ভেবেছিলাম আওয়ামী সরকার নিয়ে লেখালেখি কটা দিনের জন্যে উঠিয়ে রাখব। সরকারের পদলেহনকারী কতিপয় কুকুর বেজায় নাখোশ আমার উপর। অনেকে রাজাকারের তালিকায় সমাহিত করার চেষ্টা করছে ওয়াচডগক নিককে। কিন্তু দেশের শাসন ব্যবস্থায় এমন সব ঘটনা ঘটছে তা হতে দূরে থাকা নিজের প্রতি এক ধরণের বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে হচ্ছে। তাই নতুন করে কলম ধরতে বাধ্য হলাম। এক ছাত্রলীগের মহামারিতে গোটা দেশ এখন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত। হীরক রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও তার গবুচন্দ্র মন্ত্রিসভার লীপ সার্ভিসের ওরস্যালাইনেও কাজ হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর পেয়ারের উপদেষ্টা মোদাচ্ছের যেদিন ঘোষনা দিল আওয়ামী পরিচয়ের বাইরে কাউকে চাকরী দেয়া হলে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে, সেদিন হতে নিয়োগ বানিজ্যে শুরু হল রক্তাক্ত বিপ্লব। শুরুটা পাবনা শহর হতে। সরকারী সম্পদ লুটপাটের নিরাপদ ভাগিদার আমলাদের উত্তম মধ্যম দিয়ে মোদাচ্ছের ঘোষনার সফল বাস্তবায়ন শুরু করল প্রধানমন্ত্রীর লাঠিয়াল খ্যাত ছাত্রলীগ বাহিনী। অতীত ঐতিহ্যের ধ্বজাধারী এই কলেরা বাহিনী দেশকে এমন এক নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে যেখানে শাসন ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পেশী শক্তি। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বানিজ্য, প্রশাসন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, সমাজে এমন কিছু অবশিষ্ট নেই যেখানে হস্তক্ষেপ করছে না এই নর্দমার দল। এই এইডস বাহিনীর সর্বশেষ শিকার প্রধানমন্ত্রীর আরেক গোপাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রাণ গোপাল দত্ত। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে ছাত্রলীগের ক্যাডার দল চড়াও হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর। শেষ পর্যন্ত তারাও বাধ্য হয় পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের চাকরীর নিশ্চয়তা দিতে।
১০৪ জনের বিশাল এক বাহিনী নিয়ে দলনেত্রী এখন সুদূর মার্কিন মুলুকে। খবরে প্রকাশ দলীয় ঘরণার ৩ কবি নিয়ে কবি সভার আয়োজন করেছিলেন কবিতা প্রিয় নেত্রী। স্থান হাজার ডলার মূল্যের গ্রান্ড হায়াত হোটেল সুইট। তবে কবিত্রয় নিউ ইয়র্ক মিশনে নাম কামিয়েছেন অন্য কারণে। দেশের গরীব জনগণের কথা ভেবে বিজনেস ক্লাসের ভ্রমণ অস্বীকার করে ভ্রমণ করেছেন ইকোনমি ক্লাসে। ১৭ লাখ টাকার টিকেট ৪ লাখ ২০ হাজার টাকায় ক্রয় করে জাতির জন্যে সাশ্রয় করেছেন বিশাল এক অংক। এ নিয়ে কবিস্তূতির বন্যা বয়ে গেছে ব্লগে ব্লগে। ১০৪ জনের ভ্রমণ এবং জনপ্রতি টিকেট বাবদ বরাদ্দ ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। একুনে শুধু ভ্রমণ খাতেই ব্যায় হয়েছে ৫ কোটি টাকার উর্ধ্বে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর প্রবাসী পুত্র, পুত্রবধু আর ভাগ্নে ভাগনা কিভাবে টাকাগুলো নিয়েছে তা হয়ত কোনদিনই জানা হবেনা। এ প্রসংগে একটা তথ্য না দিলেই নয়। আমার যদি ভুল না হয় কবিত্রয়ের একজন, মনে হয় বাবু নির্মলেন্দু গুন, শেষবার যখন যুক্তরাষ্ট্র এসেছিলেন ফিরে যাওয়ার টিকেট যোগাতে বোস্টন শহরে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সে তুলনায় গ্রান্ড হায়াত হোটেল নিশ্চয় অভিযোগ করার মত জায়গা নয়। কথায় বলে ঢেকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে। এ তুলনায় নিউ ইয়র্ক তো নস্যি মাত্র। ছাত্রলীগের প্রাক্তন সহ-সভাপতি এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব জনাব মাহবুবুল হক শাকিল নতুন করে তা প্রমান করলেন। মদ্যপ অবস্থায় মধ্যরাতে গ্রান্ড হায়াত হোটেলে অবস্থানরত বিশাল বাহিনীর অপর এক সদস্য পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মহিলা কর্মকর্তার রুমে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টাকালে গ্রেফতার হন স্থানীয় পুলিশের হাতে। কোন মন্ত্রবলে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব কলেরা বাহিনীর এই সদস্যকে মুক্ত করে দেশে ফেরৎ পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন তা রহস্যও হয়ত জানা হবেনা। ছাত্রলীগের এই প্রডাক্ট যা করেছে মার্কিন দেশে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মালিবাগ হত্যাকান্ডের লিপিবদ্ধ আসামী সংসদ সদস্য শাওনকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে বিশাল এক কিচ্ছা। স্থানীয় পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা স্বয়ং খোদাকে হাজির নাজির বানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন যুবলীগ কর্মী ইব্রাহিম হত্যাকান্ডের ১নং আসামী এমপি শাওনের সাফাই গেয়ে। ভেতরের সূত্র হতে যতদূর খবর পেয়েছি এমপি শাওনের স্ত্রীর সাথে কথিত অনৈতিক সম্পর্কের কারণে খুন করা হয়েছে যুবলীগ কর্মী ইব্রাহিমকে। নিজের চামড়া বাচাতে সাংসদ শুধু পুলিশের পেছনেই ব্যায় করেছেন কোটি টাকা। উল্লেখ্য, শেখ পরিবারে আসল আয় রোজগারের ধান্ধা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল পরিষদে মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আস্থাভাজন হয়েছেন এই খুনি। সবাই জানে কে খুনি এবং কেন এই খুন। কিন্তু কেউ মুখ খুলছে না নিজ নিজ স্বার্থে।
একটা দেশ এবং এর পনের কোটি জনগণ নিয়ে রাজনীতিবিদদের এই ভণ্ডামি আর কত কাল আমাদের হজম করতে হবে? সময় কি খুব বেশি দূরের যেদিন কলেরার জন্মদাত্রী এসব আবর্জনাদের নিক্ষেপ করা হবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে? দিন গুনছি এমন একটা দিনের।