বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন : ২০১০
একনজরে ১২ মাস
* মোট খুন ৩,২৯১ প্রতিদিন গড়ে ৯ জনেরও বেশি
* গুপ্ত হত্যা ২৯৪ (গত তিন মাসে)
* ধর্ষণের ঘটনা ৫১১টি
* রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহত ২৩৪, আহত ১৫,৮৮৬
* আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মৃত্যু ১৭০
* সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৪৮১, আহত ১৫৫৬৯
* সীমান্তে নিহত ১১৬ জন
* সাংবাদিক নিহত ৪, নির্যাতনের শিকার ২০৬ জন
* চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ২২৬২টি, নিহত ২৮০ জন
* আত্মহত্যা ৩৫৯ জন (আট মাসে)
সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এমআরটি) গবেষণা ও প্রশিক্ষণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এমআরটি’র গবেষণা কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের ১২ মাসে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের পরিসংখ্যান নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে দেশের প্রধান জাতীয় দৈনিকগুলোর সংবাদকে ভিত্তি ধরা হয়েছে।
খুন
২০১০ সালে মোট খুন হয়েছে ৩২৯১টি। প্রতিদিন গড়ে খুন হয়েছে ৯ জনেরও বেশি। এর মধ্যে গত মার্চ মাসে রাজধানীতে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় মেয়ের প্রেমিকের হাতে স্বামী-স্ত্রী নিহত হওয়ার ঘটনা এবং এপ্রিল মাসে রাজধানীতে পুলিশ কর্মকর্তা গৌতম কুমার রায় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার খবরটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এপ্রিল মাসে রাজধানীতে পুলিশ কর্মকর্তা গৌতম কুমার রায় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৪ দিনের মাথায় মে মাসের ৪ তারিখে এসআই মিজানকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির বহি:প্রকাশ। এছাড়া মে মাসইে কুমিল্লায় আব্দুর রশীদ (৭০) নামের এক বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে মাত্র ১৬০ টাকার জন্য হত্যা করা হয়।
তাছাড়া ২৪ জুন ঢাকার মোহাম্মদপুরে পরকীয়ায় মায়ের অনৈতিক কাজ দেখে ফেলায় মা আয়েশা ও তার প্রেমিক আরিফ একসঙ্গে নৃশংসভাবে হত্যা করে স্কুল ছাত্র ৬ বছরের শিশু সামিউলকে।
৭ জুন পুরান ঢাকায় হোটেল কর্মচারী রুবেলকে তার বন্ধুরা ঠাণ্ডা মাথায় গলা কেটে হত্যা করে কাটা মাথা নিয়ে মিম হোটেলের মালিকের নিকট থেকে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করে।
৪ আগস্ট রাজধানীর আদাবরে মায়ের প্রেমিক রেজাউল করিমের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় শিশু জেনিফার ইসলাম তানহা। পাষণ্ড রেজাউল করিম তানহাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর ভবনের কার্নিশের নিচে লুকিয়ে রাখে।
৬ আগস্ট ঝালকাঠির রাজাপুর গ্রামের জনৈক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে ছেলের গৃহশিক্ষকের পরকীয়ার জের ধরে শিশু জুম্মান হোসেন মুইন (৯) খুন হয়।
৪ আগস্ট কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের পূর্ব জাওয়ার গ্রামে নেশার টাকা না পেয়ে মাদকাসক্ত হারেছ (৩১) তার বৃদ্ধ পিতা বুলবুল মিয়াকে (৮০) দা দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে হত্যা করে।
৩ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে তাসলিমা (২৮) নামে এক গৃহবধুকে কন্যা সন্তান ধারণ করার জন্য হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে, তাসলিমা আট মাসের অন্তঃসত্বা ছিলেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে কন্যা সন্তান হওয়ার কথা জানতে পেরে তাসলিমার স্বামী মো: সোহেল ও তার পরিবারের সদস্যরা তাসলিমাকে নির্যাতন করে হত্যা করে।
২ নভেম্বর গাজীপুরে এক পাষণ্ড পিতা ১১ মাসের শিশুপুত্র রিয়াজকে হাত-পা, মাথা ছিড়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে গ্রেফতারকৃত পিতা তৌহিদুল জানান, রিয়াজ জন্মের পর থেকেই অসুস্থ থাকত। সব সময় কান্না করত। টাকার অভাবে তিনি রিয়াজের চিকিৎসা করাতে পারতেন না। রোববার চিকিৎসা করানোর কথা বলে ছেলেকে বাড়ির পাশের একটি গজারি বনের ভেতরে নিয়ে প্রথমে নাক-মুখ চেপে ধরে হত্যা করেন। এরপর তার দেহ থেকে হাত-পা ও মাথা টেনে ছিঁড়ে আলাদা করা হয়। পরে লাশের টুকরোগুলো ওই বনের ভেতরে একটি ডোবার মধ্যে ফেলে দেন।
১১ নভেম্বর মানিকগঞ্জে মিনু বেগমকে যৌতুকের কারণে স্বামীগৃহে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
১৫ নভেম্বর চৌদ্দগ্রামে ইভটিজারদের হাত থেকে পুত্রবধূর ইজ্জত বাঁচাতে গেলে বখাটেদের হত্যা করে মোসলেম মিয়াকে।
১৭ নভেম্বর ঈদুল আযহার দিন বিকালে কুড়িগ্রামে নাতনিকে ইভটিজিং করার প্রতিবাদ করতে গেলে বখাটেরা গলা টিপে হত্যা করে বৃদ্ধ নানা আব্দুস সুবহানকে ।
৩০ নভেম্বর চাঁদপুরের মতলবে ইভটিজারদের হাতে খুন হয় মেয়ের বাবা মনির হোসেন সরকার।
৫ ডিসেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গায় রেখা বেগম নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পাষণ্ড স্বামী আব্দুল আলী শিকদার।
১১ ডিসেম্বর মিরপুরে স্কুল শিক্ষিকা আকলিমা আক্তার রুবিকে (২৭) পূর্ব পরিচিত এক যুবক নির্মমভাবে হত্যা করে।
১৩ ডিসেম্বর ধামরাইয়ে প্রশিকা কর্মী সুপ্রিয়া রায়কে (২৭) স্বামী আশিক রায় (৩২) পিটিয়ে হত্যা করে।
১৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়ায় স্ত্রীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় স্বামী নূর মোহাম্মদকে (৪২) রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে স্ত্রী শাফলা বেগম।
১৪ ডিসেম্বর হরিণাকুণ্ডে বিয়েতে অমত হওয়ায় হাজেরা খাতুনকে (২০) প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে তার ভাই।
১৭ ডিসেম্বর ডামুড্যা উপজেলার চরমালতাঁও গ্রামের সুমন সরদার (২৫) তার স্ত্রী আইরিন আক্তারকে (১৮) হত্যা করে কচুরিপানার নিচে চাপা দেওয়ার সময় ধরা পড়ে।
১৮ ডিসেম্বর গাংনি উপজেলার আকুবপুর গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা মুক্তানুরকে পিটিয়ে হত্যা করে স্বামী আব্দুর রশীদ।
