বিস্ময়ে হতবাক হইয়া গেল সবাই । কথা ফুটিলনা কাহারো মুখে। স্তব্ধতার চাদরে ঢাকিয়া গেল ২০ কোটি মানুষের মুখ। এমনটা কি করিয়া সম্ভব ভাবিয়া কুল পাইল না কেহ! একই দিনে একই সময়ে দুইজনের স্বাভাবিক মৃত্যু, ডাক্তার দুরে থাক গণক হাওলাদার পর্যন্ত ব্যর্থ হইল যথার্ত কারণ ব্যাখ্যা করিতে। বিশ্ব মিডিয়া ইহাকে সহস্রাব্দের সেরা আশ্চর্য ঘটনা বলিয়া আখ্যায়িত করিল।
একজন ধানমন্ডিতে, অন্যজন গুলশানে। আর দশটা স্বাভাবিক দিনের মত দুই জন রাজনীতি করিলেন। নিজ নিজ পিতা আর স্বামীর নামে ক্ষমতার বাজারে বিনিয়োগ করিলেন এবং দিনান্তে ছেলেমেয়ে নায়-নাতির সহিত ভিডিও কনফারেন্স করিয়া ঘুমাইতে গেলেন। সকাল গড়াইয়া দুপুর হইল, টেবিলে নাস্তা ঠান্ডা হইল কিন্তু দুইজনের একজনও শয়নকক্ষ হইতে বাহির হইল না। বাড়ির আয়া বুয়ারা অবাক হইলেও ঘুম ভাঙ্গাইতে সাহষ করিল না। ১টার দিকে ব্যাক্তিগত সচিব আসিয়া আবিষ্কার করিল মৃতদেহ। উভয় ক্যাম্প হইতে যুগপৎ প্রকাশিত হইল সংবাদটা, উনারা আর নাই। আলোচনা, সমালোচনা, গবেষনা, অতীতবানি আর ভবিষ্যদ্বাণীর জোয়ারে ভাসিয়া গেল গোটা দেশ। এক পক্ষ কহিল ইহা জামাতিদের কাজ, অন্য পক্ষ বলিল দাদাদের ষড়যন্ত্র। ডানপন্থীরা বলিল আল্লার মাল আল্লায় নিয়া গেছে, বামপন্থীদের ধারণা নেত্রীদের হত্যা করা হইয়াছে এবং ইহাতে জড়িত আছেন আমরিকার প্রেসিডেন্ট সারাহ পালিন। শোকের সাগরে ভাসিতে গিয়া এক সময় জনগণের হুস হইল, আরে, তাহাদের তো নতুন নেতা, প্রধানমন্ত্রী আর বিরোধী দলীয় নেত্রী দরকার।
ঘটনার শুরু রংপুর হইতে। স্থানীয় যুবলীগের ৩১ জন নেতা অনশনের হুমকি দিল। দাবি একটাই, আমরিকা প্রবাসি সজিব ওয়াজেদ জয় ভাইয়াকে ফিরাইয়া আনিয়া প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসাইতে হইবে। গোপালগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতারা এক ধাপ আগাইয়া আত্মহননের হুমকি দিল। অরাজকতায় আক্রান্ত হইল গোটা দেশ। শেখ রেহানা লন্ডন হইতে পুত্রবধু পেপ্পি কেভিমিয়ামি সহ দেশে ফিরিলেন জরুরী ভিত্তিতে। কেহ কেহ ২০ কোটি মানুষের দায়িত্ব শেখ বংশের সর্বশেষ সংযোজন শেখ সুফিয়ার হাতে সঁপিবার দাবি জানাইল। অনেকে এই নাবালিকার চোখে প্রয়াত নেত্রীর ছায়া দেখিতে পাইয়া আশায় বুক বাধিতে শুরু করিল। একই দাবির স্বপক্ষে জনমত তৈরী করিবার দায়িত্ব নিল বিশিষ্ট লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী। শুনিয়া পেপ্পি ক্রোধান্নিত হইল এবং স্বামীকে পরবর্তী ফ্লাইটে ঢাকা আসিবার তাগাদা দিল।
অন্য ক্যাম্পে এই লইয়া সমস্যা একটু কম হইল। বগুড়ার জনগণ ইতিমধ্যে তোরণ তৈরী করিতে শুরু করিয়া দিল। সুপ্রিয় তারেক ভাইয়া দেশের মাটিতে পা দিয়া প্রথমেই যেন বগুড়ার মাটি ধন্য করেন দাবি জানাইয়া হরতাল করিল, মোড়ে মোড়ে মানব বন্ধন করিল। সমস্যা হইল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক আর দলের দুই একজন ব্যারিস্টারদের লইয়া। তাহারা দলের প্রধান ও বিরোধী দলের নেতা হিসাবে আরাফাত রহমান ককোর নাম প্রস্তাব করিল। দলের অবসরপ্রাপ্ত দুই একজন জেনারেল আকারে ইঙ্গিতে জিয়া বংশের নতুন প্রজন্ম জামাইমা জিয়ার নাম প্রস্তাব করিল। এই নাবালিকার চোখেও না-কি তাহারা প্রয়াত নেত্রীর ছায়া দেখিতে পাইয়াছেন।
জরুরী ভিত্তিতে ঈশ্বর সভা তলব করিলেন। হাবিল-কাবিল, জিবরাইল -আজ্রাইল সহ সবাই আসিল। দেখিয়া ঈশ্বর মুচকি হাসিলেন। জরুরী কিছু সিদ্ধান্ত শেষে তিনি মাটির দুনিয়ার দিকে আংগুলি হেলন করিলেন এবং বলিলেন, ’হে অধীনস্তগন, আমার সৃষ্টির সবচাইতে নিকৃস্টদের দেখিতে চাহিলে তোমরা নীচের দিকে তাকাও। তাহাদের সংখ্যা ২০ কোটি। দাসত্বের পিঞ্জিরায় বন্দী থাকিলে প্রিয় আদমগনের অবস্থা কি হইতে পারে তাহার নমুনা দেখিতে চাহিলে নজর ফেরাও দেশটার দিকে।’ অধীনস্তরা চোখ ফিরাইল। গোপালগঞ্জ দেখিল, বগুড়া দেখিল এবং হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল ।
ভেঙ্গে গেল সকালের ঘুমটা। বিরামহীন তুষারপাতে হচ্ছে কদিন ধরে। রাস্তাঘাট ডুবে যাচ্ছে বরফের আচ্ছাদনে। আজ রোববার, কাজে যেতে হবেনা ভাবতে মনটা হাল্কা হয়ে গেল। সান্তা ফে রুটের প্রথম ট্রেনটাও কর্কশ সুরে ডেকে উঠল একই সময়ে। এত সকালে বন্ধু মোর্শেদের ফোন পেয়ে কিছুটা বিরক্ত হলাম। কারণ জানতে চাইলে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চোখ বুলাতে অনুরোধ করল। খুব একটা অবাক হলাম না খবরটা পড়ে, ‘১৫ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন আওয়ামী-বিএনপির ১০-১৫ রাজনৈতিক ব্যবসায়ী‘। স্বপ্নে দেখা ঈশ্বরকে মনে করার চেষ্টা করলাম। এ মুহূর্তে তাকে ছাড়া আর কাউকে দায়ি করার কারণ খুঁজে পেলাম না।