"বিপুল সমারোহে" মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে বিএনপি প্রযোজিত "মহাজোটের বিরুদ্ধে জোটের হরতাল" নামক রাজনৈতিক সাগা। আড়িয়ল বিলের "অমর পিতা" প্রকল্প হতে কন্যা শেখ হাসিনা পিঠটান দিলেও মুন্সীগঞ্জ প্রকল্প হতে শেয়ারবাজার কায়দায় কিছু এক্সপ্রেস মুনাফা তুলে নেয়ার খায়েশ হতে সড়ে আসতে পারছেনা প্রতিপক্ষ বিএনপি জোট। 'তুমি বাশ দিলে আমিও বাশ দিমু' কায়দায় জোট-মহাজোটের এই লীলাখেলায় আরও একবারের জন্যে এলোমেলো হতে যাচ্ছে আমাদের জীবন।
এ নিয়ে কতবার মঞ্চস্থ হল মিথ্যাচারের এই অমর সৃষ্টি? রেকর্ড বলে নায়ক ভিলেন চরিত্রে পালাবদলের পর এটা হবে দ্বিতীয় আয়োজন। আমরা ম্যাংগো পিপলরা বোধহয় ভুলেই গিয়াছিলাম আওয়ামী ঘরণার অতি প্রিয় এই অক্টোপাসটার কথা। চরিত্রের পালাবদল হলেও নাটকের ক্লাইমেক্সে মৌলিক কোন পরিবর্তন আসেনি এতগুলো বছর পরেও। প্রায় চার বছর পর জাতিকে উপহার দেয়া বিএনপির প্রথম হরতাল নতুন করে সেটা প্রমান করেছিল। বলতে গেলে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ হাতে কলমে আমাদের শিখিয়েছে সন্ত্রাসের মুখে জাতিকে জিম্মি করে কি করে দাবি আদায় করা যায়। সে আদায় যদি ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার আদায় হয় তাহলে বিএনপিকে এ যাত্রায় লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। লাগাতার হরতালের বিরুদ্ধে মাত্র দুই-একদিনের হরতাল কোন মতেই ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার রোডম্যাপ তৈরী করবে না। এর জন্যে চাই হরতালের ম্যারাথন, চাই অচল দেশ, চাই বিকলাঙ্গ অর্থনীতি, চাই যাত্রী সহ জ্বলন্ত বাসে আগুন, লগি বৈঠার তাণ্ডব, প্রতিপক্ষের লাশের উপর ব্রাজিলিয়ান সাম্বা সহ আরও অনেক কিছু। পছন্দ করি বা না করি, এ গুলোই আমাদের রাজনীতির আসল চালিকা শক্তি। এ শক্তিই একটা দলকে রাজপথ হতে বঙ্গভবনে নিয়ে যায়, রাজাকারের গাড়িতে পতাকা উড়ায়, মায়ের অবৈধ পয়সায় লালিত সন্তানকে পৃথিবীর সেরা বৈজ্ঞানিক বানায়, কুখ্যাত চোরকে দেশের ভবিষ্যৎ মুক্তিদাতা আখ্যায়িত করে। হরতালের এমনটাই শক্তি। এ শক্তিকে এত সহজে নির্বাসনে পাঠাবার কোন প্রেক্ষাপট তৈরী হয়নি রাজনৈতিক শেয়ারবাজারে। আওয়ামী মহাজোটের মত বিএনপি ও তার চারদলীয় জোট বাজারের বিনিয়োগকারী মাত্র। বাজার যতদিন থাকবে বিনিয়োগকারীরাও থাকবে, এটাই বাজারের ধর্ম।
বিএনপির জন্যে গেল হরতালের জাতীয় প্রাপ্তি কি ছিল জানিনা তবে তাদের আকাশে উদিত হয়েছিল নতুন এক সূর্য। সে সূর্যের নাম ছিল শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। দলটার সেন্ট্রাল কমান্ড হতেই নাকি পরিকল্পিত ভাবে গ্রীন সিগন্যাল এসেছিল ’এ্যানি ভাই এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে’। আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিব নিয়ে সংসদে নিকৃষ্টতম খিস্তি করার কারণে নেতার উপর দলীয় নেত্রীর নেক নজর ছিল এবং পুরস্কার হিসাবে তুলে দিয়েছিলেন মিডিয়ার হাতে। দৃশ্যটা ছিল চোখে পড়ার মত; দলীয় ডাক্তারদের চিকিৎসা আর কর্মীদের তৈল মর্দন নিয়ে বেশ খোশ মেজাজে সময় কাটাচ্ছিলেন হাসপাতালের রাজকীয় পরিবেশে। মরু ঝড়ের মত হঠাৎ করে বদলে গেল পরিস্থিতি। কেউ একজন জানাল, ওরা আসছে। ডাক্তারের পরামর্শে ভবিষ্যৎ সরকারের ভবিষ্যৎ যুবমন্ত্রী জনাব চৌধুরী লুটিয়ে পরলেন বিছানায়। কাৎরাতে শুরু করলেন বিনা নোটিশে। ওরা আসার আগেই 'মৃত্যুর' সাথে পাঞ্জা শুরু করে দিলেন। ওরা ছিল আসলে একদল ফটো সাংবাদিক। দেখতে এসেছিল হরতাল নাটকের আহত নায়ককে। সবার সামনে অনেকটা সেক্সপীয়ার কায়দায় ডাক্তারের দল সার্টিফিকেট দিল, সিংগাপুর, না হয় মৃত্যু । ১/১১’র সময়কালীন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত চিকিৎসকের কথা মনে আছে আপনাদের? আমেরিকায় না গেলে চোখ, কান, মাথা সব কিছুর ইমিডিয়েট ইন্তেকাল হবে, একটার পর একটা সার্টিফিকেট দিয়ে তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আপনজন ও উপদেষ্টা। আপনার আমার মত বিএনপির ডাক্তারদেরও জানা আছে সে ঘটনা। সর্বশেষ নির্বাচনী ফলাফল বিএনপি ঘরণার ডাক্তারদের উৎসাহিত করে থাকবে হয়ত, আর তাই তারেক ও ককো জিয়ার মত শহীদ উদ্দিন চৌধুরীরকেও দ্রুত সিংগাপুর পাঠানোর প্রেসক্রিপশন দিয়ে ক্ষমতা সিঁড়িতে নতুন রড-সিমেন্ট বিছিয়েছিলেন মাত্র। প্রতিটা হরতাল আমাদের উপহার দেয় নতুন কোন নায়ক নায়িকার, যারা পরবর্তীতে ঠাঁই নেন মন্ত্রীসভা, উপদেষ্টা পরিষদ সহ ক্ষমতার বিভিন্ন অলিগলিতে। এ যাত্রায়ও আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো নতুন কোন উত্থানের। ৪০ টাকা কেজি মোটা চালের ম্যাংগোপিপলদের পার্শ্বচরিত্র বানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল নামক অমর সৃষ্টি উপভোগ না করার কোন কারণ দেখছি না।
'অমর পিতা' আর 'অমর স্বামী' নামক উত্তমাশা অন্তরীপের অবস্থান আমাদের জানা নেই, কিন্তু যতদিন এ অন্তরীপ অতিক্রম না করছি বাংলাদেশ নামক একটা সুস্থ দেশের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে আমাদের বোধহয় আরও অপেক্ষা করতে হবে।