১৮ ডিসেম্বর তানোরে সৎ পুত্রের সাথে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগে গ্রাম্য সালিশে বেত্রাঘাতে আহত মেহেরজান মারা যান।
২৪ ডিসেম্বর গাজীপুরের কালিগঞ্জে জুয়া খেলার টাকা চাওয়ায় স্বামী বিল্লাল হোসেনকে (৫৫) হত্যা করে স্ত্রী হালিমা বেগম (৪৫)।
২৯ ডিসেম্বর তাঁতীবাজারে স্বর্ণব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে সস্ত্রাসীরা।
উল্লেখ্য, বছরের প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও খুনের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়- চাঁদাবাজি, এলাকায় প্রভাব বিস্তার, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, যৌতুক ও প্রেমঘটিত কারণে এসব খুনের ঘটনা ঘটেছে।
গুপ্তহত্যা
বেড়েই চলেছে গুপ্তহত্যা। গত তিন মাসে দেশে ২৯৪টি গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে দেশে গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১০৫টি। অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে যথাক্রমে ৯৩ ও ৯৬টি।
২ ডিসেম্বর রাজবাড়ীতে হাউলি জয়পুর এলাকার রেললাইনের পাশে মসুর ক্ষেতের ভেতর মাটি চাপা দেয়া ২৫-২৬ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে সদর থানা পুলিশ।
৯ ডিসেম্বর সিলেটে নিজ বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাত হত্যার শিকার মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারার লাশ।
১৫ ডিসেম্বর ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেল থেকে রুমা আক্তার (৩৬) নামে এক মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়।
৩১ ডিসেম্বর অপহরণের ১০ দিন পর উদ্ধার করা হয় রমনা থানা কমপ্লেক্স জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ইসহাকের লাশ।
আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মৃত্যু
২০১০ সালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয়েছে ১৭০ জনের। এর মধ্যে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধেই বেশিরভাগ নিহত হয়েছে।
২ মে রোববার রাতে বরিশাল শহরের কাউনিয়া টেক্সটাইল এলাকায় র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় আসাদুল হক ওরফে শাহীন।
৩ মে সোমবার রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কলাবাড়িয়া গ্রামে পুলিশের ক্রসফায়ারে আলিম বিশ্বাস (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়।
৪ মে মঙ্গলবার মধ্যরাতে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে পুলিশের ক্রসফায়ারে কাদের নামে একজন নিহত হয়।
৯ মে কাশিমবাজার কারা হেফাজতে আক্তার হোসেন নামে এক কয়েদীর মৃত্যু ঘটে।
১০ মে সোমবার চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানা হেফাজতে মো. মানিক (৩২) নামে এ নৈশপ্রহরী মারা যায়।
১১ মে মঙ্গলবার রাত ৩ টা থেকে ৫ টার মধ্যে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু হয় ৪ জনের। এসময় নগরীর সূত্রাপুরে র্যাবের ক্রসফায়ারে আলাউদ্দিন (২৫) ও সুমন (২৭), পল্লবীতে ডিবি পুলিশের ক্রসফায়ারে রাহাত (২৫) এবং কুষ্টিয়ায় মিলন ফকির ওরফে জীবন প্রাণ হারায়।
১৩ মে বৃহস্পতিবার চাটখিল থানা পুলিশের নির্যাতনে গুরুতর আহত রবিউল ইসলাম খোকন ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যায়।
১৪ মে রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুরে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় সাইদুল হক (৩০) নামে একজন।
১৫ মে শনিবার ভোরে পাবনার আতাইকুলা থানার ফলিয়া গ্রামে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় আবদুল মালেক এবং একই দিন বরিশালের বাবুগঞ্জে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় জগ-দ্বীশ শীল নামে একজন।
১৮ মে চুয়াডাঙ্গার নেহালপুর গ্রামে আসাদুল নামে এক ব্যক্তি পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। একই দিন দুই মাস পূর্বে অপহৃত হওয়া বিডিআর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া সিপাহী নজরুলের লাশ উদ্ধার করা হয় বাগেরহাটের শরনখোলার বলেশ্বর নদী থেকে।
২৩ মে রোববার রাতে চট্টগ্রামে র্যাবের ক্রসফায়ারে ছিন্নমূল মানুষের নেতা আক্কাছ এবং কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে সিদ্দিক ও সাইদুল নিহত হয়।
২৫ মে সকালে র্যাবের হেফাজতে থাকা ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদের লাশ পাওয়া যায় জাতীয় হৃদরোগ ইনষ্টিটিউটে।
৩০ মে মিরপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় একজন।
পুলিশ হেফাজতে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযুক্ত ডিএডি আবদুর রহিমের মৃত্যুর ঘটনা অন্যতম।
তাছাড়া ঘুষের টাকা না দেয়ায় ঢাকার দারুসসালামে পরিবহণ শ্রমিক মজিবুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। নিহতের ছোট ভাই মোহাম্মদ রিপন অভিযোগ করেন, ১ জুলাই দুপুরে মজিবুর রহমান তার আট বছরের ছেলে ইকবালকে নিয়ে কাউন্দিয়া মোল−ারটেক শশুর বাড়িতে যান। সন্ধ্যায় তিনি বাসায় ফেরার সময় দারুস সালাম থানার এসআই হেকমত আলী, এসআই সায়েম, এসআই মাসুদ ও পুলিশ সোর্স মহিবুল ও কাজল মিলে শিশু সন্তান ইকবালের সামনে তাকে আটক করে। ওই সময় পুলিশ তার কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস¡ীকৃতি জানালে পুলিশ ও সোর্সরা মিলে রাইফেলের বাঁট দিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ তুরাগ নদীতে ফেলে দেয়। রাতে মজিবুর বাসায় না এলে পরিবারের সদস্যরা থানাসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পায়নি। পরের দিন সকালে লোকজন বেড়িবাঁধে তার লাশ দেখে বাসায় খবর দেয়।
নিহতের ভাই আরো বলেন, ঘটনার আগের সপ্তাহেও পুলিশ তাকে একবার গ্রেপ্তার করেছিল। ওই সময় ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। অন্য দিকে নিহত মজিবুরের ছেলে ইকবাল জানায়, ১ জুলাই বিকালে ফুটবল কিনে দেয়ার কথা তার বাবা তাকে নিয়ে নদীর ওপারে মোল−ারটেক এলাকায় নিয়ে যায়। মেলায় ঘুরে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরছিল তারা। এ সময় ৬ জন পুলিশ তার বাবাকে জাপটে ধরলে তিনি নদীতে লাফ দেন। তখন পুলিশ ও দু’জন সোর্সও নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পানির মধ্যেই বেধড়ক পেটাতে থাকে। পরে নদীর পাড়ে তুলে দ্বিতীয় দফায় তারা বন্দুকের বাঁট দিয়ে পেটায়। তার বাবার দেহ নিস্তেজ হয়ে গেলে নদীতে ফেলে দেয়।
