নাস্তা করবো বলে রাস্তায় বের হতেই দেখি এলাহি কারবার। রাস্তা ব্লক। চারদিকে পুলিশের গাড়ি। প্রাইভেট সিকিউরিটি পাহারা দিচ্ছে শহরের মূল চক্কর গুলো। কোথাও বড় ধরণের ক্রাইম হয়েছে বলেই মনে হল। প্রসিডেন্ট ওবামা কদিন আগে ঘুরে গেছেন এখানটায়। অফিসের পাশে হায়াত হোটেলে অবস্থান করেছিলেন কিছুক্ষণের জন্যে। তখনও বন্ধ করতে হয়নি ডাউন টাউনের ব্যস্ততম মোড়গুলো। পিক-আওয়ারে এ ধরণের ব্লক খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা পৃথিবীর এ অঞ্চলে। আগে কখনো দেখেছি বলে মনে করতে পারলাম না। থার্ড স্ট্রিটের মোড়ে আসতেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। রাতারাতি রাস্তার নাম বদলে ফেলেছে কেউ। ’লং বীচ এভিনিউ’, এ ধরণের নাম এ শহরের জন্যে একেবারেই বেমানান। সমুদ্র দুরে থাক, নদী পর্যন্ত নেই অঙ্গরাজ্যের কোথাও, তাই বীচের প্রশ্নই আসে না। বিশাল জটলা দেখে সামনে এগিয়ে গেলাম। কথিত সন্ত্রাস জাতীয় কিছু নয়তো! পুলিশ অথবা প্রাইভেট বাহিনীর কেউ বাধা দিল না। সাহস পেয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম।
সদ্য গজিয়ে উঠা লংবীচ এভিনিউর গাড়িগুলোকেও অচেনা মনে হল। পার্শ্ববর্তী স্টেট ক্যালিফোর্নিয়ার নাম্বার প্লেট লাগিয়ে একটার পর একটা গাড়ি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে হায়াত রিজেন্সির সামনে। হাল্কা শীত, সাথে সকালের মৃদুমন্দ বাতাস। প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা। সকালের নাস্তার জন্যে মেক্সিকান চিলি-বুরিতোর পার্ফেক্ট সময়। পরিচিত দোকানটির দিকে এগিয়ে যেতেই পরিষ্কার হয়ে গেল ব্যাপারটা। সিনেমার সুটিং হচ্ছে। অফিসে প্রচন্ড ব্যস্ততা, তাই ব্যায় করার মত যথেষ্ট সময় হাতে ছিলনা। কিন্তু হলিউড ছায়াছবি চিত্রায়ণের এমন দুর্লভ সুযোগ হাতছাড়া করতে মনে চাইল না। ফোন ক্যামেরা সচল করে নতুন মিশন নিয়ে আরও সামনে এগিয়ে গেলাম।
গার্ডদের একজনকে জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল ছবির নাম, ’ব্লাড ব্রাদার’। রেসলিং দুনিয়ার সুপার স্টার জন সেনা ছবির নায়ক, সাথে আছেন ইথেন এমব্রি, বয়েড হলব্রুকের মত অভিনেতা গন। যে সিকোয়েন্সটা চিত্রায়ণের চেষ্টা হচ্ছিল তা হল, মুখোশপরা একজন ট্রাক চালক তাড়া করছে বিশাল আকৃতির একটা লিমোজিন গাড়িকে। অবাক কাণ্ড হল, ড্রাইভার গাড়িতে বসে থাকলেও জায়গা হতে এক পা-ও এগোল না তার গাড়ি। ’রোল এন্ড কাট’ শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম এর মাজেজা। ভদ্রলোক মৃদু হেসে উত্তরে জানাল, গাড়ি মুভ করার প্রয়োজন নেই, এডিটিং করেই তা করা হবে। চিত্র জগতের আরও অনেক কিছুর সাথে পরিচিত হলাম যা সামনা সামনি না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। নায়ক হোটেল হতে নেমে গাড়িতে উঠবে, এ দৃশ্যের আয়োজন করতেই আধা ঘন্টা পেরিয়ে গেল। অপেক্ষা করার মত এতটা সময় হাতে ছিলনা, তাই ফিরতে বাধ্য হলাম।