ইদানিং উপভোগ করার চেষ্টা করছি দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা। দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নাকি ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। নিউ ইয়র্কে নিজ দলের মুরীদদের সামনে এমনটাই ঘোসনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুহূর্তের জন্যে হলেও কথাটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিলো। অতীত অভিজ্ঞতার কারণে রাজনীতিবদদের মুখের কথা অনেক সময় গরু ছাগলের হাম্বা শব্দের সাথে গুলিয়ে ফেলি। কিন্তু এ যাত্রায় হাসিনার কথা কেন জানি প্রায় বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। চূড়ান্ত হিসাবটা পেতে হয়ত একটু সময় লাগবে, তবে আমার হিসাবে হয়ত ১০ হতে ১৫ কোটি টাকাতে দাড়াবে। ১০৪ জনের আসা যাওয়া, থাকা খাওয়ার খরচের একটা খসড়া করলে আমার হিসাবের সাথে আসল হিসাবের বড় ধরনের হেরফের হবে বলে মনে হয়না। এতগুলো টাকা খরচ করে এতটা দূর এসে দেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে মিথ্যাচার করবেন ভাবার কোন কারণ দেখিনি। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়, পৃথিবীটা এক জায়গায় দাড়িয়ে নেই এখন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিস্ময়কর উন্নতি আমাদের এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে যেখানে স্বয়ং ঈশ্বরও যদি মিথ্যাচার করেন আমার মত ম্যাংগো পিপলদের তা ধরতে মেধা খরচের দরকার হয়না। উপরের ছবিগুলো জোট সরকারের আমলে তোলা নয়, ফটোশপের ম্যানিপুলেশনও নয়। ছবিগুলো তোলা ঠিক সে মুহূর্তে যখন প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্কের বিলাস বহুল হোটেলে বসে দেশের আইন শৃংখলা নিয়ে গর্ব করছিলেন।
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে জাতি হিসাবে আমাদের নাটবল্টুতে গোলমাল শুরু হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে রাস্তায় আনন্দ মিছিল!!! খালেদা জিয়ার ৫ জন্মদিন নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা আর উপহাসের বন্যা বয়ে যায় প্রতিবছর। কিন্তু রাস্তায় নেমে বিএনপি মুরীদগন আনন্দ করেছে এমন খবর শুনছি বলে মন করতে পারছিনা। স্বাধীন দেশের পরাধীন কিন্তা-কুন্তির দল মনিবের জন্মদিনে আনন্দ করবে তাতে ওয়াচডগের গা চুলকানি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মারামারি করে জন্মদিন পালনের ঘটনা বোধহয় এই প্রথম, তাই চাইলেও এড়ানো সম্ভব ছিলনা। একই ঘটনা গিনেস রেকর্ড বুক খুঁজলে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। নিজেদের নিয়ে গর্ব করতে পারি নতুন রেকর্ড জন্ম দেয়ার জন্যে। মনিবের জন্মদিন পালন নিয়ে দুই দল মহিলা চুলাচুলি করছে! বিস্ময়কর ফেনোমেনা! চোখ ফেরানো দায়। বিশ্বাস করার মত যথেষ্ট কারণ আছে জন্মদিনের মিছিলেও হয়ত টেন্ডারবাজির স্বার্থ ছিল। ছাত্রী হলেও ওরা লীগেরই অংশ, লীগের মারামারিতে টেন্ডারবাজি থাকবে না, মনে করার কোন কারণ নেই।
দ্বিতীয় ছবিটা ভাল করে দেখলে একটা কথা প্রমান হতে বাধ্য। আসলেই বোধহয় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। স্বশস্ত্র পুলিশ এবং স্বশস্ত্র পাবলিক হাতে হাত রেখে কাজ করে যাচ্ছে। মিলিতভাবে ওরা মোকাবেলা করছে তৃতীয় এক পক্ষকে। এই তৃতীয় পক্ষ কারা তা বুঝতে আমাদের বোধহয় পণ্ডিত হওয়ার দরকার হবেনা। ওরা নাকি স্বাধীনতার শত্রু, বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। ওদের বিরুদ্ধে নতুন এক মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছে সরকার। যুব সমাজের হাতে অস্ত্র এ জন্যেই বোধহয় বৈধ। এ বিচারে প্রশাসনের সাথে সরকারের যুদ্ধকে কোন যুদ্ধ বলা হবে তা জানতে আমাদের হয়ত আরও কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে। আমি নিশ্চিত, যুদ্ধ শুরু হবে। এ যুদ্ধ হবে ঘরে ঘরে, রাস্তায় রাস্তায়, স্কুলে, কলেজে, মাদ্রাসায়, জন্মদিনে, লাশ দাফনে।
মিথ্যারও একটা প্রাইস ট্যাগ থাকে। নিউ ইয়র্কের বিলাস বহুল হোটেলে বসে প্রধানমন্ত্রী যে মিথ্যাচার করে গেলেন তার প্রতি মিনিটের মূল্য কত ছিল আশাকরি পরবর্তী লুটেরা বাহিনী এসে তার একটা ধারণা দেবে। অপেক্ষায় রইলাম সে দিনের। এ ফাকে সবাইকে আমন্ত্রন জানাচ্ছি নতুন এক সার্কাসে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরছেন। ব্যাপক শো ডাউনের প্রস্তুতি চলছে। কিন্তা কুন্তির দল আবারও নাচবে, গাইবে, চুলাচুলি করবে। ক্যামেরা থাকলে আশাকরি ধরে রাখবেন বিরল মুহূর্তগুলো। বড় কথা, উপভোগ করুন রাজনীতি নামের এই সার্কাস।