মারাত্মক একটা খবর দিয়েছে ইংরেজী দৈনিক দ্যা নিউ এইজ। ওবামা প্রশাসন হলুদ কার্ড দেখাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকারকে। অপরাধ;- হ্যারাসমেন্ট। না সেক্সুয়াল নয়, বরং ইউনুস হ্যাসারমেন্ট। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে নোবেল বিজয়ী এ অর্থনীতিবিদের প্রতি সরকারী বৈরিতা বন্ধ না হলে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ বন্ধ রাখবে মার্কিন সরকার। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে মার্কিন পররাষ্ট্র সেক্রেটারী হিলারী ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরেও ইউনুস শর্ত জুড়ে দিয়েছে ওবামা প্রশাসন। বিশ্ব ইসলামী ফোরাম সম্মেলনে যোগদানের জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও ওয়াশিংটন সফরের কথা একই মাসে। এখানেও শর্ত, ডক্টর ইউনূসের কাছে গ্রহনযোগ্য কোন সমাধানে না আসা পর্যন্ত শেখ হাসিনার জন্যে হোয়াইট হাউজের দরজা বন্ধ। মার্কিন চাপ সামাল দিতে অভিজ্ঞ মন্ত্রী মাল মুহিতকে দিল্লী পাঠিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। একই সময় দিল্লিতে অবস্থান করছিলেন ডক্টর ইউনুস ও গ্রামীন ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জনাব রেহমান সোবহান। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী একজনের মতে ডক্টর ইউনুস যা বলার তা বলে দিয়েছেন এবং বল এখন মন্ত্রীর কোর্টে। মার্কিন সরকার সহ পশ্চিমা বিশ্বের আশংঙ্কা শেখ হাসিনা রাজনৈতিক কারণে ডক্টর ইউনুসকে গ্রামীন ব্যাংক হতে তাড়াতে চাচ্ছেন। সূত্র বলছে, ডক্টর ইউনুসের উপর রাজনৈতিক হ্যারাসমেন্ট বন্ধ না হলে তৈরী পোশাক রপ্তানির উপর কর মওকুফে বাংলাদেশি আবেদনেও ঠান্ডা পা দেখাবে মার্কিন সরকার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। জাতির পিতা অথবা স্বাধীনতা ঘোষক রোগে আক্রান্ত নয় এ দেশ। তাই ডক্টর ইউনুস নিয়ে দেশটার সিদ্ধান্তকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসাবে আখ্যায়িত করার সুযোগ নেই। আমরা যারা ডাল-ভাতের বাংলাদেশি তাদের মনে প্রশ্ন জাগতে বাধ্য ডক্টর ইউনুসের মাঝে কি এমন দেখতে পেল পশ্চিমা দুনিয়া যা আমরা দেখছি না? জনগণের ম্যান্ডেট প্রাপ্ত সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলছেন ইউনুস ’রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার’, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বলছেন দুর্নীতিবাজ। আর আমার মত হুক্কাহুয়া টাইপের ব্লগাররা প্রধানমন্ত্রী আর তার গবুচন্দ্র মন্ত্রীদের সুরে সুর মিলিয়ে ইউনুসকে অভিযুক্ত করছি গরীব মারার সুনিপুণ কারিগর হিসাবে। প্রতিবেশি দেশের নোবেল বিজয়ী আমর্ত্য সেনকে দাওয়াত করে যেদিন সন্মানিত করা হল, একই দিন স্বদেশি নোবেল বিজয়ীকে আদালতে হাজিরা দিতে হল জালিয়াতির মামলায়। গ্রামীন ব্যাংকের ব্যাংকিং পদ্ধতি নিয়ে তর্ক হতে পারে, এর সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশ হতে দরিদ্র দূর করাতে রাজনৈতিক সরকারের বাইরে দ্বিতীয় ধারার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তর্ক করার অবকাশ নেই। চুরি-চামারিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন রাজনীতিবিদ আর তাদের সহযোগী আমলাদের দিয়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের ভাগ্য কতটা পরিবর্তন