ভার্চুয়াল পৃথিবীর ভাষা দুদিন ধরে অস্বাভাবিক গরম। হা-মীম গার্মেন্টেসের মতই যেন জ্বলছে। শোনা যায় আশুলিয়ার ঐ কারখানায় পানি থাকা সত্ত্বেও আগুন নেভাতে তা ব্যবহার করা হয়নি রহস্যজনক কারণে। ব্লগের আগুনে অবশ্য কোন রহস্য নেই। এ আগুন দহনের আগুন নয়, আনন্দের আগুন, উৎসবের আগুন। সরকারের একজন ওজনদার মন্ত্রী বলেছেন সাকা চৌধুরী গ্রেফতার ছিল বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির জন্যে সরকারের বিশেষ উপহার। হরেক রকম উপহারের সাথে আমাদের পরিচয় আছে। হিন্দী সিনেমায় ওমরেশ পুরীরকে লাশ পর্যন্ত উপহার দিতে দেখেছি। সে বিবেচনায় সাকা চৌধুরী নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে পারেন। দলীয় ক্যাডারদের কেউ যদি সাকার মাথা কেটে নেত্রী পুজার অর্চনা বানাত জাতি তা নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করতো বলে মনে হয়না।
একজন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এহেন পরিণতি দাবি করে ব্লগ দুনিয়ায় কম হাঙ্গামা করিনি। ইরানের ক্ষমতাচ্যুত বাদশাহ রেজা শাহ পাহলেভির পতনের পর তার পিতার মাজারে গণশৌচাগার বানিয়ে উল্লাস করেছিল আয়াতুল্লার অনুসারীরা। লেখালেখিতে তেমন একটা দাবিই জানিয়েছিলাম সাকা পরিবারের জন্যে। সাকার পিতা ফকা চৌধুরীর সমকামীতা নিয়ে পাকিস্তান আমলেই অনেক চাঞ্চল্যকর কাহিনী চালু ছিল। এ নিয়ে কলম ধরতেও দ্বিতীয়বার চিন্তা করিনি। আঞ্চলিক রাজনীতিকে হাতিয়ার বানিয়ে সাকা ও তার চৌধুরী পরিবার যুগ যুগ ধরে অপরাধ করে গেছে বিনা বাধায় অনেকটা গ্যাংস্টার ধাঁচে। সেই সাকাকে শেষ পর্যন্ত চ্যাংদোলা করে পাচার কর হল বাংলাদেশের গুয়ানতানামো বে ডিবির রিমান্ডে। ইচ্ছা পূরণের আনন্দে আমার বোধহয় উচ্ছ্বসিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উচ্ছাস দুরে থাক সামান্য সন্তুষ্টি টুকুও খুঁজে পেলাম না উপরের ছবিটা দেখে। একদল যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবে আরেক দল লুটেরা, এর ভেতর অপরাধ ও শাস্তি পর্বের চাইতে ব্যাক্তিগত হিসাব নিকাশের পাল্লাটাই ভারী মনে হল। ক্ষমতার সিঁড়ি ও কার্পেট মসৃন করার যে ক্রুসেড শেখ হাসিনা শুরু করেছেন তা হতে ডক্টর মোহম্মদ ইউনুসকে পর্যন্ত রেহাই দেননি, সাকাচৌ সেখানে নস্যি মাত্র। বিরোধী দলীয় নেত্রীকে বাড়ি ছাড়া, আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে আওয়ামী শাসন বাদে বাকি শাসন অবৈধ ঘোষণা, পিতা, মাতা, ভাই এবং ভ্রাতৃবধূদের নামে দেশের তাবৎ স্থাপনার নামকরণ করা, সবকিছুতে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার সেই পুরানো গন্ধ। এ পথে শেখ মুজিব হেঁটেছেন, জিয়া জগিং করেছেন, খালেদা জিয়া ব্যায়াম করেছেন, এরশাদ ম্যারাথন দৌড়ে শামিল হয়েছেন। কিন্তু হায়, কেউ পৌছাতে সক্ষম হননি শেষ গন্তব্যে। দেখার বিষয় ঘরে বাইরে গন্ডায় গন্ডায় শত্রু নিয়ে এ যাত্রায় শেখ হাসিনা কতদূর যেতে পারেন।
সাকা চৌধুরীকে বাকি জীবন জেলে কাটাতে হবে এমন একটা সম্ভবনার কথা খোদ শেখ হাসিনাও বোধহয় কল্পনা করেন না। কারণ ক্ষমতার পালাবদলের সাথে পরিবর্তন আসবে চৌধুরীদের ভাগ্যে। জেল হতে বেরিয়ে আসবেন বরমাল্য ভূষিত হয়ে, ৭১’এর যুদ্ধাপরাধী কালিমা হতে মুক্তি পাবেন জাতীয়তাবাদী বিচারকদের কলমের খোচায়, আর মন্ত্রী হবেন নেত্রী খালেদা জিয়ার আশীর্বাদে। এমনটাই যদি হয় আমাদের বিচার ব্যবস্থার স্বরলিপি তা হলে এ স্বরলিপিতে যুদ্ধাপরাধী বিচারের গান গাওয়া কতটা আনন্দ উচ্ছ্বাসের সময়ই তা প্রমান করবে। আমাদের লুটেরা রাজনীতিবিদদের শাস্তি দিতে আসমান হতে যেমন আবাবিল পাখি আসবে না তেমনি আসবে না নতুন কোন গোলমেলে সরকার। সে বিবেচনায় শেখ হাসিনা যা করছেন তাকে স্বাগতম না জানানোর কোন কারণ দেখছি না। বাড়ি ছাড়ার যে সাংস্কৃতি তিনি চালু করে গেলেন আশাকরি মইনুল হোসেন রোডই তার প্রথম ও শেষ শিকার হবেনা।
’৭১ এর ঘাতক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জন্যে পরিচিত কবিতা উপহার দিলে আশাকরি অন্যায় কিছু দেয়া হবেনা, ‘যতদিন ভবে না হবে না হবে তোমার অবস্থা আমার সম, ঈষৎ হাসিবে, বুঝে না বুঝিবে যাতনা মম‘।
মন্ত্রিত্ব পাওয়ার আগ পর্যন্ত বর্ণময় অভিজ্ঞতায় সাদর সম্ভাষণ রইলো এ যুদ্ধাপরাধীর জন্যে।