উপরি আয় রোজগারে এ কৌশলটা খুবই কার্যকরী, বিশেষ করে পুলিশদের জন্যে। ফাঁদে ফেলে কারও পকেট খসাতে এর কোন বিকল্প আবিস্কৃত হয়েছে বলে শুনিনি। বাংলাদেশের প্রতিটি থানায় এর যথাযত ব্যবহার পুলিশ ভাইদের জন্যে বয়ে আনছে কাংখিত ফসল, অর্থ। কদিন আগের এক খবরে দেখলাম জনৈক দিনমজুরকে থানায় নিয়ে অন্য দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছে বিশ্ব পুলিশ সমাজের ’গৌরব’ বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী। বেচারার অপরাধ, সে একটা বৈদ্যুতিক বাতি চুরি করেছিল। ছিঁচকে চোরের কাছে বড় অংকের টাকা দাবি করলে যা হওয়ার তাই হল এ যাত্রায়। দাবিকৃত অংকের সামান্যতম অংশ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তার উপর নেমে আসে নির্মম অত্যাচার। ধকল সইতে না পেরে বেচারা মৃত্যু দিয়ে প্রমান করে গেল বাংলাদেশে জন্ম নেয়ার সার্থকতা। কৃত অপরাধ ঢাকতে যা করায় পটু তাই করল ’সন্মানীয়’ পুলিশ বাহিনী। বাতি চোরের নামে একগাদা অপরাধের ফিরিস্তি তৈরী করল, ব্যক ডেটে মামলা ঝুলানো হল এবং কাল্পনিক অপরাধের চুন সুরকিতে সমাহিত করা হল জীবন যুদ্ধে পরাজিত একজন সাধারণ মানুষকে। যদিও পুলিশ তার বন্দুকের জোর দিয়ে প্রমান করেছিল আসলে একজন মানুষের মৃত্যু হয়নি, মৃত্যু হয়েছে সন্ত্রাসীর। কষ্ট এফেক্টিভ এ কৌশল এখন শুধু এককভাবে পুলিশের কৌশল থাকছে না, তা ব্যবহারের জন্যে লুফে নিচ্ছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এই যেমন সরকার।
২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর জজ মিয়া চরিত্রের উত্থান উপরে বর্ণিত কৌশলেরই সফল বাস্তবায়ন। সফল বললে হয়ত একটু প্রি-মেচ্যুরড্ হয়ে যাবে, কারণ ভিলেন জজ মিয়া এখন নায়ক চরিত্রে। আর ভিলেনের চেয়ারে বসতে বাধ্য হয়েছেন তৎকালীন নায়ক এবং প্রাক্তন সরকারের ’ভুবনখ্যাত’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব লুৎফুজ্জামান বাবর। এ তালিকায় নতুন একটা নাম অর্ন্তভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে, আর তা হল তিন তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জনাবা খালেদা জিয়া। দেশীয় রাজনীতির যে বেহাল অবস্থা তাতে খুনাখুনির সাথে খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততা থাকলে অবাক হবনা। পেশি শক্তি রাজনীতিতে এখন স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। তাই ’সার্ভাভাইল অব দ্যা ফিটেস্ট’ তত্ত্বে জনাবা জিয়া যদি প্রতিপক্ষকে নির্মূল কাজে গ্রেনেড ব্যবহার করে থাকেন অবাক হওয়ার কিছু দেখছি না। সব সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। এখানে খালেদা জিয়া যেমন প্রতিপক্ষকে মারার চেষ্টা করতে পারেন, তেমনি পারেন প্রতিপক্ষও। এটাই আমাদের রাজনীতি। বাংলাদেশে বাস করতে গেলে এর সাথে কম্প্রোমাইজ করেই হয়ত বাস করতে হবে।