এ ধরনের ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থাহীনতা কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে।
৩০ আগস্ট হবিগঞ্জের কৃষক নুরুল ইসলাম জেবুকে ডিবি পুলিশ গুলি করে হত্যা করে।
৩০ সেপ্টেম্বর খুলনায় আ’লীগ নেতা ফজলুর রহমান মহব্বত র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়।
২ নভেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুরে র্যাবের ক্রসফায়ারে মারা যায় শমসের মোমিন শিমুল।
৬ নভেম্বর খুলনায় পুলিশের গুলিতে মারা যায় মতিলাল সরকার।
১২ নভেম্বর সাভারে র্যাবের ক্রসফায়ারে মারা যায় হাসান ও মনির নামে দুই যুবক।
১৪ নভেম্বর নারায়নগঞ্জে র্যাবেকর ক্রসফায়ারে নিহত হয় ফজলুল হক। একই দিন নরসিংদীতে পুলিশ হেফাজতে শরীফ মিয়া নিহত হয়।
২০ নভেম্বর যশোরে পুলিশ হেফাজতে নিহত হয় ইমরান হোসেন বাপ্পী।
২৩ নভেম্বর সাভারের গোকুলনগরে র্যাবের হাতে নিহত হয় এক যুবক।
২৪ নভেম্বর ঝিনাইদহ ও হবিগঞ্জে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় যথাক্রমে আব্দুল কুদ্দুস ও হাকিম।
২৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পুলিশ হেফাজতে নিহত হয় নান্টু কসাই। একই দিনে মোহাম্মদপুরে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় আমির হোসেন।
২৯ নভেম্বর রাজধানীর বংশালে র্যাবের ক্রসফায়ারে মারা যায় শামসুল ইসলাম টিপু।
৩০ নভেম্বর নরসিংদীতে পুলিশ হেফাজতে মারা যায় সিরাজ মিয়া।
১ ডিসেম্বর অভাবী শিশু সাগরের (১৫) পরিবারে কাছে দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই ইসমাইলের অমানবিক নির্যাতনে সাগর নিহত হয় বলে দাবি তার মা লুৎফার।
৩ ডিসেম্বর মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যে র্যাবের তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে তথা ক্রসফায়ারে মালিবাগ মেহেরপুর ও বরিশালে নিহত হয় যথাক্রমে নাজিমুদ্দিন, দুর্জয় বাবু ও আল আমিন।
১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ৪ শ্রমিক।
১৩ ডিসেম্বর রাজধানীর কাফরুলে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় শহিদুল ইসলাম। একই দিন বি-বাড়িয়ায় কারাগারে নির্যাতনে মারা যান আব্দুর রহিম নামে একজন।
১৫ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় মোশারফ হোসেন। একই দিন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মারা যান আজিজুল হক।
১৯ ডিসেম্বর র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় টাংগাইলের গোপালপুরে মামুনুর রহমান ও হাজারিবাগে আলম নামে ২জন।
২১ ডিসেম্বর পাবনায় র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় আনিসুর রহমান।
২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারে কারা হেফাজতে মারা যান শরাফত আলী।
২৭ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মারা যায় মীর হোসেন (৫০)।
৩০ ডিসেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাজেদুল করীম।
ধর্ষণ
গত বছর সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয় মোট ৫১১ জন। যার মধ্যে ২৭২ জন নারী ও ২৩৯ জন শিশু। গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১৪ টি ।
উল্লেখ্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট ছাত্রলীগ জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে চূয়াডাঙ্গায় একজন গৃহবধু এএসআই কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন, যশোরে এক গৃহবধু আনসার সদস্য ও জয়পুরহাটে ৮ বছরের এক শিশু গ্রামপুলিশের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন।
২১ এপ্রিল পটুয়াখালীতে বাহাদুর নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীর নেতৃতে ৬/৭ জন যুবক একজন গৃহবধুকে ধর্ষণ করে। ২২ এপ্রিল ভোলার লালমোহনের কচুয়াখালী গ্রামে বিএনপি কর্মী শফি মাঝির স্ত্রী ও মেয়েকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা পালাক্রমে ধর্ষণ করে ।
ভোলায় উপনির্বাচনের পরদিন যুবলীগ নেতা সিরাজ মিয়া বিএনপি সমর্থিত নান্নু মেম্বারের ভাতিঝা রুবেলের স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।
১৩ মে সিলেট পলিটেকনিকে ছাত্রলীগ নেতা সৈকত শ্রেণীকক্ষে এক ছাত্রীকে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সোনাইকান্দি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন রেজার পুত্র পান্না (২২) তার একজন সহযোগীকে নিয়ে স্বামী পরিত্যক্তা এক মহিলাকে (৪০) ধর্ষণ করে।
খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার দুর্গম কেয়াংঘাট এলাকায় ১৫ মে ইউপিডিএফ-এর সন্ত্রাসীরা কল্পনা বেগম (২৪) নামে এক গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২৫ মে লালমনিরহাটে শরিফাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে এসিডে শরীর পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
২৯ মে নারায়নগঞ্জে চাচাকে গাছের সাথে বেধে রেখে ২ ভাতিজীকে গণধর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা।
জুন মাসে লালমনিরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের খাদ্য পরিদর্শক শফিউল আলম ১২ বছরের কিশোরী গৃহপরিচারিকা দুলালীকে ধর্ষণ করলে তার মৃত্যু হয়।
৩ জুন শরীতপুরের প্রবাসীর স্ত্রীকে ৫-৭ জন সন্ত্রাসী জোরপূর্বক গণধর্ষণ শেষে তাকে গলাকেটে হত্যা করে।
২২ জুন নড়াইলে সেলিনা সুলতানাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়।
৫ জুলাই টাঙ্গাইলের সখীপুরে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। ধর্ষিতা কিশোরী উন্মুক্ত বিশ¡বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী।
