এ এক কাপ চা এবং একটা আকিজ বিড়ির গণতন্ত্র বাংলাদেশে এখন মরণ শয্যায়। বলতে গেলে ক্লিনিক্যালি ডেড। বাঁচিয়ে রাখার সব চেষ্টা প্রায় ব্যর্থ। বঙ্গবন্ধু দাওয়াই, যুদ্ধাপরাধী দাওয়াই, মুক্তিযুদ্ধের দাওয়াই, জাতীয়তাবাদী দাওয়াই, ধর্মীয় দাওয়াই, কোন দাওয়াই আর কাজ করছে না। ৫০ হাজার কোটি টাকার বিমানবন্দর, ততধিক টাকার স্যাটেলাইটে চড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে আসমানে উঠানো হলেও দাওয়াই হিসাবে এর কার্যকরিতা প্রায় শূন্য। সরকারী চেষ্টার পাশাপাশি রাষ্ট্রও চেষ্টা করছে। কিন্তু মরণ যার কপালে লিখন তাকে ফেরায় কে! রাষ্ট্রপ্রধানের বঙ্গমাতা প্রকল্প জরায়ু হতে বেরুবার আগেই আকিজ বিড়ির খপ্পরে পরে পথভ্রষ্ট (নিউ ইয়র্ক দ্রষ্টব্য)। সাধের গণতন্ত্র এ মুহূর্তে তাই জিন্দালাশ। ২০০৮ সালে জন্ম নেয়া এ শিশু কৈশোর আর যৌবনের সিঁড়ি না মাড়িয়ে পা রাখতে বাধ্য হয়েছে বার্ধক্যে। চা আর বিড়ির স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি দুর যেতে পারেনি রোগাক্রান্ত এ পিগমি। শয্যা হতে শ্মশান, গণতন্ত্রের এ যাত্রা আগে যেমন মসৃন হয়নি সামনেও যে হবেনা এ ব্যাপারে কারও কোন সন্দেহ নেই। পৈশাচিকতার উলঙ্গ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশকে হার মানাতে পারে বিশ্বে এমন দেশের সংখ্যা একেবারে হাতে গোনা। গণতন্ত্রের শবযাত্রায় লাশের উপর সাম্বা নাচ এ কেবল এদেশেই সম্ভব। ২০০৫ সালে যা ঘটেছে তা কি পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে এ যাত্রায়? ইতিহাস হতে শিক্ষা নেয়া দুরে থাক, বরং ইতিহাসকে শিক্ষা দিতেই ভালবাসে এ দেশের মানুষ। পৈশাচিকতার রেকর্ড পৈশাচিকতা দিয়ে ভাঙ্গতে অভ্যস্ত গণতন্ত্রের সৈনিকরা। তাই ধরে নেয়া যায় সামনের শবযাত্রা হবে আরও মানবেতর, আরও ভয়াবহ।
এক মাথা এক ভোটের গণতন্ত্র পশ্চিমা দুনিয়ায় সফলভাবে কাজ করলেও আমাদের মত মার্কা ভিত্তিক সমাজে এর কার্যকরিতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিতে বাধ্য। দেশে প্রকৃত শিক্ষার হার কত তার সঠিক কোন তথ্য নেই। লাশের মত পরিসংখ্যান নিয়েও বানিজ্য হয় এখানে। ২০০১ সালের হিসাব মতে দেশটার শিক্ষিতের হার ছিল শতকরা ৪১.৪ ভাগ। সংখ্যাটাকে সত্যের কাছাকাছি ধরে নিলে আমাদের মানতে হবে গণতন্ত্রের মৌলিক চাহিদা সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা নেই দেশের ৫৯ ভাগ জনগণের। এখানেই আসে নৌকা, ধানের শীস আর লাঙ্গলের প্রয়োজনীয়তা। নখে কালি আর মার্কায় সীলের ভোট কখনোই গণতান্ত্রিক ভোট হিসাবে বিবেচিত হতে পারে না। কারণ এক মাথা এক ভোটের মূল্য সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা নেই দেশের অধিকাংশ ভোটারের। এ কারণেই লাখ টাকার মনোনয়ন বানিজ্য আর কোটি টাকার নির্বাচনী যুদ্ধের মূল ভিকটিম হয় দেশের আম জনতা। সংগত কারণেই এ ধরণের একটা ভোটের মূল্য দাঁড়ায় এক কাপ চা একটা আকিজ বিড়ি। এ মূল্যেই বেচাকেনা হয় দেশের গণতন্ত্র। আর এ গণতন্ত্রের রায় নিয়েই ক্ষমতার মসনদে আসীন হন হাসিনা খালেদার মত অযোগ্যের দল। দেশকে ভাগার বানিয়ে শকুনের মত লুটে পুটে খাওয়ার লাইসেন্স দেয় এ গণতন্ত্র। সমাজের স্বীকৃত অপরাধীর দলকে তাদের অপরাধ বৈধ করার করার সুযোগ করে দেয় কথিত গণতান্ত্রিক নির্বাচন। আসলেই কি এ ধরণের নির্বাচন গণতান্ত্রিক তকমা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে, বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে? প্রতিদিনের দৈনিকগুলো পড়লে দেশের যে করুণ ও ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠে তার মূলে থাকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। জন্মভূমির অস্তিত্বকে ওরা মাছ ভাগাভাগির মত ভাগ করে নিয়েছে নিজেদের ভেতর। হোক তা ব্যবসা-বাণিজ্যে, চাকরীর মাঠে, শিক্ষা ব্যবস্থায়, অফিস-আদালতে, জনপ্রতিনিধিদের উলঙ্গ থাবার কাছে ধর্ষিত হচ্ছে দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি। এবং সবকিছুই হচ্ছে গণতন্ত্রের নামে। বাংলাদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে পাপ তাকেও হালাল করা হচ্ছে এক পরিচয়ে, গণতন্ত্র!
