মোহতারেমা,
ম্যাংগো পিপলদের হয় আপনাকে বিনীত একটা অনুরোধ করছি, ছেড়ে দিন মইনুল হোসেন রোডের বাড়িটা। যে অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে ঐ সম্পত্তি আপনাকে বর্গা দেয়া হয়েছিল তা কেটে গেছে অনেক আগে। শোকর করুন। দু রাকাত নামাজ পরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন সৃষ্টিকর্তার প্রতি। ৮০ দশকের আপনি আর নতুন সহস্রাব্দির আপনি, এই দুইয়ের মাঝে যোজন যোজন তফাৎ। ভাংগা সুটকেস আর ইয়াতিম দুই সন্তান নিয়ে যে অনিশ্চিত যাত্রা শুরু করেছিলেন তার সফল সমাপ্তিতে আপনার মত আমরা ম্যাংগোরাও আনন্দিত। স্বামী মুক্তিযুদ্ধ করল আর আপনি বেহেশতে বাস করবেন না, এমনটা ম্যাংগোদেরও মেনে নিতে কষ্ট হয়! দেখেন না দেশের মুক্তিযোদ্ধারা কেমন আয়েশি জীবন যাপন করছে? প্রকাশ না করলেও ম্যাংগোরা বুঝতে পারে, বনখেকো ওসমান গনিদের স্বগোত্রীয় একজন আপনি। কোটি টাকা গড়াগড়ি খায় আপনার চরণে। চাইলে এরকম দশটা বাড়ি ক্রয় করার ক্ষমতা রাখেন যে কোন মুহূর্তে। ৬৭ নং পুরানা পল্টন লাইনে একটা বাড়ি আছে আপনার বড় ছেলের। খুব গোপনে ক্রয় করেছিল ক্ষমতা হারানোর ৩ মাস আগে। ২০ কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি মাত্র ৫ কোটি নগদে অনেকটা গায়ের জোরে কিনে নিয়েছিল। চমৎকার জায়গা। মইনুল হোসেনের রোডের বাড়ি সাধারণ বাংলাদেশ হতে বিচ্ছিন্ন একটা বাড়ি। ঐ বাড়িতে বাস করে আর যাই হোক দেশনেত্রী হওয়া যায়না। একজন জাত নেত্রী হতে চাইলে জনগণের কাছাকাছি থাকতে হয়। চলে আসুন লুকিয়ে রাখা ঐ বাড়িটায়।
জনাবা, সময়টা আপনাদের নয়। এটা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা, এখানে ক্ষমতা চলে যাওয়া মানে টাকা কড়ি হাতড়ানোর সুয়েজ ক্যানাল শুকিয়ে যাওয়া। আপনাদেরও সময় ছিল। ক্ষমতার প্রমোদ তরীতে চড়ে আপনারাও মহাসমুদ্রে ভেসেছিলেন নিজেদের সময়ে। এবার বিশ্রাম নিন। কটা দিন অন্যপক্ষকে ভাসতে দিন। দেশের মালিকানায় তাদেরও অংশ আছে যে। জনাবা, জানি খুব কষ্ট হবে স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটা ছেড়ে আসতে। প্রেসিডেন্ট হয়েও বাসাটা ছেড়ে দেননি আপনার স্বামী। এ বাড়িতেই এক সময় সুটকেস হতে ছেড়া গেঞ্জি বের হয়েছে, আবার এই একই বাড়ি হতে শতাধিক সুটকেস ভর্তি হয়ে চলে গেছে সৌদি আরবে। অনেক স্বপ্ন, অনেক চাওয়া-পাওয়ার সমীকরণ সমাধা হয়েছে বাড়িটার চার দেয়ালে। এবার সাংগ করার পালা। নিজে না করতে চাইলে ওরা জোর করবে। অপমানিত হওয়ার আগে ছেড়ে দিন। আত্মসম্মানের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকুন এবং সময় মত সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। বাংলাদেশ একটা যুদ্ধের ময়দান। এ ময়দানে জয়ী হতে চাই কৌশল। আপনাকে কৌশলী হতে হবে। গোয়ার গোবিন্দের মত আকড়ে থাকার চেষ্টা করলে আম ছালা দুটোই হারাবেন শেষ পর্যন্ত। একটা সত্য ভুলে যাবেন না, ক্ষমতার পালাবাদল হবে এবং তা হবে আপনি না চাইলেও। ধৈর্য্য ধরলে হয়ত খুব শীঘ্রই ফিরে পাবেন ক্ষমতার ভরা যৌবন। তখন না হয় ফিরে যাবেন স্মৃতি বিজড়িত মঈনুল হোসেন রোডের বিলাশ ভবনে। আদালত নিয়ে ভাববেন না, ওটা আপনাদের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত। যে কলম হতে আপনাকে উচ্ছেদের রায় বের হয়েছে একই কলম হতে ফিরে পাওয়ারও নির্দেশ আসবে। এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। ধৈর্য্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বিচারকরা আপনার চরণে ফিরে আসবে উল্কার গতিতে। শুধু বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হবেনা ওরা, চাইলে প্রতিপক্ষকে সুধা সদন হতে উচ্ছেদ করার রায় দেবে। আপনার নিয়োজিত সেবাদাসের সংখ্যাও কিন্তু নেহাত কম নয় ওখানে। ওরা মুখিয়ে আছে প্রতিদান দেয়ার ক্ষুধায়। ধৈর্য্য ধরুন এবং ওদের সেবা করার সূযোগ তৈরী করে দিন। আপনার এবং আপনার পরিবারের মামলা গুলো ঝরাপাতার মত টুপটাপ ঝরিয়ে দেবে। এখানেই ক্ষান্ত হবেনা ওরা, সংবিধান সংশোধন করে আপনার মৃত স্বামীকে জাতির পিতা পর্যন্ত বানিয়ে দেবে, মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দেবে মাওলানা নিজামীকে। ক্ষমতায় গিয়ে শুধু একটু নজর রাখবেন ওদের দিকে।
সিরাজগঞ্জে টুকরা হওয়া লাশ গুলোকে এখনো বোধহয় জোড়া লাগানো যায়নি। চারদিকে মানুষ খুন হচ্ছে মুরগির মত। চাঁদাবাজি আর টেন্ডাবাজির সংগমে তৈরী হচ্ছে এমন এক প্রজন্ম যারা যুগ যুগ ধরে আপনাদের সেবা করে যাবে। শুধু ধৈর্য্য ধরুন। একা খাওয়ার মন মানসিকতা ত্যাগ করুন, তাহলেই দেখবেন বেঁচে থাকা মধুর হয়ে গেছে। প্রতিপক্ষের সাথে ফয়সালা করে ভাগাভাগি করে নিন দেশটা। পাঁচ বছর আপনার খাবেন আর পাঁচ বছর ওরা খাবে। এটা মেনে নিলেই দেখবেন কষ্ট করে আর সিরাজগঞ্জ যেতে হচ্ছে না। দেশটা আপনাদের দুই পরিবারে, এটাকে কিভাবে ভাগ করবেন তা আপনারাই ভাল বুঝবেন। ভাগাভাগির মাধ্যমে লুটেপুটে নিন দেশের খাজাঞ্জিখানা। কেউ আপত্তি করবে না। শুধু রেহাই দিন ম্যাংগোদের। ওরা সিরাজগঞ্জে যেমন মরছে তেমনি মরছে তুরাগ নদীতে।