৫ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সখীপুর বাজারে আসে খাতা কিনে বাড়ি ফেরার সময় হাবিবুল−াহ ওরফে হাবিব, ছাত্রলীগ নেতা আরিফ, সখীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক শওকত সিকদারের ভাগ্নে বাবুল, নাতি আকাশ মেয়েটিকে মোটরসাইকেলে করে হাজিপাড়ায় ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে হাবিব মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এ সময় তার সহযোগীরা ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করে। পরে আরেকজন ধর্ষণ করতে গেলে মেয়েটি সুযোগ বুঝে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। মেয়েটিকে ধাওয়া করে ছাত্রলীগ নেতারা। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। পরিস্থিতি টের পেয়ে ধর্ষণকারী ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
ফিল্মিস্টাইলে এ ধরনের ধর্ষণের ঘটনা সামাজিক অবয়ের চিত্র প্রকাশ করে।
১ আগস্ট বন্ধু দিবসে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বান্ধবীকে ইকোপার্কে নিয়ে ধর্ষণ করে প্রেমিক মোশাররফ।
৩ আগস্ট গঁফরগাওয়ে ভণ্ডপীর আব্দুর রশিদ চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে পাটক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে।
৪ আগস্ট মাগুড়ার শ্রীপুরে মহেশপুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী পূর্ণিমা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কতিপয় যুবক তাকে পাটক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে।
সাতক্ষীরায় মাদ্রাসা ছাত্রী তাহমিনাকে অপহরণ করে ভারতের মুম্বাই শহরের এক পতিতালয়ে নিয়ে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়।
৩১ আগস্ট গোপালগঞ্জে নিজের বাড়িতে ইডেন কলেজের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মিতাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
৩ সেপ্টেম্বর বগুড়ার শাজাহানপুরে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী প্রকৃতির ডাকে বাইরে গেলে বখাটে আলামিন তাকে ধর্ষণ করে। পরে মামলা করতে গেলে যুবলীগ নেতা আবু সাঈদ বাধা দেয়।
২৩ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী লিজাকে ধর্ষণের পর শ্বাস রোধ করে হত্যা করে ঘাতক সোহেল।
৬ নভেম্বর রংপুরের পীরগঞ্জে এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করে তা প্রচার করে স্থানীয় বখাটেরা।
৯ নভেম্বর বরিশালের উজিরপুরে এক কিশোরীকে চিকিৎসার নামে বারো দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে জনৈক ভণ্ড ফকির।
১০ নভেম্বর লালমনিরহাটে ৩ বছরের অবুঝ শিশু ধর্ষণের শিকার হন এক নরপিশাচের হাতে।
১৭ নভেম্বর বাগেরহাটে ছবি আক্তার নামে এক গৃহবধুকে যুব ও শ্রমিক লীগের শুভ, মিজান, মল্লিক ও খোকা গণধর্ষণের পরে বিষ প্রয়োগে নির্মমভাবে হত্যা করে।
২২ নভেম্বর বাহুবলে এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। একই দিন পাবনায় বখাদেরে হাতে গণধর্ষণের শিকার হয় এক কিশোরী। পরে আজিজুল নামে এক ধর্ষক গণপিটুনিতে নিহত হয়।
১ ডিসেম্বর নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় ডিআইটি মাঠের সামনে থেকে গার্মেন্টস কর্মীকে ধরে নিয়ে রনি, সুমন, ডাকাত আবুল ও মিঠু ধর্ষণ করে। কিন্তু যুবলীগ কর্মীদের হুমকিতে পুলিশের সামনেই ধর্ষিতা গার্মেন্টস কর্মীকে পতিতা সাজিয়ে গ্রেফতার দেখানো হয়।
৯ ডিসেম্বর জাপানী বাবলু ভোগরাবুরি ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল আলম খোকন ও আলতাফ হোসেন এক কিশোরীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে।
১৪ ডিসেম্বর ফতুল্লায় পাঁচ বছরের শিশুকে লম্পট আলামিন ধর্ষণ করে।
১৯ ডিসেম্বর চাপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে দশম শ্রেণীর ছাত্রী নুরেশা খাতুন লিমাকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে সহপাঠি মাহবুব ও আজিম পুটুর বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
সীমান্ত সন্ত্রাস
বছরের ১২ মাসে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ ও নাসাকাকর্তৃক নিহত হয়েছেন ১১৬ জন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিএসএফ বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা করেছে। এছাড়া সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে আহত হয়েছেন ১৬৩ জনেরও বেশি। এছাড়াও বিএসএফ কর্তৃক অপহৃত হয়েছেন ১২১ জন।
জৈন্তাপুর সীমান্তে বিএসএফ-এর মদদে খাসিয়ারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জমি দখল করে চাষাবাদ শুরু করে এবং অস্ত্রের মহড়া দেয়।
৩ নভেম্বর বুড়িমারি সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত হয় শহিদুল ইসলাম।
৮ নভেম্বর যশোর সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত হয় মজনু বিশ্বাস।
৯ নভেম্বর সাতক্ষীরার গাজীপুর, পুটখালী ও পাটগ্রামের বুড়িমারী সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত হয় শরীফুল ইসলাম, মজনুর রহমান, মোক্তাল হোসেন।
১৫ নভেম্বর বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত হয় আব্দুল গাফফার ও মতিয়ার নামে দুই বাংলাদেশী। একই দিন দৌলতপুর সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত হয় মুক্তার।
১ ডিসেম্বর কানাইঘাটের সুরইঘাট সীমান্তের বাংলাদেশ সোনাতনপুঞ্জি এলাকায় ভারতীয় খাসিয়াদের হাতে নির্মম ভাবে নিহত বাংলাদেশী কাঠুরিয়া জসিম উদ্দ ীনের মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধার করা হয়।
৯ ডিসেম্বর শিবগঞ্জের মাসুদপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় কালুমিয়া (৩০)।
১১ ডিসেম্বর বেনাপোল সীমান্তে আমির হোসেন (৩৫) নামের এক বাংলাদেশীকে পিটিয়ে হত্যা করে বিএসএফ।
১৩ ডিসেম্বর কলারোয়ার কাকডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় কবিরুল ইসলাম।
১৮ ডিসেম্বর ডিমলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় আব্দুর রশিদ (৩৫)।
১৯ ডিসেম্বর বেনাপোলের পুটখালী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় শফিয়ার রহমান।
২৪ ডিসেম্বর লালমনিরহাটের হাতিয়াবান্দার দইখাওয়া সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত হয় সাইফুর রহমান।
একই দিন, পবার খানপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়া তাজেরুল ইসলাম।