প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করায় ’৭১এর মুক্তিযুদ্ধ বেশ এফেক্টিভলি কাজ করে আসছিল এতদিন। এর সাথে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকে যোগ করা গেলে কতটা বেগবান হতে পারে এর কার্যকরিতা তা বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের থিংকট্যাংকরা নিশ্চয় গবেষনা করে দেখেছেন। এর টেস্ট কেস হিসাবেই হয়ত জন্ম দেয়া হয়েছে নতুন জজ মিয়া দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক জনাব মতিউর রহমানকে। ২১শে আগস্ট হামলার সাথে এই সম্পাদকের সম্পৃক্ততা নাকি এখন প্রশ্নাতীত। শাস্তি দিতে হবে ’আসামী’কে, এমন একটা দাবি নিয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে স্বাধীন সংবাদপত্র পাঠক ফোরাম নামের একটা সংগঠন। তাদের দাবি ২১শে আগস্টের সূতা ধরে টান দিলে মতিউর রহমানের লেজ ৭৫ হয়ে ৭১ পর্যন্ত লম্বা হবে। সোজা বাংলায়, ২১শে আগস্ট ঘটনার সাথে রহমান সাহেবের সম্পৃক্ততা ৭১’এ স্বাধীনতা বিরোধিতা এবং ৭৫’এ শেখ মুজিব হত্যারই কন্টিনিউয়েশন।
খুনাখুনির দৃশ্যপটে হঠাৎ করে মতিউর রহমানের মত একজনের নাম কেন উচ্চারিত হচ্ছে তা অনেককে বিভ্রান্ত করতে বাধ্য। কিন্তু সবাইকে না। আমার দৃষ্টিতে এ সমীকরণের সমাধান খুব একটা জটিল নয়। এক, ১/১১, দুই, অসুস্থ কর্পোরেট প্রতিযোগিতা। কেবিনেটে স্থান না পাওয়ায় কজন হোমরা চোমরা বাদে আওয়ামী লীগের বাকি নেতারা ১/১১ নিয়ে একেবারে বোবা। প্রধানমন্ত্রী নিজে হস্তক্ষেপ করে বাকিদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ? আমার দৃষ্টিতে ব্যাপারটা খুব সোজা। ১/১১ না জন্মালে জন্ম নিত না আজকের হাসিনা সরকার। সাথে জন্মাতো না বাবা, মা, ভাই আর ভ্রাতৃবধূ নাম অমর করার মহাপরিকল্পনা। যাদের কারণে লম্বা সময় ধরে জেল খাটলেন তাদের রাখলেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে অথচ প্রতিশোধের তালিকায় নাম উঠালেন যদু মধু রাম শ্যামদের। তাহলে শেখ হাসিনা কি ভুলে গেছেন জেল হাজতের দিনগুলোর কথা? যারা এই নেত্রীকে কাছ হতে জানেন অন্তত তারা এমনটা বিশ্বাস করবেন না। মতিউর রহমানের ’প্রথম আলো’ হচ্ছে সে পত্রিকা যার প্রথম পাতায় ১/১১ দিনগুলোতে দিনের পর দিন শোভা পেয়েছে রাজনীতিবিদদের আন্ডার গার্মেন্টসের পচা এবং গন্ধযুক্ত অধ্যায়। এ পত্রিকা ফলাও করে প্রচার করেছে সেসব রাজনীতিবিদদের কিচ্ছা যারা উপরে সুট আর ভেতরে সদ্য ধৃত বিমানবালার কায়দায় পাচার করেছেন দেশের কোটি কোটি টাকা। রাজনীতিবদরা কি এত সহজেই কি ভুলে যাবেন অপমানের সে অধ্যায়? মনে হয়না। সংসদে এবং রাস্তায় যখন একই সুর ধ্বনিত হয় কে এর আসল সুরকার তা ধরতে পণ্ডিত রবি শংকর হওয়ার প্রয়োজন পরে না। যেহেতু সরকারের পায়ের তলা হতে মাটি সড়ে যাচ্ছে তাই জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরাতে জন্ম দেয়া হচ্ছে নতুন জজ মিয়াদের। এক ঢিলে দুই পাখি মারার সামরিক শাসকদের এ অতি পুরানো কৌশল। এ যাত্রায় একটা গণতান্ত্রিক সরকারের বেলায় তা কতটা কাজ দেবে দেখার জন্যে আমাদের হয়ত একটু অপেক্ষা করতে হবে।