কার যাবে তার কিছুটা হলেও নমুনা দেখেছি ৩৯ বছর ধরে। টিভির টক শো আর খবরের কাগজ মাতানো দেশপ্রেমিকের অভাব নেই বাংলাদেশে। এসব করতে পরিশ্রমের যেমন দরকার হয়না তেমনি দরকার হয়না মেধার। যা দরকার হয় তা হল নির্দিষ্ট একটা দল ও নেত্রীর প্রতি ডেডিকেশন। ডক্টর ইউনুসের সমস্যাটা বোধহয় এখানেই। শুধু ৩০% কেন, ৩০০% সুদও বৈধ হবে যদি গ্রামীন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডক্টর মোহম্মদ ইউনুস দুটো রাজনৈতিক দলের যে কোন একটার গোলামির খাতায় নাম লেখান।
আমার নিজস্ব কিছু সোর্স আছে যাদের মাধ্যমে দেশীয় রাজনীতির হাঁড়িপাতিলের খবর রাখার চেষ্টা করি। এসব সূত্র হতে চমকপ্রদ কিছু তথ্য পেলাম ডক্টর ইউনুসের উপর। আমার মত অনেকেই যারা শেখ হাসিনার ইউনুস হিংসা নিয়ে লেখালেখি করছেন তাদের জন্যে খবর হতে পারে এ তথ্য। বিশ্বাস অবিশ্বাস পাঠকদের স্বাধীনতা। ডক্টর ইউনুসকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং প্রয়াত পিতা শেখ মুজিবের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার কারণে মাইক্রো ক্রেডিট ও ইউনুস নামের আড়ালে চাপা পরে যাচ্ছে শেখ মুজিবের নাম, তাই দৃশ্যপট হতে এ ব্যক্তির প্রস্থান জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে শেখ পরিবারের জন্যে। রাস্তাঘাট, পয়ঃপ্রণালী সহ এমন কোন স্থাপনা নেই যার নামকরণ করা হয়নি বঙ্গবন্ধু অথবা শেখ মুজিব নামে। প্রতিদিনের মত আজও একটা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হল জাতীয় এই নেতার নামে, এ যাত্রায় ২৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ের মেরিটাইম ভার্সিটি। ৫০ হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্ট ছাড়াও হাজার হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ঝুলছে পাইপ লাইনে। সবকিছুতে থাকলেও বঙ্গবন্ধু নামের ব্যাংকের অভাব অনুভব করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিশনের অংশ হিসাবে গ্রামীন ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু ব্যাংক রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন প্রধানমন্ত্রী। ৯০ লাখ গ্রাহক, পরিবার প্রতি গড়ে ৩ জন করে ধরলেও ২ কোটি ৭০ লাখ স্বদেশি, পিতার নাম অমর করার এমন একটা মহা সুযোগ হারাতে রাজী নন কন্যা শেখ হাসিনা। প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে শুধু দেশে নয় পৃথিবীর পথে-প্রান্তে ছড়িয়ে পরবে পিতার নাম। যারা খবরটা পড়েননি তাদের অবগতির জন্যে জানাচ্ছি লন্ডনের ’ম্যাদাম তুসো’ জাদুঘরে পিতার মোমের মূর্তি স্থাপনের লবি করছেন কন্যা শেখ হাসিনা।
সিন্ডিকেটেড অপরাধচক্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার মত শক্তি জন্ম নেয়নি বাংলাদেশে, নিকট ভবিষ্যতেও জন্ম নিবে বলে মনে হয়না। বিদেশি বন্ধু নিয়ে ডক্টর ইউনুস এ দৌড়ে খুব একটা এগুতে পারবেন বলে মনে হয়না। রাজনীতির সুবিধাভোগী প্রচার মাধ্যম আর উচ্ছিষ্টখোর বুদ্ধিজীবীদের পাহাড় সমান বাধা অতিক্রম করার মত মেধা, শক্তি আর ধৈর্য্য কোনটা-ই নেই ডক্টর ইউনুস চরিত্রে। গ্রামীন ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশে টিকে থাকতে চাইলে ডক্টর ইউনুসকে নতুন একটা নোবেল পেতে হবে, আর তা হল নিঃশর্ত দাসত্ব। এ ধরণের একটা নোবেল পাওয়ার আগ পর্যন্ত ডক্টরের উচিৎ হবে সন্মান নিয়ে বাংলাদেশ হতে কেটে পরা।