২৫ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে বিএসএফের হামলায় নিহত হয় অজ্ঞাত এক বাংলাদেশী।
২৭ ডিসেম্বর লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বামনদল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় বেলাল হোসেন (২৫)।
২৮ ডিসেম্বর বিরামপুর সীমান্তে বিএসএফ পিটিয়ে হত্যা করে এক বাংলাদেশী যুবককে।
রাজনৈতিক সংঘর্ষ
গত বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ২৩৪ জন। আর আহত হয়েছেন ১৫৮৮৬ জন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের গ্রুপিংয়ের কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ-বিএনপি, আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি কিংবা আওয়ামী লীগ-জামায়াত সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। শুধু ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হয়েছে ১১৭ জন।
উল্লেখ্য, ১১ মে সাভারে ডিশ ব্যবসায়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ কর্মী সাইফুল ইসলাম (৩২) নিহত হন।
১৬ মে শার্শা উপজেলা যুবলীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক রতন সরকারকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় ডিহি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আঃ খালেক এবং যুবলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আঃ জলিলসহ ৫ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
২৫ মে পাবনার সাথিয়ায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে জমির ধান কাটা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়।
কুমিল্লার শহরতলির কালিরবাজার এলাকায় রাতে সোহেল (২২) নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ গ্রুপ।
২৭ মে খুলনায় মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেনকে (৬০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা জড়িত বলে নিহতের স্ত্রী দাবি করেছে। মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে জিডির জের হিসেবে ৩০ মে মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জামালউদ্দিন ওরফে কুতু বাবুকে (৩৫) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিন মুন্সিগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীতে বালুমহালে টোল সংগ্রহ করতে গিয়ে একই দলের সন্ত্রাসীদের হামলায় মুন্সিগঞ্জ শহর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোঃ মামুন (২৬) নিহত হয়। ৩১ মে মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে নুরুন্নবী হাওলাদার (২৫) নিহত হয় এবং টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে প্রতিপক্ষের হামলায় উজেলার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক (৪৫) নিহত হয়।
খালেদা জিয়ার রাজশাহীর মহাসমাবেশে যাওয়ার পথে ৫ মে নাটোরের সিংড়ায় বিএনপি সমর্থকদের গাড়ি বহরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় নিহত হয় ১ জন এবং ১৯ মে বিএনপির ঢাকার মহাসমাবেশে আসার পথে বিএনপি সমর্থকদের গাড়ি বহরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় যুবদল নেতা আকবর হোসেন নিহত হয়। কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ ২০ মে দুপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাট এলাকা থেকে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে।
৪ মে বরিশাল পলিটেকনিকে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র দ্বারা প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে জখম করার ছবি, ১০ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের আন্তকোন্দলের জের ধরে শিক্ষিকাসহ ৮ ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করা ও ১১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের দ্বারা আরবি বিভাগের ২ জন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে কাস থেকে বের করে দেওয়ার নজিরবিহীন ঘটনা জাতিকে হতবাক করে।
২৬ মে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় যুবলীগের এক কর্মীর হাত কেটে নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ।
৩০ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বখতিয়ার রানাকে লাঞ্ছিত করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি কামরুল হাসান রিপন।
৫ জুলাই ২০১০ জাহাঙ্গীরনগর বিশ¡বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে প্রক্টরসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়। এ সময় প্রতিপ গ্রুপের কর্মীদেরকে নির্মমভাবে পিটিয়ে চারতলা থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়।
৬ জুলাই এ ঘটনার সংবাদ ও ছবি ছাপা হয় প্রত্যেকটি দৈনিকে। প্রতিপ গ্রুপের ওপর এ ধরনের হামলা ও নির্যাতন বর্বর যুগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
১৩ আগস্ট সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী শাওনের পিস্তলের গুলিতে নিহত হয় যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম। এ ঘটনায় খোদ সংসদ সদস্য শাওনের বিরুদ্ধেই হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সেক্রেটারি অপু গ্রুপের কর্মী ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাসরুল্লাহ নাসিমকে নির্যাতনের পর ছাদ থেকে ফেলে দেয় সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা। ৯ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ২৩ আগস্ট মারা যায় নাসিম। উল্লেখ্য, জুলাই মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীদের ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটে।
২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত র্যালিতে ছাত্রলীগের দু’টি গ্রুপের ছাত্রীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
৮ অক্টোবর নাটোর জেলার বনপাড়ায় বিএনপির পূর্বনির্ধারিত জনসভায় বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর বিএনপির সভাপতি সানাউল্লা নূর বাবুকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে নির্মমহত্যা করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।
