ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি হতে জিয়া পরিবার উচ্ছেদ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কোর্ট কাচারী, থানা, পুলিশ, মেজিস্ট্রেট সহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সব বাহিনীকে নিয়োগ করা হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান চুড়ান্ত করার জন্যে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেশ কটি ট্রাকে মালামাল বোঝাই হচ্ছিল। দেশের বিচার ব্যবস্থার আগে পিছনে যারা মহামান্য বলতে অজ্ঞান তাদের কাছে হয়ত এ উচ্ছেদ আইনী শাসনের সফল বাস্তবায়ন হিসাবে বিবেচিত হবে। মইনুল হোসেন রোডের বাসা হতে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ অনেকে আদালতের লম্বা হাতের দোহাই দিয়ে তৃপ্তি পাবেন, অনেকে আবার আজন্ম শত্রুর পরিণতি দেখে মোচের তলায় হাসবেন। অবশ্য আমার মত বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে যারা সরকারের ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা)‘ প্রকল্পের অংশ হিসাবে মনে করেন তাদের কাছে এ অভিযান উত্তরের চাইতে প্রশ্নই তৈরী করবে বেশি।
দুর্নীতিতে পর পর চার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন একটা দেশে চোরের দেখা পেতে যেমন মইনুল হোসেন রোডের বাড়ি ঘেরাও করতে হয়না, তেমনি লণ্ঠনও জ্বালাতে হয়না ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে। ওরা সবাই চোর। ঘরে বাইরে, আসমানে জমিনে, হাওয়া ভবন আর সুধা সদন, জল স্থল অন্তরীক্ষ, এমন কোন জায়গা নেই যেখানে এদের বিচরণ নেই। সংখ্যার বিচারে এর সর্বোচ্চ প্রদর্শনী হয় দেশের পার্লামেন্টে। এমন একটা দেশে ৩ বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে বাড়ি হতে উচ্ছেদ কেন এতটা জরুরি হয়ে উঠল তা কেবল আদালতের দোহাই দিয়ে পার পাওয়ার রাস্তা দেখছি না। বাংলাদেশের আইন-আদালত সরকারের বরকন্দাজ হিসাবে কাজ করতে অভ্যস্ত। অনেকটা ছাত্রলীগ/ছাত্রদলের কায়দায় নেতা-নেত্রীরা আদালতকে ব্যবহার করেন নিজেদের পেশি শক্তির নির্ভরজনক অংশিদার হিসাবে। খালেদা জিয়াকে তার ৩০ বছরের পুরানো বাড়ি হতে উচ্ছেদ পেশি শক্তির উলঙ্গ প্রদর্শনী হিসাবে বিবেচনা করলে খুব কি অন্যায় কিছু হবে? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তার পরিবার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ির কায়দায় বিশালকায় গণভবন হাতড়িয়ে নেয়ার কাহিনী কি জাতির মেমোরি হতে মুছে গেছে ইতিমধ্যে? দুই বোন মিলে প্রায় মালিকান বনে গিয়েছিলেন সরকারী গণভবনের। কিন্তু বাধ সাধে নির্বাচনী ফল। ক্ষমতার প্রথম প্রহরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং আজকের ’বাস্তুহারা’ নেত্রী খালেদা জিয়া কলমের এক খোঁচায় বঞ্চিত করেছিলেন দুই বোনকে। আজকের জিয়া পরিবার উচ্ছেদ কি ইটের বদলে পাটকেল মারার বাংলাদেশি ধারাবাহিকতা নয়?
হোক তা এক কাপ চা আর একটা আকিজ বিড়ির গণতন্ত্র, বাংলাদেশে এখনো বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু আছে। কাউকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে আমু দরিয়ার চা আর মিয়া মোহম্মদ আকিজের বিড়ি সমুদ্র পাড়ি দিয়েই টিকে থাকতে হবে। দুই একটা বাড়ির মালিকানা কায়দা করে বাগিয়ে নেয়া সম্ভব হলেও ১৭ কোটি মানুষকে ম্যানেজ করে গোটা দেশ বাগানোর লাইসেন্স এখন পর্যন্ত কাউকে ইস্যু করা হয়নি। লুটপাটের পয়সায় জিয়া পরিবার যতটা সম্পদের সাম্রাজ্য তৈরী করেছে ঠিক ততটাই করেছে শেখ পরিবার। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য আর কানাডার সম্পদ নিয়ে টান দিলে প্রধানমন্ত্রী এবং উনার পরিবারের অনেক বেড়ালই মিউ মিউ করে বেরিয়ে আসবে।
আমাদের মত সমস্যা সংকুল দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম শর্ত তার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সার্বজনীন বুঝাপড়া। এ মুহূর্তের উচ্ছেদ অভিযান কতটা সহায়তা করবে ভবিষ্যত বুঝা পরায় তা ক্ষমতার পালাবদল হলেই বুঝা যাবে। যে গুণধর ব্যক্তি জিয়া পরিবারকে ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বর্গা দিয়ে হাসিনার ঘুম হারাম করেছিলেন সে ব্যক্তি কি আজকের হোসেন মোহম্মদ এরশাদ নন? মইনুল হোসেন রোডের সেনাভবন লিজ দেয়ার কারণে কাউকে যদি অপরাধী সাব্যস্ত করা যায় তিনি হবেন জেনারেল এরশাদ। আর এই এরশাদকে সাথে নিয়েই শেখ হাসিনা উদযাপন করছেন ক্ষমতার মধুচন্দ্রিমা!!! এ নিরেট হিপোক্রেসি, প্রতিহিংসাপরায়ণতা এবং ইটের বদলে পাটকেল মারার দেশীয় রাজনীতি।