১/১১ ছিল গণতন্ত্রের হন্তা কারক। দেশের বুদ্ধি বিক্রেতাদের এমনটাই রায়। জনগণের রায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হরিলুটের অপর নাম যদি গণতন্ত্র হয় নিশ্চয় ১/১১ তা হত্যা করেছিল। এ অপরাধে অপরাধীর শাস্তি না দেয়া হবে ;গণতন্ত্রের’ প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের জন্যে। একজন মানুষের মৌলিক চাহিদা তার স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যু, অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান সহ আইনী শাসনের নিশ্চয়তা। একটা জাতি এ জন্যেই যুদ্ধ করে। রক্ত দিয়ে ইতিহাস লেখে। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের এগুলোই হওয়ার কথা শেষ ঠিকানা। অথচ স্বাধীনতার নতুন সংজ্ঞা সংযোজিত হয়েছে আমাদের ইতিহাসে, যার মূল প্রতিপাদ্য ব্যক্তি পুজার বেদিতে ৫০ হাজার কোটি টাকার বিমানবন্দর উপহার দেয়া, নামের বাহারে আকাশে উপগ্রহ ঠেলে দেয়া, পারিবারিক রাজত্বের দাসত্ব স্থায়ী করা। এটাই নাকি গণতন্ত্র। এগুলো ব্যাহত হলেই নাকি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ হরিলুটে বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আন্তর্জাতিক মহল আমাদের এ ’বীরত্ব’কে বিভিন্নভাবে ’পুরস্কৃত’ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হ্যাটট্রিক শিরোপা। ১/১১'র নেতারা লুটপাটের এ ’গৌরবময়’ অধ্যায় হতে মুক্ত ছিলেন এমনটা দাবি করা হবে বোকার স্বর্গে বাস করা। নাড়ি ধরে টান দিলে ওদের উদর হতেও খসতে থাকবে অবৈধ সম্পদের বরণমালা। কিন্তু তাই বলে ১/১১ জাতিকে উপহার দেয়নি সিরাজগঞ্জ, উপহার দেয়নি রূপগঞ্জ, উপহার দেয়নি চট্টগ্রাম বন্দরের অরাজকতা। ১/১১ কালীন কামাল মজুমদারের মত রাষ্ট্রীয় চোর বলার সাহস পায়নি ’আমার এলাকায় আমাকে এড়িয়ে সরকারী সম্পত্তি বন্টন মানা হবেনা। হোক তা হাসপাতালের জন্য’। এই কামাল মজুমদারকেই চ্যাং দোলা করে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। লুটপাটই যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বেদবাক্য হয় তাহলে এ লুটপাট ১০/১৫ জন উপদেষ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে ক্ষতি কি? অন্তত এদের সন্ধান পেতে জাতির শিরা উপশিরা হাত দিতে হবেনা ।
গণতন্ত্র নিয়ে মায়াকান্নার অবকাশ নেই বাংলাদেশে। এ দেশের বীর্যে গণতন্ত্র প্রজননের যথেষ্ট শুক্রকীট নেই। এ নামে যা জন্ম দেয়া হচ্ছে তা ভাঁওতাবাজি, জাতিকে নেশাগ্রস্ত বানিয়ে ব্যক্তি ও পারিবার উদরপূর্তির নির্লজ্জ প্রদর্শনী। গত দুবছরে যথেষ্ট হয়েছে এসব। দেনার পাহাড় জমা হয়েছে রাজনীতিবিদদের। এর শোধ উঠাতে আকাশ হতে আবাবিল পাখি আসার যেমন সম্ভাবনা নেই, তেমনি সম্ভাবনা নেই নতুন কোন নিনিয়ান আসার। তাহলে জাতি হিসাবে আমরা কি অনন্তকাল ধরে ধর্ষিত হতে থাকব এক কাপ চা আর একটা আকিজ বিড়ির গণতন্ত্রের যাঁতাকলে?
হ্যালো ১/১১। বিশ্রাম অনেক হয়েছে, এবার ফিরে আসার পালা। অন্তত কিছুটা সময়ের জন্য হলেও।