১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিনের বাসার দলীয় ক্যাডারদের আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় নিহত হন ৩জন এবং আহত হয় এমপিসহ ৫জন।
২৩ নভেম্বর পাওনা টাকা চাওয়ায় বাগেরহাট জেলার ছাত্রদলের ক্রীড়া সম্পাদক এমাদুল হককে কুপিয়ে হত্যা করে যুবলীগ ক্যাডাররা।
এছাড়া ৬ নভেম্বর রাজধানীতে নিজ দলের সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দীন ইসলাম দীলাকে।
১ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জে সাবেক ইউপি মেম্বার ও আওয়ামীলীগ নেতা গুরুপদ বিশ্বাসকে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা হত্যা করে।
৩০ নভেম্বর বিএনপি’র হরতালের সময় লালমনিরহাটের গোকুঞ্জা ইউনিয়ন বিএনপি অফিস পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার সময় অগ্নিদগ্ধ আওয়ামীলীগকর্মী মোস্তফা সরকার (৩৫) ৩ ডিসেম্বর মারা যায়।
৬ ডিসেম্বর বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের উপজেলা সভাপতি ইদ্রিস আলী ইজারাদার মোংলার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর সরদারকে প্রকাশ্যে জুতা পেটা করে।
৭ ডিসেম্বর নরসিংদীতে যুবদল কর্মী বুরুজ মিয়াকে গলা ও পায়ের রগকেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে সুমন, মনিরসহ পাঁচ-ছয় জন যুবলীগকর্মী।
৯ ডিসেম্বর যশোরে সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে বিমান অফিসের মোড়ে নিজ দলীয় সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবলীগ কর্মী আবু জাফর (২৭) নিহত হয়।
১৩ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকায় আন্তকোন্দলের জের ধরে নিহত হয় ছাত্রলীগ নেতা ওমর ফারুক (২৫)।
১৪ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া উপজেলার দুর্গম গ্রাম নাছিরাকান্দিতে কলম ইউনিয়নের বিএনপি নেতা আসলাম মোল্লাকে (৪০) ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা গলা কেটে হত্যা করে।
২০ ডিসেম্বর ধামরাইয়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিজ দলের হাতে নিহত হয় গাংগুটিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম সিরো ।
৩০ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ শহরের পবহাটিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হয় আলম (৪১), বজলুর রহমান (২৮) ও সোহান।
৩১ ডিসেম্বর খাঁগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় যুবলীগ কর্মীর হামলায় উপজেলা শ্রমিক দল সভাপতি সিরাজুল ইসলাম নিহত হয়।
সাংবাদিক নির্যাতন ও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ
২০১০ সালের একটি বড় সময় কেটেছে সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ ও সাংবাদিক নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা নিয়ে। যমুনা টেভিশিন, চ্যানেল ওয়ান বন্ধ, ফেসবুক বন্ধ ঘোষণা, আমারদেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল এবং এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে রিমাণ্ডে নির্যতানের ঘটনা দেশবাসী উৎকণ্ঠার মধ্যে পর্যবেক্ষণ করে। এতে প্রায় সহস্রাধিক মিডিয়া কর্মী বেকারত্বের ফলে চরম মানবেতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন ২০৬ জন সাংবাদিক। নিহত হন ৪ জন । (সাপ্তাহিক ২০০০-এর সিলেট প্রতিনিধি ফতেহ ওসমানি ২৯ এপ্রিল মারা যান এবং এটিএন বাংলার ক্যামেরাম্যান শরিফুল ইসলাম মিঠুকে দুবৃত্তরা শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। তাছাড়া ১২ আগস্ট মাইটিভির খুলনা ব্যুরো প্রধান এম এ হাসানের লাশ গলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ) এছাড়াও বিভিন্ন চ্যানেলের টকশো’র ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে কয়েকটি জনপ্রিয় টকশো’র সম্প্রচার।
উল্লেখ্য, ৩ নভেম্বর ঢাবির এফ রহমান হলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে নিউ নেশন প্রতিবেদক কদরুদ্দিন শিশিরকে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা।
৫ নভেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ে অফিস কাবে মন্ত্রীর সামনেই শ্রমিক লীগ ক্যাডারদের হামলায় আহত হন ১০ সাংবাদিক।
৬ নভেম্বর বিয়ানীবাজারে ইত্তেফাক প্রতিনিধি আব্দুল খালেককে মারধর করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা।
৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে টিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় ৬ সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করে ঢাবি ছাত্রলীগ ক্যাডাররা।
১৪ নভেম্বর চাপাইনবাবগঞ্জে হরতাল চালাকালে ক্ষমাতাসীনদের হামলা আহত ৩ সাংবাদিক।
২৮ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে আহত হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ২২ সাংবাদিক।
৩০ নভেম্বর হরতাল চলাকালে ঢাকায় শীর্ষ নিউজের স্টাফ রিপোটার হাসনাইন ইমতিয়াজ ও সমকালের স্টাফ রির্পোটার রাজিব আহম্মেদকে নির্মমভাবে প্রহার করে পুলিশ।
২২ ডিসেম্বর প্রতিপক্ষের হামলায় মুলাদী প্রেসকাবের সভাপতি মনির হোসেন নিহত হয়। একই দিন জাবির এমএইচ হলের ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে লাঞ্চিত হয় জাবির সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ চারজন।
১৬ ডিসেম্বর জবিতে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে আহত হয় এক ফটো সাংবাদিক।
২১ ডিসেম্বর জবির ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় লাঞ্চিত হয় ১০ সাংবাদিক।
ইভটিজিং ও নারী নির্যাতন
সারাদেশে ইভটিজিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ডিসেম্বর মাসেই ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ার ২৩৭টি ঘটনা পত্রিকায় এসেছে। এর মধ্যে ৫ তরুণী ইভটিজিং এর অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে। ইভটিজিংয়ের ঘটনায় ডিসেম্বর মাসে ৪৫ জন বখাটের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা এবং ২৬ জনকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, গত নভেম্বর মাসে ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ার ২২৫টি ঘটনা পত্রিকায় আসে। এর মধ্যে ৩ জন তরুণী ইভটিজিং এর অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। ইভটিজিংয়ের ঘটনার প্রতিবাদ করায় প্রাণ দিতে হয় ৫ জনকে। তাছাড়া গত তিন মাসে যৌতুক ও অন্যান্য কারণে স্বামীগৃহে নির্যাতনের পর জীবন দিতে হয় ৮০ জন নারীকে। যার মধ্যে অক্টোবর মাসে ১৮, নভেম্বর মাসে ৩৫ ও ডিসেম্বর মাসে ২৭ জন নারীকে জীবন দিতে হয় ।
