গোটা দুনিয়াটা ভারত উপমহাদেশ নয় জনাব!
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রধানমন্ত্রীর তনয় জয় ওয়াজেদ শেষবার বাংলাদেশ ভ্রমণের সময় সাথে করে দু’টি বৈধ অস্ত্র নিয়ে এসেছিলেন। ঢাকা এয়ারপোর্টে নামার সাথে সাথে কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর কাফেলা বিনয়ের চুন সুরকিতে ফুলেল পথ বানিয়ে সে পথে আগত অতিথিকে বাইরে যাওয়ার পথ করে দেন। বাধ সাধেন জয় ওয়াজেদ নিজে, উনি বেরিয়ে যাওয়ার আগে সাথের ব্যাগগুলো পরীক্ষা করার জন্যে কাস্টমস কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেন। কর্মরত অফিসারের দল এহেন ’লজ্জা’ হতে রক্ষার জন্যে ভিভিআইপি অতিথিকে অনুরোধ জানান। কিছুক্ষণ ধরে চলে অনুনয়-বিনয়ের এই ড্রামা। শেষ পর্য্যন্ত জনাব জয় নিজেই ব্যাগ খুলে অস্ত্র দু’টির অস্তিত্ব তুলে ধরে আইনের প্রতি নিজের দায়বদ্ধতা প্রমান করেন। প্রশংসার তোষামোদিতে চারদিক প্লাবিত হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের ন্যু’আর্ক এয়ারপোর্টে ভারতীয় মুভি এক্টর শাহরুখ খান এমন একটা বদান্যতাই বোধহয় আশা করছিলেন। দোষ দেয়া যায়না ভদ্রলোক্কে, শুধূ ১০০ কোটি মানুষের দেশ ভারতেই নয়, সাড়া বিশ্বে এই বলিউড তারকার জনপ্রিয়তা। কিন্তু ন্যু’আর্ক এয়ারপোর্টের বেরসিক ইমিগ্রেশন এই মেগা স্টারের আগমন নিয়ে এমন একটা ঘটনার জন্ম দিল যা নিয়ে জিলিপি পাকানোর সব ইনগ্রেডিয়েন্টস এখন ভারতীয়দের ঘরে ঘরে । মার্কিনীদের পক্ষে বলা হয় খান সাহেবকে কোন ভাবেই আটকে রাখা হয়নি, বরং লাগেজ আসতে দেরী হওয়ার ফাকে অতিরিক্ত দুএকটা প্রশ্ন করা হচ্ছিল। কিন্তু খান সাহেব নিজে বলছেন অন্য কথা, পাসপোর্টে নামের শেষে খান শব্দটা থাকার কারণে এন্টি টেরোরিষ্ট গ্রুপের হাতে তুলে দেয়া হয় তাকে। উল্লেখ্য, মার্কিনীদের সন্ত্রাসী তালিকার একটা বিরাট অংশ জুড়ে আছে এই খানের দল। দুর্ভাগ্য এই মেগা খানের, ইমিগ্রেশনের কারোরই হয়ত দেখা হয়নি এই সুপার স্টারের ধুমধাড়াক্কা মার্কা মুভি গুলো। আর তাই অটোগ্রাফ এবং পাশে দাড়িয়ে ছবি তোলার বদলে তাকে নিয়ে হাজির করে ইমিগ্রেশন বুথে।
টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের সান আন্তেনিও এয়ারপোর্ট। প্রয়োজনীয় ঝামেলা (জুতা খোলা, ল্যাপটপ নেংটা করা ইত্যাদি) সারতে লাইনে দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ চোখে পরল একই লাইনে দাড়িয়ে আছেন হলিউডের সুপার ষ্টার মাইকেল ডগলাস। দুএকজন আগ্রহ নিয়ে তাকালেও এ মুভি স্টারকে নিয়ে বিশেষ কোন আলোড়ন চোখে পরল না। সবার মত তাকেও দেখলাম জুতা খুলতে, ব্যাগ হতে ল্যাপটপ খুলে ধরতে, মেটাল ডিটেক্টর পার হতে। পুরো পর্বটা সারতে মিনিট দুয়েক ব্যয় হল। সবকিছু শেষ হতেই হাসি মুখে এগিয়ে গেলেন ফ্লাইটের দিকে। স্ক্যানারে সন্দেহজনক কিছু একটা ধরা পরতেই একজন চীনা মহিলাকে ব্যাগ সহ পাশের কামরায় নিয়ে যাওয়া হল। মিনিট বিশেক পর তাকেও দেখলাম ফ্লাইট ডকে।
এভাবেই কাজ করে মার্কিন এয়ারপোর্ট গুলো। আইনের উর্ধ্বে কাউকে না উঠিয়ে যে যার দায়িত্ব পালন করে যায়। ১/১১’র আগে অবস্থাটা ছিল একেবারেই ভিন্ন, ইচ্ছে করলেই বিনা বাধায় ফ্লাইট পর্য্যন্ত যাওয়া যেত। সে অবস্থা এখন আর নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে খান নামের শত শত সন্ত্রাসী পৃথিবীর দেশে দেশে হাত পাকাচ্ছে টুইন টাওয়ারের মত গোটা মার্কিন দেশটাকেই মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে। সন্দেহ নেই যথাযত সিকিউরিটি নিশ্চিত না করলে এয়ারপোর্টের ফাক ফোকর গলে এসব সন্ত্রাসী এ দেশে ঢুকে পরবে এবং বাস্তবায়ন করবে তাদের মিশন। শাহরুখ সাহেবের শেষ নামও খান, এটা কি এমন কোন ভয়াবহ অন্যায় নামের কারণে এই খানকে যদি অতিরিক্ত কিছু প্রশ্ন করা হয়ে থাকে? মার্কিনিরা তাদের এয়ারপোর্টের স্বাধীনতার মূল্য দিয়েছে ৩ হাজার জীবন দিয়ে, এ ধরনের অতিরিক্ত প্রশ্ন তাদের সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়েরই অংশ। এ হতে তাদের নিজস্ব সেলিব্রেটি মাইক্যাল ডগলাস যেমন মুক্ত নয়, ভিনদেশী শাহরুখ খানকে অব্যাহতি দেয়ার প্রশ্ন কেন আসবে তা বোধগম্য নয়। আমি বরং ধন্যবাদ জানাবো এয়ারপোর্ট কর্মচারীদের যারা নাম ধাম পরিচয়কে প্রাধান্য না দিয়ে নিজ দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
ঘটনাটা ২ বছর আগের।