রাজনীতির মত ভুমি দস্যুতাও একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা। বাংলাদেশে এর শেকড় এতটা শক্ত যার উপর দাড়িয়ে সংশ্লিষ্টরা একজন মন্ত্রীকে পর্যন্ত ধমকাতে ভয় পান না। নিজেদের অবস্থান পোক্ত করার লক্ষ্যে রাজনীতিবিদদের মত এসব দস্যুর দলও সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ব্যবহার করছে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের উপর ইট সিমেন্টের আস্তরণ দিতে একটা টিভি ষ্টেশন এবং খবরের কাগজের মালিকানা এখন অপরিহার্য। রাজনীতিবিদদের মত ভূমিদস্যুরাও এ বাস্তবতা অনুধাবন করে থাকবেন। সদ্য জন্ম নেয়া ২/১টা দৈনিক পত্রিকার নাড়ি নক্ষত্র ঘাঁটলে তার প্রমান পেতে কষ্ট হবেনা। ভূমিদস্যুদের সাথে জনাব রহমানের বৈরিতা কোথায় তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন, তবে আমরা আমজনতারা বুঝতে পারছি দেশের ভূমিদস্যুদের প্রিয় পাত্র নন প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব। আমি নিশ্চিত এই ভূমিদস্যুদেরও হাত রয়েছে কথিত স্বাধীন সংবাদপত্র পাঠক ফোরাম জন্মের পেছনে।
সরকারের জন্যে মায়া হয় মাঝে মধ্যে। এক সংগে কয়টা ফ্রন্ট সামলানোর ক্ষমতা রাখেন আওয়ামী লীগ নেত্রী? প্রশাসনের গায়ে গতরে পর্যন্ত হাত দিতে দ্বিধা করছে না দলটির অংগ সংগঠন সমূহ। বিডিআর ক্ষত এত সহজে শুকিয়ে গেছে তাও মনে করার কোন কারণ দেখছি না। ঘটনাটা আওয়ামী সরকারের মনে না থাকতে পারে তবে দলটির নেতা মহিউদ্দিন খান আলমগীরের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। বিএনপি জোটের তরুণ মন্ত্রী আমানুল্লাহ আমান হাত তুলেছিল সচিবালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীর গায়ে। জোট সরকারের পতনে ডমিনো এফেক্ট হিসাবে কাজ করেছিল সে ঘটনা। প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এখন জীবনের ভয়ে ভীত। প্রায় সব জেলায় এদের দুঃস্বপ্নের মত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীরা। সময় এবং সুযোগ পেলে এরা অ্যানাকোন্ডা সাপ হয়ে ছোবল হানবে শেখ হাসিনার গায়ে। প্রশাসনের শক্তি নিয়ে শেখ হাসিনার সন্দেহ থাকার কথা নয়। এরা শক্তিধর, ক্ষমতাধর। এদের কাছে রাজনীতিবিদরা নস্যি মাত্র। সময়ই তা প্রমান করবে।
দেশের মূল সমস্যা পাশ কাটিয়ে মতিউর রহমান সমস্যা নিয়ে সরকারের বিশেষ মহল যতটা মাতামাতি করছে তার ফলাফল একটাই হতে পারে, জোট সরকারের প্রত্যাবর্তন। আওয়ামী লীগ নিজ হাতে জাতির গলায় নতুন করে ঝুলিয়ে দিচ্ছে তারেক জিয়ার মত প্রফেশনাল চোরকে, ফিরিয়ে আনছে খাম্বা মামুনকে, বাবর আর পিন্টুর মত জাত সন্ত্রাসীদের। আর ক্ষমতার বন্দরে অপেক্ষমান যুবদল/ছাত্রদল নামের দলগুলো কতটা ভয়াবহ হবে তার কিছুটা হলেও প্রমান দেবে নীচের ছবিটা।
সবাইকে ধন্যবাদ। শুভ ব্লগিং।