ইভটিজিংয়ের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট বখাটেদের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়।
৪ এপ্রিল কাওসারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ৬ এপ্রিল ছাত্রলীগ নেতা বাবু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৪ এপ্রিল টিএসসির বৈশাখী কনসার্টে ছাত্রলীগের মধ্যম সারির নেতাদের হাতে তরুণীদের শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা দেশবাসীকে হতবাক করে। এছাড়া ১৯ এপ্রিল বগুড়ায় ছাত্রলীগ নেতা ডিউ কর্তৃক এক তরুণী এবং ২৮ এপ্রিল পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগ নেতা বরকত খান কর্তৃক স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শারিরীকভাবে নাজেহাল হন।
মে মাসে ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ার অসংখ্য ঘটনা পত্রিকায় এসেছে। এর মধ্যে কয়েকজন তরুণী ইভটিজিং এর অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট বখাটেদের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। যার মধ্যে, ৩ মে বাগেরহাটের শরণখোলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে যুবলীগ কর্মীরা মারাত্মকভাবে প্রহার করে। এছাড়া ৯ মে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা আঃ কুদ্দুস স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে চুলের মুঠি ধরে লাঠিপেটা করে অজ্ঞান করে ফেলে।
১ নভেম্বর বগুড়ার শেরপুরে ইভটিজিংয়ের অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে স্কুলছাত্রী রূপালী রানী (১৫) ।
৪ নভেম্বর চট্টগ্রামে আটক ইভটিজারকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগ ক্যাডারা।
৬ নভেম্বর কুমিল্লায় পূজা অনুষ্ঠানে ইভটিজার ছোট ভাইয়ের পক্ষ নিলে গণপিটুনিতে নিহত হয় ছাত্রলীগ নেতা জাকির। এর জের ধরে পূজামণ্ডপ ভাঙচুর ও সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে হামলা করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা।
৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বখাটেরা উত্যক্ত করলে তার প্রতিবাদ করায় ৬ সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা।
৮ নভেম্বর কুমিল্লার মুরাদনগরে ইভটিজার ছেলের বখাটেপনা থামাতে না পেরে নিরূপায় হয়ে আত্মহত্যা করে এক অসহায় মা।
১৯ নভেম্বর দিনাজপুরে ব্র্যাক স্কুলের ৫ম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী শাবনুরের ইভটিজিংয়ের বিচার চাওয়ায় বখাটেরা তার পরিবারের সদস্যদেরকে মারধর করে। ঘটনার অপমান সইতে না পেরে ক্ষোভে আত্মহত্যা করে শাবনুর।
১৩ ডিসেম্বর মাদারীপুরের কালকিনিতে চৈতী আক্তার ইভটিজিংয়ের অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে।
একই দিন ভোলার তজুমুদ্দিন উপজেলায় কেয়ামুনা গ্রামে জাকিয়া (১৭) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রী ইভটিজিংয়ের অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে।
১৪ ডিসেম্বর রাজধানীর দণিখানে রেশমা আক্তার বীনা নামে এক কিশোরী ইভটিজিংয়ের অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে।
১৭ ডিসেম্বর নড়াইলের লোহাগড়ায় বখাটেদের গণধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় ১৪ বছরের শিশু জবা।
২২ ডিসেম্বর নারায়নগঞ্জে বখাটেদের অপমান সইতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয় দীপুমনি।
২ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া সরকার পাড়ায় ইভটিজাররা ১৪ বছরের স্কুল ছাত্রী ও তার মা-বাবাকে মারধর করে।
একই দিন বখাটের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
৩ ডিসেম্বর বগুড়ায় ইভটিজিং বিরোধী প্রাণ গ্রুপের কনসার্টে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় তরুণীরা আক্রান্ত হয়।
৪ ডিসেম্বর বখাটেদের বিরুদ্ধে থাকায় অভিযোগ করার কারণে বরগুনার কলেজ ছাত্রী সুমা আকতারকে পায়ের রগ কেটে দিয়েছে ইভটিজাররা।
৫ ডিসেম্বর নঁওগার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী আশা আলমগীর মিলি স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ইভটিজাররা ব্লেড দিয়ে তার শরীর চিড়ে দেয়।
৬ ডিসেম্বর শেরপুরের নলীতা বাড়িতে বখাটেদের ছুরির আঘাতে মাদরাসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী মৌসুমি আকতার (১৪)- এর পেটের নাড়ি-ভূড়ি বের হয়ে আসে।
১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের চকোরিয়া গ্রামে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান তুহিন রহমানসহ পাঁচ ছাত্রলীগ ক্যাডারকে মেয়েদের ইভটিজিংয়ের দায়ে গণপিটুনি দেয় গ্রামবাসী।
১৪ ডিসেম্বর খুলনা সিটি কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী আজম খান মোবাইলে ছবি তোলার মাধ্যমে ইভটিজিং করে।
১৫ ডিসেম্বর আওয়ামীলীগ নেতা মতিয়ার রহমান ওরফে মতি গোলদারের ছেলে জয় খুলনার দিঘলিয়া সরোয়ার খান ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তানিয়াকে দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় আওয়ামীলীগ নেতার ক্যাডাররা তিন ছাত্রকে কুপিয়ে জখম করে।
একই দিনে, ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় আড়াইহাজারে বখাটেরা ষষ্ঠশ্রেণীর ছাত্রীর বাসায় হামলা-মারধর ও ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির পর মাথা ন্যাঁড়া করে দেয়।
১৬ ডিসেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জে মহাজোট নেতা মোহাম্মদ আলীর বখাটে ছেলে দিপু পালসার এক মেয়েকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় ৫ জনকে পেটানো হয়।
