ সৈনিকেরা। আমরা আসলেই বোধহয় অকৃতজ্ঞ নাদান। না হলে কেন মানতে পারছিনা বিশ্বের অন্যতম গরীব দেশে এতবড় ’মহামানব’দের ধরে রাখতে চাইলে ভাল কিছুর বিনিময়েই আমাদের ধরতে রাখতে হয়, ফাকা মুখের কথায় নয়। কোটি টাকার গাড়ি সে তুলনায় নস্যি মাত্র, অন্তত আমার চোখে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না সাংসদরা মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা কেউ নন, দস্তুরমত গণতান্ত্রিক নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। হীরক রাজ্যে এ নির্বাচনের প্রাইস ট্যাগ অনেক সময় কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। যে বিনিয়োগে লাভ নেই তা বিনিয়োগ নয়, সাংসদরা জেনে শুনেই এ বাণিজ্যে বিনিয়োগ করে থাকেন। আমরা যারা আমজনতা তাদেরও জানা থাকার কথা এ সহজ সরল বৈষয়িক সমীকরণ। তা হলে এ নিয়ে এত হৈ চৈ কেন?
শুল্কমুক্ত গাড়ি এক অর্থে রাজনৈতিক প্রতিদান। পারিবারিক ডায়নেস্টি পাকাপোক্ত করতে যাদের ভুমিকা না হলেই নয় তাদের প্রতি রাজমাতাদের কৃতজ্ঞতা মাত্র, যা বাংলাদেশের বেলায় আবিষ্কার করেছিলেন জেনারেল এরশাদ। শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির মাধ্যমের অনেক সাংসদ বেশকিছু নগদ নারায়ণ কামিয়ে নেবেন, এ তো গোপন কোন রহস্য নয়। ব্যাংক লোন দেবে, সাংসদরা গাড়ি আনবেন যার অনেকগুলোর শেষ ঠিকানা হবে পুরানা পলটনের শো-রুম। এ যাত্রায় সাংসদদের যা করতে হবে তা হল তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামক চুলকানির চিরস্থায়ী সমাধান করা। তা না হলে গেল বারের মত এবারও হয়ত কোটি টাকার গাড়ি রাস্তায় ফেলে পালাতে হবে সিংগাপুর অথবা মালেশিয়ার গহীন জংগলে। আশার কথা রাজমাতারা এ লাইনে পারস্পরিক যোগসাজশে কাজ করে যাচ্ছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে।
বাংলাদেশের অঘোষিত রাজতন্ত্রের কথা ভাবতে গেলে আমার কেন জানি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার কথা মনে হয়ে যায়। কথিত এই স্বাধীন নবাব বজরায় শুরা আর সাকির আসরে মত্ত থেকে আজীবন রাজত্ব করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বিধি বাম! এসব অযোগ্য আর অপদার্থ রাজাদের বিদায় ঘন্টা বাজাতে ইতিহাসের অমোঘ প্রয়োজনেই হয়ত দিগন্তরেখায় উদয় হয় বর্গীদের কাফেলা। রাজা আসে রাজা যায়, বর্গিরাও যায় একই পথে। কিন্তু জাতি হিসাবে আমরা আছি অনন্তকালের জন্যে। আশাকরি ৫ কোটি টাকার হবু ল্যান্ডক্রুজার মালিক সাংসদরা তা ভুলে যাবেন না।