মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের দায়ে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে এমন খবর এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি। এ নিয়ে কোন বক্তব্যও আসেনি মন্ত্রীর দফতর হতে। তাই সংবাদ মাধ্যমে যা প্রকাশিত করেছে তা বিশ্বাস না করার কোন কারণ দেখছি না। তবে মন্ত্রী যদি উনার সিগ্নেচার ভাষা ‘এমনটা হতেই পারে’ এ জাতীয় বাক্যের আড়ালে খবরটাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন কারও কিছু বলার থাকবে না। আফটার অল তিনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তাও আবার মাননীয়া। তবে যে খবরটা বেরিয়েছে তার সাথে মাননীয়া বিশেষণ জুড়ে দিলে তা হবে কুকুরের গলায় বেলি ফুলের মালা পরানোর শামিল। এখন পর্যন্ত খবরটা যাদের গোচরে আসেনি তাদের জন্যে সারাংশটা তুলে ধরছি।
রাজধানীর ফার্মগেটে ইম্পেরিয়াল গেস্ট হাউজ নামের একটা হোটেল আছে যার মালিক আমাদের ’মাননীয়া’ স্বরাস্ট্রমন্ত্রী জনাবা সাহারা খাতুন। এই হোটেলে র্যাব অভিযান চালিয়ে আটক করেছে ১৯ জন যৌনকর্মী ও ২০ জন খদ্দের। সোজা বাংলায় এলাকার অনেক হোটেলের মত মন্ত্রীর হোটেলও দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত। বলা হচ্ছে নিকট অতীতে একই হোটেলের নীচতলায় মন্ত্রী নিজেই বাস করতেন। অভিযানের ফলে গ্রেফতার হন হোটেল ম্যানেজার জনাব ইসরাইল। র্যাবের কাছে নিজকে সাহারা খাতুনের আপন ভাই হিসাবে পরিচয় দিয়ে ছাড়া পান পতিতা ব্যবসার এই দালাল।
বিএনপি-জামাতীদের ষড়যন্ত্র, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভণ্ডুল, চেতনার সৈনিক, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দালনের অগ্রপথিক, যোগ বিয়োগ, পূরণ ভাগ, লসাগু গসাগু, সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানানোর এ জাতীয় অনেক অংক আছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। দেখার বিষয় এ যাত্রায় কোন অংকটার সাহায্য নেন ‘মাননীয়া‘ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে চাঁদপুরের আওয়ামী সাংসদ সোনা রফিক (সোনা চোরাচালানের জন্য বিখ্যাত) যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন একাধিক যৌনকর্মী সহ। নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে গিয়ে যে কাহিনীর অবতারণা করেছিলেন এক অর্থে বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার গোটা চিত্রটাই তা তুলে ধরে। গুলশানের গেস্ট হাউসে ২ পতিতা নিয়ে যৌনাচারে লিপ্ত্ত, নেশাগ্রস্ত এবং উলঙ্গ। এমন একটা মোহনীয় অবস্থায় বামাল গ্রেফতার হলেন যৌথবাহিনীর হাতে। নিজেকে স্বভাবতই নির্দোষ দাবি করলেন এবং ঘটনার জন্যে দায়ী করলেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে। চমৎকার একটা কারণ দেখালেন দিগম্বর হওয়ার, তার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তাকে ধুলায় মেশাতেই নাকি এই বহুদলীয় ষড়যন্ত্র। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ইচ্ছা করেই নাকি তার পেছনে পতিতা লেলিয়ে দিয়েছিল, এবং পতিতাদের ছল চাতুরীর কারণেই তাকে নেশাগ্রস্ত এবং নেংটা হতে হয়েছিল। এ ধরণের ষড়যন্ত্রের দাবি রাজনীতিতে একদম নতুন নয়। মার্গারেট থ্যাচার উওর বৃটিশ রাজনীতিতে টরী দলের সম্ভাব্য প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীত্বের দাবিদার বিখ্যাত ঔপন্যাসিক জেফ্রি আর্চারকে পতিতা সহ আবিস্কার করা হয়েছিল লন্ডনের এক হোটেলে। প্রথম যেদিন খবরটা প্রকাশ পায় সেদিনই জনাব আর্চার সরে দাঁড়ান টরী দলের নেত্রীত্ব হতে। এ নিয়ে বৃটিশ মিডিয়াতে শুরু হয় প্রচন্ড হৈ চৈ। তদন্ত শেষে বেরিয়ে আসে যে পতিতাকে নিয়ে তিনি হোটেলে সময় কাটিয়েছিলেন সে ছিল আসলে লোকাল ট্যাবলয়েডের ভাড়া করা যৌনকর্মী। ক’ বছর আগে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের নব নির্বাচিত গভর্নর পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন পতিতা একই অপরাধে। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হোটেলে ১৯ পতিতা আর ২০ খদ্দেরের আসল রহস্যের সরকারী ভার্সন জানতে আমাদের বোধহয় দুটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। এই ফাঁকে যে সব মিডিয়া খবরটাকে হাইলাইট করেছিল তাদের যুদ্ধাপরাধী বিচারে বাধাদান অভিযোগে দলিথ মথিত করা হলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কারণ এটা বাংলাদেশ, সব সম্ভবের চারণভূমি। সরকারের ক্ষমতা আছে, চাইলে অনেক কিছু করতে পারবে তারা। কিন্তু এই অনেক কিছুর ছত্রছায়ায় সরকার যাই করুক সাহারা খাতুনের হোটেলে দেহব্যবসার বাস্তবতায় খুব একটা গাঢ় রং লাগাতে পারবে বলে মনে হয়না। কারণ ফার্মগেট আর মগবাজারের হোটেল পট্টিতে হোটেল ব্যবসার আড়ালে কোন প্রকৃতির ব্যবসা হয় তা প্রায় সবার জানা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোর গলায় অস্বীকার করবেন নিজের সম্পৃক্ততা, বলবেন এ ব্যাপারে নিজের অজ্ঞতার কথা। প্রাসংগিক ভাবেই বৈধ কিছু কথা উঠবে, যে মন্ত্রী নিজের ঘরের খবর রাখতে ব্যর্থ হন সে মন্ত্রী কোন যাদুবলে খবর রাখবেন গোটা বাংলাদেশের? তবে একটা বিচারে এই অবৈধ ব্যবসাকে বৈধ করতে বোধহয় কোন বাধা নেই, আর তা হল জনাবা খাতুনের আওয়ামী সাইনবোর্ড। দেশের প্রতি সেক্টরের চাকরী এবং প্রতি কাজের টেন্ডার যদি আওয়ামী লীগ আর তার অংগ সংগঠনের জন্যে সংরক্ষিত থাকে তাহলে পতিতা ব্যবসাই-বা বাদ যাবে কেন! এটাও তো ব্যবসা!
http://www.sheershanews.com/index.php?option=com_content&view=article&id=32562:2010-12-22-15-17-40&catid=52:2009-07-24-13-37-08&Itemid=59