২১ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ ছাত্রীকে উত্যক্ত করে ছাত্রলীগ নেতা মিরাজ ও নবীন।
৩১ ডিসেম্বর ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় আড়াইহাজারে বখাটেরা স্পিনিং মিল শ্রমিক এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করে।
আত্মহত্যা
সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যার সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু মে মাসে ৩৬ জন, জুনে ৪৯, জুলাই ৪২, আগস্টে ৪৪, সেপ্টেম্বর মাসে ৬৭, অক্টোবর মাসে ৪৬, নভেম্বর মাসে ৩৬ ও ডিসেম্বর মাসে ৩৯ জন আত্মহত্যা করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট বখাটেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তরুণীরা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। এছাড়া ইভ টিজিং, পারিবারিক কলহ, ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়া অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে গত এপ্রিল মাসে ঢাকার বাড্ডা ও বাগেরহাটে এনজিওর কিস্তির টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ২ জন আত্মহত্যা করেন।
১১ জুন ঢাকার কদমতলীর জুরাইনে শফিকুল কবিরের পুত্রবধূ ফারজানা করিব রিতা (৩৫) ও দুই নাতি-নাতনি, ইসরাফ কবির বিন রাশেদ ওরফে পবন (১১) ও রাইসা শারমিন পায়েল (১০) বাবার অত্যাচার ও দ্বিতীয় বিয়ে, মাসহ তাদের বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করে দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
১ জুলাই ২০১০ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার লিপি আক্তার মামার বাড়িতে যাওয়ার পথে সাইদুর রহমান সাঈদ নামে এক যুবক তাকে ধর্ষণ করে। এতে ােভে-অভিমানে লিপি আক্তার কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করে।
১০ জুলাই পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় মায়ের কাছে ১শ’ টাকা চেয়ে না পেয়ে অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে রতন হোসেন (১৪) নামের এক স্কুল ছাত্র। রতন দেবোত্তর কবি বন্দে আলী মিয়া উচ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র।
এছাড়া প্রেম করে বিয়ে করায় পরিবার মেনে না নেয়ায় কিশোরগঞ্জের ওয়াজিউদ্দিন ও দিলারা বেগম চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।
২ আগস্ট মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের ইসাপুরা গ্রামের সাধন ভাওয়ালের স্ত্রী মনিরা ভাওয়াল ও প্রতিবন্ধী মেয়ে মাধুরী ভাওয়াল সংসারের আর্থিক অনটনে অতিষ্ঠ হয়ে গলায় রশি পেচিয়ে আত্মহত্যা করে।
৫ আগস্ট দক্ষিণ কমলাপুরে স্ত্রী বিলাসী স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে তার দুই সন্তান রায়হান (৩) ও রজনী আক্তারসহ (৭) আত্মহত্যার চেষ্টা চালালে শরীরের প্রায় ৮০ ভাগ পুড়ে যায়। তিন দিনের মধ্যে তারা সবাই মারা যায়।
১১ আগস্ট ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করে মুন্সিগঞ্জের স্কুলছাত্রী সিনথিয়া।
১৯ আগস্ট এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে রাজধানীর আদাবরে শাহিদা গলায় কাপড় পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। একই কারণে ২৮ আগস্ট আত্মহত্যা করে নোয়াখালীর আসলাম।
২৭ আগস্ট নারায়নগঞ্জে স্ত্রীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যা করে রাজু সরদার।
১ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ির ুদ্র ব্যবসায়ী বাদশা খন্দকার ঋণের টাকা শোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এনজিও কর্মীদের চাপাচাপিতে বিষপানে আত্মহত্যা করে।
২৮ অক্টোবর পটুখালীতে দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছর চাকরি করার পরেও চাকরি স্থায়ী না হওয়ার কষ্টে পরিছন্ন কর্মী কমল দাস আত্মহত্যা করেন।
১ নভেম্বর বরিশালের মুলাদিতে ঋণের টাকা শোধ করতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করে জনৈক যুবক।
১৪ নভেম্বর টাঙ্গাইলের বাসাইলে ছোট বোনের হলুদের অনুষ্ঠানের দিন রাতে আত্মহত্যা করে হাসিনা।
২২ নভেম্বর বরগুনায় প্রেমিক বিয়ে করতে অস্বীকার করায় আত্মহত্যা করে জাকিয়া।
১ ডিসেম্বর রাজধানীর শাহজাহানপুরে প্রেমঘটিত কারণে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সাদিয়া বিনতে নুর (১৭)।
৫ ডিসেম্বর গাজীপুরে স্ত্রীর পরকীয়ার জের ধরে স্বামী ফজলুল হক (৪৫) ও স্ত্রী সাহিদা বেগম (৩৫) আত্মহত্যা করে।
৬ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় দশম শ্রেনীর ছাত্র শাকিল প্রেমিকার আত্মহত্যার কথা শুনে নিজে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
৭ ডিসেম্বর নারায়নগঞ্জে আব্দুল আউয়াল নামে এক দিনমজুর ুদ্রঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যা করে।
১০ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র নেহাল বার বার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার হতাশায় আত্মহত্যা করে।
১১ ডিসেম্বর বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের ছাত্র মদুসূধন শিক্ষকদের ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে আত্মহত্যা করে।
১৫ ডিসেম্বর রাজধানীর দণিখানে স্বামীর ওপর অভিমান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় রাজিয়া সুলতানা।
২০ ডিসেম্বর ফতুল্লায় গৃহবধূ দীপা পরকীয়া প্রেমের কারণে আত্মহত্যা করে।
২১ ডিসেম্বর ফতুল্লায় মো: আলী ও হাতেম আলী অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যা করে।
চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি
২০১০ সালে সারাদেশে চুরি, ডাকাতি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে মোট ২২৬২টি। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৮০ জন। আর আহত হয়েছে ২৮০৫ জন।
সড়ক দুর্ঘটনা
গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪৪৮১জন। যা গড়ে প্রতিদিন ১২ জনেরও বেশি। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৫৫৬৯ জন অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৪২ জনেরও বেশি।
সূত্রঃ http://www.mrtbd.org/?p=746
তারিখ- ৪ জানুয়ারি ২০১১